পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন? নিজের জায়গা থেকে সৎ থাকার চেষ্টা করুন
আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ আছে। যারা কিনা আমাদের সাথে খুবই বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করে। তাদের প্রয়োজনে আমরা তাদেরকে সাহায্য করার চেষ্টা করি। প্রয়োজনে বিনা প্রয়োজনে তারা আমাদেরকে অনেক সময় নক করে। কিন্তু আমাদের পিঠ পিছে, তারা এমন কিছু কাজ করে। যেগুলো আমরা কখনো কল্পনাও করি না।
আমি ঠিক জানিনা, আমি কতটুকু ভালো থাকবো বা সৃষ্টিকর্তা আমার জন্য কতটুকু সুখ রেখেছে, বা আমি কতদিন পরে সফলতা অর্জন করতে পারব। কিন্তু কখনোই অন্যায় ভাবে জীবনে সফল হওয়ার চেষ্টা করা, বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
অন্যায় পথে হয়তোবা অনেক উপরে উঠতে বেশি সময় লাগে না! অনেক টাকা পয়সা ইনকাম করতে অনেক বেশি সময় লাগে না! কিন্তু অন্যায় পথে বড় হওয়ার চাইতে, সৎ পথে বড় হওয়াটা অনেক বেশি ভালো।
আমি অল্পতে ভালো থাকতে চাই, আমি অন্যের ক্ষতি করে কখনোই নিজের উন্নতির আশা করি না! চেষ্টা করি সব সময় মানুষকে সাহায্য করার জন্য, সেটা যে কোনভাবেই হোক না কেন! হ্যাঁ এটা সত্য হয়তোবা আমি কখনোই কাউকে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করতে পারিনি, বা পারবোও না। ভবিষ্যতে যদি আমার কাছে অনেক টাকা হয়। তাহলে আমি মনে মনে চিন্তা করি, আমি সেই মানুষ গুলোর পাশে দাঁড়াবো। যারা কিনা রাস্তার পাশে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে।
আমাদের পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখা প্রয়োজন। আমরা নিজের জায়গা থেকে সৎ থাকার চেষ্টা করব। আমাদের জীবনে দেখবেন এমন কিছু মানুষ আছে, যারা কিনা আমাদের অনেক বড় ক্ষতি করে দিয়ে চলে যায়। এরপরে এসে বলে কই আমি তো কিছুই করিনি।
এই যে মানুষ গুলো আপনার পেছনে একরকম আপনার সামনে আরেক রকম। আপনার পেছনে সে আপনার ক্ষতি করে দিয়ে যাচ্ছে। আপনি হাজারো চেষ্টা করছেন, একটা কাজকে সঠিকভাবে করার জন্য। কিন্তু দিনশেষে দেখছেন আপনার কাজ কেন যেন সঠিক হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না তার পেছনের কি কারণ, সেটা অবশ্যই খুঁজে বের করা একমাত্র আপনার দায়িত্ব।
এই বিষয়টা নিয়ে আমি ছোট্ট একটা গল্প শেয়ার করব। যদিও গল্পটা হয়তোবা সবার কাছেই পরিচিত, কিন্তু আমার মনে হয় এই গল্পটা থেকে আমাদের প্রত্যেকেরই শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।
আমাদের এই পাশের গ্রামে, খুব বড় একটা পরিবার আছে। যে পরিবারে মোটামুটি সবাই খুব টাকা পয়সার মালিক, কিন্তু তাদের ছোট ছেলে অনেক বেশি শিক্ষিত এবং অনেক বড় একটা চাকরি করে। তবে সে প্রেম করে হতদরিদ্র কৃষকের একটা মেয়ের সাথে।
তার পড়াশোনা শেষ করে যখন চাকরি পায়, তখন সে বাবা-মায়ের কাছে তার প্রেমের কথা বলে এবং সে বলে সে ওই মেয়েটাকে বিয়ে করবে, কারণ সে তাকে খুব ভালবাসে।
বাবা মা প্রথমে রাজি হয় না, কিন্তু পরে ছেলের কথা চিন্তা করে বিয়েতে রাজি হয়। ওদের পরিবারে ভাই ছিল মোট তিনজন একটা বোন বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। তার বড় দুই ভাই মোটামুটি বড় পরিবারে বিয়ে করেছে। তাদের শ্বশুর বাড়ির অবস্থাও বেশ ভালো ছিল। কিন্তু ছোট ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির অবস্থা ভালো ছিল না, ভালো ছিল তার বউ ভালো ছিল তার শশুরের আচার আচরণ।
তার বড় দুই ভাইয়ের বউ সব সময় চেষ্টা করত, কিভাবে ছোট ভাইয়ের বউকে শ্বশুর-শাশুড়ির সামনে অপমান করা যায়। কিভাবে সবার সামনে তাকে নিচু করা যায়। তাকে যত্রতত্রত্র ভাষায় কথা বলতো। এমনকি তার গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করত। প্রত্যেকটা কথায় তাকে দোষারোপ করার চেষ্টা করতো।
সে যদি তরকারি রান্না করে যেত, সেই তরকারির মধ্যে কেউ এসে লবন ঢেলে দিয়ে যেত আবার কেউ এসে মরিচের গুড়া ঢেলে দিয়ে, তরকারির স্বাদ নষ্ট করে দিত। এতে করেও মেয়েটা কিছুই বলতো না চুপচাপ সবকিছুই সহ্য করতো। তার স্বামী এসব দেখার পরে বলেছিল, তাকে নিয়ে আলাদা বাসায় চলে যেতে। কিন্তু মেয়েটা বলেছে আমরা যদি এখান থেকে চলে যাই। তাহলে সবাই আমাকে খারাপ নজরে দেখবে এবং বাবা মা অনেক কষ্ট পাবে।
আমি চুপ করে থাকি নিশ্চয়ই একদিন আমি এর প্রতিবাদ করতে পারব। ছোট বউয়ের সাথে এমন আচরণ শশুর মোটেও সহ্য করত না। উনি সবসময় প্রতিবাদ করার চেষ্টা করত, কিন্তু কোন প্রমাণ না পাওয়ার কারণে। উনি কিছুই বলতে পারত না বড় ছেলের বউদের।
একদিন উনি গোসল করে রান্না ঘরের পাশ দিয়ে উনার রুমে যাচ্ছিলেন। ওই দিন ছোট বউ রান্না করেছিল। তারপরে উনি রান্না ঘরে লক্ষ্য করলেন মেজ বউ এবং বড় বউ তরকারির মধ্যে, আলাদা মসলা এবং লবণ মেশানো শুরু করে দিয়েছে। যেটা উনি নিজের চোখে দেখেছে এবং উনার ওয়াইফ কে ডেকে নিয়ে এসে, দেখানোর চেষ্টা করেছে।
ওনারা দুইজন এসব কিছু দেখেও চুপচাপ ওনাদের রুমে চলে গেছে। দুপুরে যখন খাবার খেতে বসেছে সবাই, তখন তরকারি সবার প্লেটে দেয়ার সাথে সাথে সবার মুখের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে। কারণ এত বাজে তরকারি খাওয়াটা মোটেও সম্ভব নয়।
এরপরে সবাই বলাবলি করতে শুরু করে আজকে কে রান্না করেছে। সবাই ছোট বউয়ের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। যে আজকে ছোট বউ রান্না করেছে, এরপরে শশুর এবং শাশুড়ি খাবারের প্লেট ওখানে রেখে দাঁড়িয়ে যায় এবং বড় বউ আর মেজ বউকে উদ্দেশ্য করে বলে। ছোট বউ ঠিকই রান্না করেছে, তরকারির স্বাদ নষ্ট করেছে তোমরা দুজন।
বড় বউ মেজ বউ কখনোই এই বিষয়টা স্বীকার করতে চায় না। এরপরে তাদের শাশুড়ি উঠে বলে, আমরা নিজ চোখে দেখেছি। তোমরা তরকারির মধ্যে বাড়তি মসলা মেশানো শুরু করেছিলে যখন, তখন আমরা ওখানেই ছিলাম। এরপরে দুজন লজ্জা পায়, আর তাদের ছোট ছেলে তার বাবা মাকে নিয়ে আলাদা বাড়িতে চলে যায় এবং তারা ওখানে গিয়ে জীবন যাপন শুরু করে।
এই গল্প থেকে আমার শিক্ষা
এই গল্পটা থেকে আমি অনুধাবন করলাম। আমার ওপরে যতই অত্যাচার করা হোক না কেন? পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন? আমাকে সবকিছু সামলে নিয়ে নিজের জায়গা থেকে, নিজের সততা টাকে আগলে রাখতে হবে! কারণ সততার নৌকা ডুবে যেতে যেতে ও আবার ভেসে ওঠে।
অন্যায় অপকর্ম দিয়ে কখনোই নিজের দোষ ঢাকার চেষ্টা না করা। নিজের জায়গা থেকে, নিজে সবসময় সৎ থাকা। সব সময় সবাইকে ভালবেসে একসাথে বসবাস করা। সবকিছু সামলে নিয়ে পরিবারকে আগলে রাখা। সবার সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি আল্লাহ হাফেজ।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
আপু আপনার কথাগুলোকে আমি সমর্থন জানাচ্ছি। সেই সাথে আপনার চাওয়া পাওয়া যেন পূর্ণ হয় সেই কামনা করছি। আপনার যেদিন অনেক টাকা হবে সেদিন যেন আপনি সত্যিকার অর্থে গরিব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন।
আপনি ঠিক বলেছেন সততার নৌকা ডুবতে ডুবতে ভেসে ওঠে। সততার জয় একদিন না একদিন হবেই হবে। ভালো থাকবেন আপু।
ধন্যবাদ আপু, আপনার এত সুন্দর একটা পোস্ট করার জন্য। আপু যারা দ্রুত উঠে তারা আবার দ্রুত নিচে নামতে সম্ভাবনা থাকে। আর ওইসব টাকার মধ্যে কোন সুখ নাই এবং কোন বরকত থাকে না।
দুনিয়া বড় কঠিন যে আমাদের উপকার করে তার উপকারের প্রতিদান আমরা দিতে পারি না তাই তো আপনারা যে কোন মানুষের সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করলেও অনেক মানুষ অনেক কথা বলে আপনাদের নিয়ে।
জীবনের সফলতা সৎ পথে নেওয়া মতো সুখ আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না অসৎ পথে অল্প সময়ের মতো অনেক টাকা ইনকাম করলেও সেই শান্তি থাকে না যে শান্তি সৎ পথে উপার্জন করে সফলতা অর্জন করলে থাকে।
সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
আপনার লেখা এই পুরো গল্পটি একটি শিক্ষনীয় গল্প। আপনি সমাজের বাস্তব কিছু চিত্র তুলে ধরেছেন। তবে আপনার গল্প পড়ে আমিও একটি কথা শেয়ার করতে চাই, যেহুতু পরিবারের মানুষগুলোই আপন মানুষ তাই আমি মনে করি তাদের মধ্যে কেউ একজন যদি উশৃংখলও হয় তাকে তাচ্ছিল্য না করে পরিবারের লোক হিসেবে তা একটু মানিয়ে চলা উচিত।
অসৎ সময়ের সুফল ক্ষনিক সময়ের ভোগ মাত্র। যার খেসারত দিতে হয় মূল্যবান জিনিসের মাধ্যমে । তাই সময় থাকতেই লোভ, হিংসা, ক্ষোভ বর্জন করে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত৷
Congratulations, your post has been upvoted by @scilwa, which is a curating account for @R2cornell's Discord Community. We can also be found on our hive community & peakd as well as on my Discord Server
Felicitaciones, su publication ha sido votado por @scilwa. También puedo ser encontrado en nuestra comunidad de colmena y Peakd así como en mi servidor de discordia
যেকোনো পরিস্থিতিতেই আসলে সৎ থাকাটা জরুরি। সেটা নিজের কাছেই হোক কিংবা অন্যের সাথেই হোক।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমাদের চারপাশের বেশিরভাগ মানুষগুলোর ওপরে একরকম আর ভেতরে অন্য রকম।যা খুবই দুঃখজনক।
এদের কাছ থেকে পৃথিবীর মানুষরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
আপনি খুবই শিক্ষামূলক একটা গল্প উপস্থাপন করেছেন আমাদের মাঝে।
ভালো লাগলো আপনার লেখাটি পড়ে।
ভালো থাকবেন সবসময়।
সত্যের পথে চললে যেকোন একদিন আল্লাহ তাআলা অবশ্যই আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে। তাই আমার কাছে মনে হয়, পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন আমরা যেমন আছি আল্লাহর উপর ভরসা করে পথ চলা উচিত। তবে কিছু মুখোশধারী মানুষের কারণে আমাদের জীবনে অনেক সমস্যা আসে। আবার সেটা সমাধান হয়। তবে একটু সতর্ক থাকার খুব প্রয়োজন।
আসলে আমাদের সমাজে অনেক রকমের লোক আছে যারা পরিস্থিতির কারণে নিজের রূপ বদলায়। এটা কখনোই করা ঠিক না কারণ পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন নিজের সিদ্ধান্তে এবং সত থাকা উচিত। আপনার সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সময়ের সাথে জীবন বদলে যায়। সেই সাথে সম্পর্ক। কিন্তু মুখোশধারী কিছু মানুষের কারণে এখনো পর্যন্ত মানুষ মানুষকে বিশ্বাস করতে অনেক বেশি ভয় পায়। রূপ বদলে নেয়া খুব কঠিন একটা কাজ নয়। তবে যার সাথে এই কাজটি আমরা করি, সে কতটুকু কষ্ট পাবে এটা একবার হলেও চিন্তা করা উচিত। ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার মন্তব্য করার জন্য।