"লক্ষ্মী পুজোর আয়োজনের প্রথম পর্ব"

in Incredible India11 days ago
IMG_20241017_021614.jpg
"ক্যামেরাবন্দী আজকের দিনের কিছু মুহুর্ত"

Hello,

Everyone,

ঘড়ির কাঁটায় এখন রাত ১২ বেজে ৪১ মিনিট। হাতের কাজ শেষ করে সবেমাত্র পোস্ট লিখতে বসলাম। এখনও আশে পাশের বাড়ি থেকে লক্ষ্মীপুজোর শঙ্খ ধ্বনি, উলু ধ্বনির শব্দ শুনতে পাচ্ছি।

কারণ এইবার সমস্ত পুজোর তিথি কেমন যেন উলোটপালোট ভাবে পড়েছে। আজ সন্ধ্যা ৭:৪৪ মিনিট থেকে পূর্ণিমা শুরু হয়েছে, আগামী কাল বিকেল ৫.১৯ পর্যন্ত পূর্ণিমা থাকবে। তাই এর মাঝেই সকলকে লক্ষ্মী পূজা করতে হবে।

IMG_20241016_002715_124103.jpg
"ছাদ থেকে তোলা পাশের বাড়ির ছবি। এবার আমাদের বাড়ি আর সাজানো হয়নি"

আমাদের আশেপাশে বেশিরভাগ বাড়িতেই আছে রাতে পূজা হয়েছে। তবে আমাদের বাড়িতে পুজো হবে আগামীকাল দিনের বেলাতে। সত্যি কথা বলতে লক্ষ্মী পুজো নিয়ে প্রতিবারই বাড়িতে অন্যরকম আয়োজন থাকে। তবে এই বছর আমাদের সমস্ত আয়োজনে যেন কোথাও একটা খামতি থাকছে।

আপনাদের আগেও বলেছি এ বছর পুজো নিয়ে অন্য কোনো রকম উত্তেজনা কাজ করছে না ভিতরে। তার অবশ্য আলাদা করে কোনো কারণ নেই, কেবলমাত্র শ্বশুর মশাইয়ের শারীরিক অবস্থাই আমাদেরকে অনেক বেশি চিন্তিত করে তুলছে। দিনে দিনেই ওনার শারীরিক অবস্থা অবনতি হচ্ছে। আজ সকালেও বেশ কিছু টেস্ট করতে দেওয়া হলো, যাতে রিপোর্ট হাতে পেলে আবার ডাক্তার দেখাতে যেতে পারি।

IMG_20241016_201148.jpg
"লক্ষ্মী পুজোর আয়োজন"
IMG_20241016_201139.jpg
"দশকর্মার বাজার"

এবছর দুর্গা পুজোতে অষ্টমীর অঞ্জলি দেওয়া হয়নি। বাড়িতে লক্ষ্মীপূজো হবে কিনা এটা নিয়েও বেশ দোটানা ছিলো। তবে সমস্ত দোটানাকে উপেক্ষা করে, আজ শাশুড়ি মা পুজোর বাজার করে নিয়ে এসেছেন। আগামী কাল বাড়িতে ছোট্ট করে হলেও মা লক্ষ্মীর আরাধনা করা হবে বলে।

IMG_20241016_201247.jpg
"ধুয়ে রাখা হয়েছে পুজোর বাসন"
IMG_20241016_201214.jpg
"ধানের শীষ"

IMG_20241016_201316.jpg
"শাশুড়ি মায়ের তৈরি ঘট বসানোর পাত্র"

আসলে বাড়িতে অন্য কোনো পুজো হোক বা না হোক, লক্ষ্মী পূজো না হলে যেন কিছুতেই মন মানতে চায় না। জানি না আগামী বছর ভাগ্যে কি থাকবে, তাই এ বছর ঠিক করলাম শাশুড়ি মা ও আমি মিলে ছোট্ট করে হলেও বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো করবো। আমাদের দুজনের থেকেও এ বছর পুজো করার বেশি ইচ্ছা শুভর। হয়তো ওর মনে অন্য কোনো অনুভূতি চলছে বলেই, এ বছর পুজোর জন্য একটু বেশিই জোর দিচ্ছে।

অন্যদিকে আগামীকাল আশ্বিন মাসের শেষ দিন অর্থাৎ গাড়ু সংক্রান্তি। তাই আমাদের বাড়িতে আগামীকাল নিরামিষ রান্না হবে। শুধু নিরামিষ রান্নাই যে হবে এমনটা নয়। সমস্ত জিনিস ধোয়া মোছা করে, তবেই আগামীকালের রান্নাবান্না করা হয়।

IMG_20241016_232016_124044.jpg
"রান্নাঘর গোছানোর কাজ প্রায় শেষ"

তাই প্রতিবছর এই দিনে রান্নাঘর যেন ঝা চকচকে হয়ে ওঠে। ফলতো আমাদের পরিশ্রম হয় অনেকখানি। রান্নাঘরের সমস্ত মশলাদানি থেকে শুরু করে, নিত্য ব্যবহৃত সমস্ত জিনিস আজ ধোয়া মাজা করে রাখার নিয়ম আছে আমার শ্বশুর বাড়িতে। আগামীকাল সমস্ত রকম সবজি মিলিয়ে একটা ডাল রান্না করা হবে, যার নাম গাড়ুর ডাল। এই নিয়মটা অবশ্য আমার বাপের বাড়িতে ছিল না।

বাপের বাড়ি নিয়ম অনুযায়ী আমাদের ভোরবেলা উঠে নিমপাতা ও হলুদ বাটা মেখে স্নান করতে হতো। সূর্য ওঠার আগে প্রদীপের আলোয় কলা পাতার ওপরে মা কাজল তৈরি করত এবং আগের দিন তেঁতুল পুড়িয়ে রাখতো। স্নানের শেষে সেই কাজের চোখে পড়তে হতো এবং পোড়া তেতুলের কিছুটা শাঁস নিয়ে ঠোঁটে মাখতে হতো। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এতে আসন্ন শীতকালে ঠোঁট ফাটল না।

সূর্য ওঠার আগে মা উঠোন লেপে, স্নান সেরে, আরও অনেক কিছু নিয়মকানন পালন করতো। তবে মূল আকর্ষণ ছিল তালের শাঁস খাওয়া। গাড়ু সংক্রান্তির আগের দিন বিকেল বেলায় ঠাকুমা তালের আঁটি গুলোকে সুন্দর করে ধুয়ে রাখতো। আর এই দিন বাবা ওগুলোকে কেটে দিতে এবং আমরা খুব আনন্দ করে খেতাম।

আমার মনে আছে মায়ের পুজো দেওয়া হয়ে গেলে, আমাদের ঘরের চারপাশে মা ছোট্ট একটা লাঠি দিয়ে কুলো পেটাতো এবং একটা ছন্দ বলত,-

"আশ্বিন গেলো কার্তিক এলো,
মা লক্ষ্মী ঘরে এলো"

আজও যেন এই মায়ের গলায় গাওয়া এই ছন্দ গুলো শুনতে পাই আনমনে। তার সাথে ভেসে আসে সেই কুলো পেটানোর আওয়াজও। ভোরবেলা উঠে সেই হলুদ নিমপাতা বাটার গন্ধ ভেসে আসে নাকে, কেমন যেন মনে হয় ঠোঁটের কোণে আজও তেঁতুলের টক স্বাদ অনুভব করতে পারি।

কাজল পড়লে চোখের কোণে ঠিক যেমন জল আসে, পুরনো কথাগুলো ভেবেও চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে আজও। সত্যিই কতো বড় হয়ে গেলাম। পিছনে ফেলে এলাম কত অজস্র স্মৃতি, যা এ জীবনে আর কখনো ফেরত পাব না।

IMG_20241016_232012_124008.jpg
"সকল মশলার কৌটা আজ ধোঁয়ার নিয়ম আমাদের বাড়িতে"

যাইহোক অন্যান্য বারের থেকে খুব ছোট আয়োজনেই আগামীকাল বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো হবে। তবে আয়োজন যতই ছোট হোক না কেন, নিয়ম অনুসারে করতে গেলে সমস্তটাই পালন করতে হয়।

তাই আজ রান্না ঘরের সমস্ত কাজ সারতে অনেক লেট হলো। তবে শেষ পর্যন্ত সবটা করার গেছে, এমনকি ফ্রিজও সম্পূর্ণ পরিষ্কার করা হয়েছে, কারণ আগামীকাল আমরা আমি আমিষের কোনো কিছু ছোবো না।

তবে যেমন বললাম তিথি অনুযায়ী সমস্ত পুজোই এবার ওলট-পালট হয়েছে। লক্ষ্মীপূজোর দিন আমার শ্বশুর বাড়ির নিয়ম অনুসারে একটুখানি মাছ খেলেও খেতে হয়। তবে একই দিনে গাড়ু সংক্রান্তি হওয়ায় এবার সেই নিয়মটা রক্ষা করা সম্ভব হবে না। আজ ডিনার করতে বসেই এই নিয়ে শাশুড়ি মায়ের সাথেও কথা হচ্ছিলো।

সত্যি বলতে শাশুড়ি মা না থাকলে, এই নিয়মের কতখানি আমার একার পক্ষে পালন করা সম্ভব হবে আমি জানিনা। তবে যতদিন তিনি আছেন, চেষ্টা করবো এগুলো পালন করার, কারণ আমি বিশ্বাস করি সমস্ত নিয়মের পিছনে ঠিক কোনো না কোনো ব্যাখ্যা আছে।

যাইহোক এই ছিলো আজকের লক্ষ্মী পূজার প্রস্তুতি পর্ব। আগামীকাল কিভাবে পুজোর সম্পন্ন হল সে কথা অবশ্যই আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।

এই মুহূর্তে সত্যিই অনেকখানি ক্লান্ত অনুভব করছি। আগামী কাল আবার উপোস থাকতে হবে। সকালবেলায় উঠে পূজোর জোগাড় করতে হবে, সারাদিন জুড়ে কাল পুজোর ব্যস্ততা থাকবে, তাই আজকের মত এখানেই শেষ করি।

পরবর্তী পর্বে আপনাদের সাথে লক্ষ্মী পূজার কিছু মুহূর্ত অবশ্যই শেয়ার করবো। সকলে খুব ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। শুভরাত্রি।

Sort:  
Loading...