প্রতিভা তথা আই কিউ
কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “প্রতিভা তথা আই কিউ” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-
প্রথমেই একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করি। ঘটনাটি ঘটেছিলো আমার চাচাতো ভাইয়ের সাথে। ছোটবেলাই সে একটি তকমা পেয়েছিলো। আমার বড় দাদু তাকে উপাধি দিয়েছিলো মহা প্রতিভাবান। এই উপাধি দেওয়ার কারণ ছিলো, চাচাতো ভাইয়ের আই কিউ লেভেল নাকি অনেক ভালো।
যখন সে সবে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হতে স্কুলে গিয়েছিলো তখন অফিস কক্ষে নাকি একজন শিক্ষক অন্য একজন ছাত্রকে একটি প্রশ্ন করেছিল। প্রশ্নটি ছিলো এরকম, ভারতে মোঘল সম্রাজ্যের বিস্তার কে ঘটিয়েছিলো? যাকে প্রশ্নটি করা হয়েছিলো সে মূলত ক্লাস এইট এর ছাত্র।
কিন্তু সে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমতা আমতা করছিলো। পাশ থেকে তখন আমার চাচাতো ভাই তার বাবাকে স্বল্প স্বরে ডেকেছিলো। কিন্তু শব্দটি বাবার মত না শোনা গিয়ে বাবর্র্র্ এরকম শোনা যাচ্ছিলো। ছোট মানুষ কথা বললে যেমনটা শোনায় আরকি। স্যার ধরে নিয়েছিলো আমার ভাই প্রশ্নের উত্তরটি দিতে পেরেছিলো। উত্তরটি ছিলো বাবর।
স্যার তার এক উত্তর শুনেই মুগ্ধ হয়ে তাকে স্কুলে ভর্তি করে নিয়েছিলো। কিন্তু স্যার তো আর জানতো না যে ভাই আমার বাবর এর বদল বাবাকে ডেকেছিলো। তারপর বাসায় আসলে দাদু তাকে মহা প্রতিভাবান উপাধি দিয়েছিলো।
আমি যখন ক্লাস টেনে উঠি তখন বড় দাদুর মুখে এই ঘটনাটি শুনেছিলাম। তখন পর্যন্ত আই কিউ সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। আমরা এমনিতেই জানি যে ছোটদের প্রতিভা বড়দের থেকেও বেশি হয়। এর বিশেষ কিছু কারণ রয়েছে। যাক সেদিকে আর যাবো না।
ছোটদের প্রতিভা বেশির পেছনে অন্যতম কারণ হলো শেখার আগ্রহ বা চেষ্টা। যা আমরা বড়রা খুব কম করি। আমরা ছোট থেকে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকি আর আমাদের শেখার আগ্রহও কমতে থাকে। যেমন এক বুক কনফিডেন্স নিয়ে ছোটবেলায় আমরা স্কুলের শিড়িতে পা রাখি।
কিন্তু যত বড় ক্লাসে উঠতে থাকি ততই আমাদের কনফিডেন্স লেভেল নিচে নামতে থাকে। আর যার নাকি আই কিউ লেভেল ভালো থাকে সে তরতর করে উপরের ক্লাসে উঠতে থাকে। যাই হোক এই আই কিউ নিয়ে আজ আমার গবেষণা।
ক্লাস টেনে পড়াকালিন এক টিচার এর কাছে জানতে পারলাম যে, প্রতিভার মাপকাঠি নাকি আই কিউ। যার প্রতিভা যত বেশি তার আই কিউ নাকি তত শক্ত এবং যার আই কিউ লেভেল স্ট্রং সে নাকি প্রতিভাবান। কথাগুলো কেমন জানি এলোমেলো ঠেকলো আমার কাছে।
পরে মনে মনে ভাবলাম তাহলে তো আমার আই কিউ মেপে দেখতে হয়। কোথায় মাপা যাই আই কিউ লেভেল? মনে মনে খুঁজতে লাগলাম। ছোটবেলায় তো আমি একজন হোমিও ডাক্তারের নিয়মিত রোগী ছিলাম। কই কোনদিন তো দেখিনি সেখানটায় কেউ আই কিউ মাপার জন্য এসেছে।
একটু বড় হয়েও বেশ কয়েকবার হাসপাতালে রাত্রি যাপন করেছি। হাসপাতালের প্রতিটি দেয়ালে যা যা লিখা আছে সব মুখস্ত বলতে পারবো। কিন্তু কোনদিন তো দেখিনি আই কিউ মাপার কোন যন্ত্রের কথা সেখানে লিখা। তারপর ধীরে ধীরে ম্যট্রিক পাশ করলাম, কলেজে উঠলাম। কিন্তু মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন থেকেই গেলো আই কিউ মাপবো কোথায়।
যাই হোক ভার্সিটি লেভেলে যখন পা দিলাম তখন ধারণা পেলাম আই কিউ কি জিনিস। এত দিনে আই কিউ নিয়ে অনেক ঘাটাঘাটি করেছিলাম। বিভিন্ন লেখকের বই পড়েছিলাম। পড়ে যতদূর বুঝেছি উপস্থিত বুদ্ধিমত্তাই হলো আই কিউ। তাছাড়াও আই কিউ এর আরো বিভিন্ন ডেফিনেশন আছে। সেদিকে আর যাবো না।
আমরা প্রত্যেকেই কিন্তু জন্মগতভাবেই প্রতিভাবান। কিন্তু প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর সুযোগ কই আমাদের। আমরা সকলেই সামাজিক গন্ডির মধ্যেই আবদ্ধ। ছোটবেলা থেকেই আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বড় হয়ে হতে হবে ডাক্তার নয়তো ইঞ্জিনিয়ার। এটি আমাদের স্বভাবগত অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।
ঐ স্কুল জীবন শেষ করে কলেজ জীবন, তারপর ভার্সিটি। ভার্সিটি শেষে এখন চাকুরির পেছনে ছোটো। এ ছাড়া আর কিছুই কী নেই? এই ত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি আর চাকুরি পাওয়া পর্যন্তই আমাদের জীবন সীমাবদ্ধ থাকে। প্রতিভা বিকাশের সুযোগ কই?
আমরা যে যেই প্রতিভার অধিকারী হই না কেন, সামাজ কর্তৃক আবদ্ধ জীবনের বাইরে একটু বের হলেই সমাজের মানুষ আমাদের বাধা দেয়। সেই মানুষ আবার হাততালি দেয় কখন জানেন, যখন শত বাধা উপেক্ষা করে কেউ তার প্রতিভা দিয়ে নাম এবং অর্থ দুটোই কামাই করে।
তবে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে এসে প্রতিভার বিকাশ ঘটানো এখন অনেকখানি সহজ হয়েছে। কেননা এখনকার মতো আগে আমাদের দেশে ইন্টারনেট সেবা এতটা ভালো ছিলো না। এখন দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা খুব ভালো ভাবেই পৌঁছে গিয়েছে।
সোস্যাল মিডিয়ার বদৌলতে অনেকেই এখন তাদের প্রতিভা অন্যদের দেখাতে পাচ্ছে। বিশেষ করে ইউটিউব, ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদিতে যারা সঠিক প্রতিফার ঝলক দেখাতে সক্ষম হচ্ছে তারা কিন্তু রাতারাতি সেলিব্রেটিও হয়ে যাচ্ছে।
তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, কোন না কোন ভাবে সেলিব্রেটি হওয়াই যায়, কিন্তু সেটি ধরে রাখতে সেলিব্রেটি হওয়ার চেয়েও বেশি পরিশ্রম করতে হয়।
আজ আর নয় বন্ধুরা, ভালো থাকবেন সবাই।
আমার আইকিউ লেভেল মারাত্মক লেভেলের খারাপ। দুইটা বিশব্বিদ্যালয়ে এই আইকিউ এর কারণে চান্স পাই নাই। অথচো অনেকের আইকিই অনেক ভালো।
প্রচন্ড শিক্ষামূলক একটি পোস্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় পড়াশোনা ব্যতিরেকে কোন ভাবে প্রতিভা অর্জন করাকে প্রাধান্য দেয়া হয় না। আমরা মনে করি শুধু পড়াশোনা করলেই প্রতিভা অর্জন সম্ভব, এছাড়া নয়।
আপনি আপনার লেখনীর মাধ্যমে সমাজের ভ্রান্ত ধারণা ভেঙে দিতে চেষ্টা করেছেন। আমরা প্রতিভা বলতে বুঝি বড় বড় ডিগ্রি কে।কিন্তু আই-কিউ লেভেল ভালো না হলে তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অনেকটাই ফিকে হয়ে যায়।
ধন্যবাদ আপনাকে।।
আমাদের বড় হওয়ার সাথে সাথে আত্মবিশ্বাসের লেভেল নিচে নামতে থাকে এরকমটাই আপনি লেখার মধ্যে উল্লেখ করেছেন। তবে সত্যি বলতে আমি কখনোই এটা বিশ্বাস করি না যে উন্নত প্রযুক্তির বিভিন্ন ডিভাইসের জন্য এটা হয়।
বরং আমার কাছে এটাই বেশি প্রাধান্য পায় যে শুধুমাত্র এখন না অতীতেও এরকমটাই হতো। সেটার কারণ হিসেবে আমি উপস্থাপন করব যে আমরা যখন ছোট থাকি তখন আমাদের পারিপার্শ্বিক কোনো চিন্তা থাকে না।
কিন্তু একটু বড় হওয়া শুরু করলেই আমাদের পারিবারিক পরিবেশ আমাদেরকে প্রভাবিত করে। অর্থনৈতিক বা অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ের জন্য আমরা সেদিকে মনোনিবেশ করি এবং এটার জন্য কিছুটা হলেও আমরা সেই ছোট থাকা অবস্থায় যে আত্মবিশ্বাসের লেভেলে থাকি এখান থেকে সরে যাই বা ছিটকে পড়ি।
একটা শিশু বড় হয়ে তার ভবিষ্যৎ স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছাতে পারে যখন সে একটা উপযুক্ত পরিবেশ পায়।