বাঙালির চৈত্র সংক্রান্তি

in Incredible India4 months ago
Colourful Festive Happy Gudi Padwa Instagram Post_20240414_020058_0000_020106.png

"Edited by Canva"

Hello,

Everyone,

"বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ" এই কথাটা বোধ হয় সকলেই কোথাও না কোথাও শুনেছেন। কখনো কখনো বিষয়টি নিয়ে বাঙালি হিসেবে গর্ববোধ করি ঠিকই, আবার কখনো কখনো বেশ বিরক্ত হই। কারণ অন্য কিছু নয়, এই সকল পার্বণ গুলো পালনের এতো নিয়মকানুন রয়েছে যে, সেগুলো কখনো কখনো করতে ভালো লাগে না।

তবে এ কথা সত্যি নিয়ম গুলো সঠিকভাবে পালন করার পর, মনের মধ্যে একটা অন্যরকম শান্তি ও ভালো লাগা কাজ করে। জানি না হয়তো দীর্ঘ দিনের অভ্যাস বলেই এমনটা অনুভূত হয়।

নতুন বছর শুরুর দিনেরও যেমন কিছু নিয়ম আছে, তেমনি বছরে শেষের দিনেও বেশকিছু নিয়ম কিন্তু পালন করতে হয়।।চৈত্র সংক্রান্তি সম্পর্কে সকলে নিশ্চয়ই কমবেশি জানেন, বা সকলেই কমবেশি কিছু নিয়ম পালন করেন।

1672344690977_010726.jpg

আজ আমাদের বাড়িতে পালিত কিছু নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের সাথে কথা বলবো। হতে পারে অনেকের বাড়ির নিয়মের সাথে মিলে যাবে, আবার অনেক জনের কাছে বেশ কিছু নিয়ম একটু অন্যরকম লাগবে।

গতকাল আপনাদের জানিয়েছিলাম, নীল ষষ্ঠীর কারণে বাড়িতে নিরামিষ রান্না হয় এবং আজ নিরামিষ হয়েছে "চৈত্র সংক্রান্তি" বলে। বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়ির নিয়মগুলো দেখে আসছি ঠিকই, তবে ব্যক্তিগতভাবে তার মধ্যে অনেক কিছুই আমি বিশ্বাস করি না। হয়তো তার কারণ এটাই যে, ছোটবেলা থেকে এই নিয়মগুলো আমি আমার বাড়িতে কখনো দেখিনি, যদি দেখতাম তাহলে এগুলো আমার জন্য অভ্যাসে পরিণত হতো।

1672344690977_010726.jpg

IMG_20240414_015932.jpg

যাইহোক চৈত্র সংক্রান্তির দিন ঘুম থেকে উঠে আমি শুভর জন্য অফিসের রান্না করতে গেলাম। আর শাশুড়ি মা আমাদের বাড়ির চারপাশটা ঝাড় দিয়ে, পরিষ্কার করে, একেবারে স্নান করে ঘরে এলেন। এটা উনি প্রতিবারই করে থাকেন। শুভর অফিস না থাকলে, এদিন সকালে আমাদের বাড়িতে রান্না হয় না। কারণ নিয়মানুসারে চৈত্র সংক্রান্তির দিন সকালে দই চিড়ে খেতে হয়।

তার সাথে মিষ্টি, খই, কলা দুধ যে যে রকম পছন্দ করে, সে সে রকমই খেতে পারে। এই নিয়মটি শুধুমাত্র আমার শ্বশুরমশাই পালন করেন। কারণ আমি, শুভ, আমার শাশুড়ি মা কেউই এগুলো খেতে পছন্দ করি না। যদিও এই নিয়মের যৌক্তিকতা জিজ্ঞেস করেন, সত্যি বলতে আমার জানা নেই।

1672344690977_010726.jpg

এরপর স্নান করা হয়ে গেলে দুপুরে "শত্রু ওড়ানো" বলে কিছু একটা নিয়ম এই বাড়িতে পালিত হয়। একটা পাত্রে এক মুঠো খই, একমুঠো ছাতু আর অল্প পরিমাণে ছাই মিশিয়ে, বাড়ির একদম মেন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে, পেছন দিক ফিরে বাড়ির সীমানার বাইরে, সেগুলোকে উড়িয়ে দিতে হয়।

এতে নাকি বাড়ির উপরে‌ কোনো খারাপ বা অশুভ দৃষ্টি থাকলে তা দূর হয়। অদ্ভুত এই নিয়মটি বরাবর আমার কাছে অপছন্দের ছিলো। এই নিয়মের যৌক্তিকতাও আমার কাছে নেই। তবে হ্যাঁ গত দুই তিন বছর ধরে এই নিয়মটি পালন করা বন্ধ হয়েছে। মা আমার কাছে স্বস্তির।

IMG_20240414_015801.jpg

চৈত্র সংক্রান্তির আরো একটি নিয়ম হলো "পাচন" রান্না করা। মটরডালের সাথে সমস্ত রকম সবজি মিলিয়ে একটা পদ তৈরি করা হয়, যাকে যা পাচন বলে। এর মধ্যে সমস্ত রকম সবজির সাথে সাথে, কাঁচা আম ও উচ্ছে ব্যবহার করা হয়। এই কারণে অনেক বাড়িতে এটাকে "তিতা পাচনও" বলা হয়ে থাকে।

এই নিয়মটি আমার মামা বাড়িতেও ছিলো এবং মনে পড়ে ছোটবেলায় দিদার রান্না করা হয়ে গেলে, মামা একটা বড় টিফিন বক্সে করে আমাদের বাড়িতে এই তরকারি দিয়ে আসতো। মায়ের এটি খুব প্রিয় ছিলো ।আমি খুব একটা ভালো খেতাম না।

বিয়ের পর থেকে নিয়ম রক্ষার্থে অল্প একটু খাইনি। তবে খেতে খুব একটা খারাপ লাগে না, একটু ভিন্ন ধরনের স্বাদ, তবে পুষ্টিগুনে ভরপুর। তাই ভালোবেসে নয়, পুষ্টি জন্য এটা আমি খেয়ে থাকি।

IMG_20240414_015742.jpg

আজ সকালে এই পাঁচন রান্না করার জন্য আমি সমস্ত রকম সবজি কেটে শাশুড়ি মাকে একটু সাহায্য করেছিলাম। তবে রান্নাটা সম্পূর্ণই তিনি করেছিলেন। আমি কমিউনিটির কাজে ব্যস্ত ছিলাম, সেই কারণে রান্নার রেসিপিটি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারলাম না। তবে লাঞ্চ করার আগে আমি একটা ছবি তুলেছি, যেটা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। খেতে সত্যি বেশ ভালো হয়েছিল।

1672344690977_010726.jpg

এইগুলো আমাদের বাড়ির নিয়ম। এছাড়াও চৈত্র সংক্রান্তি বাঙালির কাছে আরো একটি বিশেষ কারণে স্মরণীয় সেটি হল "চড়ক পূজা"। মহাদেব শিবের এই পূজার বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে।

এই পুজোর প্রস্তুতি অনেক আগে থেকে শুরু হয়। চৈত্র মাসের প্রথম দিন থেকে যারা চৈত্র মাসের শেষে এই পুজো করতে ইচ্ছুক, তারা সকলে নিরামিষ খাবার খায়। তাছাড়া তারা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন গ্রামে ভিক্ষা করে এবং সেই ভিক্ষা করে আনা চাল ও পয়সা দিয়েই ওই এক মাসব্যাপী তারা নিজেদের রান্না করে থাকেন। গ্রামের দিকে এই সকল মানুষদেরকে এক কথায় "চরক পুজার সন্ন্যাসী" বলে।

গ্রামের দিকে এই পূজোর প্রচলন অনেক বেশি। শহর এলাকায় প্রায় নেই বললেই চলে। ছোটবেলায় এই পুজো দেখতে নিয়ে যাওয়ার জন্য মায়ের কাছে অনেক‌ বায়না করতাম। আমাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে, একটা গ্রামে ওই পুজো হতো। তবে ঐ‌ পুজোটাকে কেন্দ্র করে সেখানে, ছোট একটা মেলাও বসতো। তাই পুজো দেখার পাশাপাশি মেলায় ঘোরার আনন্দ‌ও উপভোগ করার সুযোগ ছিল সেই সময়। আজকাল সেই পুজোটা হয় কিনা তাও জানিনা।

1672344690977_010726.jpg

যাইহোক এইভাবেই বাঙালি নিজেদের চৈত্র সংক্রান্তি কাটায়। তাছাড়া নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি‌ সকলে এই দিনেই করে থাকে। পয়লা বৈশাখ মানেই নতুন পোশাক পরার আনন্দ। আর সকলের মধ্যে একটা ভাবনা আছে‌ যে, এই দিন নতুন পোশাক পরলে, সারা বছরে কোনো অভাব থাকে না।

যদিও এর কোনোটার কোনো যুক্তি নেই, তথাপি বছরের পর বছর ধরে বাঙালি এই সকল নিয়ম পালন করে চলেছে। তাই চৈত্র সংক্রান্তি মানেই এই সমস্ত নিয়ম গুলো পালনের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে বলতে পারেন।।

যাইহোক চৈত্র সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে কিছু নিয়মের কথা আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আপনাদের বাড়িতে এর মধ্যে কোন নিয়মটি পালিত হয়, অবশ্যই মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন।

সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আগাম পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছা রইল সকলের জন্য। নতুন বছর প্রত্যেকের খুব ভালো কাটুক, সকলে সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন। শুভরাত্রি।

Sort:  
Loading...

শত্রু ওড়ানো ব্যাপারটা আমার কাছে নতুন লাগলো। পাঁচমিশেলি সব্জী দিয়ে তিতা পাচন খেতে আমার কিন্তু বেশ ভালোই লাগে। বাঙালি নিজের সংস্কৃতি ভুলে যেতে ভালোবাসে। চড়ক পূজা এখন গ্রামের দিকেও অনেকটাই কমে গেছে। চৈত্র সংক্রান্তি নিয়ে আপনার লেখাটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো।

TEAM 5

Congratulations! Your post has been upvoted through steemcurator08.

Curated by : @sduttaskitchen

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 58306.22
ETH 2596.07
USDT 1.00
SBD 2.39