ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব

in Incredible Indialast year

আসসালামু আলাইকুম/আদাব,

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-

komarzyca-ga37a316e4_1280.jpg
source

ডেঙ্গু সমস্যা আমাদের প্রত্যেকের জীবনে এখন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আছে কী এর প্রতিকার। হ্যা অবশ্যই আছে। একটু সচেতনতাই পারে আমাদের এই সমস্যার হাত থেকে মুক্ত করতে। আমরা অনেকেই বলে থাকি প্রতিকারের চেয়ে কিন্তু প্রতিরোধ বেশ ভালো। কিন্তু বাস্তবে কজন বা এর প্রয়োগ করি আমরা।

যখন রোগ চারিদিকে ছড়িয়ে পরে ঠিক তখনি আমরা সজাগ হওয়ার চেষ্টা করি। ততদিনে হয়তো যা হবার তা হয়েই যায়। বর্তমান সময়ে ডেঙ্গুজ্বর ঠিক একটি আতংকের নাম। পত্র পত্রিকায় ও টেলিভিশনে এর ভয়াবহতা শুনে এবং কারো কারো মৃত্যুর সংবাদ শুনে আমরা সবাই আতঙ্কিত হই।

বর্তমান সময়ে আমি নিজেও অনেক ভয়ে ভয়ে আছি। কারণ আমাদের চারপাশে ডেঙ্গুজ্বর বেশ ভালই ছড়িয়েছে।

প্রতি বছর বর্ষার সময় আমাদের দেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। এসময় আমরা কম বেশি সবাই তৎপর হয়ে উঠি। বিশেষ করে মশা নিধন করতে। কারণ মশার কামর থেকেই যে ডেঙ্গু জ্বরের সৃষ্টি হয়। এই সময়টায় চারিদিক মশা মারার বেশ তোরজ্বোর দেখা যায়।

কেউ ঔষধ ছিটায় কেউবা বাড়ীর চারপাশ পরিষ্কার করে। কিন্তু এত কিছুর পরেও মশা কিন্তু থেকেই যায়। কারণ মশার ঔষধ কিন্তু একেবারে কার্যকর কোন পদ্ধতি নয়। আবার এটি চিরস্থয়ী কোন সমাধানও হতে পারে না। কিছুদিন গেলে আবার মশার সৃষ্টি হয়। আবার ডেঙ্গু হয়, আবারও মানুষ মৃত্যুবরণ করে।

আমরা সবাই মশা মারার জন্য ঔষধ ছিটানোর কথা খুব উঁচু গলায় বলছি। কিন্তু আমরা কজন জানি যে মশা প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হলো পরিবেশ সংরক্ষণ করা। এই যে আমাদের চারপাশ ময়লা আবর্জনায় ভরা, যেখানে সেখানে নালা নর্দমা এবং সেই নর্দমার পানি বিষাক্ত, এগুলো পরিষ্কার করতে আমরা কজন উদ্যোগ নেই বলুন তো।

আমাদের চারপাশ নোংরা ও অপরিষ্কার করতে কিন্তু আমাদের জুরি নেই। কিন্তু পরিস্কার করার বেলায় একে অন্যের ঘারে সেই বোঝা চেপে দেই। দিন শেষে মশা সেখানে বংশ বিস্তার করে। সেই মশা আমাদের কামড়ায় আর আমরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হই। অর্থ্যাৎ আমাদের ক্ষতি আমরা নিজেরাই ডেকে আনছি।

elves-dance-g52a16d8c5_1280.jpg
source

অথচ আমরা যদি একটু সচেতন হতাম, বিবেকবুদ্ধি খাটিয়ে, স্বার্থপরতা দূর করে, আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে যদি পরিবেশ সংরক্ষণে দলবদ্ধ হতাম এবং নিজেরা স্বাস্থ্য সচেতন হতাম তাহলে হয়ত আজ পরিস্থিতি অনেকটাই আমাদের নিয়ন্ত্রনে থাকতো।

ডেঙ্গুজ্বর মূলত হয় এডিস মশার কামরে। এর আগে আমরা সকলেই জানতাম মশা কামরালে ম্যলেরিয়া হয়। কিন্তু এখন সবাই জানে এবং মানে এডিস মশা কামরালে শরীরে এর ভাইরাস সংক্রামিত হয়ে ডেঙ্গুজ্বর হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে তীব্র জ্বর থাকে।

অর্থ্যাৎ তাপমাত্রা একশত তিন ডিগ্রি থেকে একশত পাঁচ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়াও মাথাব্যাথা, চোখব্যথা, মাংশপেশিতে ব্যাথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। মাঝে মধ্যে জ্বরে গলা ফুলে যেতে পারে।

যেহেতু আমরা অসেচতন জাতি তাই আমাদের ডেঙ্গু জ্বর হবেই হবে। এর হাত থেকে আমরা বাঁচতে পারবো না। তাই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখা বাঞ্জনীয়। কারণ ডেঙ্গুজ্বর ভাইরাস সংক্রমনের দ্বারা হয় বলে এর প্রতিকারে কোন ঔষুধ তেমন কার্যকারী হয় না।

তাই আমি মনে করি ডেঙ্গুজ্বরে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার না করাই উত্তম। তবে চিকিৎসক যদি অ্যান্টিবায়োটিক দিতে বলে তাহলে আমাদের তা দেয়া উচিত।

মশা কিন্তু আমাদের বিরাট শত্রুতে পরিণত হয়েছে এখন। অবশ্য কোন কালেই বন্ধু ছিলো না। মশা ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু উভয় ভাইরাসের বাহক। আর কোন মশা কোন রোগের বাহক সেটিও কিন্তু আমাদের পক্ষে জানা বেশ মুশকিল। তাই আমাদের একটাই টার্গেট হওয়া উচিত যে মশা দেখা মাত্রই যেকোন উপায়ে তাকে ধ্বংস করতে হবে।

আমাদের স্লোগান হবে মশার বংশ ধ্বংস করো। এতে করে আমরা দুধরনের সুবিধা পাবো। এক হলো ম্যলেরিয়া ও ডেঙ্গুর মতো ভয়ংকর ভাইরাসের হাত থেকে আমরা মুক্তি পাবো আর অন্যটি হলো একজন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহ থেকে সেই ভাইরাস সুস্থ আরেকজন ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করতে পারবে না। এতে আমাদেরই লাভ। সর্বপোরি পুরো দেশের প্রতিটি ব্যক্তির জন্যই উপকার।

আমরা সকলেই কম বেশি জানি যে মশা কীভাবে আর কোথায় জন্মায় এবং তাদের বংশ বিস্তার করে। তারপরও প্রসঙ্গক্রমে আমি একটু বলছি। আমাদের বাড়ীর আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতে কিন্তু মশা ডিম পারে।

সবচেয়ে উপযোগী যায়গাগুলো হচ্ছে ভাঙ্গা হাড়িপাতিল, বিভিন্ন বড় ছোট পাত্র, পানির পরিত্যক্ত ড্রাম, পরিত্যক্ত বালতি, ফুলের টব, পরিত্যক্ত বোতল, টায়ার এবং পলিথিন। আরো বেশ কয়েকটি জায়গায় মশা ডিম পারে সেগুলো আমাদের নিবির পর্যবেক্ষণের দ্বারা খুজে বের করা দরকার।

mosquito-g2fc483a8b_1280.jpg
source

সবশেষে আমি ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধের কিছু উপায় ও আমার ব্যক্তিগত কিছু পরামর্শ এখানে তুলে ধরছিঃ

  • আগে জানতাম এডিস মশা নাকি মানুষকে দিনে কামড়ায়। এখন আবার শুনছি রাতেও কামড়ায়। তাই মশার কামর থেকে আমাদের বেঁচে চলতে হবে। রাতে অবশ্যই মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমাতে হবে।

  • বাড়ীর চারপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং প্রয়োজন হলে জীবানুনাশক ছিটাতে হবে। তাছাড়া বাজার থেকে মশার কয়েল কিনে এনে ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও কয়েল আমাদের স্বাস্থের পক্ষে তেমন সুবিধাজনক না। তবুও ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • দিনে ঘুমাতে চাইলে অবশ্যই অবশ্যই মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমাতে হবে। পারলে অনেক সময় মশারিতে আটকে থাকে মশাগুলোকেও মেরে ফেলতে হবে। কারন এগুলোও আমাদের জন্য চরম হুমকিস্বরুপ।

  • ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত। এছাড়া নতুন করে যাতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আর মশা না কামড়ায় সেই দিকে আমাদে বিশেষ দৃষ্টি রাখা উচিত। তা না হলে কিন্তু তাকে কামড়ানো মশা যদি আমাদের শরীরে এসে কামড় বসায় তাহলে আমরাও আক্রান্ত হতে পারি।

  • বাড়ীর আশেপাশের পরিবেশ সংরক্ষনে আমাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে। আবদ্ধ কোন পানি থাকলে তা শুকিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। ঝোপঝাড় পরিস্কার করতে হববে।

  • সিটি কর্পোরেশন কিংবা পৌরসভার সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখতে হবে। এলাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে তাদের জানাতে হবে। মশা নির্মুলে আমাদে সচেষ্ঠ হতে হবে। প্রয়োজনে নিজ উদ্যোগে এবং নিজের অর্থ ব্যয় করে হলেও মশা নির্মুল করতে হবে।

পরিশেষে শুধু একটি কথাই বলবো, আপনার আমার জীবন কিন্তু অনেক মূল্যবান। আসুন হেলায় জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে না ফেলার চেষ্টা করি। নিজেরা সচেতন হই এবং অন্যদের সচেতন করি। ডেঙ্গু থেকে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করি।

আজ আর নয়। ভালো থাকবেন বন্ধুরা।

Sort:  
Loading...
 last year 

ডেঙ্গু মশা খুবই বিপদজনক বর্তমানে ডেঙ্গু মশা খুবই বেড়ে গেছে ৷ যার জন্য আমাদের সব সময় সচেতন থাকতে হবে ৷ আগের কথায় আসি আগেকার অনেক মানুষ ডেঙ্গু কামড়ে মারা গিয়েছিল ৷ আমাদের দিন বা রাতের বেলা কোন ধরনের ঝোপ ঝাড়ের আশে পাশে না থাকাই ভালো ৷ এই ধরনের ডেঙ্গু মশা সাধারনত ঝোপ ঝাড়ের আশে পাশে খুবই থাকে ৷

যাই হোক ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ৷ ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ৷

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 67661.55
ETH 2619.39
USDT 1.00
SBD 2.72