"ভাইফোঁটার আয়োজন"
|
---|
Hello,
Everyone,
বাঙালির যে বারো মাসে তেরো পার্বণ এই কথাটি বোধহয় প্রত্যেকেরই জানা। আর এই প্রতিটি পার্বণেরই একটি বিশেষত্ব আছে। গতকালও ছিলো এই রকম একটি পার্বণের দিন। যে দিনটি সাধারণত ভাই-বোনেদের জন্য একটি বিশেষ দিন ছিলো।
আশাকরি কমবেশি সকলেই জানেন, গতকাল ছিল ভাইফোঁটা। যদিও অনেকের বাড়িতে এই ভাইফোঁটা উৎসব পালনের অনেক নিয়ম কানুন রয়েছে। তবে আমাদের বাড়িতে সেই অর্থে কোনো নিয়ম নেই।
|
---|
শাশুড়ির মুখে শুনেছি, শুভ জন্মানোর পর থেকে আমার ননদ এমনিতেই এই দিনে ভাইকে ফোঁটা দিতো। সত্যি বলতে সমস্ত দিদিরা ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় সারা বছর প্রার্থনা করে ঠিকই, তবে এই বিশেষ একটা দিনকে কেন্দ্র করে, সেই প্রার্থনা যেন আরো বেশি মঙ্গলময় হয়। এই বিশ্বাস থেকেই সকলে এই ভাইফোঁটার দিনটিকে একটু বিশেষভাবে পালন করে।
যদিও প্রতিবার এই দিনটাকে পালন করার জন্য অন্যরকম একটা উচ্ছ্বাস থাকে আমাদের মনে, তবে শ্বশুর মশাইয়ের শারীরিক অবস্থার কারণে, সমস্ত উৎসব পালন করা হলেও মনের ভিতরে সবারই চিন্তা কাজ করে। তবে এই অবস্থাতেও এই সকল পড়ে দিনগুলোকে পালন করার উদ্দেশ্য ওনার সাথে কাটানো কিছু মুহূর্তকে স্মৃতির পাতায় যোগ করা।
আমার বিয়ের পর থেকে এই ভাইফোঁটার দিনে মূলত আমরাই ননদের বাড়িতে গিয়ে দিনটিকে পালন করতাম। তবে গত দুবছর যাবৎ আমাদের বাড়িতেই পালিত হচ্ছে। এমনকি আমার শাশুড়ি মায়ের ছোট ভাই অর্থাৎ আমার ছোট মামা শ্বশুরও এই দিন আমাদের বাড়িতে আসেন, শাশুড়ি মায়ের কাছ থেকে ফোঁটা নিতে।
তবে পারিবারিক কিছু সমস্যার কারণে গতকাল যে উনি আসতে পারবে এটা আমরা কেউই আশা করিনি। তবে গত পরশুদিন বেশ রাতের দিকেই উনি ফোন করে জানিয়েছিলেন, ওনরা সকালে আসবেন এবং দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে আবার বেরিয়ে যাবেন।
তাই গতকাল সকালটা একটু তাড়াহুড়ো করেই শুরু হয়েছিল। যেহেতু দুপুর সকলের খাবারের আয়োজন, তাই কাজের চাপটা একটু বেশিই ছিলো। আর দুর্ভাগ্যবশত গতকালই আমাদের বাড়িতে যিনি কাজ করেন, তিনিও ছুটি নিয়েছেন। অন্যদিকে কোমরের কারণে আমি খুব বেশি কাজ করতে পারছি না। তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যতটুকু সম্ভব কাজ করেছি।
মামা শ্বশুরেরা সকল দশটার মধ্যেই চলে এসেছিলেন। সকাল বেলায় তাদের ব্রেকফাস্টের এর জন্য আমি রুটি করেছিলাম, শাশুড়ি মা ছোলার ডাল তৈরি করেছিলেন,আর সাথে মিষ্টি ছিলো।
তবে ব্রেকফাস্টের আগে সকলে রেডি হয়ে নিয়ে ভাইফোঁটার পর্ব শেষ করে নেওয়া হয়েছিলো। কারণ সকলে উপোস ছিল।আর তিথি অনুযায়ী ওই সময়ের মধ্যে ফোঁটা দিতে হতো।
তাই প্রথমে শাশুড়ি মাকে দিয়ে ফোঁটা দেওয়া শুরু হয়েছিল।নিজের ছোট ভাইয়ের সাথে সাথে তিনি আমার ননদের দুই ছেলেকেও ফোঁটা দিয়েছিলেন।
ফোঁটা দেওয়া, আশীর্বাদ করা, মিষ্টি খাওয়ানো, সমস্ত পর্বই একে একে শেষ করলেন। এরপর আমার ননদ, শুভকে এবং মামার ছেলে দুজনকে ফোঁটা দিলেন। সেই সকল মুহূর্ত গুলোকে ক্যামেরাবন্দি করার দায়িত্বে ছিলাম আমি।
ফোঁটা দেওয়ার পর্ব শেষ হতে সকলে মিলে আরও কিছু ছবি তুলেছিলাম। আসলে এই ছবিগুলোই আমাদের কাছে স্মৃতি হয়ে থাকবে। গতকাল রান্নার সমস্ত দায়িত্ব ছিলো ননদের উপরে। আমি খুব বেশি কাজ করতে পারছিলাম না।
তাই একদিকে ননদ চিকেন কষা রান্না করেছিলো, আর অন্যদিকে শাশুড়ি মা ইলিশ মাছ ভেজে, পোলাও রান্না শেষ করেছিলেন। এর থেকে বেশি আর কোনো পদ রান্না করা হয় নি। কারণ হাতে সময় ছিলো কম, দুপুরের খাওয়া-দাওয়া তাড়াতাড়ি শেষ করতে হতো, কারণ মামারা তিনটে নাগাদ খেয়ে বেরিয়ে যাবে এমনটাই বলেছিলেন।
তাই রান্নার শেষে সমস্ত কিছু শাশুড়ি মা গুছিয়ে নিলেন। আর ননদ সবাইকে খেতে দিয়ে দিয়েছিলো। মামাদের খাওয়া দাওয়া শেষে ওনরা বিশ্রাম নিলেন। তখন আমরা খাওয়া দাওয়া সেরে নিয়েছিলাম। কাল শ্বশুর মশাইয়ের মনটাও খুব ভালো ছিলো। হাসিখুশি ভাবে সকলের সাথে কথাও বলছিলেন।
তবে গতকাল সুগারটা খুব ওঠা নামা করছিলো। যার কারণে দুপুরের পর থেকে ওনার শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ হতে শুরু করেছিলো। তাই সারাদিনের আনন্দের পরে ওই মুহূর্তগুলো সকলের জন্য বেশ চিন্তার ছিলো।
মামারা চলে গেলেও ননদরা ছিলো। বেশ রাতের দিকেই তারা বাড়িতে গিয়েছিলো। শ্বশুর মশাইয়ের শারীরিক অবস্থা দেখে একবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো থেকে যাবে। কিন্তু রাতের দিকে ওনার শরীর কিছুটা ঠিক লাগায় ওনরা বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
যেহেতু আজ সোমবার, ননদের হাজব্যান্ডের অফিস রয়েছে, ছেলের স্কুল রয়েছে, সবকিছু মিলিয়ে থেকে যাওয়ার মত পরিস্থিতি নেই। তবে শ্বশুর মশাইয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি যদি হতো, তাহলে ওনাদের থেকে যেতেই হতো।
এক কথায় আনন্দ উপভোগের পাশাপাশি এই এক অনিশ্চয়তা কাজ করছে আমাদের সকলের মধ্যে। মুহূর্তের মধ্যে শশুর মশাইয়ের শরীর এতোটাই খারাপ হচ্ছে যে, সকলেই চিন্তার মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। আজ সকালে আবার অনেকগুলো টেস্টের জন্য ব্লাড দেওয়া হয়েছে, এখন অপেক্ষা শুধু রিপোর্টের।
যাইহোক গতকালকের কিছু মুহূর্ত আজ এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আপনাদের ভাইফোঁটার দিন কেমন ভাবে কেটেছে, সেটা অবশ্যই জানাবেন।
সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আপনাদের প্রত্যেকের আজকের দিনটি এবং আগামী দিনগুলো খুব ভালো কাটুক, এই প্রার্থনা করে আজকের পোস্ট আমি এখানে শেষ করছি। ভালো থাকবেন।