"মায়া আসলে বাড়ির প্রতি হয় না, মায়া হয় সেই বাড়িতে থাকা মানুষগুলোর প্রতি"
আমাদের বাড়ির সামনে সিঁড়িতে বসে তোলা, আমার ও আমার বান্ধবীর অনেক পুরনো একটি ছবি |
---|
Hello,
Everyone,
আশাকরি আপনারা সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন এবং আপনাদের সকলের আজকের দিনটি অনেক ভালো কেটেছে।
বেশ কিছুদিন যাবৎ শুধু ভেবেই চলেছি যে একবার বাড়িতে যাব, কিন্তু সত্যি কথা বলতে কিছুতেই যেন সাহস যুগিয়ে উঠতে পারছি না। যেই বাড়িটাতে ছোট থেকে বড় হয়েছি, যেই বাড়িটা ঘিরে জীবনের এত মধুর স্মৃতি, আজকে সেই ফাঁকা বাড়িটাতে গিয়ে ওঠার মতন সাহস আমার ভেতরে নেই।
আমি জানিনা এটাকে আদেও সাহস বলে নাকি মনের টান, কিন্তু কিছু একটা ভিতর থেকে অনুভব করছি না,যার জন্য ওই বাড়িটিতে বারবার ফিরে যেতে পারি, ঠিক আগের মতো।আজ সন্ধ্যার পরে শুভ অফিস থেকে ফিরলে দুজন মিলে অনেকক্ষণ কথা বললাম।
শুভ অনেকদিন ধরেই আমাকে বাড়িতে যেতে বলছে কিন্তু ও বুঝতে পারছি আমি বাড়িতে যেতে চাইছি না, কারণ আমার ভেতরে অনেক খারাপ লাগা কাজ করছে। জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে হয়তো এইরকম ভাবে আমরা কখনো কথা বলিনি। কিন্তু আজ ওর সাথে কথা বলে বুঝলাম আমার বাড়িতে যাওয়া উচিত, কারণ বাস্তবটাকে মেনে নেওয়া আমাদের জীবনের সবথেকে কঠিন কাজ। কিন্তু এটা মেনে না নিয়ে আমাদের বাঁচার উপায় নেই।
আমার বিয়ের পর থেকে কোনোদিন এমন হয়নি যে, টানা তিন'মাস আমি বাড়িতে যাইনি। তখন হয়তো ভাবতাম বাড়িটার উপরেই অনেক মায়া, যেই কারণে ওই বাড়িটাতে ছুটে যেতে মন চায়।
এই হাসিমুখ গুলো আর কখনোই একসঙ্গে দেখা হবে না। আমার বাবা, আমার ছোটদি ও আমার মা, ছবিটি আমি তুলেছিলাম |
---|
আমার মা মারা যাওয়ার পরে ওই বাড়িতে থাকতে খুবই কষ্ট হতো। কিন্তু তবুও যেন আজকের মতন এমন নিঃসঙ্গতা কখনো অনুভব করিনি। কারণ তখনও জানতাম যখন গাড়ি থেকে বাড়ির সামনে নামবো, তখন কেউ একজন হাসিমুখে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে।
এই অভ্যাসটা ছোটবেলা থেকেই তৈরি হয়েছিল, যখনই কোথাও থেকে বাড়িতে ফিরতাম, তখন কেউ না কেউ সব সময় বাড়ির সামনেই থাকতো সেটা মা হোক বা ঠাকুরমা বা দিদিরা। ঠাকুমার সমস্ত কাজ শেষ করে যেদিন বাড়ি থেকে ফিরেছিলাম,ভেবেছিলাম তার কয়েকদিন বাদেই আবার বাড়িতে যাব। কারণ বেশ কিছু আজ এখনো বাড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
মাঝেমধ্যেই ভাবি বাড়িতে গিয়ে দুটো দিন থেকে সেই সকল কাজগুলো গুছাবো, কিন্তু ভাবনাটা কেমন যেন ভাবনাতেই আবদ্ধ থাকে। কোনো না কোনো অজুহাতে সেই যাওয়াটা পিছিয়ে দিই। নিজের মনকে বারংবার বোঝাই না থাক আর কয়েকদিন পরেই যাবো।
বিষয়টা আসলে একেবারেই অন্যরকম। যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সত্যিটাকে মেনে নিয়ে, বাস্তবের মুখোমুখি হতে হবে, এটা ভেবেই নিজের যাওয়াটাকে নিজেই পিছিয়ে দিই। কারণ ওই তালা বন্ধ বাড়িটার মধ্যে আজ আর কোন প্রাণের ছোঁয়া নেই। আজ আর কোনো টান নেই। সত্যিকার অর্থে ওই বাড়ির আজ আর কোন অস্তিত্ব নেই। শুধু বাড়িটি বাড়ির মতনই পড়ে আছে। বাবাও যদি থাকতো ওই বাড়িতে,তাহলেও হয়তো বাড়িতে গিয়ে কাউকে ডাকার মত মানুষ পেতাম।
ঠাকুরমা ছবি তুলতে একদমই পছন্দ করতেন না। এই কারণে আমাদের সঙ্গে তার খুব বেশি ছবি নেই। অনেক পুরনো ছবি খুঁজে এই একটি ছবি পেলাম। আমার বড়দি, আমার ঠাকুরমা,আমার বড়দির ছেলে ও আমার ছোটদি |
---|
কিন্তু আজ সেই রাস্তাও বন্ধ। অনেক দ্বিধাদ্বন্দ কাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবার বাড়িতে যেতেই হবে,কারণ আমরা আর যাই করি না কেন বাস্তবতা থেকে বেশি দিন পালিয়ে বাঁচতে পারি না। এই কারণে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক আমাদেরকে কখনো না কখনো বাস্তবের মুখোমুখি হতেই হয়।
যদিও আমি জানি, আমি বাড়িতে যাওয়ার পর আশেপাশের অনেকেই আসবে। তাদের সাথে দেখা হবে, কথা হবে, ভালো সময়ও কাটাবো, কারণ ছোটবেলা থেকেই মানুষগুলোর সাথে বড় হয়েছি, কিন্তু প্রত্যেকটা মানুষের সঙ্গে হেসে খেলে কথা বললেও, মনের ভেতরে কিন্তু একটা অদ্ভুত শূন্যতা কাজ করবে। যেটা হয়তো কাউকে বলে বোঝানো সম্ভব হবে না।
তবে এটা মেনে নিতেই হবে। যতদিন ওই বাড়িটা থাকবে, ততদিন আমাদেরকে এই বাস্তবতা মেনেই ঔ বাড়িতে ফিরতে হবে যে,আমার নিজের আর কেউ নেই ওই বাড়িটিতে যে আমাকে আপন করে ডাকবে। সুতরাং শুধুমাত্র বাড়িটিকে দেখার জন্য, পুরনো স্মৃতিগুলোকে আরো একবার মনে করার জন্য, ফিরে যেতে হবে বারংবার। এই শূন্যতা, এই নিঃসঙ্গতা, ঠিক কতটা বেদনাদায়ক, সেটা আসলেই কাউকে বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
ঠিক এই মুহূর্তে আমিও নিজের মনের অনুভূতি আপনাদের সাথে হয়তো ভাষায় লিখে প্রকাশ করতে পারছি না। তবে আমি আপনাদের হয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, এইরকম নিঃসঙ্গতা যেন ঈশ্বর কাউকে না দেন। যদি তিনি কাউকে বাড়ি দেন, তাহলে যেন সেই বাড়িটিকে বাড়ি তৈরি করে রাখার মতন মানুষও দেন। বাড়ির মানুষগুলিকে যেন সময়ের আগে তিনি নিজের কাছে ডেকে না নেন।
পাশের বাড়ির দুটি বাচ্চার সঙ্গে তোলা একটি ছবি। তখনো পর্যন্ত এই বাড়িতে ফেরার একটা অন্যরকম টান ছিল,যেটা আজ আর নেই |
---|
কারণ যারা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়,তারা আসলে তাদের সাথে ভালো স্মৃতি নিয়ে চলে যায়। কিন্তু যারা রয়ে যায় তাদের কাছে শুধু পুরনো স্মৃতি, নিঃসঙ্গতা, আর অসহায়তা রয়ে যায়। যেগুলোকে সঙ্গে নিয়ে তাদেরকে আজীবন চলতে হয়।
যাইহোক বাড়ি যাওয়ার আগের অনুভূতিগুলি আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। বাড়িতে গিয়ে ঠিক কি পরিস্থিতি হবে, কেমন লাগবে, সেই কথা নিশ্চয়ই পরবর্তী কোনো পোস্টে আপনাদের সাথে শেয়ার করব। সকলে ভালো থাকবেন। শুভরাত্রি।
জি দিদি আপনি সঠিক বলেছেন মায়া আমাদের বাড়ির প্রতি হয় না,,,মায়া হয় বাড়িতে থাকা প্রান প্রিয় মানুষ গুলোর জন্য।
আপনার পোস্ট পড়ে আপনার সম্পর্কে অনেক বিষয় জানতে পারলাম। আপনার মা আর এই সুন্দর পৃথিবীতে আর বেঁচে নেই। আমরা সবাই এই সুন্দর পৃথিবী থেকে একদিন না একদিন চলে যাবো এই চরম বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতে হবে। আপনার মার জন্য দোয়া করি সৃষ্টি কর্তা তাকে যেন ভালো রাখেন।
আপনার গ্রামিন জীবন অনেক সুন্দর ছিলো আপনার পোস্ট পড়ে জানতে পারলাম। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
Amiga entido por lo que estás pasando en estos momentos es muy difícil regresar a una casa donde está vacío y no vas a encontrar a tu seres queridos pero lo importante es que donde estén te acompaña y te darán esa fuerza para que puedas ir a la casa. Saludos y bendiciones.🤗
একদমই তাই দিদি, এই আপন মানুষদের প্রতি একটা অদৃশ্য মায়া তৈরীর হয়। তখন ঐ মানুষের অনুপস্থিতি হয় তখন আর আগের মতো সেই অনুভূতি থাকে না। তবে ক্ষণে ক্ষণে সেই স্মৃতিগুলো জেগে ওঠে হৃদয়ে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি লেখা আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য।