আমার ভীষন পছন্দের বাংলা সিনেমা- "আলো"

in Incredible Indialast year
IMG_20230509_211753.jpg
আলোর ভুমিকায় ঋতুপর্ণা

Hello,

Everyone,

আশা করি আপনারা সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন এবং আপনাদের প্রত্যেকের আজকের দিনটি অনেক ভালো কেটেছে।

আজকে আমি আপনাদের সামনে একটু ভিন্নধর্মী লেখা উপস্থাপন করতে চলেছি। একটা নতুন সিনেমা দেখে এসে সেটা সম্পর্কে অনেকেই রিভিউ দিয়ে থাকেন। তবে আমি আজকে যে লেখাটি আপনাদের সাথে শেয়ার করব সেটিকে রিভিউ বলা চলে না। তার থেকে বরং বলা ভালো একটি সিনেমা দেখার পর সিনেমাটির সম্পর্কে আমি আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি আপনাদের মাঝে তুলে ধরবো।

প্রথমেই বলে রাখি এটি নতুন কোন সিনেমা নয়। এটি বহু পুরনো একটি সিনেমা। যেটা আমি বহুবার দেখেছি কিন্তু আজও সিনেমাটি আমার কাছে পুরনো হয়নি। এখনও মাঝে মধ্যেই আমি ইউটিউবে এই সিনেমাটি দেখি।

বিশেষ করে এই সিনেমাটির গানগুলো আমাকে অনেক মানসিক শান্তি দেয়। যখন কোনো খারাপ লাগা আমাকে বিব্রত করে,তখন এই সিনেমার গানগুলি আমাকে অনেকটা মানসিক শান্তি দেয়।

-: সিনেমা সম্পর্কিত কিছু তথ্য:-

প্রথমেই আমি এই সিনেমাটি সম্পর্কে কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করব।সিনেমাটির নাম**"আলো"।এটি একটি বাংলা সিনেমা, যেটা ২০০৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল।সিনেমাটির পরিচালক ছিলেন তরুণ মজুমদার। আপনারা যারা বাংলা বাংলা সিনেমা দেখেন,তারা অবশ্যই এই নামটির সঙ্গে পরিচিত।

এই সিনেমার মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তিনিই এই সিনেমার নায়িকা। এছাড়াও কুনাল মিত্র, অভিষেক চ্যাটার্জি, সৌমিলি বিশ্বাস,ভাস্কর চ্যাটার্জির মতো আরো বহু অভিনেতা অভিনেত্রী রয়েছেন,যারা এই সিনেমার পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই সিনেমাটি ঐবছর "সেরা সিনেমা" হিসাবে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছিল।

আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো সিনেমাটি দেখেছেন।তবুও যারা সিনেমাটি দেখেননি, তাদের জন্য সিনেমাটির কাহিনী আমি কিছুটা তুলে ধরছি। সিনেমাটিতে মুখ্য চরিত্রের নাম হলো "আলো"। যেই চরিত্রে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অভিনয় করেছেন।

-: সিনেমার সংক্ষিপ্ত কাহিনী :-

সিনেমায় দেখানো হয়েছে, আলো শহরের পরিবেশে বেড়ে ওঠা একটি শিক্ষিত মেয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি নাচ, গান সবকিছুতেই সে পারদর্শী। তার পরিবার বলতে চারবোন,একটি ছোট ভাই ও জ্যেঠুর। ওদের বাবা-মা কেউই পৃথিবীতে না থাকার কারণে জ্যেঠুর কাছেই তারা মানুষ হয়েছে এবং জ্যেঠু তাদেরকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন।

IMG_20230509_211813.jpg
আলোর স্বামী অর্থাৎ শুভর ভূমিকায় কুনাল মিত্র

এরপর আলোর পরিচয় ঘটে "শুভ" অর্থাৎ কুনাল মিত্রের সঙ্গে, যিনি এই সিনেমায় একজন শিক্ষকের ভূমিকা অভিনয় করেছেন। যদিও তার পৈত্রিক বাড়ি একদমই গ্রাম্য এলাকায়, কিন্তু চাকরির সূত্রে তিনি এবং তার ছোট ভাই অর্থাৎ ভাস্বর চ্যাটার্জী কলকাতাতেই থাকেন। তাদেরও বাবা-মা কেউই বেঁচে নেই। পুরনো একজন ভৃত্য গ্রামের বাড়ি দেখাশোনা করে। তারা দুই ভাই মাঝে মধ্যে গ্রামে যায়।

এরপর ঘটনাক্রমে আলো ও শুভর বিয়ে হয় এবং শুভর মায়ের ইচ্ছে পূরণ করার জন্য আলো কলকাতা ছেড়ে গ্রামে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও তার এই সিদ্ধান্তে শুভ খুব একটা সহমত পোষণ করেনি, কিন্তু আলোর জ্যেঠু মনে মনে খুবই খুশি হয়েছিলেন,আলোর এই সিদ্ধান্তে।

এরপর দেখায় শুভর সেই গ্রাম যে গ্রামে অভাবের তাড়নায় প্রতিটি ঘরেই দিনরাত অশান্তি চলে। গ্রামের লোকেরা ঠিকভাবে কাজ করতে না পারার কারণে, তাদের পরিবারের মুখে ঠিকমতো খাবার তুলে দিতে পারে না। ঠিক এইরকম একটি গ্রামে গিয়ে পৌঁছালো আলো, যে কিনা অভাব কি জিনিস কোনদিনও বুঝতে পারেনি।

IMG_20230509_211832.jpg
সিনেমা চলাকালীন একটি দৃশ্য

শহরের আলো ঝলমলে পরিবেশ ছেড়ে গ্রামের অন্ধকারে সে কিভাবে মানিয়ে নেয়, সেটা সিনেমার মূল কাহিনী। সে যে শুধু গ্রামের সকলকে মানিয়ে নেয় তা নয়, গ্রামের সকল মেয়ে বৌদের সঙ্গে তার এক আন্তরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। সে তাদেরকে যেমন স্বনির্ভর হতে উদ্বুদ্ধ করে, তেমনি ভালো মানুষ হওয়ার প্রেরণা দেয়। অশিক্ষার অন্ধকারকে দূর করে শিক্ষার আলো আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে।

এরকম ভাবেই ঘটনা এগোতে থাকে। একটা সময় তার ভাই ও চার বোন মিলে গ্রামে যায় এবং সেখানে তারা সকল গ্রামবাসীর সঙ্গে এমন ভাবে মিশে যায়, যেন তারা তাদের বহুদিনের পরিচিত। কলকাতা থেকে গ্রামে গেলেও তাদের মধ্যে কোন রকমের কোন অহংকার না থাকার কারণেই, তারা খুব সহজে গ্রামবাসীদেরকে আপন করে নিতে পেরেছে, এবং এই সবটাই সম্ভব হয়েছে ছোটবেলা থেকে জ্যেঠুর দেওয়া শিক্ষার কারণে।

এরপরেই জানা যায় আলো নিজে মা হতে চলেছে এবং এই সংবাদ গ্রামে ছড়িয়ে পড়তেই গ্রামবাসীরা আনন্দ অনুষ্ঠান শুরু করে। দুর্ভাগ্যবশত সেদিনই আলো জানতে পারে তার ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর খবর। সেই খবরে শুধু আলো নয় গোটা গ্রাম যেন শোকাহত হয়ে পড়ে। কারন কিছু দিন আগে তারা বাচ্চাটির সাথে কতো ভালো সময় কাটিয়েছে।

আরও কিছুমাস বাদে পুরনো দিনের নিয়ম অনুসারে বাচ্চা জন্মগ্রহণ করার কয়েক মাস আগেই মেয়েদেরকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হতো। ঠিক সেই কারণেই আলো শহরে নিজের জ্যেঠুর বাড়িতে চলে আসে।

**কিন্তু ঘটনা ক্রমে দেখা যায় যে সে কলকাতায় আসার পরে আর তার গ্রামে ফিরে যাওয়া হয় না। কারণ সন্তান প্রসব করতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে আলো গ্রাম থেকে চলে আসার পরে গ্রামটি যেন আবার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। সকলেই মন খারাপ করে বসে থাকে। হঠাৎ করেই একদিন দূর থেকে ভেসে আসে, আলোর কণ্ঠের গান।

সেই গান শুনে গ্রামের সকল মেয়ে বউরা যখন আলোর বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায়, তখন দেখে গ্রামোফোনের রেকর্ডারে একটি ক্যাসেট বাজিয়ে শুভ অর্থাৎ আলোর স্বামী বারান্দায় বসে আছে এবং গানটি শেষ হয়ে যাওয়ার পর সে গ্রামবাসীদেরকে আলোর মৃত্যুর খবর দেয়। সেই খবর এ সকলে একদম নিশ্চুপ হয়ে যায়।

IMG_20230509_211901.jpg
সিনেমার একেবারে শেষের দৃশ্য যেখানে আলোর সন্তানকে গ্রামবাসীরা বুকে টেনে নিয়েছে

ঠিক এইরকম অবস্থায় একটি ছোট বাচ্চা মেয়েকে কোলে করে এনে শুভ গ্রামের সকলের হাতে তুলে দেয়। আর বলে বাচ্চাটি আলোর মেয়ে। তার সাথে সাথে আলোর শেষ ইচ্ছের কথাও তাদেরকে জানায়, আলো এক সময় বলেছিলো "এই বাচ্চাটি শুধু ওর একার বাচ্চা নয়।এটি এই গ্রামের প্রত্যেকের বাচ্চা এবং সে চায় তার সন্তান কলকাতার পরিবেশ নয়, গ্রামে এই সকল মানুষের সঙ্গে বড় হোক। গ্রামের মানুষের কষ্ট বুঝুক। তাদের মধ্যে একজন হয়ে বাঁচুক।"

ঠিক এইরকম একটি জায়গায় সিনেমাটি শেষ করা হয়।যেখানে দেখানো হয় বাচ্চাটি গ্রামের প্রত্যেকের কাছে অনেক আদরে বড় হচ্ছে এবং প্রত্যেকেই বাচ্চাটিকে ঘিরে নিজেদের বাঁচার ইচ্ছে খুঁজে পাচ্ছে।

-: সিনেমা সম্পর্কে নিজস্ব অভিমত:-

সিনেমাটি দেখে এবং সিনেমাটিতে মাঝে মধ্যে যে রবীন্দ্র সংগীত গুলি ছিল, সেগুলি শুনে চোখ থেকে জল পরেনি এমন মানুষ বোধহয় খুবই কম রয়েছে।

আপনারা যারা দেখেছেন,তারা আমার সঙ্গে কতটা সহমত সেটা নিশ্চয়ই কমেন্ট করে জানাবেন। আর যারা সিনেমাটি এখনো পর্যন্ত দেখেননি তাদেরকে অনুরোধ করব আপনার জীবনের মূল্যবান সময় থেকে একটু সময় বের করে সিনেমাটি অবশ্যই দেখবেন।

আমরা অনেকেই আছি যারা হয়তো গ্রাম ছেড়ে এসে শহরে বড় হয়ে থাকি, অথচ কয়েক বছর শহরে থাকার পরে আমরা কেউ আর গ্রামে গিয়ে মানিয়ে থাকতে পারিনা। কিন্তু সিনেমাটিতে দেখানো হয়েছে একজন শিক্ষিত শহুরে মেয়ে হয়েও কিভাবে আলো গ্রামের ওই রকম অশিক্ষিত,লোভী মানুষগুলোকে সভ্য,ভদ্র,প্রকৃত মানুষ তৈরি করেছে।

শুধুমাত্র নিজের ব্যবহার দিয়ে কিভাবে সে নিজের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে গ্রামের অশিক্ষিত মানুষদের মধ্যে মনুষ্যত্ব বোধ জাগিয়ে তুলেছে। কি ভাবে নিজের ভেতরকার আলো গ্রামের অন্ধকারে নিমজ্জিত মানুষগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে। কিভাবে তাদেরকে স্বাবলম্বী করেছে, যাতে তারা তাদের জীবনকে সৎ পথে চালিত করতে পারে।

সর্বোপরি নিজের সন্তানকে সেই সকল মানুষের হাতে তুলে দিয়েছে, যারা তার রক্তের সম্পর্কের কেউ নয়। কিন্তু আলো জানতো এই মানুষগুলোর থেকে ভালোভাবে তার মেয়েকে অন্য কেউ হয়তো মানুষ করতে পারবে না। আমরা হলে বাচ্চাটিকে হয়তো গ্রামে নিয়েই যেতাম না শহরের পরিবেশেই বড় করতে চাইতাম।

সিনেমাটি আমাকে শিখিয়েছে ভালোভাবে বাঁচতে হলে শুধু নিজের জন্য নয়,পারিপার্শ্বিক অনেক মানুষের জন্যও বাঁচতে হয়। তাতে অন্তত মানুষ হিসেবে নিজের কাছে নিজে গর্বিত হওয়া যায়।

পোস্টে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি ছবি youtube এ সিনেমাটি দেখার সময় স্ক্রিনশট নেওয়া হয়েছে

ভালো থাকবেন সকলে। শুভরাত্রি।

Sort:  
 last year 

জি দিদি আপনি একদম ঠিক বলেছেন। বাঁচতে হলে শুধু নিজের জন্য নয় পারিবারিক অনেক মানুষের জন্য বাঁচতে হবে। আপনার মুভি রিভিউটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো, ভালো থাকবেন সবসময়।

Loading...
 last year 

পুরাতন বাংলা সিনেমা গুলো অনেক ভালো ছিলো কিন্তু আমাদের বর্তমান সমাজে পুরাতন সিনেমা তেমন কেউ দেখেনা এবং সত্য কথা বলতে গেলে আমিও এই সিনেমাটি দেখিনি কিন্তু আপনি আপনার পোস্টের মাধ্যমে অনেক কথাই উল্লেখ করেছেন।

আপনার পুরো পোস্টি পড়ে মনে হল সিনেমাটি একবার দেখা উচিত অনেকটাই আগ্রহ বেড়ে গেলো সময় সুযোগ করে একটি বার বাংলা সিনেমাটি দেখব।

অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি আপনাকে এত সুন্দর একটি সিনেমার তথ্য আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করার জন্য।

 last year 

২০০৩ সাল আমি খুব ছোট ছিলাম। আসলে ওই সময়কার একটা ছবির বর্ণনা আজকে আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন,,,যার নাম "আলো"

আসলে আপনি যেভাবে ছবিটির বর্ণনা দিয়েছেন। সেখানে আলোর চরিত্রে ঋতুপর্ণা,,, যে অভিনয়টা করেছে! সেটা আসলে খুবই সুন্দর! আর নিজের আলোয় গ্রামটাকে পুরোই আলোকিত করেছে! যেটা আমি আপনার লেখা থেকে বুঝতে পারলাম।

শেষে দেখতে পারলাম আলোর মৃত্যুবরণ হয়েছে! যার কারণে গ্রামবাসী অনেকটাই শোকাহত! আসলে আমাদের কাছের মানুষ,, বা আমাদের পাশে থাকা মানুষটা যখন! আমাদেরকে ছেড়ে চলে যায়! তখন আমাদের সবারই খারাপ লাগে।

পুরনো সিনেমাগুলো আমাদেরকে কিছু না কিছু শিক্ষা দিয়ে যায়! কিন্তু বর্তমান সময়ের সিনেমাগুলো দেখার পর! আমরা এর আগামাথা কিছুই বুঝতে পারি না।

অসংখ্য ধন্যবাদ, এত পুরনো একটা সিনেমা আমাদের সামনে এত সুন্দর করে তুলে ধরার জন্য! আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল! সৃষ্টিকর্তা আপনাকে সবসময় ভালো রাখুক সুস্থ রাখুক! ভালো থাকবে।

Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.12
JST 0.027
BTC 61414.81
ETH 2984.62
USDT 1.00
SBD 2.46