“আমার প্রথম গল্পের বই পড়া”
আসসালামু আলাইকুম/আদাব,
কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “আমার প্রথম গল্পের বই পড়া” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-
আমার ছোটবেলার অনেক বন্ধুদের মধ্যে রুশান ছিলো আমার সবথেকে কাছের একজন। ওর সাথে আমি দিনের অনেকটা সময় পার করতাম। একসাথে বিদ্যালয়ে যেতাম, এক বেঞ্চে বসতাম, একসাথে পায়ে হেঁটে বাড়ীতে আসতাম। রুশানের বাড়ী আর আমার বাড়ী একই এলাকায় ছিলো। তাই রুশানের সাথে আমার খেলাধুলা, মারামারি, দুষ্টামি সবই চলতো।
রুশান খুব ভালো ছেলে ছিলো কিন্তু ওর একটা দোষ ছিলো সেটি হলো ও খুব হিংসুটে স্বভাবের ছিলো। ছোটবেলায় অনেকে হয়তো এরকমটা থাকে। এটা ঠিক দোষ না বরং ছোটবেলার একটা স্বভাব। রুশান আমার সাথে সবসময় অবশ্য হিংসা করতো না। কিন্তু মাঝে মাঝে পড়াশুনা নিয়ে একটু হিংসা করতো।
তারিখ ঠিক আমার মনে নেই, সেদিন কিছু একটার জন্য বিদ্যালয় বন্ধ ছিলো। আমি সকাল দশটার দিকে পড়াশোনা ও খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুশানদের বাসার দিকে গেলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিলো ওর সাথে ক্যারাম খেলবো।
আমি ওদের উঠানে যেতেই রুশানের মা অর্থ্যাৎ আমি আন্টি বলে ডাকতাম, তিনি আমাকে ইশারায় ডাকলেন। আমি ভাবলাম হয়তো আমাকে কিছু খেতে দেবে। আমি তো মনে মনে খুশি হলাম। কারণ এর আগেও কয়েকবার আন্টি আমাকে বিভিন্ন খাবার খাইয়েছে।
আন্টির হাতের রান্না সে সময় আমার কাছে সবচেয়ে অসাধারণ ছিলো। কিন্তু আজ আন্টির কাছে যেতেই আন্টি কেমন জানি কাটা কাটা স্বরে আমাকে বললেন, রুশান আজ ক্যারাম খেলবে নারে। তুমি বাসায় যাও। ওকে আজ বিরক্ত করিও না। তার থেকে ভালো তুমি ওবেলায় আসো। এখন যাও বাসায় যাও।
আমি যেহেতু তখন ছোট ছিলাম, তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি, তাই হয়তো আন্টির কথা আমার কাছে তেমন কিছু মনে হয়নি। আমার অভিমানও হয়নি আন্টির কথা শুনে। আমি আন্টির কথা আমলে না নিয়ে কৌতুহলবশত রুশানের ঘরের জানালায় একটু উকি দিলাম।
মনে মনে ভাবতে থাকলাম আজ তো পড়ার চাপ নেই, বিদ্যালয় বন্ধ, তো রুশান কী এমন রাজকার্য করছে যে আমার সাথে ক্যারাম খেলবে না। জানালা দিয়ে ওর বিছানা স্পষ্ট দেখা যায়। আমি তাকাতেই দেখলাম রুশানের হাতে একটা বই। একটু ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম এটা তো আমাদের বিদ্যালয়ের কোন বই নয়।
কিছুদিন আগেও কিন্তু রুশান তেমন রিডিং পড়তে পারতো না। বানান করে করে পড়তো। এখন তো দেখছি বেশ শুয়ে শুয়ে রিডিং পড়ছে। আগের দিনগুলোতে আন্টি আমাকে বলতো প্রতিদিন সময় করে তাদের বাড়িতে আসার জন্য। আমি রিডিং খুব ভালো পড়তে পারতাম জন্য আন্টি আমাকে রুশানকে রিডিং পড়ানোর জন্য বলতেন।
আরো বলতেন তুমি না ওর বন্ধু। তুমি দেখিয়ে দিলে রুশান খুব তারাতারি তোমার মত পড়তে পারবে। সেই থেকে আমার রুশানদের বাসায় যাতায়ত বেশি শুরু হয়ে যায়। এছাড়াও আন্টি আমাকে মজার মজার অনেক খাবার খেতে দিয়েছিলেন সেই সময়ে।
এই হিসেবে আমি রুশানের গুরু মশাই বলা চলে। তো সেই গুরুর এমন অমর্যাদা। তাহলে তো বলতেই হয় কথায় কথা, কাজের বেলায় কাজী আর কাজ ফুরালে পাজী। যাই হোক রুশানের ঘরে ঢুকতেই রুশান বইটা লুকাতে চেষ্টা করলো ও আন্টি গলা ফাটিয়ে ডাকতে শুরু করলো।
আমি রুশানকে বলতে থাকলাম দেখ রুশান তোর দেখি খুব দেমাগ হয়েছে। বইটা আমাকে দেখালে কী হয়। তারপর রুশান চুপ হলো। আমিও শান্ত হয়ে তাকে বললাম, একটু বইটা আমকেও দেখতে দে। আমি দেখলে কী এমনটা হবে।
কিন্তু তারপরও রুশান আমাকে পাত্তা না দিয়ে সে বেশ বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি সব উপেক্ষা করে বইয়ের দিকে হাত বাড়াতে গেলাম। যেইনা বই নিতে গেলাম তখনি আন্টি এসে হাজির। আন্টি বললো তোমাকে না বললাম পরে এসো। এখানে এসে এমন গন্ডগোল করতেছো কেন? যাও বাসায় যাও।
এবার আমি একটু অপমান বোধ করলাম। কিছু না বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে বাসার দিকে হাঁটা দিলাম। মনে মনে ঠিক করলাম আমি দেখেই ছাড়বো কী আছে ঐ বইয়ের ভিতরে, যা দেখে রুশানের এত হাসি পাচ্ছিলো।
কথায় আছে সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল একটু বাঁকাতেই হয়। আমি বিকালে আবার গেলাম ওদের বাসায়।গিয়ে দেখি দরজা খোলাই আছে। রুশান বিছানায় ঘুমোচ্ছে। আমি যখনকার কথা বলছি তখন আমাদের এলাকা অমন ই ছিল। চোরের তেমন উপদ্রব ছিল না বললেই চলে।
আমি সুযোগ মত আস্তে করে বইটা নিজের আয়ত্বে নিলাম। কৌশলে ঝটপট শার্টের নীচে লুকিয়ে ফেললাম। তারপর একছুটে বাসায় এসে বইটি খুলে পড়তে শুরু করলাম আর হাঁসতে লাগলাম। সত্যি বেশ মজার ছিল বইটি।
আর গল্পের বই পড়া এত মজার সেটাও জানা ছিল না এর আগে। কারণ আমি কখনো এর আগে কোন গল্পের বই পড়িনি। সর্বোপরি নতুন একটা দিকও সহসা উন্মোচিত হলো আমার জীবনে। তারপর থেকে গল্পের বই প্রতিনিয়ত পড়ার অভ্যাস আমার মাঝে গড়ে উঠলো।
পরদিন দেখি রুশান মনমরা হয়ে খেলতে এসেছে আমাদের খেলার মাঠে। আমি তো জানি ওর সমস্যাটা কোথায়। কিন্তু এমন স্বাভাবিক ব্যবহার করলাম যে আমি যেন কিছুই জানি না। ওকে স্বান্তনাও দিলাম। চোরের গুষ্টির শাপ শাপান্তর করতেও কম করলাম না। পরে অবশ্য কৌশলে বইটা ওর ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলাম ঠিকই। সেও আরেক মজার ঘটনা। আজ থাক অন্য দিন সেই কাহিনী আপনাদের বলবো।
আজ আর নয় বন্ধুরা। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহহাফেজ।