"ইচ্ছাপূরণের একটি দিন"

in Incredible India5 days ago (edited)
IMG_20240708_183237.jpg
"আজকের কিছু ভালো লাগার মুহুর্ত"

Hello,

Everyone,

আশাকরি আপনারা সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন এবং আপনাদের আজকের দিনটি অনেক ভালো কেটেছে। সকাল থেকে অনেকখানি ব্যস্ততার মধ্যে ছিলাম, যে কারণে বেশ বেলা হলো পোস্ট লিখতে বসতে।

IMG_20240708_175637.jpg
"রাস্তা থেকে তোলা মন্দিরের ছবি"

বহুদিনের একটি ইচ্ছাপূরণের গল্প শেয়ার করবো আজ আপনাদের সাথে। আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে আমার বাপের বাড়ি থেকেও বেশ কিছুটা দূরে, একটি মনসা কালী বাড়িতে আমার বান্ধবীদের সাথে গিয়েছিলাম।

তখন সেই জায়গাটির অনেক বেশি নাম শুনেছিলাম এবং সেখানকার ঈশ্বর অনেক বেশি জাগ্রত শোনাতে যাওয়ার আগ্রহ বেড়েছিলো। আমরা যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, তারা জীবনের খুব খারাপ সময় এলে ঈশ্বরের শরনাপন্ন হয়ে থাকি। এছাড়াও নিজের মনের কোনো সুপ্ত ইচ্ছা পূরণের জন্য, ঈশ্বরের কাছে মানত করি। সেই ইচ্ছা পূরণ হওয়ার পরে আমরা যেখানে মানত করি, সেখানে গিয়ে পুজো দিয়ে থাকি।

যখন বান্ধবীদের সাথে সেই মন্দিরে গিয়েছিলাম তখনও শুভর সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো। তবে সব সম্পর্কের মতনই আমাদের সম্পর্কেও অনেক বেশি ওঠাপড়া ছিলো। তবে সেই সময় আমার অনুভূতি এতটাই বেশি ছিল যে, সেই মন্দিরে পুজো দিয়ে আমি মানত করে এসেছিলাম।

IMG_20240708_115337.jpg
"আমরা দুজন"

যদি শুভ আর আমি একসাথে থাকতে পারি, তাহলে আমরা একবার অবশ্যই ওই মন্দিরে পুজো দিতে যাবো। তবে এই কথাও সত্যি যে, ঈশ্বর যদি না চান তাহলে আমরা কোনো কাজই করে উঠতে পারি না। কারণ আজ প্রায় ১৫ বছরের মধ্যে আমরা দুজন একসাথে, মন্দির গিয়ে পুজো দেওয়ার সময় করে উঠতে পারিনি, বা বলা যেতে পারে ঈশ্বর আমাদেরকে সেই সুযোগ করে দেননি।

এর আগে বহুবার বাপের বাড়িতে গিয়েছি, কিন্তু তখন সব সময় মনে হতো এবার থাক,পরের বার এসে ঠিক যাবো। এইরকমভাবে ভাবতে ভাবতে আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। বরং এখন বাপের বাড়িতে যাওয়াটাই বন্ধ হয়ে গেছে, যেহেতু বাড়িতে কেউ থাকে না।

IMG_20240708_114950.jpg
"সবুজে ঘেরা চারিদিক"
IMG_20240708_114939.jpg
"ছোট্ট একটি পুকুর"

এর মধ্যে শুভর সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বললাম এবং দুজনেই ফিল করলাম যে, আর কখনোই আমার বাপের বাড়িতে গিয়ে তেমন ভাবে থাকা হবে না তাই, পূজোটা আমাদেরকে শ্বশুরবাড়ি থেকেই দিতে হবে। তবে শ্বশুরমশাইয়ের শরীর খারাপ, শুভর অফিস, সবকিছু মিলিয়ে কিছুতেই যেন হয়ে উঠেছিল না।

অবশেষে গতকাল শুভ বললো, সোমবার দিন আমার কাজের চাপ কম আছে, তাই ছুটি নেওয়া সম্ভব। যদি পুজো দিতে চাই তাহলে কালকে যেতে পারি। তাই খুব বেশি দেরি না করে গতকাল রাতেই রওনা করেছি। গতকাল রাতে হাবরার মামা বাড়িতে ছিলাম।

IMG_20240708_101734.jpg
"নাট মন্দিরে অপেক্ষা করার সময় তোলা ছবি"

আর ওখান থেকে উঠে ভোরবেলা স্নান সেরে রওনা দিলাম। তবে যেহেতু পথ পরিচিত নয়, সবার কাছে জিজ্ঞাসা করে করে আমাদের সাড়ে নটার বেশি বেজে গিয়েছিলে পৌঁছতে। সেখানে পৌঁছে জানতে পারলাম পুজো শুরু হয় ১০:৩০ থেকে। তাই সেখানে বসে বসে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম।

নির্দিষ্ট কিছু দিন আছে যেদিন মন্দিরে অনেক বেশি ভীর হয়। তবে নিত্য পুজোয় ততটাও ভিড় হয় না। তবুও আমাদের মতন তিন চার জন এসেছিল। বেশ কিছুক্ষণ বাদে পূজো শুরু হলো। প্রথমে রাধা কৃষ্ণের পূজা দিয়ে মন্দিরের পূজো শুরু হয় এবং পরবর্তীতে এসে মনসাকালী ঠাকুরের পূজা হয়ে থাকে। ওখানে একই মুর্তিতে মনসা ও কালী ঠাকুরের মূর্তি একত্রে গড়া। এটাই ওখানকার বিশেষত্ব।

ওখানে ছবি তোলার অনুমতি নেই। তাই আমি আপনাদের সাথে সেখানকার ছবি শেয়ার করতে পারলাম না । তবে পুজোর যে বিষয়টি দেখলাম, সেখানে পুরোহিত বাম হাতে পুজো করেন, ঠিক যেমনটা আমরা চাঁদ সদাগরের গল্পতে পড়েছিলাম। তেমনভাবেই এই মন্দিরের পূজা হয়ে থাকে।

খুবই নিষ্ঠা সহকারে পূজা হয়। ১৫ বছর আগে আমি মন্দিরের যেমন চিত্র দেখে এসেছিলাম, আজ তার সাথে কোনো মিল নেই, কারণ এই ১৫ বছরের মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, যেটা সত্যিই ভালো লাগার।

IMG_20240708_115007.jpg
"কখনো পাঁকা রাস্তা"
IMG_20240708_115227.jpg
"কখনো মেঠোপথ"

পুজো শেষ হতে প্রায় সাড়ে বারোটার বেশি বেজে গেলো। তারপর সেখান থেকে আমরা অল্প প্রসাদ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। যাওয়ার সময় বেশি সময় লেগেছিল কারণ,সকলের কাছে জিজ্ঞাসা করতে করতে গিয়েছিলাম। তাই আসার সময় ততটা অসুবিধা হয়নি।

ফেরার পথে আমি আমার দিদি বাড়িতে ওর সাথে দেখা করলাম। তারপর সোজা চলে এলাম মামার বাড়িতে। ততক্ষণে অনেকটাই বেলা হয়ে গিয়েছিলো। কয়েকটা পোস্ট রিচেক করে আমি খেতে বসলাম। খাওয়া শেষ করার পর মনে হল গতকাল পোস্ট লেখা হয়নি, তাই অন্তত আজকের এই অভিজ্ঞতার কথাটা আপনাদের সাথে শেয়ার করি।

শুভকে খুব বেশি ঠাকুরের স্থানে যাওয়ার জন্য রাজি করানো যায় না। তবে এই বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ওর সাথে কথা হয়েছে, আর বলতে পারেন আমার বিশ্বাসের জায়গা থেকে আমার মানত করার বিষয়টিকে মাথায় রেখে, ও আমার সাথে যেতে রাজি হয়েছে। তবে সেখানে গিয়ে ওর বেশ ভালো লেগেছে।

IMG_20240708_115124.jpg
"ব্রীজের তলা দিয়ে রয়ে চলা বিল কচুরিপানায় ঢেকে আছে"
IMG_20240708_115121.jpg
"পথের মধ্যে ছোট্ট একটি ব্রীজ"

কারণ চারিদিকে নিরিবিলি পরিবেশ, সবুজে ঘেরা গ্রামের মেঠো পথ, একটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন মন্দির, যেখানে আজও ভক্তি ভরে ঈশ্বরের আরাধনা হয়ে থাকে। সবকিছু মিলিয়ে আজ সকালটা বেশ উপভোগ্য ছিলো। তবে সবথেকে বেশি শান্তি লেগেছে আমার। আমি এত বছর বাদে হলেও আমার মানত সম্পূর্ণ করেছি।

ভগবানের থেকে খুব বেশি চাওয়া নেই আমার। জীবনের বাস্তবতা যখনই বুঝতে শিখেছি, তারপরে থেকে এখন একটা জিনিসই চাই, জীবনে যা কিছু ঘটবে তা বদলানোর ক্ষমতা আমার নেই। তবে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা যাতে আমি ভালোভাবে মেনে নিতে পারি, তার জন্য ঈশ্বর যেন আমার ভেতরে ধৈর্য্য এবং সহ্য করার ক্ষমতা দিয়ে সাহায্য করেন।

IMG_20240708_115050.jpg
"চাষের জমি"
IMG_20240708_115038.jpg
"কাদামাখা রাস্তা"

এত বছর বাদে হলেও মানত পূরণের ইচ্ছাটা আমার পূর্ণ হয়েছে, এর জন্যই আমি অনেক বেশি খুশি। ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে এতক্ষণ পর্যন্ত তেমন ভাবে বিশ্রাম হয়নি, তাই শারীরিকভাবে বেশ ক্লান্ত হলেও, মানসিক তৃপ্তি আজ অনেকখানি।

তবে খারাপ লাগার জায়গা হলো, মন্দিরে যাওয়ার পথে এবং আসার পথে নিজেদের শূন্য বাড়িটা, মনের মধ্যে কেমন যেন হাহাকার তৈরি করেছে । আর এর অনুভূতিটা আসলেই ব্যক্ত করার মতো নয়। যাইহোক এটাই জীবন, আর জীবন চলে আপন গতিতে, কোনো কিছুর বিনিময়ে তাকে আটকে রাখা যায় না।

এভাবেই কাটলো সকালটা। আর বহু বছরের ইচ্ছাও আজ পুরানো হলো। সকলের সুস্থতা কামনা করে শেষ করছি। ভালো থাকবেন।

Sort:  
 5 days ago 

15 বছর আগের মানত পুরন করতে পেরে ভালো লাগবে এটাই স্বাভাবিক। আপনি আপনার প্রিয় মানুষটিকে চেয়েছিলেন ঈশ্বরের কাছে। এবং তিনি আপনার মনের বাসনা পূরণ করেছে। আশা করি আপনার দাম্পত্য জীবন আরো অনেক বেশি সুখী হবে।

আসলে আমরা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি এবং ঈশ্বরের কাছে আমাদের ছোট ছোট চাওয়া বা পাওয়া গুলো চেয়ে থাকি। আমরা তার কাছে অনেক কিছু চেয়ে থাকি এবং তার বদলে অনেক কিছু দিতে চাই বা সেখানে গিয়ে কিছু করতে চাই। যাই হোক আপনাদের দাম্পত্য জীবনে আপনি একবারও সুযোগ পাননি সেখানে যাওয়ার। তবে সেই সুযোগটি আপনি পেয়েছেন এবং সেখানে গিয়ে আপনার মানত আপনি পূরণ করে আসতে পেরেছেন এটা জানতে পেরে ভালো লাগলো।

এবং ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি আপনাদের জীবন আরো সুন্দর করুক এবং আপনাদের সামনের দিন গুলো আরো সুন্দর হোক শুভকামনা রইল আপনাদের জন্য।

 3 days ago 

আপনার প্রার্থনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আসলে আরও অনেক আগে আমার এই পুজো দিয়ে আসা উচিত ছিলো। কিন্তু কথায় আছে না, সব কিছুর একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে, আর সেই সময় অনুযায়ী আমাদের জীবনে সবকিছু হয়ে থাকে। তাই হয়তো এতো বছর পরে যাওয়া সম্ভব হলো। তবে দুজনে একসাথে ওখানে গিয়ে পুজো দিয়ে বেশ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে আমার পোস্ট পড়ে এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।

Loading...

আমাদের কোন আশা যদি দীর্ঘদিন পরে পূর্ণ হয় তাহলে আমাদের খুশির কোন সীমা থাকে, ১৫ বছর পর আপনার আশা পূরণ হয়েছে সেটা খুব আনন্দের মুহূর্ত ছিল, আশা পূরণের গল্প পড়ে ভাল লাগল, ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। ভাল থাকবেন।

 3 days ago 

সত্যিই তাই, ওখানে পুজো দিয়ে অদ্ভুত তৃপ্তি পেয়েছি। এতো বছর বাদে ইচ্ছাপূরণ হলে অনেক ভালো লাগে। আসলে আমাদের জীবনে এমন অনেক অনুভুতি থাকে, যেগুলো বহু বছর পরেও যেন একই রকম থাকে, মাঝখানে শুধু অনেক গুলো বছর পেড়িয়ে যায়। আপনার মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

 4 days ago 

আসলে যখন আমরা ঈশ্বরের কাছে একটি জিনিস চাই সে জিনিসটা যখন আমরা পেয়ে যাই তখন সেই ঈশ্বরকে আমরা খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যাই। আমরা এটা মনে করি না আজকে সেই ঈশ্বরের কারণেই এসব কিছু হয়েছে যাই হোক আপনি আপনার ইচ্ছাটা পূরণ করেছেন আপনার মূল্যবান সময়টা বের করে আপনার ঈশ্বরের কাছে গিয়ে চাওয়া জিনিসটা আপনি পূরণ করেছেন আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আপনার মনের ইচ্ছা পূরণ করার এই পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য, এবং আপনার ফটোগ্রাফি গুলো অনেক সুন্দর ছিল।

 3 days ago 

একদম সঠিক বলেছেন আপনি, মনের ইচ্ছাপূরণ হয়ে গেলে, আমরা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলে যাই। আমিও অনেকটা দেরি করে মানতের পুজোটা দিতে গিয়েছিলাম। তবে শেষপর্যন্ত দুজনে পুজো দিয়ে সত্যিই শান্তি পেলাম। আপনাকে ধন্যবাদ আমার পোস্ট পড়ে এতো সুন্দর মন্তব্য শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।

image.png
CONGRATULATIONS!!

This post has been upvoted - Steem's Angels with @steemcurator0x/ Curated by: @solperez

«El único modo de hacer un gran trabajo es amar lo que haces» Steve Jobs.

 2 days ago 

Thank you so much for your support @solperez. 🙏

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 58613.96
ETH 3153.58
USDT 1.00
SBD 2.43