তেঁতুল গাছ ও একটি মেয়েকে ঘীরে আমার স্বপ্ন

in Incredible Indialast year

আসসালামু আলাইকুম/আদাব,
কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “তেঁতুল গাছ ও একটি মেয়েকে ঘীরে আমার স্বপ্ন” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-

angel-5054040_1280.jpg
source

সময়টা ছিলো শীতকাল। সেদিন প্রচন্ড কুয়াশা পরছিলো। চারিদিক নিস্তব্দ। কোন জনমানবের চিহ্নমাত্র নেই। আমি একা। মাঝে মধ্যে দু একটা পাখির ডাক শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না যে কোথায় আছি। ঠিকঠাক মনেও করতে পারছিনা। সামনে আবার ঘন জঙ্গল। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে একটা রাস্তা চলে গিয়েছে। কুয়াশায় কিছু দেখা যাচ্ছিলো না।

যাইহোক আমি জঙ্গলের ঐ পথ ধরে হাঁটা শুরু করলাম। চারদিক ঝি ঝি পোকার ডাক। আশেপাশে কোন বাড়িঘর ছিলো না। লোকজনের পদচিহ্ন পর্যন্ত ছিলো না। ভয়ে আমার শরীলের সব লোম দাঁড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। অবশ্য ভয় পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ এরকম নির্জন যায়গায় যখন আপনি থাকবেন তখন আপনারও ভয় লাগবে।

কিছুক্ষণ পর চোখের সামনে একটা তেঁতুল গাছ ভেসে উঠলো। একটু উপরে তাকাতেই দেখলাম একটি মেয়ে গাছের ডালে বসে আছে। এত সুন্দরী মেয়ে হয়তো আমি এর আগে কখনো দেখিনি। চোখ গুলো ছিলো হরিনের চোখের মতো টানা টানা। চুলগুলো যেন পায়ের পাতা ছুই ছুই।

আমাকে দেখেই একটা মুচকি হাসি দিলো। কি মিষ্টি সেই হাসি। যেন মোনালিসার হাসিকেও হার মানাবে। এর বেশি বর্ণনা করাটা হয়তো উচিত হবে না। আমি এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার দিকে।

কিছুক্ষণ পর মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞাসা করলো কোথায় যাচ্ছেন? আমি একটু নড়ে চড়ে দাড়ালাম। কন্ঠটা বেশ চেনা চেনা মনে হচ্ছে। একটু হকচকিয়ে বললাম, আপনি কে? এ সময় তেঁতুল গাছে কী করেন? মেয়েটি আবার হাসতে লাগলো। এবার আর মুচকি হাসলো না। একটু জোরে সরেই হাসলো।

angel-2939548_1280.jpg
source

আমার ভয়ে গা ছমছম করতে লাগলো। মাথায় বিভিন্ন চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো। মেয়েটি কী আসলেই মানুষ নাকি ভূত। নাকি কোন অশরীরি আত্মা। চারদিক একটু খেয়াল করলাম। দেখলাম একটা বাদুড় এক গাছ থেকে ঊড়ে গিয়ে আরেকটি গাছে গিয়ে বসলো। আর একটি প্যাঁচা ঢ্যাপ ঢ্যাপ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

সব মিলিয়ে ভূতুরে পরিবেশ। কী করবো কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না। সেখান থেকে দৌঁড়ে পালাবো নাকি মেয়েটার সাথে কথা বলার চেষ্টা করবো। সব মিলিয়ে নিজেই নিজেকে সামলানো আমার কাছে বেশ কষ্টসাধ্য একটা কাজ হয়ে দারালো। এমতবস্থায় মেয়েটি আবার বলে উঠলো আপনি তো দেখি ভয় পাচ্ছেন। ভয় পাওয়ার কোন মানেই হয় না। আমি ভূত না।

এরপর সাহস করে আমি বললাম তো তেঁতুল গাছে কী করেন। নিচে নেমে আসুন। মেয়েদের গাছে উঠতে হয় না। নেমে আসুন বলছি। মেয়েটা আমার কথাকে পাত্তা না দিয়ে উলটো আমাকে বললো তাহলে কে গাছে ওঠে শুনি। শুধু কী ছেলেরাই গাছে উঠবে আর আমরা উঠবো না। না না এটা তো হবে না। আপনারা যা পারেন বা করেন আমরাও তা পারি বা করি।

এরপর ভাবতে লাগলাম এতো অতি চালাক মেয়ে। আর বেশ নাছোরবান্দাও। এমন নাছোরবান্দা মেয়ে তো আমি এর আগে কখনো দেখি নি। আমি আবারো বললাম নেমে এসো। এবার কি ভেবে যে তুমি করে বললাম তার কোন উত্তর আমার কাছে নেই। মেয়েটি পরক্ষণে বললো তুমি গাছে উঠে এসো। আমি নামবো না। আমি বললাম আমি তো উঠতে পারি না।

মেয়েটি তখন হাত বাড়িয়ে দিলো এবং বললো এই যে হাত ধরো আমার। হাত ধরে উপরে উঠো। মেয়েটির কথা বলার ধরণ এবং তার চাহুনি এতটাই সুন্দর ছিলো যে আমি রিতীমত তার প্রেমে পরে গেলাম। মনে হতে লাগলো কত জনম ধরে যেন তার সাথে আমার পরিচয়।

তারপর পরক্ষণে মনে হলো আরে জীবন তো বাংলা সিনেমার গল্প না। সে আমাকে গাছে তুলতে চাচ্ছে কেন। যদি গাছে তুলে আমাকে মারার চেষ্টা করি কিংবা আমার ঘাঁড় মটকে দেয়। না না কোনমতেই এই সুযোগ তাকে দেয়া যাবে না। এই ভেবে আমি মেয়েটিকে বললাম না আমি গাছে উঠবো না। আমার একটু তাড়া আছে। আমাকে যেতে হবে। অন্যকোনদিন এসে আপনার সাথে গাছে উঠে গল্প করবো। আজ না।

এরপর মেয়েটি বললো, ভয় পাচ্ছো খুব তাইনা। আমি ভয় পাচ্ছি কথা সত্য। কিন্তু বললাম যে না ভয় পাবো কেন। তুমি ভূত না পেতনি, যে তোমাকে দেখে ভয় পেতে হবে। মেয়েটি বললো কী আমাকে ভূত আর পেতনি বললে। আচ্ছা এবার তোমাকে আমি ভয় দেখিয়েই ছাড়বো।

আমি ততক্ষণাৎ বললাম না না। মিছে কথা। আমি কখন ভূত আর পেতনি বললাম। তুমি তো স্বাক্ষাত দেবী স্বরস্বতী। এত সুন্দর তুমি। এত সুন্দর তোমার চাহুনি। এত সুন্দরী মেয়ে কী করে অন্যকাউকে ভয় দেখায় শুনি। এবার আমার গলার স্বর একটু নরম হলো। এবার মেয়েটি বললো আমি দেবী স্বরস্বতী।

তাহলে আমার বাহন কই। আমি গাছে বসে কেন। আমি বললাম তোমার বাহন তো হাঁস। হাঁস তো পানিতে থাকে। গাছে থাকে না। ঐ দেখো হাঁস পুকুরে সাতার কাটছে। কথাটি শুনতেই মেয়েটি কেমন জানি রেগে মেগে আগুন হয়ে গেলো। আমাকে এবার রিতীমত তুই তুকারি শুরু করলো।

বললো তুই কি সাঁতার জানিস? যা পুকুরে নেমে সাঁতার কাট দেখি কেমন পারিস। আমি কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। মেয়েটির এমন ব্যবহার আমার মনে অনেক সংশয়ের স্মৃষ্টি করছিলো। আমি নিজেও সমাধান খুঁজে পাচ্ছিলাম না অনেক প্রশ্নের।

এবার শেষমেস মেয়েটি তেঁতুল গাছ থেকে নেমে এলো। এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। আমার হাত ধরলো। স্বপ্নের মধ্যেও আমার কেন জানি সব কিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছিলো। এমন সুন্দরী কেউ যদি এসে আপনার হাত ধরে তাহলে আপনি নিজেকে কতটা সামলাতে পারবেন? পারবেন কী পারবেন না সেই তর্কে আমি জড়াবো না। কিন্তু আমি নিজেকে সামলে রাখতে পারি নি।

এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম তার দিকে। মেয়েটা এবার মুচকি হাসি দিয়ে বললো চলো আমার সাথে চলো। তোমাকে পৌঁছে দেই। আমি বললাম কোথায়। মেয়েটি বললো যেখানে তোমার গন্তব্য। তারপর তার হাত ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। খুব সুন্দর একটি মহূর্ত ছিলো সেটি। সব কিছু আলোয় আলোকিত হয়ে গেলো। আমার মনে ভয় ডর বিন্দু মাত্র ছিলো না। সব ভয় যেন কোথায় পালিয়ে গেলো।

angel-2437942_1280.jpg
source

এরপর কানের কাছে কে যেন এসে বললো মামা ও মামা উঠো না। আজ না আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে। মামা ও মামা। না উঠলে এই পানি দিলাম তোমার চোখে। ও মামা, মামা ও মামা। খুব বিরক্তিভরা কন্ঠে ভাগনিকে কী যে বললাম মনে নেই। নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম। চোখ খুলে দেখি ভাগনি স্বজরে কান্না করছে।

আজ আর নয়। ভালো থাকবেন বন্ধুরা।

Sort:  
Loading...
 last year 

আমরা অনেক সময় অনেক ধরনের স্বপ্ন দেখে থাকি কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবে খুবই কম মিলে থাকে। তবে আপনার গল্পটি আজ আমি খুবই মনোযোগ সহকারে উপভোগ করেছি যেটা পড়তে পড়তে আমার খুবই ভালো লেগেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আপনাকে এতো সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে ভাগ করে নেয়ার জন্য। এবং আশা করবো পরবর্তী পোস্টে আরো বিভিন্ন ধরনের ভালো ভালো গল্প আপনি আমাদেরকে শেয়ার করবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.17
JST 0.033
BTC 63811.77
ETH 2736.02
USDT 1.00
SBD 2.60