আমার তৈরি আলুকাবলী ও স্কুল জীবনের গল্প

in Incredible India7 months ago
IMG_20240115_094309.jpg

"আলুকাবলী"

Hello,

Everyone,

আশাকরি আপনারা সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন এবং আপনাদের সকলের আজকের দিনটি অনেক ভালো কেটেছে।

আজ আমি অনেক দিন বাদে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি, বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় একটি মুখরোচক রেসিপি, যার নাম আলুকাবলী।

অনেকেই হয়তো এটা খেতে খুব একটা পছন্দ করেন না। তবে স্কুল জীবনের স্মৃতিতে আলুকাবলী অনেকটা জায়গা জুড়ে আছে বলে আমি বিশ্বাস করি, অন্ততপক্ষে আমার ক্ষেত্রে তো তাই।

এই কারণে শীতকালে নতুন আলু বাজারে উঠলেই আমি নিজের মতো করে বাড়িতে আলুকাবলী তৈরি করি যার পদ্ধতি আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।

1672344690977_010726.jpg

চলুন প্রথমে জেনে নিই এটি তৈরি করতে আমি কি কি উপকরণ ব্যবহার করেছিলাম, -

"আলুকাবলী তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত উপকরন"

উপকরণপরিমাণ
১. নতুন আলু৩ টি
২. পেঁয়াজ২টি ছোটো
৩. শশা১টি
৪. টমেটো১টি
৫. কাঁচা২টি
৬. বিট লবণ১চা চামচ
৭ গোলমরিচ গুঁড়ো১চা
৮. ভাঁজা মশলা১ চা চামচ
৯. ধনেপাতা কুচি২ চা চামচ
১০. চানাচুর২ চা চামচ
১১. বাদাম২ প্যাকেট(ছোট)
১২. পাতিলেবু১ টুকরো

1672344690977_010726.jpg

"আলুকাবলী তৈরি করার পদ্ধতি"

IMG_20240114_184406.jpg

প্রথমেই আলু গুলো ভালোভাবে ধুয়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। আমি এই সময় লবন ব্যবহার করি নি। তবে আপনারা চাইলে সামান্য লবন দিয়ে সেদ্ধ করতে পারেন।

অন্যদিকে দিকে একটি কড়াইতে সামান্য জিরে, সামান্য ধনে, একটি শুকনো লঙ্কা, ও একটি তেজপাতা ভালো ভাবে গরম করে সেগুলোকে গুঁড়ো করে নিতে হবে। তাহলেই ভাঁজা মশলা তৈরি হয়ে যাবে, যেটা আমি আলুকাবলীতে ব্যবহার করেছি।

IMG_20240114_184344.jpg

এরপর পেঁয়াজ, শশা, টমেটো ও কাঁচা লঙ্কা গুলো কুচি করে কেটে নিতে হবে। আর ধনেপাতা গুলো ভালোভাবে ধুয়ে কুচিয়ে নিতে হবে।

IMG_20240114_184422.jpg
IMG_20240114_184440.jpg

আলু গুলো সামান্য ঠান্ডা হয়ে গেলে, সেগুলোকে ছোটো ছোটো টুকরো করে কেটে নিতে হবে। তারপর তার মধ্যে সামান্য বিট লবণ ও গোলমরিচ গুঁড়ো দিয়ে ভালো ভাবে মেখে রাখতে হবে।

IMG_20240114_184548.jpg
IMG_20240114_184619.jpg
IMG_20240114_184523.jpg

এরপর এক এক করে কেটে রাখা শশা, টমেটো পেঁয়াজ সবকিছু মেখে রাখা আলুর সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর বাকি বিট লবণ, ও গোলমরিচ গুঁড়ো দিয়ে সবকিছু মেখে নিতে হবে।

IMG_20240114_184649.jpg
IMG_20240114_184711.jpg
IMG_20240114_184742.jpg

এরপর ধনেপাতা গুলো ছড়িয়ে দিতে হবে। সবশেষে পাতিলেবুর রস ছড়িয়ে দিয়ে, এক এক করে চানাচুর ও বাদাম মিশিয়ে নিলেই তৈরি পছন্দের আলু কাবলী।

1672344690977_010726.jpg

"আলুকাবলী নিয়ে স্কুল জীবনের একটি স্মৃতি "

সত্যি কথা বলতে একসময় আলুকাবলী খাওয়ার ইচ্ছা এতো প্রবল ছিলো যে, তখন সামান্য ৫০ পয়সা বা ১ টাকার জন্য মায়ের কাছে কতো যে বকা শুনেছি, তা মনে পড়লে আজও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুঁটে ওঠে।

আজ একটা গল্প শেয়ার করি আপনাদের সাথে, আমি যখনকার কথা বলছি তখন প্রতিদিন স্কুলে ৫০ পয়সা দেওয়াও আমাদের পরিবারে বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু না। তাই ঐ ইচ্ছা কখনোই পূরন হতো না।

তাই অনেকদিন বাদে যখনই মা ৫০ পয়সা দিতো, তখন স্কুলের সামনে থেকে আলুকাবলী কিনে খাওয়ার আনন্দই আলাদা ছিল। এইরকম একদিন মা টিফিন দিয়ে দিয়েছে, আবার সেদিনই স্কুলে যাওয়ার সময় রাস্তায় বাবার সাথে দেখা হয়েছে।

বাবা আমাকে দাড় করিয়ে পকেট থেকে ১ টাকা বের করে দিলো। ১ টাকা হাতে পেয়ে আমার সেকি আনন্দ। কতো পরিকল্পনা সেদিন স্কুলে গিয়ে আমি কি কি খাবো। অনেক কিছু ভাবনা চিন্তা করে স্কুলে পৌঁছে ক্লাস শেষ করে টিফিনের ঘন্টা পড়তেই এক দৌড়ে আমি স্কুলের গেটের বাইরে।

বাবার দেওয়া টাকা দিয়ে আচার আর আলুকাবলী কিনে এনে ক্লাসরুমে এসে বসে টিফিন করার জন্য মায়ের দেওয়া টিফিন বক্স খুলতেই আমি অবাক। মা ও আলুকাবলী দিয়েছে।

মাথায় তখন একটাই ভাবনা এলো ইস্ বাবার দেওয়া টাকা দিয়ে আলুকাবলী না কিনলেই ভালো হতো, তাহলে অন্যকিছু খেতে পারতাম। একদিকে টাকাটা খরচ করার আফসোস আর অন্যদিকে টিফিনে মায়ের হাতে তৈরি আলুকাবলী দেখে আনন্দ। এই দুটি অনুভূতি একসাথে অনুভব করলাম সেদিন।

আমার বিশ্বাস আলুকাবলী নিয়ে ছোটো বেলায় অনেকেরই এমন অনেক স্মৃতি আছে। যাইহোক, শীতকালে এইধরনের আলুকাবলী বানিয়ে খেতে বেশ ভালো লাগে। আপনারাও বাড়িতে স্বল্পসময়ে তৈরি করতে পারেন। আপনারা কারা আলুকাবলী খেতে পছন্দ করেন অবশ্যই জানাবেন। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আপনাদের সকলের আজকের দিনটি ভালো কাটুক এই প্রার্থনা রইলো।

Sort:  
 7 months ago 

দিদি সত্যি বলতে আমি কখনো আলু কাবলী খাই নি। তবে বাসায় আপনার দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী ট্রাই করবো। ফটোগুলো দেখে মনে হচ্ছে রেসিপিটি সত্যি দারুণ স্বাদের হবে। শীতকালে গরম গরম আলু কাবলীর প্রশংসা না করলেই নয়। ধন্যবাদ দিদি আপনাকে।

স্কুল জীবনের অনেক সৃতি রয়েছে যা ভোলার মত নয়। ঠিক তেমন একটি সৃতি আজ আপনি আমাদের মাঝে তুলে ধরলেন। এমন কিছু মহূর্ত সত্যি আনন্দের। আপনার আগামীর জীবন সুখী এবং সমৃদ্ধ হোক।

 7 months ago 

আলুকাবলী বানানো ভীষন সহজ। আর প্রয়োজনীয় উপকরণ ঘরেই থাকে। শুধু একটু সময় বের করে তৈরি করতে হবে। আমার বিশ্বাস আপনার এর স্বাদ অবশ্যই পছন্দ হবে। আর আমাদের সকলেরই স্কুল জীবনের স্মৃতি সব সময় অমলিন থাকে,ধন্যবাদ আমার রেসিপি পড়ার জন্য। ভালো থাকবেন।

@sampabiswas
আপু আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর পোস্ট করার জন্য। আমি কখনো আলুকাবলি খাইনি। কিন্তু আপনার রেসিপি দেখে বানাবো এবং খেয়ে আপনাকে জানাবো। দেখে খুব লোভনিও মনে হচ্ছে। ভাল থাকবেন।

 7 months ago 

অবশ্যই আপনার ফিডব্যাকের অপেক্ষায় রইলাম। আমার বিশ্বাস স্টেপ গুলো ফলো করে আপনি নিজেই এটি বাড়িতে বানিয়ে খেতে পারবেন। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকবেন।

 7 months ago 

সত্যি দিদি আমি কখনও আলুকাবলী খাইনি এবং নামও শুনিনি। তবে আজ ফটোগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে রেসিপিটি খুব সুস্বাদু হয়েছে। আলু কাবলি সাথে আপনার স্কুল জীবনে কিছু স্মৃতি রয়েছে যা ভোলার মত নয়। আপনার সেই স্কুলের ছোট বেলার স্মৃতি গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করলেন। থ্যাংক ইউ দিদি ভালো লাগলো আপনার আলুকাবলীর গল্প শুনে।

 7 months ago 

কখনো খাননি বুঝলাম, কিন্তু কখনো খাবেন না এমন তো কোনো ব্যাপার নেই। তাই অবশ্যই বাড়িতে বানাবেন। একটু ঝাল কম দিয়ে আপনার ছেলেকেও দেবেন। দেখবেন ওর ভালো লাগবে। ধন্যবাদ আপনাকে আমার রেসিপিটি পড়ার জন্য। ভালো থাকবেন। 🙏

 7 months ago 

অবশ্য চেষ্টা করব আলুকাবলী বানিয়ে খাবো
যে জিনিসটি কখনো খাইনি খেতে খুব ইচ্ছা হয়। থ্যাংক ইউ দি সিটি শেয়ার করার জন্য।

Loading...
 7 months ago 

আমি আলু কাবলি নামটার সাথে পরিচিত কিন্তু কখনো খাওয়া হয় নাই। আপনার রেসিপিটা দেখে ভালো লাগলো এটা ভেবে যে, আমার মতো রান্নায় অলস মানুষ এর জন্য পারফেক্ট রেসেপি বলা যায়। কারন বানানো বেশ সহজ।
সেই সাথে ছোট বেলার গল্প পেলাম বোনাস হিসাবে।
ছোটবেলায় মানুষ এর চাহিদাগুলো এত ছোট ছেোট থাকে তারপরও অনেক চাহিদা সহজে পূরন হতে চায় না।
আমি ভাংতি পয়সা খুঁজে বেড়াতাম সারা বাড়িতে, খুজে পেতাম না।তারপরও মা বলতো যে, এই মেয়েটার জন্য বাড়িতে কোন টাকাই থাকে না।আসল কাহিনি ছিলো ১/২টাকার নোট পেলেই নাকি আমি খেয়ে ফেলতাম। তাই এত অভিযোগ।
ভালো লাগলো আপানার আলুকাবলির গল্প।
ভালো থাকবেন সবসময়।

Posted using SteemPro Mobile

 7 months ago (edited)

সত্যিই ছোটোবেলায় মানুষের চাহিদা বড্ড কম থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে চাহিদা বাড়ে, তাই খুশি থাকতে ভুলে যাই আমরা। আপনার মতো আমিও রান্না করতে পছন্দ করি না। তবে আলুকাবলী রান্না না করতে ইচ্ছে করার বিকল্প হতে পারে এটা মাথায় আসেনি। আপনার ছোটোবেলার গল্প টাও বেশ মজার। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।

 7 months ago 

সোসাল মিডিয়াতে আলুকাবলীর নাম শুনেছি, কিন্তু কখনোই খাওয়া হয় নি। আমাদের দেশে এই খাবারটা কোথাও পািয়া যায় বলে জানা নেই আমার।
তবে আনার শেয়ার করা ফটোগ্রাফি গুলো দেখে অনেক লোভনীয় লাগছে,এবং রেসিপিটিও পড়ে মনে হচ্ছে, খেতে বেশ সুস্বাদু।
রেসিপি যেহেতু পোয়েই গেলাম এবং উপকরণ গুলোও সব ঘরেই থাকে,তাই একদিন আমি নিশ্চয় এই খাবারটু বাসায় তৈরি করবো।

 7 months ago 

একদমই তাই, প্রয়োজনীয় সব জিনিস ঘরেই পেয়ে যাবেন, আর সময়ও একদম কম লাগবে। তাই অবশ্যই ঘরে বানাবেন এই রেসিপি। আপনার মেয়েদের নিশ্চয়ই এটি খেতে খুব ভালো লাগবে। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মতামতের জন্য। আলুকাবলী খেয়ে কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। ভালো থাকবেন।

 7 months ago 

আলু কাবলি নিয়ে আপনার ছোটবেলার যে স্মৃতিচারণ করলেন তা পড়ে খুবই ভালো লাগলো। এভাবে আলু কাবলি আমার কখনো খাওয়া হয়নি। সত্যি কথা এই রেসিপিটা আমার কাছে একেবারেই নতুন। তবে মনে হচ্ছে ঠিকঠাক মতো বানাতে পারলে বেশ সুস্বাদু লাগবে। চেষ্টা করব সামনে রোজায় বানাতে। খুব ভালো লাগলো আপনার রেসিপি ও লেখাটি।

 7 months ago 

আমিও অপেক্ষায় রইলাম এটি খেয়ে আপনাদের কেমন লাগলো সেটা জানার। স্কুল জীবনের একটি অত্যন্ত প্রিয় খাবার ছিলো এই আলুকাবলী। স্কুলের গেটের বাইরের দোকানটি ও দোকানদারের মুখটা এতো বছর ধরে দেখছি, যা স্মৃতিতে আজও অমলিন। যাইহোক, ধন্যবাদ আপনাকে আমার পোস্ট পড়ে এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।

 7 months ago 

আজকে আপনার পোস্ট পরিদর্শন করার মাধ্যমে নতুন একটা খাবার সম্পর্কে জানতে পারলাম। এবং খাবারটি কিভাবে তৈরি করতে হবে আপনি খুব সুন্দর ভাবেই রেসিপি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। অবশ্যই চেষ্টা করব তৈরি করার জন্য।

আলকাবলী আপনার খাবারটা খাওয়ার তেমন একটা ইচ্ছে ছিল না। তবে ছোটবেলা থেকেই স্কুলে গিয়ে এই খাবারটা আপনি খেতেন। একদিন হঠাৎ করেই যখন আপনার মা টিফিন দিয়ে দিয়েছিল। সে সাথে বাবা আপনাকে টাকা দিয়েছে। আপনি একই খাবার কিনে নিয়েছেন। পরে অবাক হয়েছেন আজকে আপনার মা নেই তাই আপনার কথাটা আবারও মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর রেসিপি এবং আপনার স্কুল জীবনের ঘটনাটা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।

 7 months ago 

ছোটোবেলার প্রতিটি স্মৃতিতেই প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ভাবে মায়ের কথা চলেই আসে। সত্যিই মা কে ছেড়েও কতগুলো বছর কাটিয়ে দিলাম। যাইহোক, আমার গল্পটি মন দিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সত্যিই সেদিন বড় আফসোস হচ্ছিলো। যদি আগে টিফিন বক্সটি দেখতাম, তাহলে ঐ টাকা দিয়ে অন্য কিছু খেতে পারতাম। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.032
BTC 59010.30
ETH 2515.57
USDT 1.00
SBD 2.45