শুধুমাত্র ডিপ্রেশনে থাকা মানুষগুলোই, মৃত্যুর অর্ধেক স্বাদ গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখে!
![]() |
---|
ডিপ্রেশন কথাটা খুবই ছোট। কিন্তু এর মানে খুঁজতে গেলে আমরা অনেক বড় একটা উদাহরণ পেয়ে যাব। হ্যাঁ বন্ধুরা আজকে তেমনি একটা গল্প নিয়ে, আপনাদের সাথে হাজির হয়েছি।
ডিপ্রেশন যে কত মারাত্মক একটা অসুখ। সেটা হয়তোবা আপনি আমি কখনোই ধারণা করতে পারবো না। কিন্তু যারা ডিপ্রেশনে ভোগে। তারা দিন দিন কতটা অসুস্থ হয়ে পড়ে, একমাত্র হয়তোবা তারাই জানে।
আমি ছেলেটির পরিচয় গোপন করছি। ছেলেটি আমাদেরই আত্মীয় হয় সম্পর্কে বড় ভাই।
ছেলেটি প্রচন্ড মেধাবী বিশেষ করে কম্পিউটার সায়েন্সের উপর পড়াশোনা করেছে। বেশ ভালো একটা চাকরিও করতো। কিন্তু বেশ কয়েকদিন আগে, হঠাৎ করেই ছেলেটার মধ্যে অনেকগুলো পরিবর্তন দেখা গেল।
এই পরিবর্তন গুলো কেন দেখা গিয়েছে, কেন সে তার জীবনে এই পরিবর্তন গুলো নিয়ে এসেছে। সে ঘটনা গুলো খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম। যখন তার জীবনের আসল তথ্য বের হয়ে এসেছিল।
যেহেতু আমাদের বড় ভাই তাই ভয়ে তেমন একটা কথা বলতাম না। তারপরেও একদিন হঠাৎ করেই জিজ্ঞেস করে ফেললাম। যে ভাইয়া তোমার মধ্যে এই পরিবর্তনগুলো কেন। হঠাৎ করে তুমি কেন অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছো। হঠাৎ করেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে এসে বসে থাকো।
সারাক্ষণ চুপচাপ থাকো, কারো সাথে কথা বলতে চাও না। আসলে তোমার কি হয়েছে।
আর ওনার মুখ থেকে আমি যখন কথাগুলো শুনলাম। তখন আমি নিজেই অবাক হয়ে গেলাম। তাই ভাবলাম কথাগুলো আপনাদের সাথেও শেয়ার করি।
উনি যেহেতু কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। তাই ওনার চাকরি হয়েছিল ঢাকা একটা বড় কোম্পানিতে। পরিবেশ ভালো মোটামুটি বেতন ও পেতেন।
চাকরির সুবাদে উনি ঢাকায় থাকতো এবং উনার ট্রেনিংয়ের জন্য উনি গিয়েছিল চট্টগ্রাম। আর ওখানে গিয়ে উনি একটা মেয়ের প্রেমে পড়েছিল। যেটাকে বলা হয় প্রথম দেখায় ভালোবাসা ওয়ান সাইড লাভ।
মেয়েটা অসম্ভব সুন্দর ছিল, দেখতে যেমন স্মার্ট পড়াশোনা সব দিক দিয়ে ফিটফাট ছিল। ভাইয়া ভাবলো ওনার ও সব দিক ফিট আছে, ভাইয়া ও দেখতে অসম্ভব সুন্দর সুদর্শন একজন পুরুষ।
তাই ভাইয়া দেরি না করে মেয়েটাকে ওখানেই প্রপোজ করে বসলো। মেয়েটার বাবা-মা সবার সামনে। মেয়েটাও ভাইয়াকে দেখে আর না করতে পারেনি। কারণ ভাইয়া ও দেখার মতো একজন ছেলে ছিল।
মেয়েটার বাবাও ভাইয়াকে পছন্দ করেছিল। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। তখন ভাইয়া বাড়িতে এসে তার বাবা মাকে বলেছিল বিষয়টা।
তাদের এক ছেলে, তাই ভাইয়ার বাবা-মা আর না করেনি। কারণ ছেলের পছন্দ হয়েছে, ছেলেকে ওখানেই বিয়ে করাবে।
![]() |
---|
একদিন ভাইয়া এবং ভাইয়ের চাচাতো বোন ভাইয়ের বাবা-মা সবাই মিলে মেয়েটার বাড়িতে গিয়েছিল। বিয়ের কথাবার্তা বলার জন্য, এবং মেয়েটাকে আংটি পরিয়ে আসার জন্য।
যাইহোক মেয়েটাকে দেখে বিয়ের কথাবার্তা বলে আন্টি পরিয়ে তারা চলে আসলো। এভাবেই ভাইয়া এবং ওই মেয়েটার সাথে বিয়ে যেহেতু হবে, একটা বন্ধনে আবদ্ধ হলো।
বিয়েটা এক বছর পরে হওয়ার কথা ছিল। কারণ ভাইয়া চাইছিল ভাই আরেকটু ভালো একটা কোম্পানিতে চাকরি নেবে, তারপর বিয়ে হবে।
বিয়ে ঠিক হওয়ার ঠিক মাস দুয়েক পরে, ভাইয়া জানতে পারে মেয়েটার আগে একটা বিয়ে হয়েছে, কিন্তু তারা সেটা গোপন করেছিল।
ভাইয়া তাতেও তেমন একটা কিছু মনে করেনি। কারণ ভাইয়া মেয়েটাকে সত্যিকারের ভালবেসে ছিল।
তারপরে ভাইয়া প্রায় মেয়েটাকে টাকা দিত, জামা দিত, এটা সেটা গিফট করতো। এবং চট্টগ্রামে গিয়ে মেয়েটার সাথে প্রতিনিয়ত প্রত্যেকটা সপ্তাহে দেখা করত।
একদিন যখন ভাইয়া মেয়েটাকে না জানিয়ে মেয়েটার সাথে দেখা করতে, মেয়েটার বাড়িতে যায়। সেখানে গিয়ে ভাইয়া যা দেখে, তার জন্য ভাইয়া মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
মেয়েটা সেদিন বিয়ে ছিল অথচ ভাইয়ার সাথে মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু তারা ভাইয়াকে না জানিয়ে অন্য একটা ছেলের সাথে, মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল।
এটা দেখার পর ভাইয়া নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি। সেন্সলেস হয়ে যায়, এরপরে ভাইয়ার মা-বাবাকে খবর দেয়া হয়, উনার ওখানে গিয়ে ভাইয়াকে নিয়ে আসে।
ওই দিনের পর থেকে ভাইয়া তেমন একটা কারো সাথে কথা বলে না। ঘর থেকে বের হয় না। একা একা থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু যে ছেলেটা হাসিখুশি ছিল। সে হঠাৎ করে এত চুপ হয়ে গেল কেন।
ভালোবাসাটা এমন একটা বন্ধন। যদি কাউকে সত্যিকারের ভালবাসা যায়। তাকে হয়তো বা সহজে ভুলে থাকা যায় না। ভাইয়ার সাথে ও ঠিক এমনটাই হয়েছিল।
![]() |
---|
এই ঘটনা থেকে আমরা কি বুঝতে পারলাম। একজন মানুষ যখন ডিপ্রেশনে হারিয়ে যায়। তখন সে কিছুটা হলেও মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে পারে। যেমনটা ভাইকে দেখে আমি বুঝতে পারলাম।
কাউকে যদি ভালবাসতে না পারেন। তাহলে তার জীবনের সাথে কখনো জড়াবেন না। কারণ আপনি হয়তো অভিনয় করে, আপনার জীবনটা নিয়ে সুখে থাকবেন। কিন্তু সে মানুষটা আর কখনো নিজেকে সুন্দর করে, এই পৃথিবীতে কারো সাথে জড়াতে পারবে না।
আজ আর লিখছি না। এ পর্যন্তই থাক সবাই ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
meraindia |
---|
আপনার ভাইয়ের ঘটনাটি খুব হৃদয়বিদারক ছিল। আসলে ভালবাসা মানুষকে অন্ধ করে দেয় তা আপনার পোস্ট পড়ে আবারও প্রমান পেলাম। ওনার উচিত ছিল মেয়েটি ও তার পরিবার সম্পর্কে ভালো করে যাচাই করা। আপনি যেমন বলেছেন ডিপ্রেশনে মানুষ পড়লে একটু হলেও মৃত্যুর স্বাদ পায়।
চমৎকার একটি কথা লিখেছেন যে কাউকে ভালো না বাসলে তাকে জীবনের সাথে জড়ানো ঠিক না।আসলেই তাই। আমরা জীবনে অনেকগুলো সম্পর্ক গড়ে তুলি।কিন্তু বহু বার এমন হয়েছে আমরা সব সম্পর্ককে ধরে রাখতে পারি না। আপনার ভাইয়ের ঘটনাটি সত্যিই অনেক মন খারাপ করে দেয়ার মত। আর ডিপ্রেশনে চলে গেলে মানুষের আসলে দুনিয়াতে অর্ধেক মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করা হয়ে যায়। চমৎকার ভাবে আপনি ঘটনাটি উপস্থাপনা করেছেন। খুব ভালো লাগলো।
ডিপ্রেশন এমন একটি জিনিস।যা তিলে তিলে একজন মানুষকে নিঃশেষ করে দেয়। আপনি অনেক সুন্দর ভাবে বিষয়টি সম্পর্কে লিখেছেন।
আমার মনে হয় ঘাতক ব্যাধির চেয়ে কম নয় এটি। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
জ্বি আপু ডিপ্রেশন আমাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যারা ডিপ্রেশনে ভোগে তারাই জানে এর ভয়াবহতা কেমন। এখন আপনার ভাইকে বোঝানো ছাড়া আর কোন উপায় আমি দেখতেছিনা। তাছাড়াও আপনারা অভিজ্ঞ কোন মানসিক ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে পারেন। দোয়া করি আপনার ভাই তারাতারি মানসিক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাক। ভালো থাকবেন।
আপু আপনি খুবই সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে লিখেছেন বাস্তব গল্পটা । পড়ে আমার খুবই কষ্ট লাগছে আপনার এই ভাইয়ের জন্য। আপনার এই বড় ভাইয়ের সাথে যে ঘটনা ঘটেছে এটা মেনে নেওয়া মত না। এই রকম ঘটনা যার সাথে হয় সেই জানে এর কি জ্বালা।
যাইহোক আপু আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা বাস্তব ঘটনা আমাদের সাথে তুলে ধরার জন্য। আপনার পরবর্তী আকর্ষণীয় পোস্ট পড়ার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
আপু আপনার আজকের পোস্টটা অসম্ভব ভালো লেগেছে, ডিপ্রেশন আমাদের মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করায় এ কথাটার সাথে আমি একমত। গল্পটা পড়ে আমার বেশ ভালো লেগেছে আপনার শেষের কথাটা বেশ চমৎকার ছিল না ঠিক বলেছেন কাউকে ভালবাসতে না পারলেও তার জীবনের সাথে জড়ানো কখনোই উচিত নয়।
ডিপ্রেশনকে নিয়ে আমরা হাসিঠাট্টা করে থাকি কিন্তু এটা একটা মারাত্মক রোগ। আমি নিজে ডিপ্রেসনের শিকার হয়ে দেখেছি কিভাবে মানুষকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায় আস্তে আস্তে। তবে সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা নিলে এথেকে রেহাই পাওয়া যায়। যেমনটা আমি পেয়েছি।
চমৎকার একটা বিষয় আপনার লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইলো আপনআর জন্য
আপনার ভাইয়ার সাথে ঘটে যাওয়া এরকম ঘটনা যে কারোর মনে দাগ কাটবে, কেউই এই দু:খ সহ্য করতে পারবেনা। আপনার ভাইও পাড়ে নি। আসলে এভাবে মানুষের জীবন নিয়ে ছেলে খেলা করা উচিৎ নয়। প্রথম বিয়ে ল্যকিয়ে আবার বিয়ে করাটা খুব অন্যায়। এতে এক সাথে বেশ কয়েকটি পরিবার ক্ষতির মুখে পড়ে।