ডিঙি নৌকা- যা বাঙালির কাছে টাইটানিক সম:

in Incredible India11 months ago
হ্যালো বন্ধুরা
IMG_20231028_125304.jpg

নদীমাতৃক বাংলাদেশের নৌপথে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হলো নৌকা। এই নৌকাও দেশেরও প্রতিচ্ছবি। বাউল সাধক ও তাত্ত্বিকদের তত্ত্ব ও মারফতি কথাবার্তায়ও নৌকার উল্লেখ আছে। ফকির লালন সাঁই লিখেছেন 'যে তীরে যায়, এসো নবীর নৌকায়, রূপ-কাঠের নৌকায় ডুবে ভয় নেই'।বিভিন্ন সময়ে মরমী গানের সুরে ঝঙ্কার তুলেন সাধু-কবিরা। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে আজকের শিল্পী, লেখক ও কবিরা নদী ও নৌকা নিয়ে অসংখ্য রচনা, ছবি, চিত্রকলা ও গান লিখছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলায় পদ্মা-যমুনা-ধলেশ্বরী ও নাগর নদী দিয়ে ভ্রমণ করেছিলেন। নদী ও নৌকা নিয়ে অনেক ছবি এঁকেছেন। 'সোনার তরী কাব্য' এর একটি প্রধান উদাহরণ।

IMG_20231028_125250.jpg

দেশের সমাজ-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে নৌকা দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। 'নৌকা' বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও পুরনো রাজনৈতিক দল ও বর্তমান ক্ষমতাসীন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতীক। নৌকার মাঝি পাল তোলার সাথে সাথে বাংলার নিজস্ব সুর, বিশেষ করে পল্লীগীতি, ভাটিয়ালী, জারি-সারি, মুর্শিদী গান গায়। বাংলার নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ হওয়ায় নৌকা একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-সামাজিক ভূমিকা পালন করছে। ঠিক কবে, কখন এবং কার দ্বারা নৌকাটি প্রথম তৈরি এবং জলে ভাসানো হয়েছিল তা সঠিকভাবে বলা যায় না। তবে এদেশে যখন নদী প্রবাহিত হতে শুরু করেছে, তখন থেকেই নৌকার ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রাচীনকাল থেকেই নৌকা এই ব-দ্বীপ অঞ্চলে যাতায়াত বা আশ্রয়ের অপরিহার্য মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

IMG_20231028_120758.jpg

আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের নৌকা রয়েছে,রয়েছে আলাদা আলাদা নাম। পানসী, সাম্পান, রপ্তদী, লক্ষ্মীবিলাস, বজরা, বাছারি, সুড়ঙ্গা, এক মালাইয়া, বালাসী নৌকা, পঞ্চবটি, জং, দোসাল্লাই, পাকালিয়া নৌকা, পাতাং, ঘাসী, গয়না, সথুরা গড়, পাতিলা, পলারী, বিলাসী নৌকা,ডিঙি নৌকা ইত্যাদি। একেক অঞ্চলে একেক ভাবে এসব নৌকা গড়া হয়,নাম ও ভিন্ন ভিন্ন হয়।পাবনা অঞ্চলের নৌকার সাথে চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৌকার যেমন মিল নেই, তেমনি সিলেট অঞ্চলের নৌকার সাথে ফরিদপুর বা বাগেরহাটের নৌকার পার্থক্য রয়েছে।

IMG_20231028_120352.jpg

নৌকা তৈরির প্রধান উপাদান কাঠ।এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কাঠ ব্যবহার করা হয়।বাগেরহাটে সুন্দরবন অবস্থিত হওয়ায় সুন্দরী কাঠের নৌকা দেখা যায়।ক্ষেত্রবিশেষে গরান কাঠ দিয়েও নৌকা তৈরি করে অনেকে।একটা ডিঙি নৌকা তৈরি করতে মিস্ত্রিদের ৫/৭ দিন সময় লাগে। ছোটবেলায় দেখেছি মোটা তালগাছের গোড়ার দিকের অংশ খোল করে এক বিশেষ ধরনের নৌকা তৈরি হতো।এটাকে স্হানীয় ভাষায় ডোঙা বলা হত।এখন এটা আর দেখা যায় না বললেই চলে।

IMG_20231028_121743.jpg

আমাদের বাগেরহাট অঞ্চলে প্রধান পেশা মৎস্য খামার।আর এসব মৎস্য ঘের এ পৌঁছাতে গেলে ছোট ছোট খালের ভিতর দিয়ে যেতে হয়।আর খাল বিলে চলাচলের অন্যতম মাধ্যম এসব ডিঙি নৌকা। গ্রামের প্রায় প্রতিটি লোকের নিজস্ব নৌকা রয়েছে।নৌকা চালাতে পারাটাও একটা আনন্দের ব্যাপার। আমরা এখনও দলবেঁধে ঘেরে গেলে নৌকায় চড়তে চায়।কালের বিবর্তনে এখন খাল বিল শুকিয়ে সব জায়গা স্থলপথ হয়ে যাচ্ছে।গত সপ্তাহে অফিসের কাজে চিতলমারী এলাকায় গেলে সেখানে দেখা মেলে কিছু ডিঙি নৌকার।

IMG_20231028_120346.jpg

১৫/২০ বছর আগের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে অনেক প্রকার নৌকা এখন আর নির্মিত হয় না।সেগুলো এখন যাদুঘরে দেখা মিলে।আমাদের উচিৎ বাংলার এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা।সেই সাথে সরকারেরও এ ব্যাপারে খেয়াল দেয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি যাতে আমাদের দেশের এই ঐতিহ্য টিকে থাকে।

তো বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই।আমার পোস্টটি পড়ে কেমন লাগল তা কমেন্টে জানাবেন।

ধন্যবাদ
Device Name:One Plus
Camera:48 Megapixel
Shot by:saha10
location:Bangladesh🇧🇩
Sort:  
 11 months ago 

It's an amazing post about our boat. I am totally agree with you about your article and your some valuable information. Your post is really awesome. I really like your post. And another thing is your taken photos are also looking so nice.
Thank you so much for sharing your post with us. Take care of yourself, god bless you.

Thank you so much for commenting on my post.Your valuable comments will motivate me a lot to publish better articles.

Loading...
 11 months ago 

আমাদের বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ তাই এখানে নৌকার কোন অভাব নেই তেমন নামেরও কেন অভাব নেই কত রকমের নৌকা আর তাদের বাহারি নাম। তবে খুব সুন্দর একটা কথা বলেছেন এই নৌকা গুলো আমাদের কাছে টাইটানিক সম। যখন এই নৌকাতে উঠা হয় খুব মনোমুগ্ধকর লাগে।

আমিও আমার লেখায় নদীমাতৃক শব্দের ব্যবহার করেছি।তবে এখন বাংলাদেশের নদীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে।খাল বিলে বর্ষার সময়ে পানি দেখা যায় কিন্তু অন্য সময়ে শুকিয়ে যায় অতি শীঘ্র এই ব্যাপারে খেয়াল না করলে জলাবদ্ধতা স্হায়ী সমস্যায় পরিণত হবে।

 11 months ago 

আপনার টাইটেল পড়েই লেখা টা পড়ার শখ জেগেছিল, এবং সম্পূর্ণ পড়ে আমার ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। নানা বাড়িতে গেলে ছোট নদী পার হতে এই ডিংগি তে ঊঠা লাগতো। তখন অনেক ভয় পেতাম আবার মজাও লাগতো।

ধন্যবাদ আপনাকে আপনার মূল্যবান মন্তব্যর জন্য। হ্যা ছোট বেলায় আমরা যত নদী,খাল বিল দেখেছি এখন তার তেমন কিছুই অবশিষ্ট নাই।ডিঙি নৌকা আমাদের অঞ্চলে এখনো দেখা যায়,তবে অচিরেই এটাও যাদুঘরে স্হান পাবে বলে মনে হচ্ছে।

TEAM 1
Congratulations! This post has been upvoted through steemcurator04. We support quality posts, good comments anywhere and any tags.
Curated by : @patjewell

Thank you for the support. It always motivate me to post about new things.

 11 months ago 

আসাধারণ সুন্দর ডিঙি নৌকা গুলো।আপনি আপনার পোস্টে অনেক রকমের নৌকার নাম উল্লেখ করেছেন।মা আমার জানা ছিল না। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 62886.34
ETH 2448.82
USDT 1.00
SBD 2.64