বুদ্ধির বিচক্ষণতার পরিচয়
একবার দুইজন প্রতীক অনেকদূর হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করেই তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ল। এবং তারা অনেক বেশি ক্ষুধার্ত ছিল। এরপর তারা একটা গাছের নিচে কিছুক্ষণ বসে পড়ল। এবং তাদের দুই জনের কাছে দুইটা পোটলা ছিল। তার মধ্যে একজনের কাছে পোটলার মধ্যে রুটি ছিল পাঁচটা। এবং আরেকজনের কাছে পোটলার মধ্যে রুটি ছিল মাত্র তিনটা।
তারা তাদের খাবার পানি সব কিছু রেডি করে। যখন খাওয়ার জন্য বসল। ঠিক তখনই তাদের দুজনের সামনে একজন মুসাফির এসে হাজির হলো। তার বেশভূষা একদম সাদাসিধা একজন মানুষের মত।
সে এসে তাদের দুজনকে বলল, ভাই আমি একজন অভুক্ত খুবই ক্ষুধার্ত। আমার কাছে কোন খাবার নেই। তোমরা দুইজন কি আমাকে কিছু খাবার দেবে। তারা দুইজন একজন আরেকজনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। এবং তারা চিন্তা করল, তারা দুইজন খাবার খাবে আর একজন মানুষ না খেয়ে থাকবে।
এটা তো কোন কথা হতে পারে না। তো তারা দুইজন ওই মুসাফির কে তাদের সাথে বসে, খাবার গ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানালো।
যেহেতু তাদের কাছে মাত্র আটটা রুটি ছিল। তাই তারা চিন্তা করলো তাদের তিনজনেরই অনেক ক্ষুধা লেগেছে। এবং সেই ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য তারা তিনজন মিলে অল্প অল্প রুটি খেয়ে নিল। খাবার-দাবার শেষ হওয়ার পর এবার হচ্ছে বিদায়ের পালা। যাওয়ার সময় মুসাফির তাদের সঙ্গে মোলাকাত করল। এবং তাদেরকে বলল ভাই আমি শুধু তোমাদের টাই খেলাম। তোমাদের কিছু খাওয়াতে পারলাম না। এরপর এটা বলে, ওই মুসাফির তাদের হাতে ৮ দিরহাম বখশিশ দিল।
এবং বলল তোমরা নিজেদের মধ্যে এই দিরহাম ভাগ করে নাও। এরপর মুসাফির ওখান থেকে চলে গেল, কিন্তু সমস্যা হল দিরহাম ভাগ করা নিয়ে। এরপর যার কাছে পাঁচটি রুটি ছিল। সে বলল আমার কাছে যেহেতু পাঁচটি রুটি ছিল। তাহলে আমি পাঁচ দিরহাম পাবো। আর তোমার কাছে যেহেতু তিনটি রুটি ছিল। তাই তুমি এখান থেকে তিনটি দিরহাম পাবে।
কিন্তু যার কাছে তিনটি দিরহাম ছিল, সে প্রথম পথিকের কথা শুনতে রাজি হলো না। এবং সে বলল আমরা যেহেতু সমান সমান খেয়েছি, তাই তুমি পাবে চার দিরহাম এবং আমি পাব চার দিরহাম। কিন্তু যার কাছে ৫ পাঁচটা রুটি ছিল সেও তার কথা মানতে পারল না। সে বলল আমার কাছে ৫টা রুটি ছিল। আমি পাঁচটা রুটির বিনিময়ে শুধুমাত্র চার দিরহাম পাবো। আর তোমার কাছে তিনটা রুটি ছিল, সেজন্য তুমি চার দিরহাম পাবে। এটা কোন আইনে লেখা আছে।
এরপর এটা নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে অনেক বড় সমস্যা সৃষ্টি হল। এবং তারা তর্ক করতে লাগলো, এরপর হঠাৎ করেই তাদের মধ্যে একজন বলে উঠল। আমাদের এই সমস্যার সমাধান তো করতে হবে। এভাবে ঝগড়া-বিবাদ করে কোন লাভ হবে না। চলো আমরা আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু এর কাছে যাই।
এরপর তারা হযরত আলী রাঃ এর কাছে গিয়ে উপস্থিত হল। এবং ওনার কাছে সমস্যা নিয়ে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলল। উনি সম্পূর্ণ ঘটনা মনোযোগ সহকারে শোনার পর, তাদেরকে জিজ্ঞেস করল। তোমরা তিনজনই একই রকম খাবার খেয়েছ। তখন তারা দুইজন মাথা নেড়ে উত্তর দিল। তখন তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন এবং বললেন এইটুকু সমস্যা নিয়ে, এত বড় ঝামেলা করার কি দরকার।
এটাতো একদম পানির মত সহজ। যার কাছে ৫টা রুটি ছিল সে পাবে ৭ দিরহাম। আর যার কাছে তিনটা রুটি ছিল সে পাবে এক দিরহাম। এটা শুনে তারা দুইজন অবাক হয়ে গেল এটা কিভাবে সম্ভব।
তারা দুজনেই চুপ করে কিছুক্ষণ বসে রইল, এবং চিন্তা করতে লাগলো এই বিচার কিভাবে হল। তখন হযরত আলী রাঃ তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের মনের কথা বুঝতে পারলো। এবং তিনি বললেন তোমরা যেহেতু তিনজন ছিলে, তোমাদের কাছে রুটি ছিল আট টি আর সেই আটি রুটি কে যদি আমি তিন ভাগ করি। তাহলে তিন আটা ২৪ অর্থাৎ ২৪ টা পিস হয়েছে। সেখান থেকে ওই মুসাফির পেয়েছে ৮ টা, সেজন্য সে তোমাদেরকে ৮ দিরহাম দিয়েছে।
এবার আসা যাক কে কতটুকু পাবে, সেই বিষয়টা নিয়ে যেহেতু একজনের কাছে ছিল পাঁচটি রুটি, তাই পাঁচটি রুটি কে তিন ভাগ করলে হয় পনেরো টুকরা, অর্থাৎ সে তার 15 টুকরা থেকে সে নিজে খেয়েছে 8 টুকরা। এবং মুসাফির কে দিয়েছে সাত টুকরা। যার কাছে রয়েছিল তিনটি রুটি, তার তিনটি রুটি কে তিন ভাগ করলে হয় নয় পিস। অর্থাৎ সে নিজে খেয়েছে ৮ পিস, এবং মুসাফির কে দিয়েছে এক পিস। এজন্য সে এক দিরহাম এর বেশি কোন কিছুতেই পেতে পারেনা।
যেহেতু যার কাছে তিনটা রুটি ছিল, তার কাছ থেকে মুসাফির মাত্র এক পিস রুটি খেয়েছেন। অতএব সে এক দিরহাম পাবে। এবং যার কাছে পাঁচটি রুটি ছিল তার কাছ থেকে মুসাফির ৭ পিস রুটি খেয়েছে। সেজন্য সে সাত দিরহাম পাবে। হযরত আলী রাঃ এমন বুদ্ধির বিচক্ষণ বিচার দেখে, তারা দুইজন মুগ্ধ হয়ে গেল। এবং হযরত আলী রাঃ এর বিচার তারা মেনে নিল। এবং দুইজন পথিক আবারো পথ চলা শুরু করলো।
বুদ্ধি এবং ধৈর্য অবশ্যই মানুষের মধ্যে থাকা প্রয়োজন। সঠিক বুদ্ধি দিয়ে অনেক বড় সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। যেমনটা করেছিলেন আমাদের রাসূল আলী রাঃ তা'আলা আনহু। উনার বিচার বিচক্ষণ দেখে আমি নিজেই মুগ্ধ। আশা করি এই গল্প থেকে আপনাদের প্রত্যেকের কিছু না কিছু শেখার রয়েছে। আমি নিজেও অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। সবার সুস্থতা কামনা করে। আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহাফেজ।
meraindia |
---|
হযরত আলী ( রা) ছিলেন বুদ্ধিও শক্তিতে সেরা।
ওনি একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি ও ছিলেন। আপনার গল্পে পড়ে ওনার ন্যায় বিচারের নিদর্শন পেলাম। আসলেই বুদ্ধি দিয়ে অনেক অসম্ভব কাজ কেউ সম্ভব করা যায়। খুব ভালো লাগলো আপনার পোস্টটি পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন সবসময় আপু।
বাহ, দারুণ একটা গল্প পড়ে শেষ করলাম, অনেক শিক্ষণীয় ছিল। ধন্যবাদ এত সুন্দর অজানা একটা গল্প শেয়ার করবার জন্যে। ভালো থাকবেন।
খুবই সুন্দর ও শিক্ষানীয় একটা গল্প। একজন বিচক্ষণ ব্যাক্তি একটা কঠিন বিষয়কে খুব সহজ করে সমাধান করে দিল। সাহাবী আলী (রাঃ) ওনার বুদ্ধি ও ধৈর্য দিয়ে ওই দুই ব্যাক্তির সমস্যাকে খুব সুন্দর করে সমাধান করলো। আপনার পোস্ট থেকে অনেক কিছু শিখার আছে।
এই গল্পটি আমি অনেকবার পড়েছি। আজ ও প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছি আপনি খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে লিখছেন এই গল্পটি।
এটি একটি শিক্ষা নিয়ে গল্প এর পাশাপাশি এই গল্পের বিশেষত্ব হল বুদ্ধিমত্ত ওই যুগে কত চক্র বুদ্ধি ছিল আলী রাঃ কত সহজেই তিনি দিরহাম গুলো ভাগ করে দিলেন। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আপনার পরবর্তী গল্পের অপেক্ষায় রইলাম ভালো থাকবেন।