শৈশবকালের একটি খেলা

in Incredible India7 months ago

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “শৈশবকালের একটি খেলা” শীর্ষক একটি লিখনি উপস্থাপন করছি। কথা না বাড়িয়ে তাহলে শুরু করা যাক।

children-1879907_1280.jpg
source

প্রতিটি দিন যাচ্ছে আর রেখে যাচ্ছে কিছু স্মৃতি। কিছু স্মৃতি আছে যেগুলো চাইলেও ভোলা যায় না আবার কিছু স্মৃতি আছে যা কালের পরিক্রমায় মন থেকে মুছে যায়।

শৈশবের এমন কিছু স্মৃতি আছে যা এখনো মনে পরলে আবারো সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। এমন একটা সময় ছিলো যখন ভালো মন্দ বুঝি নি। ইচ্ছেমত খেলাধুলা করেছি, ঘুরে বেড়িয়েছি। সত্যি সেই দিনগুলোকে এখনও অনেক মিস করি।

আমরা সকলেই জানি সময়ের ব্যক্তিগত কিছু দাবি থাকে। অর্থ্যাত যে সময় যেটা চলে সবাই তখন সেটাকেই গ্রহণ করে। আমার শৈশবে একটি খেলার খুব চল ছিলো, সেটি হলো দিয়াশেলাই এর খালি বাক্স সংগ্রহ করা এবং সেই বাক্স খেলায় ব্যবহার করা।

খেলার উপকরণ ছিলো পাথরে গোল ছোট্ট টুকরো কিংবা ইটের টুকরো, স্থানীয় ভাষায় এটিকে আমরা চাকতি বলতাম। একজন এক জায়গা থেকে দূরে ইটের টুকরো মারতো আরেকজন সেই টুকরোর কাছাকাছি আরেকটি টুকরো মারতো। যদি পাশাপাশি বা নির্দিষ্ট দূরত্ব বরাবর সেই টুকরো থাকতো তাহলে তার বিনিময়ে দিয়াশেলাই এর খালি বাক্স দিতে হতো।

box-1296708_1280.png
source

কেউ পাঁচটা কেউ দশটা বাক্স একবারই দিতো। কিন্তু সেই বাক্স গুলোরও আবার ভাগ ছিলো। কিছু কিছু বাক্স ছিলো ইউনিক। এগুলোর গায়ে ঈগল এর ছবি, ময়ূরের ছবি, জাহাজের ছবি ইত্যাদি থাকতো। ছবিওয়ালা বাক্স গুলোর মূল্য অনেক বেশি ছিলো।

যার কাছে একটি বাক্স থাকতো তার ভাবসাব আলাদা ছিলো। কেননা ছবি সম্বলিত একটি বাক্সের মূল্য আমাদের খেলার হিসেবে একশত সাধারণ বাক্সের মূল্যের সমান ছিলো। অর্থ্যাত কেউ যদি হেরে যেতো তাহলে একটি ছবিওয়ালা দিয়াশেলাই এর পরিবর্তে একশতটি ছবি ছাড়া দিয়াশেলাই এর বাক্স দিতে হতো। কী আজব তাইনা।

আর সেসময় ছবি ওয়ালা দিয়াশেলাই এর মূল্য বাংলাদেশী টাকায় দুই টাকা ছিলো। আর ছবিছাড়া গুলো পঞ্চাশ পয়সা এবং পঁচিশ পয়সা হলেই পাওয়া যেতো। তখন টাকার মূল্য বেশ ছিলো বলে দুই টাকা কেউ দিয়াশেলাই এর পেছনে খরচ করতো না। ফলশ্রুতিতে আমরাও কালে ক্রমে ছবিওয়ালা খালি বাক্সের দেখা পেতাম।

যার কাছে এমন বাক্স থাকতো তার দাম আমাদের কাছে সবথেকে বেশি থাকতো। কেউ তাকে কিছু বলতো না। ভাবতাম সে অনেকগুলো দিয়াশেলাই এর খালি বাক্সের মালিক।

তবে এই খেলাকে বাড়ীর কোন লোকই পছন্দ করতো না। কতবার যে আমার দিয়াশেলাই এর বাক্স মা পুড়িয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। কেননা এই খেলাটাকে কেউ কেন জানি প্রশ্রয় দিতো না।

children-1822704_1280 (1).jpg
source

দেখতেও একটু আজগুবে টাইপের ছিলো আর প্রচলিত ছিলো তাশ খেলা নামে। তবে এটা ছোটদের তাশ খেলা। যার বিনিময় শুধুই খালি দিয়াশেলাই এর বাক্স। তবে অনেকেই বিদ্যালয়ে যাওয়ার টাকা বাঁচিয়ে এসব দিয়াশেলাই এর খালি বাক্স কিনে নিতো।

কেউ কেউ আবার বিদ্যালয়ে না গিয়ে এই খেলা নিয়ে পরে থাকতো। অনেকেরই নেশায় পরিণত হয়ে গিয়েছিলো এই খেলা। সকাল দুপুর বিকেল শুধু খেলা আর খেলা। তাই সকল বাবা মা ভালো চোখে দেখেনি এই খেলাকে হয়তো। তবে বড় হয়ে এখন মনে হচ্ছে তখনকার ঐ খেলার কোন স্বার্থকতা ছিলো না।

desert-7008952_1280.jpg
source

শারীরিক কোন ব্যায়াম এর বালাই ছিলো না। শুধুমাত্র কয়টা দিয়াশেলাই এর খালি বাক্সকে অনেক দামি মনে হতো। আসলে সত্যি বলতে খেলা তো খেলাই। যার কোন মানে নেই। দিনশেষে খেলাকে কেউ তেমন মূল্যায়নও করে না।

বর্তমান সময়ে এসে আমি আর এই খেলার দেখা পাই না। তবে মাঝে মধ্যে শুনি আমাদের এই দিক একদম প্রত্যন্ত গ্রামে নাকি এখনো কিছু ছেলেপেলে এই খেলাটা খেলে থাকে। হয়তো আজ থেকে বিশ বছর পর এই খেলার কথা কেউ মনেও রাখেবে না।

কিন্তু এই লিখাটি থেকে যাবে স্টিমিট প্লাটফর্মে আমার প্রাণপ্রিয় ইনক্রিডিবল ইন্ডিয়া কমিউনিটিতে। কোন একদিন কেউ লিখাটি পড়ে, এই খেলা সম্পর্কে জানবে, ঠিক তখনই আমার লিখাটি পূর্ণতা পাবে বলে আমার বিশ্বাস।

আজ আর নয় বন্ধুরা, ভালো থাকবেন সবাই।

Sort:  
Loading...
 7 months ago 

খেলার উপকরণ ছিলো পাথরে গোল ছোট্ট টুকরো কিংবা ইটের টুকরো, স্থানীয় ভাষায় এটিকে আমরা চাকতি বলতাম। একজন এক জায়গা থেকে দূরে ইটের টুকরো মারতো আরেকজন সেই টুকরোর কাছাকাছি আরেকটি টুকরো মারতো। যদি পাশাপাশি বা নির্দিষ্ট দূরত্ব বরাবর সেই টুকরো থাকতো তাহলে তার বিনিময়ে দিয়াশেলাই এর খালি বাক্স দিতে হতো।

  • হ্যাঁ ভাই, এই খেলার কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আবারো আপনার লেখা দেখে আজ মনে পড়ল। তবে আমার মনে আছে মাটির হাড়ির ভাঙ্গা টুকরো দিয়ে খেলতাম আমরা।
  • দিয়াশলাইয়ের ফাঁকা কোন বক্সই খুঁজে পাওয়া যেতো না আমাদের জন্য। আমার তো মনে আছে একবার নতুন ১২কি দিয়াশলাইয়ের প্যাকেট আমি ঘর থেকে নিয়েছিলাম। আর মা রান্নার সময় দিয়াশলাই খুঁজে পাচ্ছিল না , এরকম আরো কতো কি?
 7 months ago 

ছোটবেলায় আমরা এই ধরনের অনেক খেলায় খেলেছি। তবে দিয়াশলাইয়ের খেলা আমি কখনই খেলিনি, বা আমাদের বাড়ির পাশে অনেকেই খেলেছে, তাদেরকে নিয়ে অনেক ঝামেলাই হয়েছে। আসলে বাবা-মা কখনোই চায় না, তাদের সন্তান এই ধরনের খেলা খেলুক।

আপনার পোস্ট পরিদর্শন করতে গিয়ে, সত্যিই বলছি ছোটবেলার খেলা গুলোর কথা আবারও মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ চমৎকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য। ভালো থাকবেন।

 7 months ago 

এই খেলা আমিও অনেক খেলেছি। সিগারেটের খাপ দিয়েও খেলেছি। K2 সিগারের খাপের দাম ছিল ১২।

অনেকদিন পর আপনার পোস্ট পড়ে পুরোনো দিনে ফিরে গেলাম। ধন্যবাদ ভাই।

 7 months ago 

এই খেলা আমরা অনেক খেলেছিলাম স্কুলে না গিয়েও চুপ করে খেলা করতাম ৷ এই খেলার জন্য মা বাবার কাছে অনেক মার ও খেয়েছি ৷

যাই হোক ভাই আপনার পোস্ট টি পড়ে সেই ছোটবেলার দিন গুলো মনে পরে গেলো ৷

 7 months ago 

এই খেলাটা আমি খেলিনি।। কিন্তু আমার যারা ছোট রয়েছে বর্তমানে তাদেরকে আমি এ খেলা দেখতে দেখেছি।। আপনি যেমনটা বলেছেন ঠিক এভাবেই তারাও খেলে।।

ধন্যবাদ আপনার শৈশবের একটি খেলা নাম আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.032
BTC 59615.63
ETH 2524.32
USDT 1.00
SBD 2.44