"আদরের চিনি"

in Incredible India3 days ago
IMG_20240710_112004.jpg
"চিনির দুষ্টুমির কিছু মুহুর্ত"

Hello,

Everyone,

আজ আপনাদের পরিচয় করাবো চিনির সাথে। চিনি আমার মামাদের পরিবারের একজন নতুন সদস্য। আমার গত পোস্টে আপনারা নিশ্চয়ই পড়েছিলেন, পরশুদিন রাতে আমাকে ও শুভকে মামা বাড়িতে থাকতে হয়েছিলো, যাতে সেখান থেকে ভোরবেলা উঠে পুজো দিতে যেতে সুবিধা হয়।

এর আগে যদিও এই নতুন সদস্যের কথা বোনের কাছে ফোনে শুনেছি, কিন্তু সামনাসামনি তার সাথে এইবার প্রথম সাক্ষাৎ হলো। এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন আমি কার কথা বলছি, একদমই ঠিক ধরেছেন, - আমি আমার মামা বাড়ির নতুন সদস্য চিনি অর্থাৎ তাদের পোষ্য খরগোশটির কথা বলছি।

IMG_20240710_000858.jpg

যারা আমার পুরনো পোস্ট পড়েছেন এবং পিকলুর আমাদের বাড়িতে আসার ঘটনা সম্পর্কে যারা জেনেছেন, তারা সকলেই জানেন আমি কখনোই খুব বেশি পশু প্রেমী ছিলাম না। দূর থেকে দেখতে ভালো লাগতো ঠিকই, কখনো তাদেরকে খাবারও দিতাম, কিন্তু কখনোই কাছে ডেকে কোলে নিয়ে আদর করার মত সুযোগ হয়নি, বা বলা ভালো আমি তেমনটা চাইনি।

কিন্তু জীবনে সবকিছুই যে আমাদের ইচ্ছে অনুসারে হবে এমনটা নয়, আর এই নির্বাক পশুদের মনে যে এতো নিঃস্বার্থ ভালোবাসা থাকে, সেটা বোধহয় এদের সাথে না মিশলে কখনোই উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। ঠিক যেমনভাবে আমিও পিকলুর সাথে না থাকলে এটা উপলব্ধি করতে পারতাম না যে, এই পৃথিবীতে একমাত্র পিকলুই আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে।

লকডাউন আমাদের সকলের জীবন অনেক বেশি উলটপালট করে দিয়েছিলো। অনেকের জীবন অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলো। তবে অদ্ভুতভাবে এই লকডাউনেই আমার সাথে পিকলুর বন্ধন তৈরি হয়েছিলো।

কারণ তার আগে আমি একটা এনজিও তে কাজ করতাম, আর সেই কারণে সকালবেলায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাতে বাড়ি ফিরতাম। তারপর সংসারের কাজ করে অনেকটাই ক্লান্ত হয়ে পড়তাম, ফলত পিকলুর সাথে কোনো রকম ভাবে সময় কাটানো হয়ে উঠতো না।

তার থেকে বড় কথা ছিলো, আমি ওকে পছন্দ করতাম না, এই কারণে কখনো সময় থাকলেও ওর কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করিনি। কিন্তু লকডাউনের কারণে অফিস বন্ধ হয়ে যায় এবং তখন সারাটা দিন বাড়িতে থাকতাম। আর জানিনা পিকলু কি বুঝেছিলো, বাড়ির সকলকে ছেড়ে ও সারাক্ষণ আমার পিছু পিছু ঘুরতো।

আমি কোথাও বসলে ও আমার পাশে এসেই বসত। এইভাবে কখন যেন এই লকডাউনের মধ্যে ওর সাথে আমার বন্ধন তৈরি হয়ে গেছে এবং সেটা এতটাই স্ট্রং হয়েছে যে, আজ ও আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

IMG_20240710_001026.jpg

আমার সারাদিনের অনেকখানি সময় কাটে ওর সাথে। আমি ওকে বকি, আমি ওকে আদর করি, ওকে খাওয়াই, আমি ওকে স্নান করাই, ওর সমস্ত কিছু চাওয়া পাওয়া আমাকে কেন্দ্র করেই। এই দিন মামা বাড়িতে গিয়েও দেখলাম মামির দিনের অনেক সময় কাটে চিনির সাথে।

আসলে মামা ও বোন কাজে বাইরে বেরিয়ে যায়, ফলতো ঘরের ভিতরে মামী একাই থাকে। তাই মামীর সাথে চিনির বন্ধন তৈরি হয়েছে সব থেকে বেশি। আমরা যাওয়াতে বেচারা ভয় পেয়ে সর্বক্ষণ খাটের নিচে ছিলো। শুধুমাত্র মামীর ডাকে ও সামনে আসছিল।

IMG_20240710_000932.jpg

আপনাদের জেনে ভালো লাগবে ওর সবথেকে প্রিয় খাবার হচ্ছে কলমি শাক, বাঁধাকপি, ও ওটস্ । এর পাশাপাশি সে টোস্ট বিস্কুট, ডালিয়া এবং কাঁচা ছোলা খেতেও বেশ পছন্দ করে। তবে প্রতিদিন তাকে এক খাবার দিলে তিনি যথেষ্ট বিরক্ত হন। তাই মামি তাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেতে দেয়।

খাঁচায় বন্দি অবস্থায় সে থাকতে পছন্দ করে না, তাই মামা ওর জন্য একটা সবজি রাখার ক্যারেট নিয়ে এসেছে। যার মধ্যে বিছানার চাদর পেতে তার বিছানা তৈরি করা হয় এবং তিনি সেখানে ঘুমান। সারা রাতের খাবার দিয়ে রাখতে হয় সেই ক্যারেটের ভিতরে, তার যখন মর্জি তিনি তখন খাবেন 😊।

IMG_20240710_001046.jpg

সেদিন রাতের বেলায় মামি ওর বিছানা করে দিয়ে, ওকে একটা বাঁধাকপির পাতা দিচ্ছিলো, সেটা তার এতো পছন্দ যে, সেটা নেওয়ার জন্য লাফালাফি করছিলো। সেই মুহূর্তের কিছু ছবি আমি তুলেছি যেগুলো শেয়ার করলাম।

IMG_20240710_000828.jpg

সারা বাড়িতে তার ঘোরাঘুরি দেখতে বেশ ভালো লাগে।একমাত্র টেবিলের উপরে উঠিয়ে দিলে সে আর নেমে কোথাও যেতে পারে না এবং তখন তিনি যথেষ্ট বিরক্ত হন। তখন মুখ থেকে আওয়াজও করে। আমি ওকে প্রথম দিকে একদমই কোলে নিতে চাইছিলাম না, কারণ ওদের নখ এত ধারালো হয় যে আমার ভয় করে। তবে শুভ ওকে অনেকবার কোলে নিয়েছিলো।

IMG_20240710_001116.jpg

এরপর বোন ওকে কোলে নিয়ে কোনক্রমে আমার কোলে দিয়েছিল এবং আমি শুধু ওকে ধরে রেখেছিলাম। সেই সময় আমি একটা ছবিও তুলেছি।

আশা করছি চিনির সাথে পরিচিত হয়ে আপনাদের ভালো লাগলো। ব্যক্তিগতভাবে ওর সাথে বন্ডিং যদিও আমার খুব বেশি ভালো হয়নি, কারণ খুব কম সময়ের জন্য মামা বাড়িতে থাকা হয়েছিলো। পরবর্তীতে যখন যাওয়া হবে, আশা করছি আমাদের বন্ধুত্বটা আরও একটু গভীর হবে।

আপনাদের মধ্যে কারা কারা খরগোশ বাড়িতে রাখতে পছন্দ করেন, মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। সকলে ভালো থাকবেন। আপনাদের সকলের দিনটি শুভ হোক এই কামনা করে আজকের লেখা এখানেই শেষ করছি।

"ক্রপ করার ফলে ছবির তারিখ পরিবর্তিত হয়ে গেছে"
Sort:  
Loading...

খরগোশ আমার খুব পছন্দের একটা প্রাণী, খরগোশ সাদা হওয়ার কারণ বেশি সুন্দর দেখা যায়, আমার অনেকদিনের ইচ্ছা বাড়িতে খরগোশ পালন করব, কিন্তু এতদিন বাহিরে থাকার কারণে খরগোশ পালন করতে পারি নাই, এখন বাড়িতে থাকি তাই ইচ্ছা আছে খরগোশ পালন করব। আপনার মামা বাড়ির নতুন সদস্য চিনিকে দেখে খুব ভাল লাখল।

 3 days ago 

আপনার খরগোশটা দেখে আমার খরগোশের কথা মনে পড়ে গেল ।আমারও একটা খরগোশ ছিল। আমি যত্ন করতে পারতাম না বলে একজনকে দিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার পাশের বাড়ি একটা খরগোশ আছে। ওর নাম টিনটিন। তবে ওই খরগোশটার গায়ের রং আলাদা। খুব ইচ্ছে করে পোষার জন্য ।কিন্তু যত্ন করতে হবে ভয়ে পোষা হয় না। তবে চিনির সাথে পরিচয় হয়ে খুব ভালো লাগলো।

 2 days ago 

প্রথমে আপনার টাইটেল দেখে একটু অবাকই হয়েছিলাম দেখতে পাচ্ছি খরগোশ আর নাম বলেছেন চিনি।। পরে পোস্ট পড়ে বুঝতে পারলাম তার নাম রাখা হয়েছে চিনি আর মামার বাসায় আপনার নতুন সদস্য।

আপনার পিকলু বাড়ি আসার ঘটনা আমার মনে হয় পড়া হয়নি আর হ্যাঁ এটা একদম সঠিক বলেছেন, জীবনের সবকিছু আমাদের ইচ্ছা মত হবে না।। আর পশুপাখি সব সময় নিঃস্বার্থভাবেই ভালোবেসে থাকে।। একটা সময় প্রাণীদের আপনি দূর থেকে দেখতেই পছন্দ করতেন কখনো কাছে ডেকে তাদের আদর করতেন না ।। পরবর্তীতে এই প্রাণী আপনার পছন্দের হয়ে ওঠে।। আর হ্যাঁ, প্রাণীরা বাড়িতে থাকলে পুরো বাড়ি ঘোরাঘুরি পারে তখন দেখতে অনেক ভালো লাগে।।

 2 days ago 

যেকোনো জীবই নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে যা মানুষ কখনোই পারে না। আমি নিজে খুব ভালোবাসি কিন্তু বাসায় রাখতে পারি না। আপনার পিলুকে দেখে খুব ভালো লাগে। আগে আমার নিজের কুকুর ,বিড়াল ছিল।
আজকে আপনার চিনির সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো।

 13 hours ago 

মায়াবী চোখের দুষ্ট আদরের চিনি, পিকলুর কথা আমি ভালোভাবেই জানি কতটা আদরে রাখেন আর পিকলুকে কতটা ভালোবাসেন। পশু পাখির প্রতি আমারও আলাদা রকম মায়া কাজ করে তাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা যেন হৃদয়ে প্রশান্তি আনে।

দিদি আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ পরিবার আরো একটি মেহমানের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 58752.84
ETH 3153.55
USDT 1.00
SBD 2.44