“এস এস সি (মাধ্যমিক) পরীক্ষা নিয়ে আমার কিছু স্মৃতি”

in Incredible Indialast year

আসসালামু আলাইকুম/আদাব,

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “এস এস সি (মাধ্যমিক) পরীক্ষা নিয়ে আমার কিছু স্মৃতি” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-

students-395568_1920.jpg
source

সাল দু হাজার এগারো। আমার বয়স তখন ষোল ছুই ছুই। এই বয়সে সত্যি কাউকে দমিয়ে রাখা যায় না। আমাকেও যায়নি। ষোল বছরের একজন টগবগে তরুণ হিসেবে আমি শুধু ছুটতাম। কোথায় খেলা হতো, ফুটবল, ক্রিকেট, হা ডু ডু, এগুলো নিয়ে সারাদিন মাথা ঘামাতাম।

পড়ালেখা যে করতাম না তা কিন্তু নয়। তবে বিদ্যালয় ফাঁকি দিয়ে মাঝে মধ্যে খেলার মাঠে যেতাম। যাইহোক দেখতে দেখতে আমার এস এস সি পরীক্ষা চলে এলো। পরীক্ষার এক মাস আগে মা আমাকে ঘর বন্দি করে রেখেছিলো। কোথাও বের হতে দিতো না। শুধু গোসল, নামাজ, খাওয়া দাওয়া আর পড়া। মা বলেছিলো এখন শুধু পড়া। পরীক্ষার পর যা খুশি করিস। কী আর করার। মায়ের কথা না শুনলে তো সেই সময় উত্তম মধ্যম খেতে হতো।

মায়ের হাতের উত্তম মধ্যম গুলোকে এখন খুব মিস করি।

আমাদের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছিলো দু হাজার এগারো সালের পহেলা ফেব্রুয়ারী থেকে। আর আমার লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছিলো দু হাজার এগারো সালের মার্চ মাসের দশ তারিখ। আমার গ্রুপ ছিলো ব্যাবসায় শিক্ষা। আমি হিসাববিজ্ঞানে তেমন পারদর্শী ছিলাম না।

আমার একজন এলাকাবাসী চাচা আমাকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পড়াশোনা করার জন্য খুব করে বলতে থাকে। তিনি বলেন ব্যাবসায় শিক্ষা নাকি খুব সহজ বিষয়। সরকারি চাকরিও অনেক সহজে পাওয়া যায়। ব্যাংকে চাকরিও পাওয়া যায়। ইত্যাদি ইত্যাদি।

ব্যাবসায় শিক্ষা নিয়ে আমি হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষায় তেমন ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারিনি। শুধু মাত্র এসএসসি পরীক্ষার সময় হিসাববিজ্ঞানের গণিত গুলো খুব ভালো ভাবে সামাধান করতে পেরেছি।

এখন আসল কথায় আসি। পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে আমাদের পরীক্ষা শুরু হয়। ঐ দিন ছিলো বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষা। সৃজনশীল বাংলা পরীক্ষার, আমরা যারা এগারো সালে পরীক্ষা দেই তারা ছিলাম ২য় ব্যাচ। আমাদের আগের ব্যাচের বড় ভাইয়েরা বাংলা আর ধর্ম বিষয়ে সৃজনশীল পরীক্ষা দিয়েছিলো।

প্রথম পরীক্ষার দিন আমার খুব ভয় করছিলো। নিজেকে নিয়ে নিজের খুব দুস্বচিন্তা হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো কোন এক নির্জন দ্বীপে আমি একা একজন মানুষ। এতটা নার্ভাস হয়তো আমি এর আগে কখনো হই নি। পরীক্ষার সেন্টার আমাদের বাসা থেকে বেশী দূরে ছিলো না। হেটেই যাওয়া যায়।

আমি আর আমার বন্ধু সহ আমরা দুজন পরীক্ষা দিতে একসাথে যাবো বলে আগের দিন প্লান করে রেখেছিলাম। কিন্তু মা আমাকে একা ছাড়ার মানুষ নয়। শেষ মেস আমি মায়ের সাথে আর আমার বন্ধু ওর ভাইয়ের সাথে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলো। সেদিন রাস্তায় খুব ভীড় ছিলো। অনেকেই তাদের বাবা মা, ভাই-বোন বা প্রাইভেট শিক্ষকদের নিয়ে পরীক্ষার হলে গিয়েছিলো।

studying-951818_1920.jpg
source

প্রথমেই সীট খোঁজার পালা। অনেক ভীড় ঠেলে আমার বন্ধুর বড় ভাইয়ের মাধ্যমে আমি আমার কাঙ্খিত সীট নাম্বার পাই। তিন নাম্বার ভবনের দ্বিতীয় তলায় একশত চার নাম্বার কক্ষে আমার সীট পরেছিলো। কক্ষে প্রবেশ করে দেখলাম সেখানেও অনেক ভীড়।

প্রত্যেকের অভিবাভক ছিলো সেখানে। কোনরকম ভীড় ঠেলে আমি আমার সীটে গিয়ে বসি। মা আমার সাথে ছিলো। আমার সীটে অন্য বিদ্যালয়ের আরেকজন ছাত্র ছিলো। আমি তার সাথে কথাবার্তার মাধ্যমে পরিচয় হয়ে নিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর ঘন্টা বাজলে সব অভিভাবক কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়।

মা যাবার সময় আমাকে আদর করে বলে যায়, বাবা ভয় পাবি না। আমি বাইরে অপেক্ষা করবো। ভালো করে সব প্রশ্নের উত্তর দিবি কিন্তু। আমি কোন উত্তর না দিয়ে শুধু মাথা নারিয়েছিলাম।

কিছুক্ষণ পর কক্ষে দুজন শিক্ষক ও একজন শিক্ষিকা প্রবেশ করেন। তারা সকল নিয়ম কানুন আমাদের বুজিয়ে দিয়ে খাতা বিতরণ করেন।

boy-3653385_1920.jpg
source

পরীক্ষার খাতা পাওয়ার পর খুব সাবধানে রোল নাম্বার, রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার লিখলাম। ও খুব সতর্ক ভাবে ওএমআর পূরন করলাম। ওএমআর পূরন করার সময় খুব ভয় হচ্ছিলো। যদি ভূল হয়। হাত রিতীমত কাপতেছিলো। পরে কর্তব্যরত শিক্ষক আমাদের সবাইকে নির্ভয় দিয়ে বলেন, ভয়ের কিছু নেই। যদি ভুলও হয় তারপরও সঠিক ঘর পূরণ করলে হবে। এতে কোন সমস্যা হবে না।

এরপর প্রশ্ন হাতে পেলাম। লিখিত প্রশ্ন। প্রশ্ন মোটামুট সব কমন ছিলো। লিখিত পরীক্ষা শেষ করলাম। এমসিকিউ এর খাতা দিলো। এম সিকিউ সব দাগালাম। আমার এখনো মনে পরে সবার আগে আমার এমসিকিউ দাগানো শেষ হয়েছিলো। পরীক্ষা শেষে খুব তারাতারি করে আমি বাথরুমে গিয়েছিলাম। কারন লেখাতে এত ব্যস্ত ছিলাম যে তিন ঘন্টা অন্য কোন কিছু আর মাথায় আনতে পারিনি।

পরীক্ষার প্রথম দিন সব সময় রাস্তায় জ্যাম থাকে। প্রত্যেক শিক্ষার্খীর পিছনে দু চার জন করে অভিভাবক আসে। পরীক্ষার্থী একজন কিন্তু সাথে আরো দু চারজন থাকার কারণে রাস্তায় অনেক জ্যাম হয়।

পনেরো তারিখে আমি হিসাববিজ্ঞান নামক ভয়ানক বিষয় থেকে মুক্তি পাই। আর বাইশ তারিখে আমাদের গণিত পরীক্ষা হয়। গণিত পরীক্ষার আগে এক সপ্তাহ ছটি পাই। এতে খুব ভালো ভাবে প্রিপারেশন নিতে সক্ষম হই ও গণিত পরীক্ষা খুব ভালো হয় আমার।

মার্চ মাসের দশ তারিখ সকালে আমার অপসনাল সাবজেক্ট কম্পিউটার পরীক্ষা হয়। এই কম্পিউটার পরীক্ষা, মানে শেষ পরীক্ষা দিয়ে যখন পরীক্ষার হল ত্যাগ করি, তখন অন্য রকম এক অনুভূতি হয়।

মনে হয় যেন আজ থেকে আমি স্বাধীন। আমি এখন আকাশে উড়বো। যতক্ষণ খুশি খেলাধুলা করবো। কেউ আর আমাকে বকাঝকা করবে না।

এই ছিলো আমার জীবনে এস এস সি (মাধ্যমিক) পরিক্ষা দেওয়ার কিছু স্মৃতি।

আজ আর নয় বন্ধুরা। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহহাফেজ।

Sort:  
Loading...
 last year 

মায়ের হাতের উত্তম মধ্যম গুলোকে এখন খুব মিস করি।

  • যথার্থ বলেছেন ভাই, সেই শিক্ষা জীবনে আবারো একবার ফিরে গেলাম আজ আপনার লেখাটি পরিদর্শন করতে করতে।
  • মাধ্যমিক পরীক্ষার কিছু মূহুর্ত ও দেখলাম তুলে ধরেছেন। একদমই তাই ভাই , পরীক্ষা কেন্দ্রের বাহিরে অভিভাবকদের সমাগম লক্ষনীয়।

  • তাছাড়া দেখলাম হিসাব বিজ্ঞানকে আপনি বেশ ভয়ই পেতেন। যাইহোক প্রত্যেক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর এরকম কিছু অনুভূতি আছে বলে আমার মনে হয় ‌।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 66049.89
ETH 3374.89
USDT 1.00
SBD 2.63