টুথপেস্ট ও ফেয়ার এন্ড লাভলি
কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “টুথপেস্ট ও ফেয়ার এন্ড লাভলি” শীর্ষক একটি লিখনি উপস্থাপন করছি। কথা না বাড়িয়ে তাহলে শুরু করা যাক।
কলেজ জীবনে যদিও বা ছাত্রাবাসে থাকার মতো সুযোগ হয়নি তবুও দিনের অর্ধেকটা সময় ছাত্রাবাসেই কাটাতাম। অর্থ্যাৎ বিভিন্ন বন্ধু যারা ছাত্রাবাসে থাকতো তাদের সঙ্গে এমন সম্পর্ক হয়েছিলো যে একদম আত্মার সাথে সম্পৃক্ত ছিলো তারা প্রত্যেকেই।
তিনজনের সাথে বেশ সখ্যতা ছিলো। আশরাফুল, রবিন এবং কাইয়ুম। তাদের ছাড়া আমার যেমন চলতো না ঠিক তেমনি আমাকে ছাড়াও তাদের চলতো না।
ছাত্রাবাসে কাটানো সময়গুলোকে এখন খুব মিস করি। ছাত্রাবাসে আরো যারা ছাত্র ছিলো তাদের সঙ্গেও একধরণের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। আমি গেলে তারা প্রায়ই তাদের রুমে আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে গল্প গুজব করতো। মাঝে মধ্যে তাদের খাবার আমার সাথে শেয়ার করতো। না খেতে চাইলে মন খারাপ করতো, তাই বাধ্য হয়ে খেতে হতো।
ছাত্রাবাসে এক বড়ভাই ছিলো বেশ মজার। তিনি মোটামুটি ঐ ছাত্রাবাসে সবার থেকে সিনিয়র ছিলো। সিনিয়র হলে হবে কী সবাইকে মজা দিতে কার্পন্য করতো না। ভাই ছিলো বেশ স্বাস্থ্যসচেতন। সব কাজ মেপে মেপে করতেন।
যতটুকু খাবার খেলেন ততটুকু পরিশ্রম করলেন কী না, ব্যায়াম করলেন কী না, ভালোকরে পরিস্কার হলেন কী না ইত্যাদি বিষয়ে বেশ সচেতন ছিলেন। কিন্তু একটি সমস্যা তার কিছুতেই দূর হতো না সেটি হলো দাঁতের কালো দাগ তিনি কোনভাবেই তুলতে পারতেন না।
আমার জানা মতে তিনি প্রতি সপ্তাহে টুথপেস্টের ব্রান্ড চেঞ্জ করতেন। এক সপ্তাহে ক্লোজ আপ তো অন্য সপ্তাহে পেপসোডেন্ট। আবার পরের সপ্তাহে কোলগেট। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হচ্ছিলো না। বার বার সবার কাছে পরামর্শ নিতো যে এর সমাধান কি হতে পারে।
অনেকেই ডাক্তার দেখানোর কথা বললেও ভাই যেতে রাজি হয়নি। কারণ ভাইয়ের ধারণা দাঁতের ডাক্তারের কাছে গেলেই অনেক টাকা নষ্ট হবে আর দাঁত হারানোরও নাকি সম্ভাবনা আছে। বলা তো যায় না ডাক্তার দাঁত যদি খুলে নেয়। ভাইয়ের এমন কথা শুনে আমরা সকলেই হাসতাম।
এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর ভাই সব ব্রান্ডের টুথপেস্ট বাদ দিয়ে কয়লা দিয়ে দাঁত মাজা শুরু করলো। তখন গ্রীষ্মকাল ছিলো। বাইরে প্রচুর গরম ছিলো। তাই ঘনঘন লোডশেডিং হতো সেই সময়টাতে।
যাইহোক ভাই কয়লা ব্যবহার করেও খুব একটা ভালো ফল পাচ্ছিলো না। একটু পরিস্কার হয় ঠিকই কিন্তু দুদিন গেলে আবার আগের মতন হচ্ছিলো।
মাঝে মধ্যে দাঁত মেজে এসে ভাই আমাকে আর আশরাফুলকে দেখাতো যে পরিস্কার হয়েছে কী না। কালো দাগগুলো আছে কীনা। আমরাও ভাইকে খুশি করার জন্য বলতাম বাহ! অনেক ঝলমলে হয়েছে তো। একদম চকচকে সাদা।
ভাই শুনে খুশি হতো আর বলতো এই ছাত্রাবাসে শুধু তোরাই দুজনই আমার দুঃখ বুজিস আমাকে ভালো বলিস কিন্তু বাকিরা শুধুই ইয়ারকি মারে। আমি বলতাম আরে না ভাই কী বলেন, সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করে।
এরপর একদিন ভাই আবারো এসে বললো দেখতো কেমন হয়েছে দাঁত। আজ আমি আর আশরাফুল ভাইয়ের দাঁত দেখে বেশ অবাকই হলাম। একদম সাদা ধপধপে দেখাচ্ছে।
আমি দেড়ি না করে অন্য রুমের সবাইকে ডাকলাম আর বললাম এসে দেখে যাও ভাইয়ের দাঁত একদম সাদা হয়ে গিয়েছে। সবাই এসে দেখলো হ্যা তাইতো। এটা কীভাবে সম্ভব।
এরপর নজরুল নামে আরেকজন বড় ভাই দৌঁড়ে এসে বললো কীরে তোর দাঁত সাদা হইলো কেমনে? কী ব্যবহার করছিস ক, নইলে তোর খবর আছে।
এবার ভাই সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো আমি বাথরুমে গেছিলাম হাতমুখ ধোয়ার জন্য, তখনি বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে। মোবাইলও আনি নি তাই অন্ধকারেই দাঁত ব্রাশ শুরু করেছিলাম। কিন্তু টুথপেস্ট টা জানি কেমন কেমন মনে হলো।
মনে হয় নতুন ব্রান্ডের। সুবাস বেশ ভালো। কিন্তু কোন ফেনাই হলো না কেন জানি। তাই আর পানি দিয়ে মুখ ধুই নি। ভাবলাম মুখ দিয়েও সুবাস বের হচ্ছে তাই মুখ না ধুলেও চলবে। তোমাদের মাঝে একটু সুবাস ছড়িয়েই দেই।
যেই এই কথা শেষ হলো নজরুল ভাই দৌড়ে বাথরুমে গেলো আর নতুন টুথপেস্টের টিউবটি বাইরে নিয়ে এলো। তখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ আসে নি। বাইরে আলোতে ভালো করে ধরলে দেখা গেলো এটি একটি মুখে দেয়ার ক্রিম। নাম ফেয়ার এন্ড লাভলী।
এরপর সবাই অনেক হাসাহাসি করতে লাগলো। বিরাট এক হৈহুল্লোর বেজে গেলো ছাত্রাবাসে। ভাইকে নিয়ে সবাই হাসি তামাশা শুরু করলো। আমারও হাসি থামতেই চাচ্ছিলো না।
কিন্তু অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে ভাইকে রুমে গিয়ে দিয়ে আসি আর এক বোতল ফ্রেস পানি দেই মুখ ভালোভাবে পরিস্কার করার জন্য। পরে রুমে এসে আমি আর আশরাফুল খুশিতে বিছানায় গড়াগড়ি দেই আর হাসাহাসি করতে থাকি।
এরপর জানতে পারি যে ঐ ফেয়ার এন্ড লাভলী কিনেছিলো মানিক নামের একজন ছাত্র। মূলত সে তার গার্লফ্রেন্ডকে উপহার দেবে বলে কিনেছিলো। কেউ যেন টের না পায় তাই বাথরুমে টুথ পেস্টের সাথে লুকিয়ে রেখেছিলো।
কিন্তু যা হবার তা তো হলোই। পরে আমরা সবাই মানিকের কাছে শাস্তিস্বরুপ মুড়ি মাখা খাওয়া নিয়েছিলাম। মুড়িমাখার সম্পূর্ণ খরচ মানিক বহন করেছিলো।
আজ আর নয় বন্ধুরা, ভালো থাকবেন সবাই।
আজকে আপনার পোস্ট পরিদর্শন করার মাধ্যমে সত্যি কথা বলতে, অনেকটা হাসি পেয়েছে। এই ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে আমরা অনেকেই হাসি ঠাট্টা করে থাকি। বিশেষ করে আমাদের বাড়িতে আমার একটা চাচাতো বোন আছে। ও বলবে এত বছর ধরে ফেয়ার এন্ড লাভলী ব্যবহার করছি। কই চেহারার মধ্যে তো কোন পরিবর্তন দেখতে পেলাম না।
এত বছর ধরে টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মেজে আসছি। কোনো পরিবর্তন দেখতে পারলাম না। ওর এই বিষয় গুলো যখনই শুনতে পাই, তখন অনেক বেশি হাসি পায়। আসলে আমরা এই প্রসাধনী গুলো ব্যবহার করি। কিন্তু এর উপকারিতা কতটুকু সেটা আমি নিজেও জানিনা। ধন্যবাদ চমৎকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য। ভালো থাকবেন।
ছাত্রাবাস মানেই হাজারো স্মৃতি। পুরোনো দিন গুলি কতই না মধুর ছিল। যদিও আপনার লেখা পড়ে এটা অনুধাবন করেছি আপনি আজকে আমাদের আনন্দ দেয়ার উদ্দেশ্যে গল্পটা বাসতবের সাথে কল্পনার কিছুটা সংমিশ্রণে সুন্দর করে তুলে ধরেছেন।
তবে ফেয়ার এন্ড লাভলী দিয়ে দাত মাঝলে ঝকঝকে হয়, যেটা আগে হাজারো পেস্ট দিয়ে করেও হতো না, এটা আমার কাছে একটু খটকা লেগেছে।
পাশাপাশি কেউ তার গফের জন্যে ফেয়ার এন্ড লাভলী কিনে বাথরুমে রাখে শুনেও বেচারার জন্য মায়া হয়েছে, তবে আপনার গল্পটা খুব ইন্টারেস্টিং ছিল।
আমিও অনেক মানুষকে দেখেছি তাদের দাঁতে কালো দাগ রয়েছে।। কিন্তু আপনার বড় ভাইয়ের গল্পটা বেশ মজার ছিল বিশেষ করে যখন দাঁতটা একদম সাদা হয়ে গেছে।।
আপনি ছাত্রাবাসে থাকেননি কিন্তু সেখানে সবার সাথে অনেক ভালো পরিচিত থাকায় ছাত্রাবাসের সবকিছুই আপনার জানা।।
ধন্যবাদ ভাই ছাত্রাবাসের এত সুন্দর একটি মজার স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।।