হতাশা, রাগ ও ভাগ্য

in Incredible India11 months ago

আসসালামু আলাইকুম/আদাব,

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “হতাশা, রাগ ও ভাগ্য” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-

punch-g29a1ab05c_1280.jpg
source

আমরা সবাই কমবেশি হতাশায় ভুগি। হতাশা এমন একটি রোগ যেটি আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে হস্তক্ষেপ করে। হতাশায় ভোগা মানুষজন কখনই সফল হয় না। আর যারা অল্পতেই রেগে যায় তারা কোনদিন কোন কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন করতে পারে না।

রাগ বা ক্রোধ মারাত্মক একটি জিনিস। অতিরিক্ত রাগ মানুষের শরীর ও মন দু’ইয়ের বিপদ ডেকে আনতে পারে। যারা ভাগ্যে বিশ্বাস করে তারা যেকোন কিছু খুব সহজেই মেনে নিতে পারে। তারা হতাশাগ্রস্থ হয় না বরং বারবার চেষ্টা করে। কারণ তারা জানে ভাগ্যে যা আছে তাই হবে এবং পরিশ্রমের দ্বারাই ভাগ্য বদলানো সম্ভব।

জীবনে চলতে গেলে বিভিন্ন সময় বিপদ আপদ আসবেই। সেজন্য আমাদের হতাশ হওয়া যাবে না। কারণ বিপদ - আপদ সুখ – দুঃখ হাসি-কান্না এগুলো জীবনের একটি অংশ এবং এগুলোই দুনিয়ার নিয়ম। আপনি আমি চাইলেও এই নিয়ম পালটাতে পারবো না।

বিশ্বাস না হলে চারিদিক একবার তাকিয়ে দেখুন। দেখবেন অনেকেই আপনার থেকে অসুখী। আপনি যতটুকু ভালো আছেন তারা ততটুকুও ভালো নেই। কোন না কোন বিপদে জর্জরিত তারা। সত্যি বলতে কী দুনিয়াটা কিন্তু শান্তির জায়গা না। এখানে আপনার পাওয়া, না-পাওয়া, বেদনা ইত্যাদির হতাশা থাকবেই।

এগুলোকে মানিয়ে নিয়ে আপনাকে চলতে হবে। জীবন পরিচালনা করতে হবে। তবেই হয়তো আপনি সফল হতে পারবেন। হতাশা আমাদের জীবনের গতীকে অনেকখানি ধীর করে দেয়। আমাদের কাজের উদ্দীপনা অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। আগে যেখানে দু ঘন্টা হলেও খাটাখাটনি করতাম সেখানে হতাশা সেই খাটাখাটনি শূণ্যের কোটায় নামিয়ে আনে।

আর হতাশ ব্যক্তি সবসময় অলস হয়। আর মনে রাখতে হবে অলস মস্তিস্ক কিন্তু শয়তানের কারখানা। যাইহোক হতাশাকে আমাদের জীবন থেকে ঝেড়ে ও মুছে ফেলতে হবে। দেখবেন পৃথিবী কত সুন্দর হয়ে গেছে। আপনি আবার নতুন উদ্যোমে সব কিছু শুরু করতে পারবেন।

sad-g49feac836_1280.jpg
source

আর আপনি যে হতাশায় ভুগছেন তাতে কার কি আসে যায় বলুন তো? বড়জোর কাছের কিছু মানুষ ছাড়া আপনাকে সান্তনা দেওয়ার মতো কেউ থাকবে না। তারাও দুদিন পর বিরক্ত হয়ে আপনাকে আর সান্তনাটুকুও দেবে না। সবাই বলবে ও গোল্লায় যাক।

আমরা সকলেই জানি ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবা জ্ঞানীর কাজ। কিন্তু সবাই কী এই ভাবনা সঠিকভাবে ভাবতে পারে। নাকি ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবতে ভাবতে হতাশ হয়ে পরে। আসল জ্ঞানী তো তারাই যারা ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে সঠিক কর্মপন্থা অবলম্বন করে। তারা কখনোই হতাশায় ভোগে না।

কিন্তু আমরা কি আগামীকাল কী হবে, আমার ক্যরিয়ার কিভাবে হবে, সামনে চাকরি পাবো কি না, বিয়ে করতে পারবো কী না ইত্যাদি নিয়ে দুশ্চিন্তা করতেই থাকি। এতে করে হতাশা আরো বেশি করে আমাদের জাপটে ধরে। কিন্তু আমরা যদি আরেকটু বুদ্ধিমান হতাম তাহলে হয়তো এমনটা হতো না।

আমরা অবশ্যই ভবিষ্যতের ভাবনা ভাববো। এরজন্য পরিকল্পনা করবো, সঠিক ভাবে কাজ করে সঠিক পথে এগোতে থাকবো। কখনই ফলাফল নিয়ে তটস্থ হবো না।

আমার কাজ হবে শুধু চেষ্টা করা। বাকি ফলাফল সময় ঠিক একদিন বলে দিবে। তাছাড়া স্মৃষ্টিকর্তা তো আছেনই। তিনি অবশ্যই আমাদের ভালো বোঝেন এবং সেই অনু্যায়ী আমাদের জন্য ভালো কিছুই রেখেছেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

আমরা অনেকেই আছি যারা কথায় কথায় রাগ করি। কিন্তু জানেন কী রাগ মাঝে মধ্যে আমাদের সবথেকে বড় শত্রু হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। কেননা রাগের কারণে আমরা যেমন নিজেরা বিপদে পরি ঠিক তেমনি অন্যকেও বিপদের মুখে পতিত করি। অতিমাত্রায় রাগান্বিত হওয়া মোটেই কাম্য নয়।

এতে আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর সমাজে রাগী ব্যক্তিকে কেউ পছন্দ করে না। হয়তো সামনে খুব সাফাই গায় তার নামে কিন্তু দূরে গেলেই মনে মনে বা প্রকাশ্যে তার প্রতি বিরুপ মন্তব্য করে বসে। মানুষ সবসময় পছন্দ করে বিনয়ী, ভদ্র, সুমিষ্ট ভাষী ও শান্ত মানুষকে।

furious-g8aade8a3a_1280.jpg
source

বলা চলে যারা রাগী মানুষ তারাও কিন্তু শান্ত মানুষদের পছন্দ করে। আমাদের সমাজে যে কলোহ, ঝগড়া ঝাটি, মনোমালিন্যের স্মৃষ্টি হয় এর পেছনে কিন্তু রয়েছে রাগ। তাই বলবো রাগ ঝেরে ফেলুন দেখবেন সবাই আপনাকে কতটা ভালোবাসছে, কাছে টেনে নিচ্ছে। দেখবেন পৃথিবীটা কত সুন্দর ও রঙ্গীন হয়ে উঠেছে।

এবার আসি ভাগ্যের বিষয়ে। ভাগ্য জিনিসটা কিন্তু বেশ জটিল। ভাগ্যকে অনেকেই অনেকভাবে ব্যাখা দিয়ে থাকে। কেউ বলে যে ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। কেউবা ঘটনা সম্পাদিত হওয়ার পর বলে ভাগ্যে হয়তো এটাই লিখা ছিলো তাই এমনটা হয়েছে।

দুটো ব্যাখাকেই আমি সঠিক মনে করি কিন্তু ভাগ্য দ্বারা কখনো অন্যায় কাজকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। যদি আমি বলি আমি চুরি করি ডাকাতি করি কিংবা ছিনতাই করি এগুলো আমার ভাগ্যে লিখা ছিলো, তাহলে তা কিন্তু হবে না। আর এটি সমাজে কখনই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।

কারণ স্মৃষ্টিকর্তা আমাদের সকলকে বিবেক দান করেছেন। কোন কাজ করার আগে কাজটি ভালো হবে নাকি মন্দ হবে জানতে চাইলে বিবেক কে প্রশ্ন করুন দেখবেন রাতারাতি উত্তর পেয়ে যাবেন। এজন্য আল্লাহ তা’লা আমাদের বিবেক দান করেছেন যাতে আমরা ভালো মন্দের বিচার করতে পারি।

তাই একজন ভালো মানুষ হিসেবে আমাদের ভাগ্যে বিশ্বাস করা যতটা জরুরী ঠিক ততটাই জরুরী নিজের বিবেক দিয়ে ভালো মন্দের বিচার করা। সবকিছু ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেওয়া মোটেই কাম্য নয় বলে আমি মনে করি।

sunset-ge1b10aef1_1280.jpg
source

পরিশেষে বলবো হতাশা, রাগ ও ভাগ্য এই তিনটি জিনিসের উপর গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত জররী। কারণ এই তিনটি জিনিস যদি আমরা সঠিকভাবে গুরুত্ব দিয়ে জীবন পরিচালনা করি তাহলে দেখবেন জীবনের আমুল এক পরিবর্তন। জীবন হবে সুখ ও স্বাচ্ছন্দময়।

আজ আর নয়। ভালো থাকবেন বন্ধুরা।

Sort:  
Loading...
 11 months ago 

অনেক সময় দেখা যায়,,, আমরা রাগের কারণে কিছু মানুষকে এমন ভাবে উঁচু গলায় কথা বলে ফেলি! যেটা আমাদের বলা মোটে উচিত হয় না!কথাগুলো বলার পরে নিজেরাই হতাশায় ভুগতে থাকি! আসলে কথাগুলো বলাটা ঠিক হয়নি! আপনি ঠিক বলেছেন,,, রাগ নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের প্রত্যেকেরই প্রয়োজন।

একটা মানুষ যখন হতাশায় ভোগে তখন অনেক সময় দেখা যায়! তার প্রিয় মানুষগুলো তাকে ছেড়ে চলে যায়! সে যখন অতিরিক্ত রাগ করে তখন তার কাছের মানুষগুলো তাকে খুব বাজে ভাবে কথা বলে! এ বিষয়গুলোর উপর লক্ষ্য করে আমাদেরকে জীবন পরিচালিত করতে হয়! জীবনের সবকিছু মেনে নিতে হয়! আপনি যদি সবকিছু মেনে নিতে পারেন,,,, তবেই আপনার জীবন সুন্দর।

অসংখ্য ধন্যবাদ বাস্তবতা নিয়ে এত সুন্দর একটা টপিক আমাদের সাথে আলোচনা করার জন্য! আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল! ভাল থাকবেন।

 11 months ago 

হতাশা, রাগ ও ভাগ্য নিয়ে আপনি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা তুলে ধরেছেন যা পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। যেমন আমরা জানি হতাশা একটি জটিল মনোস্তাত্ত্বিক বিষয়। এটি নিয়ে চিন্তা করার অনেকগুলি উপায় রয়েছে: হতাশাকে গ্রহণ করা পরিপক্বতার লক্ষণ হতে পারে- যখন আমরা একটি অসম্পূর্ণ বিশ্বকে মেনে নিই। হতাশার রাজনৈতিক প্রভাব থাকতে পারে যখন কিছু মানুষের প্রয়োজন অন্যের চেয়ে বেশি হয়।

পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় অর্থনৈতিক ভারসাম্যের অভাবে অনেক মানুষ তাদের চাহিদা মত টাকা আয় করতে পারে না ফলে হতাশায় ডুবে থাকে। ‘আয় যতোটুকু, ততোটুকু ব্যয় করব’- এভাবে না ভেবে, আমরা চাই ‘যতোটা ব্যয় করব, আয় ততোটা হতেই হবে’। আমরা দেখি কেউ খুব ভালভাবে তাদের চাহিদা পূরণ করছে কিন্তু আমরা পারি না তখনও হতাশা আসে। মানুষ নিজে যখন ভাল থাকতে চায় অতপর: দেখে তার চারপাশ অনেক খারাপ কাজ হচ্ছেই; কেউ ঠিক করার নেই তখনও সে হতাশ হয়। কেউ যখন কোন কিছু পাবার জন্য খুব চেষ্টা করেও পায় না বিভিন্ন উপায় কৌশল অবলম্বন ব্যর্থ হয় তখন সে হতাশ হয়ে পড়ে। ট্রেস থেকেই হতাশা আসে। ট্রেস জৈবিক এবং আচরণগত বিষয়, যখন ট্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না তখন হতাশা আসে। অনেক সময় কোন কারণে পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সমাজ সাহায্য না করলেও হতাশা আসে। লেখাপড়া, চাকরি, ব্যবসা, কারো জন্য কিছু করা ভালোবাসা ইত্যাদির ক্ষেত্রেও ট্রেস এবং হতাশা আসে। তাই আমাদের এ সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই জীবন সুন্দর হবে।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের মাঝে হতাশা, রাগ ও ভাগ্য বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন

 11 months ago 

হতাশা রাগ ভাগ্য এই তিনটি জিনিস আমাদের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ৷ কারন আমরা কোন কাজে না গিয়েই তার আগেই হতাশা নিয়ে থাকি ৷ যার জন্য আমরা কোন কাজে সফল হতে পারি না ৷ আর রাগ রাগের মাথায় মানুষ এখন অনেক কিছু করতেছে যা আমাদের উচিত না ৷ সব কিছু ভেবে চিন্তে করাটাই উত্তম ৷ আর ভাগ্য আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে ৷ ভাগ্য আমাদের উপর নির্ভর করে থাকে ৷ যে যেমন কর্ম করবে সে তেমন ফল পাবে ৷

ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ৷

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 57872.51
ETH 3061.57
USDT 1.00
SBD 2.25