মাঝ রাতে যখন পুরনো স্মৃতিগুলো হঠাৎ করেই,, মনের দরজার কড়া নাড়া দিয়ে উঠে!!

in Incredible Indialast year
20230731_134600.jpg edit pixllabe

হঠাৎ করেই মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল! চোখের প্রচন্ড ঘুম,, দুঃখ ভরা ক্লান্ত মন নিয়ে ঘুমাতে গিয়েছিলাম! ঘুমটা ও কেমন যেন আজকে আমার সাথে আড়ি দিয়েছে! বারবার চেষ্টা করেও চোখে ঘুম নিয়ে আসতে পারছি না! বারবার শুধু জীবন হারিয়ে ফেলা,,, মানুষ গুলোর ছবি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো।

আসলে আমাদের জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে! যা আমরা কখনোই ভুলতে পারিনা! এমন কিছু স্মৃতি থাকে যা হয়তোবা খানিকটা সময়ের জন্য ভুলে যাই! কিন্তু কোন এক সময় কোন এক নিঝুম রাতে,,, হঠাৎ করেই সেই স্মৃতিগুলো আমাদের মনের দরজায় এসে কড়া নাড়তে থাকে।

vintage-pocket-watch-7439233_1280.jpg

Image source

আমি যখন পোস্ট লেখা শুরু করলাম! তখন বাংলাদেশ টাইম রাত দুইটা,, অনেকবার ঘুমানোর চেষ্টা করেছে! কেন যেন ঘুম আসছে না!যখনি চোখ বন্ধ করছি,,, চোখের সামনে ভেসে উঠছে বড় খালাম্মার ছবি! বারবার কেন যেন উনার কথা মনে পড়ছে,,, কি কারনে বুঝতে পারছিলাম না।

মাঝ রাতে যখন পুরনো স্মৃতিগুলো হঠাৎ করেই,, মনের দরজার কড়া নাড়া দিয়ে উঠে!!

বারবার ওনার বলা কথাগুলো কানের মধ্যে বেজে উঠতে লাগলো! সময়টা ২০২৩ জানুয়ারি মাসের 5 তারিখ যখন আমি ঢাকায় গিয়েছিলাম! তখন সময় ছিল সকাল দশটা! যদি ও আমরা খুব ভোরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি! দশটার মধ্যে ঢাকায় গিয়ে পৌঁছে গেলাম! আমি ঢাকায় অনেকদিন পরে যাওয়ার কারণে,, নারায়ণগঞ্জের সেই মহাকাশের ব্রিজের কথা অনেকটা ভুলে গেছি।

japan-2014616_1280.jpg

Image source

যদিও খালাম্মা মিনিটে মিনিটে কল করে বলছিল! রিক্সাওয়ালাকে অবশ্যই বলবি তোকে যেন মহাকাশ ব্রিজের ডান পাশে নামিয়ে দেয়! আমার নিজেরও জায়গাটা কেমন যেন অচেনা হয়ে গেল! খালাম্মা কে কল করলাম ব্রিজ এ নেমে,,, তুমি কোথায় আমি তো এখানে কিছুই চিনতে পারছি না।

আমরা এখনো মনে আছে,,, আমার খালাম্মা একটা লাল রংয়ের সোয়েটার গায়ে দিয়ে,,, আমার খালাতো বোনের ছেলেকে হাতে নিয়ে আমার জন্য এগিয়ে এসেছিল! দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তার পাশে,,, আমি যখন একটু এগিয়ে গেলাম! তখন দেখলাম খালাম্মা দাঁড়িয়ে আছে! অসহায়ের মত আমার দিকে তাকিয়ে আছে! আমাকে দেখে একগাল হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরল।

আমি ঠিক জানিনা এটাই হয়তোবা আমার খালাম্মার আমাকে শেষ জড়িয়ে ধরেছিল! তারপরে বাসায় গেলাম খাওয়া-দাওয়া করলাম! ঢাকায় গিয়েছিলাম আসলে গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজে! তাই খাওয়া দাওয়া করে আবার বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম! তখন সময় ছিল দুপুর বারোটা বেজে ৪৫ মিনিট।

noodles-4851996_1280.jpg

Image source

বাসা থেকে বের হওয়ার সময়,, খালাম্মাকে বলে গিয়েছিলাম আমি বাসায় এসে ভর্তা তৈরি করব! তুমি ভর্তার জন্য সব জিনিস রেডি করে রেখো। আমাকে এক গাল হাসি দিয়ে বলল ঠিক আছে! তোরা সাবধানে যাস,, আমি আর আপু বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম! আমাদের কাজ সম্পন্ন করতে করতে রাত আটটা বেজে গেল! বাসায় আসলাম এসে দেখি,, আমাদের পথ চেয়ে বসে আছে দরজায়।

এর পরের রাতের খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়লাম! সকালবেলা আমাকে আবার নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হলো! আসার সময় খালাম্মা বারবার বলছিল,, একটা দিন থেকে গেলেই তো পারতি।

আমি খালাম্মাকে বললাম শশুর বাড়িতে বলে আসেনি,, যদি ওনারা জানতে পারে তাহলে সমস্যা হবে! পরদিন সকাল সাতটায় বাসা থেকে বের হই! ফারজানা আপু বলেছিল আমার সাথে আসবে! কিন্তু খালাম্মা অনেকটা রেগে গিয়ে বলল,, আমি যাব ওর সাথে তোকে যেতে হবে না! আমার খালাতো বোনের ছেলে সামিন এবার ক্লাস এইটে পড়ে।

খালাম্মাকে ঘুম থেকে তুলে নিয়েছে,, বোরকাটা পড়ে আমার সাথে রওনা দিল! আসার সময় আমাকে বারবার বলছিল তোকে বলেছিলাম,, একটা দিন থেকে যেতে,, তুই থাকবি না! কথা বলতে বলতে বাস স্টেশনে চলে আসলাম আমি বাসে উঠলে আমার বমি হয়! খালাম্মা বাস স্টেশনে এসে ডাক্তারের দোকান খুঁজতে লাগলো! আমার জন্য বমির ট্যাবলেট কেনার জন্য।

tablets-5620566_1280.jpg

Image source

আমি বারবার বলতে লাগলাম,, কিনতে হবে না বমির ট্যাবলেট! আমি যেতে পারবো সমস্যা হবে না! কিন্তু আমার কথা কে শোনে অনেক দোকান খুঁজেও বমির ট্যাবলেট পেল না! পরে আমার কাছে এসে বলল,, তোর জন্য তো বমির ট্যাবলেট পেলাম না কি করব।

আমি বললাম ঠিক আছে সমস্যা নেই লাগবে না! ঠিক তখনই বাস কাউন্টারে মামা চলে আসলো টিকেট কাটার জন্য! আমি টিকিট কাটার জন্য টাকা বের করলাম! হঠাৎ করেই কেন জানিনা খালাম্মার হাতে এক হাজার টাকা দিয়ে বললাম! এটা দিয়ে তুমি তোমার ইচ্ছে মতো কিছু খেয়ে নিও! খালাম্মা বারবার আমাকে বলছিল,, না লাগবে না তুই নিয়ে যা তোর ছেলেদের জন্য খরচ করতে হবে। আমি বললাম ঠিক আছে,, সমস্যা নেই এটা তুমি রেখে দাও! এটা দিয়ে তুমি তোমার যা মন চায় খেয়ে নিও।

bank-notes-941246_1280.jpg

Image source

এই কথাগুলোই ছিল,, আমার খালাম্মার সাথে বলা আমার শেষ কথা! খালাম্মাকে জড়িয়ে ধরে বাসে উঠে চলে আসলাম নোয়াখালীতে! ঠিক তার এক মাস পরেই খালাম্মার মৃত্যুর সংবাদ! মৃত্যুর ঠিক ২ দিন আগেই আমার সাথে কথা বলেছিল! বারবার আমার ছোট ছেলের কথা বলছিল! তোর ছেলে অনেক দুষ্টু,, আমার সাথে অনেক দুষ্টামি করেছে! অনেক হাসাহাসি করছিল খালাম্মা! আমি মনের কাছে ধারে ও নিয়ে আসতে পারিনি যে,, খালাম্মা এত তাড়াতাড়ি আমাদেরকে ছেড়ে চলে যাবে।

আজকে হঠাৎ করে কেন জানিনা উনার কথা খুব মনে পড়ছে! চোখ বন্ধ করতে পারছি না,, কেন যেন বারবার ওনার ছবি আমার চোখের সামনে এসে ভাসছে! আসলে আমরা প্রিয় মানুষ গুলোকে আমাদের কাছে থাকতে মূল্য দেই না! যখন তারা আমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে হারিয়ে যায়! তখন আমরা তাদের অভাবটা অনুভব করতে পারি।

photo-2529307_1280.jpg

Image source

নির্ঘুম রাত কাটছিলাম,, ঘুম আসছিল না! তাই ভাবলাম আমার এই স্মৃতি নিয়ে কষ্টের কিছু কথা,,, আপনাদের সাথে শেয়ার করি! আজ না হয় এ পর্যন্তই থাক! সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন! এই কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায়! আল্লাহ হাফেজ! সবাই আমার খালাম্মার জন্য দোয়া করবেন।

Sort:  
 last year 

আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক কষ্ট লাগছিল 😭😭😭 আপনার খালাম্মার জন্য পৃথিবী তে আপন মানুষগুলো চলে গেলে সত্যি অনেক কষ্ট হয়।

কিন্তু সবাইকে যে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যেতেই হবে,, একদিন না একদিন,, এটা পৃথিবীর নিয়ম আমরা যতই বেচে থাকতে চাই না কেন একদিন আমাদের এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে এটাই বাস্তবতা

 last year 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ,,,, আমার পোস্ট পড়ে এত সুন্দর একটা মন্তব্য করার জন্য।

Loading...
 last year 

আপনার গল্পের শেষ লাইনগুলো পড়ে অনেকটা কষ্ট পেলাম। আসলে প্রিয়জন হারানোর ব্যাথার মতো ব্যাথা পৃথিবীতে আর নেই৷ তবুও কিছু করার নাই,প্রকৃতির নিয়মতো আর খন্ডানো যায় না৷দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা আপনার খালাম্মাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুণ,আমীন।

 last year 

আমীন

 last year 

আমাদের প্রতিটা মানুষের জীবনে কিছু স্মৃতি মাঝে মাঝে মনে ওঠে যেগুলো মনে পড়ে গেলে আমাদের খুবই কষ্ট হয় ঠিক আপনারও তেমনটা হয়েছে, আপনার খালাম্মার কথা শুনে খুবই খারাপ লাগলো আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতবাসী করুক আমিন।

 last year 

আমীন

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 67003.49
ETH 3502.34
USDT 1.00
SBD 2.87