অল্প কিছু গল্প
আসসালামু আলাইকুম/আদাব,
কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “অল্প কিছু গল্প” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-
আমাদের প্রতিটি রক্তফোটায় মিশে আছে গল্প। অর্থ্যাৎ প্রতিদিন একেকটি নতুন গল্প তৈরি হয় আমাদের জীবনে। কখনো সেসব গল্পের সমাপ্তি ঘটে আবার কখনো গল্প নতুন মোড় নেয়। চলমান গল্পগুলোর সাথে আমরা এমনভাবে অভ্যস্থ হয়ে পরি যেন এগুলো আর আমাদের কাছে গল্পই মনে হয় না।
এক সময় যখন জীবনের শেষপ্রান্তে আমরা চলে আসি, একাকিত্ব আমাদের গ্রাস করে, ঠিক তখনই আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া এই গল্পগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। গল্পগুলো হয় সুখের কিংবা দুখের।
আসুন আজ কিছু গল্প করি, অনেকদিন কারো সাথে গল্প করা হয় না। আমরা বাঙ্গালী। আমরা গল্প করতে কিন্তু বেশ পটু। একটু অবসর সময় পেলেই আমরা গল্পে মোজে যাই। এই গল্পের আবার ভালো দিক খারাপ দিক দুটোই আছে। যাই হোক সেদিকে আর যাবো না। এবার গল্পে ফিরি.....!
আমার একজন বন্ধু আছে নাম তার কাওছার। গত মাসে তার সাথে দেখা হয়েছিলো। জমিয়ে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডাও মেরেছিলাম। তার হাতে থাকা স্মার্ট ফোনটি দেখে আমি বেশ অবাকই হলাম। কারণ ফোনটির ডিসপ্লে ছিলো চূর্ণ বিচূর্ণ। মনে হচ্ছে এখনই কেউ যেন ফোনটাকে সপাটে আচার মেরেছে।
ওকে জিজ্ঞাসা করলাম বন্ধু ফোনের এই হাল হলো কি করে। সে বললো আর বলিস না। হাত থেকে পরে এমন হয়েছে। সে আরো আমাকে বললো আজ একটু পর এই ফোনের স্ক্রীন সে পাল্টাতে দেবে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এই ফোনের স্ক্রীন নাকি সে নয়বার পাল্টিয়েছে। আমি তো শুনে হতবাক।
এরপর বন্ধু বললো আমার নাম না রে পাগলা তোর ভাতিজা মানে আমার ছেলের নাম রাখা উচিত। আমি বললাম কেন? কেন? বন্ধু বললো, কারণ প্রতিবার ঐ ফোনের স্ক্রীন ভেঙে ফেলে। আমি বললাম কিভাবে? বন্ধু বললো, আমি যতক্ষণ বাসায় থাকি আমার ছেলের কাছে ফোন থাকে।
ছেলে ফোনে কার্টুন দেখে। কার্টুন দেখতে দেখতে কি জানি হয় হঠ্যাৎ ফোন মারে এক আচার। এক আচারে ফোনের বারোটা বেজে তেরোটা। এবার বুজলি। হুম বুজলাম। ভাতিজা আমার বেশ বদমেজাজি। একদিন আমার কাছে আনিস ঠিক করে দেবো। হাহাহাহাহা….!
আমার আরেকজন বন্ধু আছে ওর কাহিনী আবার একটু অন্যরকম। ও দুনিয়াদারির মাঝে নাই। অর্থ্যাৎ দুনিয়ার কোন খোঁজ খবরই সে রাখে না। তার নাকি কোন কাজে মন বসে না।
কিছু বললে বলে বাবার এত্ত সম্পত্তি। আমার কোন কাজ করতে হবে না। আমি এমনিতেই বসে বসে খেয়ে দিন পার করতে পারবো। তো সেদিন বন্ধুর সাথে দেখা। বললাম কি রে কি খবর!
আজকাল তোকে কেন জানি দেখা যায় না। আমাবস্যার চাঁদ হয়ে গেছিস নাকি। বন্ধু বললো, নারে বাসা থেকে তেমন একটা বের হই না। সারাদিন বাসায় শুয়ে থাকি আর নামাজের সময় হলে মসজিদে গিয়ে নামাজ পরি। আমি বললাম শুয়ে সময় কাটে কি করে বন্ধু?
বন্ধু বললো কাটে কাটে। বাসায় ওয়াইফাই আছে। ফোন আর ল্যাপটপে সময় কেটে যায়। আমি বললাম বন্ধু এইটা কখনই জীবন হতে পারে না। মাশসাল্লাহ্ ভালো কথা তুমি নামাজ পরো। কিন্তু সারাদিন শুয়ে থাকলে কি হয় বলো। কিছু তো একটা করতে হবে নাকি।
যতদূর জানি অনার্সটাও ঠিকমত কমপ্লিট করলে না। এখন ভালো চাকরি হবে কী করে বলো তো? ওর মুখে কোন কথা নেই। একটু পর বললো থাক বন্ধু নামাজের সময় হয়ে গেছে যাই।
আমার আরেকজন বন্ধু আছে, সে হলো ভ্রমন পিপাসু। অর্থ্যাৎ যেকোন যায়গায় ভ্রমন করা তার যেন নেশায় পরিণত হয়েছে। যদিও একসময় এটি তার শখ ছিলো। ওর সাথে দেখা হলেই বলে বন্ধু চল এই জেলায় যাই, ওখানে যাই, চল একটু চাঙ্গা হয়ে আসি।
ও মনে হয় বাসা থেকেই বের হয় ভ্রমনের প্লান করতে করতে। কিন্তু আমরা তেমন একটা তাকে পাত্তা দেইনা। কারণ কোথাও বেড়াতে যেতে চাইলে তো আর সেটা হুট করে হয়না। অনেক পরিকল্পনা ও অর্থকরীরও প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেদিন তার সাথে দেখা হতেই আমি বললাম বন্ধু চল সামনের সপ্তাহে একটা ট্যুর দিয়ে আসি।
এবার আসি অন্য আরেকজন বন্ধুর গল্পে। আসলে বন্ধু বললে মনেহয় ভুলই হবে। বড় ভাই বলতে হবে। কেননা তিনি আমাদের থেকে চার বছরের সিনিয়র। কিন্তু সবসময় আমাদের সাথে বন্ধু সুলভ আচরনই করে। আমরাও তার সাথে বন্ধুর মতই মিশি এবং কথাবার্তা বলি। সেও মাইন্ড করে না।
মজার বিষয় হলো সেই বন্ধু সুলভ বড় ভাই এখনো বিয়ে করেনি। কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলে কেন বিয়ে করে কী হবে? বউ বাচ্চা কাচ্চা সংসার নাকি তার ভালো লাগে না। এর জন্য বাসায় তাকে অনেক কথাই শুনতে হয়। আমার সাথে দেখা হলে বলে, রাকিব তুই খবরদার আমাকে বিয়ের কথা বলবি না।
আমিও হাসি মুখে বলি আচ্ছা ভাই বলবো না। এরপর ভাই বলে যে একদিন আয় আমার বাসায়, তোর বউ বাচ্চা সহ। আমি নিজের হাতে বিরিয়ানি রান্না করে খাওয়াবো। আমি বলি ভাই তোমারে কষ্ট দিয়ে কি লাভ। ভাবি থাকলে তাও হতো। ভাই বলে, আবারো অই এক গান তোদের। যা বাসায় যা। আমার বাসায় আসতে হবে না।
যাই হোক আজ অনেক গল্প হলো। আজ আর নয় বন্ধুরা, ভালো থাকবেন সবাই।
ছোটদের হাতে এসব স্মার্ট ডিভাইস তুলে দেয়া মোটেও উচিৎ নয়, এতে তারা আশক্ত হয়ে যায়, এবং তাদের শৈশবের মূল্যবান মুহুর্ত গুলো নষ্ট করে।