একটি ঘটনা ও ব্যক্তিগত কিছু অনুভূতি

in Incredible Indialast month

কেমন আছেন বন্ধুরা? আল্লাহ্‌র অশেষ মেহেরবানীতে আমি সুস্থ্য এবং ভালো আছি। সুস্থ্যতা আল্লাহ্‌ তা’লার সবচেয়ে বড় নিয়ামত। আর এই নিয়ামত পেয়ে আমি অনেক খুশি।

আজ আমি আপনাদের মাঝে “একটি ঘটনা ও ব্যক্তিগত কিছু অনুভূতি” শীর্ষক একটি লিখনি তুলে ধরছি। তাহলে শুরু করা যাকঃ-

pexels-rodrigo-souza-1275988-2531709.jpg
source

গতকাল রাতে আমার এলাকায় প্রচন্ড ঝড় হয়। রাত নয়টা নাগাদ ঝড় শুরু হয়। ঝড় শেষ হতে হতে রাত বারোটা বেজে যায়। তো গতকাল অফিস শেষ করে বাজারে কিছুক্ষণ আড্ডা দিচ্ছিলাম বন্ধুদের সাথে।

এর মাঝে হঠ্যাৎ দমকা হাওয়া এবং বৃষ্টি শুরু হয়। দশ মিনিটের মধ্যে তা থেমেও যায়। এই ফাঁকে বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা করি।

রাস্তায় একজন ছেলের দেখাও পেয়ে যাই। সে মূলত ইলেক্ট্রিশিয়ান। কাজ শেষে সেও বাসায় ফিরছিলো। দুজন গল্প করতে করতে এগোতে থাকি।

মূল রাস্তায় ওঠার পর আবারো ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি এবং বাতাসের পরিমাণ এত বেশি ছিলো যে সামনে কিছু দেখা যাচ্ছিলো না। বেশ মুশকিলেই পরে গিয়েছিলাম।

যাইহোক কোনরকম একটি দোকানের বারান্দায় গিয়ে আশ্রয় নিই। কিন্তু বাতাসের বেগ এবং প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে সেখানেও টেকা যাচ্ছিলো না। কী করি।

এমন সময় মাথায় এলো এক মিনিট হাঁটলেই একজন বন্ধুর বাড়ি। সেখানে গিয়ে নাহয় উঠি। তারপর আমার সাথে যে ছেলেটি ছিলো তাকে বললাম এখানে থাকা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। চলো সামনে একটি বাড়ি আছে ওখানে যাই।

এই বলে ফোন পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে পকেটে রেখে দুজনে এক দৌঁড়। দৌঁড়ে বন্ধুর বাড়ির বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। আমরাও এসে দাঁড়ালাম আর বড় একটি গাছের ঠাল ভেঙ্গে রাস্তায় পরলো।

pexels-pixabay-459451.jpg
source

অল্পের জন্যে আমরা দুজনে বেঁচে গিয়েছিলাম। যাইহোক এরপর দেখলাম বন্ধুদের গেট লক করা। বন্ধুকে ফোন দিলাম কিন্তু সে ধরলো না। হয়ত ঝড়ের কারণে সে ফোনের টোন শুনতে পারেনি।

পাঁচ মিনিট সেখানে থাকার পর দেখলাম বন্ধুর বাবা দূর থেকে টর্চ লাইট মেরে কী যেন দেখছে। আমরা দুজন হাত নাড়ালাম অনেকবার। কিন্তু তিনি দেখলেন না। এক পর্যায়ে গিয়ে তিনি আমাদের দেখতে পেলেন।

পরে গেট খুলে দিয়ে আমাদের ভেতরে আসতে বললেন। প্রথমে তিনি আমাকে চিনতে পারেনি। অনেকদিন পর দেখলো তাই হয়তো। কিন্তু আন্টি চিনতে পেরেছিলো। প্রথমে তিনি আমাকে একটা টাওয়াল দিলেন মাথা মোছার জন্য।

এরপর বসতে বললেন। আমি একটু অবাকই হলাম, কারণ বাড়িতে আন্টি আর আংকেল ছাড়া কেউ নেই। অথচ এই বাড়িটি একদিন লোকসংখ্যায় পরিপূর্ণ ছিলো।

যখন ক্লাস এইটে ছিলাম, প্রায় প্রতিদিনই আমি বন্ধুর সাথে তার বাড়ি, অর্থ্যাৎ এই বাড়িটিতে আসতাম। তখন দেখতাম অনেক অনেক লোক। অনেক নতুন মুখ। আমি বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করতাম এনারা কারা?

বন্ধু হাসিমুখে উত্তর দিতো, আমার মামা, মামাতো ভাই, ফুফা, ফুফুর ছেলের ছেলে ইত্যাদি। আমি বেশ অবাক হতাম আর বলতাম এত আত্মীয় তোদের বাড়িতে কী করে। বন্ধু কিছু বলতো না।

কিন্তু বেশ কদিন পার হতে আমি বুঝে নিয়েছিলাম সবাই এই বাড়িতে এসে উঠতো ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজের জন্য। মানে আংকেল এবং আন্টি ছিলো খুব ভালো মানুষ এবং মিশুক। তাঁরা সকলের সাথে মিশতো।

তাই অনেক দুরসম্পর্কের আত্মীয়রাও এসে বন্ধুর বাসায় থাকতো। অনেকেই আসতো নদী ঐ পার থেকে। শহরে এসেই তারা বন্ধুর বাড়িতে উঠতো। তারপর তারা প্রত্যেকেই তাদের ব্যক্তিগত কাজ শেষ করে আবার চলে যেতো।

কেউ কেউ সাত থেকে দশদিন পর্যন্ত থাকতো। অথচ আংকেল আন্টি কিংবা আমার বন্ধু কেউ বিরক্ত হতো না। মেহমানকে যথাযথ আপ্যায়ন করতো। বাড়িতে যাওয়ার সময় হাতে টাকা গুজে দিতো।

pexels-goumbik-928199.jpg
source

কিন্তু আজ একি দেখলাম! বাড়ি একদম ফাঁকা। আন্টিকে জিজ্ঞাসা করলাম আন্টি আরাফাত কই? বাড়ি ফাঁকা কেন? আন্টি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো বাবারে কেউ নেই এখন। আরাফাত ব্যবসার কাজে বাইরে বাইরে ঘোরে।

আর এখন কোন আত্মীয় তেমন আমাদের বাসায় আসে না। সবাই তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে নিয়েছে। আমি বললাম, আন্টি আগে তো অনেক আত্মীয় আসছিলো আপনাদের বাসায়। এখন আসে না? আন্টি বললো আসে কিন্তু কম।

যাইহোক আন্টির কাছে আরো বেশ কিছু অভিযোগ শুনলাম। যারা আন্টি আংকেল এর কাছে সাহায্য নিয়েছিলো তাদের অনেকেই এখন আন্টি আংকেল এর খোঁজ করে না। কোনদিন ফোনকল পর্যন্ত করে না।

অনেক ভাতিজা, ভাতিজি আজ প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু কেউ খোঁজ করার প্রয়োজন বোধ করে না। যাইহোক এরকম গল্প করতে করতে ঝড় থেমে গেলো। তখন রাত বারোটা হওয়ার উপক্রম।

ফোন হাতে নিয়ে দেখি মীম অনেকবার ফোন করেছে। এরপর আংকেল আন্টিকে সান্তনা দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে আমি আর আমার সাথের ছেলেটি রওনা করলাম।

রাস্তায় ছেলেটির সাথে একটি সেলফি তুলে রাখলাম, স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষন করার জন্যে।

20240601_225410.jpg

বাসায় এসে শুয়ে অনেকক্ষণ চিন্তা করলাম। আসলে পৃথিবীতে আমরা সবাই স্বার্থপর। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার হয়ে গেলে, যার কারণে উদ্ধার হলাম তার খোঁজ পর্যন্ত করি না। বরই আফসোসের বিষয়। নাজানি কবে আমার সাথেও এমনটা হয়।

আজ আর নয় বন্ধুরা। ভালো থাকবেন সকলে। আল্লাহ্‌হাফেজ।

Sort:  
 last month 
Loading...
 last month 

আপনার পোস্টটি পড়ে আমার বেশ ভালোই লাগলো। আপনি ঠিকই বলেছেন পৃথিবীতে এখন বেশিরভাগ মানুষজনই স্বার্থপর। সবাই সবার স্বার্থ নিয়ে চলে। স্বার্থ ছাড়া কেউ কারো সাথে মেশে না। ঝড় ,বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় বের হলে সত্যিই বিপদ হয়। আপনার বন্ধুর বাড়ি ছিল
তাই দাঁড়ানোর জায়গা ছিল। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 last month 

আপনার সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে একটা বাস্তব গল্প জানতে পারলাম। অফিস থেকে ফেরার পথে রাস্তায় এরকম হঠাৎ বৃষ্টির কারণে বেশ বিপদে পড়েছিলেন। তবে অনেক কষ্টে বন্ধুর বাসায় পৌঁছেছেন। আসলেই বর্তমান সমাজের মানুষ বড়ই স্বার্থপর। প্রয়োজন মিটে গেলে আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। যাইহোক, আপনারা যে সুস্থ ভাবে বাসায় পৌঁছাতে পেরেছেন জেনে খুব ভালো লাগলো।

একটি বাস্তব ঘটনা তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 65359.95
ETH 3492.90
USDT 1.00
SBD 2.51