“সংস্কৃতির অপব্যবহার”

in Incredible India2 years ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম/আদাব,

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “সংস্কৃতির অপব্যবহার” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-

Bird Feather Illustrated and Quoted Instagram Story.png

(ছবিটি ক্যানভা অ্যাপস্‌ দিয়ে ইডিট করা)

বর্তমান সময়ে শহরের যারা উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত বাসিন্দা আছেন তারা গ্রামীন সংস্কৃতিকে এমন ভাবে সংরক্ষন ও পালন করছেন যা স্বাভাবিক সংস্কৃতির বিবর্তনকে বাধার মুখে ঠেলে দিচ্ছে। কেননা সংস্কৃতি পালনের নামে তারা এগুলোর অপব্যবহার করছে।

শহুরে বাসিন্দারা তাদের ইচ্ছেমত সংস্কৃতির কৃত্রিম পরিবর্তন ঘটাচ্ছে যা মোটেও কাম্য নয়। ফলস্বরুপ সমাজে বিরজমান কালচার এর সাথে আদি ও মৌলিক সাংস্কৃতির ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের আদি সংস্কৃতি একদিন বিবর্ণ হয়ে যাবে।

গ্রামীন বা আদি সংস্কৃতিতে দেখা যায় খুব ভোর বেলা লোকেরা আগের রাতের ভাত অর্থ্যাৎ পান্তা ভাত খেত। পান্তা ভাত বলতে আমরা যেটি বুঝি, আগের রাতে বাড়ীর গিন্নি ভাত পানিতে ভিজিয়ে রাখতো।

সকাল বেলা সেই পানি মেশানো ভাত অর্থ্যাৎ পান্তা ভাত কলা অথবা নুন, মরিচ দিয়ে মিশিয়ে খেয়ে কৃষক তার চাষাবাদের স্থানে চলে যেত। এটি মূলত ছিল মূল ধারার গ্রামীন ও কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতির অংশ।

কিন্তু বর্তমান সময়ে হাড়িয়ে যাওয়া এই সংস্কৃতিকে শহুরে ভদ্রলোকেরা সংরক্ষণের জন্য ও সমর্থন জানানোর জন্য বছরে একদিন হলেও এটি চর্চা করে থাকেন। কিন্তু তারা কতটুকু এই হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতিকে লালন করতে পেরেছেন তা কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ?

কেননা পান্তাভাতের এই সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে গিয়ে শহুরে সমাজ এর সাথে ইলিশ যুক্ত করলেন। যা একধরনের বড়লোকি কায়দা বলে আমি মনে করি।

pohela-falgun-g8a3f17ecd_1920.jpg
source

এই এক ইলিশ মাছই গরীবদের এসব উৎসব পালন থেকে বের করে দিলো। কেননা রঙ্গীন পাঞ্জাবি আর রঙ্গীন শাড়ীর মাঝে যে পহেলা বৈশাখ আমরা পালন করি এবং মঙ্গল শোভাযাত্রা করি তা গরীবদের ছেড়া শাড়ী আর লুঙ্গীর সাথে মোটেও যায় না।

আমার এই কথার পিছনে অনেক যুক্তি আছে। কেননা একজন গরীব কৃষক শেষ কবে ইলিশ মাছ কিনে খেয়েছে তা বলা বাহুল্য। শহুরে সংস্কৃতিতে আদি সংস্কৃতি পালনের নামে যেসব করা হয় তা অবশ্যই গরীবদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

কারণ গরীবরা কখনো এত দামি ইলিশ মাছ কিনে খেতে পায় না, রঙ্গীন পাঞ্জাবী বা শাড়ী পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পায় না।

গ্রামের একজন কৃষকের কাছে প্রতি বৈশাখে যে চিন্তায় চিন্তিত হতে হয় সেটি হলো এ বছর ঘরের চাল ঠিক করিনি, নতুন টিন কেনারও পয়সা নাই, ঘরের চাল এবার বৈশাখের ঝড় সামলাতে পারবে তো?

যে কৃষক এই চিন্তায় বিভোর থাকে তার কাছে পান্তা ইলিশ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা নিছক ছেলেমানুষি ও কল্পনার জগৎ।

এই কৃষক সম্প্রদায় বা তাদের উত্তরাধীকারির কেউ যখন শহুরে এই সংস্কৃতিকে অস্বীকার করে তখন তাকে কেন এত অপমান ও ট্রোলের স্বীকার হতে হয়? এই প্রশ্নের উত্তর আসলে আমার জানা নাই।

যেখানে দুবেলা দু মুঠো ভাত পেলেই হয় সেখানে এসব বড়লুকে সংস্কৃতি চর্চা তাদের কাছে পাগলামীর সামিল।

যেকোন সংস্কৃতি বা উৎসব কিন্তু একদিনে গড়ে উঠে না। শহুরে স্টাইলে চলমান এসব সংস্কৃতি উদযাপন কিন্তু বেশি পুরোনো না। কিন্তু ধীরে ধীরে এটিকে পূর্নাঙ্গ একটি কালচারে রূপান্তরেরে চেষ্টা চলছে।

যেহেতু এই কালচার পালনে সমাজ তথা পুরো রাষ্ট্রের সমর্থ আছে তাই ভবিষ্যতেও এর ধারা চলমান থাকবে এবং এটি আরো শক্ত অবস্থানে যাবে।

IMG_20210516_223605.jpg

(আমার স্বপ্নের গাঁ)

পরিশেষে আমার মতে, এসব অপ সংস্কৃতি চর্চা না করে সঠিক সংস্কৃতি আমাদের সকলকে চর্চা করা উচিত। তাতে আমাদের সুনাম আরো বাড়বে।

আমরা বিশ্বের বুকে আমাদের আদি সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে পারবো। ফলস্বরুপ সবাই আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে আরো জানবে ও জানার আগ্রহ প্রকাশ করবে। আমরা আমাদের সংস্কৃতি নিয়ে অনেকদুর এগিয়ে যেতে পারবো।

আজ আর নয় বন্ধুরা সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহহাফেজ।

Sort:  
 2 years ago 

আপনি ঠিকই বলেছেন আগেকার মানুষ পান্তা ভাত লবন দিয়ে খেয়ে জীবন জাপন করেছিল তারা ৷ আর এই গুলো খাবারে তাদের মনে সন্তুষ্টি আসতো ৷ তারা সকাল বেলা পান্তা ভাত আর রুটি খেয়ে মাঠে কাজ করতে যেত খুব ভোরে ৷ এই ভাবেই তাদের জীবন চলতে থাকে ৷

আর এখন নানা ধরনের সংস্কৃতি এসে সেই নিয়ম গুলো একেবারে পাল্টে দিয়েছে ৷ যাই হোক ভাই আপনার পোস্ট টি পড়ে খুবই ভালো লাগলো ৷

ধন্যবাদ আপনাকে ৷

#miwcc

 2 years ago 

আসলে সত্যিই ঠিক বলেছেন আপনি, পান্তা ভাত মরিচ নুন মাখিয়ে খেয়ে কৃষক কাজে যেত। এবং দিনের অর্ধেকটা সময়, এই পান্তা আর মরিচ মাখানো ভাত খেয়ে কাটিয়ে দিত।

সেদিনগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি। আমরা সেই সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য। এখন বৈশাখের প্রথমে পান্তাইলিশ খেয়ে থাকি। যেটা আসলে গরিবের ক্ষেত্রে মোটেও সম্ভব না।

আপনি ঠিক বলেছেন, আমাদের দেশের সংস্কৃতি বাঁচলেই আমাদের দেশ বাঁচবে। তা না হলে দেশের এমন পরিস্থিতি যদি ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। আমাদের দেশের সাংস্কৃতি অচিরেই হারিয়ে যাবে। তার কোন অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাবে না।

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটা টপিক আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল, ভালো থাকবেন।

#miwcc

Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 62516.71
ETH 2436.18
USDT 1.00
SBD 2.65