প্রতিবন্ধিদের নিয়ে কিছু কথা
কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “প্রতিবন্ধিদের নিয়ে কিছু কথা” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-
আজ আমার পরিচিত কিছু প্রতিবন্ধি মানুষের কথা আপনাদের মাঝে তুলে ধরবো। আমাদের পাশের গ্রামে একজন প্রতিবন্ধী থাকতো। আমি স্কুল জীবনে তাকে অনেকবার পর্যবেক্ষন করেছিলাম। মানে স্কুল যাওয়া আসার সময় তাকে দেখতাম। কখনো তাকে কথা বলতে দেখি নি।
এক যায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকতো। সবার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো। মাঝে মাঝে কি কি জানি বিলাপ করতো। কথা স্পষ্ট না হওয়ায় তেমন কিছু বোঝা যেত না। মানুষ তাকে বোবাই ধরে নিয়েছিলো। অনেকে অনেক খাবার দাবার দিতো যেতে আসতে।
আমিও একবার একটা রুটি দিয়েছিলাম। সবার দেয়া জিনিসই সে খেত কিন্তু কোন মহিলা বা মেয়ে মানুষের দেয়া কোন কিছু কেন জানি সে খেত না। কোন মেয়ে যদি তাকে কিছু দিতো তাহলে সে ছুঁড়ে ফেলে দিতো। কেন এমন করতো সেটা হয়তো কারো বোধগম্য ছিলো না।
তাই অনেকে এসব কাজ কারবার দেখে হাসতো। বিশেষ করে শিশুরা। মাঝে মধ্যে অনেক শিশুকে দেখেছি তাকে বিরক্ত করতে। এভাবেই রোদ বৃষ্টি ঝড় উপেক্ষা করে সে ওখানেই বসে থাকতো। শীতে অবশ্য তার শীতবস্ত্রের তেমন একটা অভাব হতো না।
কারণ অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে এ অবস্থায় দেখে শীতবস্ত্র তার গায়ে জড়িয়ে দিতো। একবার শীতে দেখলাম তার পাশে অনেকগুলো কম্বল পরে আছে। তারপর লোকমুখে শুনেছিলাম সবগুলোই নাকি সে দান হিসেবে পেয়েছে। কিন্তু অতগুলো কম্বল সে কী করবে।
তারতো একটা বা দুটা হলেই হয়। কিন্তু কী জানি কার এমন বুজ। রিতীমত কম্বলের ঢিপি হয়ে গিয়েছিলো সেই যায়গায়। আনুমানিক বিশটার মত হবে। পরের দিন আবার দেখলাম কম্বলগুলো সেখানে আর নেই। শুধু তার গায়ে জড়ানো দুটি কম্বল ছাড়া আর কোন কম্বল দেখতে পেলাম না।
পরে একজনের কাছে শুনেছিলাম কে জানি রাতে সব কম্বল চুরি করে নিয়ে গিয়েছিলো। আসলে মানুষ হিসেবে যে আমাদের মধ্যে কতটুকু মনুষত্যবোধ কাজ করে সেটি কিন্তু এ ঘটনার দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা একজন প্রতিবন্ধী ও পাগলকেও ছাড়ি না। তার যতটুকু সম্পদ সেটুকুও চুঁরি বা প্রতারণার মাধ্যমে নিয়ে যাই।
এবার আরেকজনের ঘটনা বলবো। একজন বয়বৃদ্ধ মহিলা। কি ছিলো না তার। দামি বাড়ী, দামি গাড়ী, দামি খাবার দাবার। কোন কিছুরই কমতি ছিলো না। তিনি আজ দূর্ঘটনার স্বীকার হয়ে প্রতিবন্ধি অবস্থায় জীবন যাপন করছেন। সবই ভাগ্য। তিনি দূর্ঘটনার কবলে পরে দুটি পা হারিয়েছেন।
বর্তমানে তার জীবন কাটে অনেক কষ্টে। সেবা যত্ন করার মতো কোন লোক নেই। একজন কাজের লোক আছে কিন্তু তিনিও মাঝে মধ্যে আসেন না। তাঁর ছেলে মেয়ে সবাই উচ্চ শিক্ষিত এবং তারা বিদেশের মাটিতে সবাই প্রতিষ্ঠিত। তাই মায়ের খোঁজ করার মতন সময় হয়তো তাদের খুব কম।
এসব দেখে শুধু আপসোস হয়। আমরা মানুষরা কতটা স্বার্থপর। স্বার্থপর না হলে কি নিজের মা কে ছেড়ে বিদেশে থাকি। বিবেক কী বলে আমাদের?
এবার আমার সবথেকে কাছ থেকে দেখা একজনের কথা বলবো। সে ছিলো আমার সহপাঠি। কিন্তু সে আমাদের আট দশজনের মত স্বাভাবিক ছিলো না। সে কথা খুব কম বলতো এবং মাঝে মধ্যে হুটহাট করে প্রচণ্ড রেগে যেতো। রাগ না বলে এটাকে জেদ বলা যেতে পারে।
যখন যেটা জেদ উঠত পূরণ না হলে কলমের মাথা দিয়ে নিজের শরীরে নিজে খোঁচা মারতো। তার হাতে অনেক এরকম দাগ দেখেছিলাম আমি। বিশেষ করে বাসায় এই পাগলামিটা বেশি করতো। তার এসব কর্মকান্ড দেখে ক্লাসের অনেক ছেলে মেয়ে তাকে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো।
অনেক হাসাহাসি করতো। কর্তব্যরত শিক্ষকরাও তাকে নিয়ে মজার ছলে কিছু না কিছু বলতো ক্লাসে এসে। তখন তো আর এসব বুজতাম না। কিন্তু এখন বুজি। তার এই মানসিক রোগের জন্য আমাদের তার পাশে থাকা উচিত। তাকে সঙ্গ দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
যাই হোক পরিশেষে শুধু একটা কথাই বলবো প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নন বরং তারা আমাদের জন্য একেকটি সম্পদ। তাদেরকেও যদি সঠিক শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা যায় এবং সঠিক গাইডলাইন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের গড়ে তোলা যায় তাহলে তারাও আমাদের সকলের ও সমাজের জন্য সুনাম বয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম।
আজ আর নয় বন্ধুরা, ভালো থাকবেন সবাই।
আমরা অনেকে জন্মগত ভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে থাকি। আবার অনেকে বড় হয়ে কোন দুর্ঘটনা মাধ্যমে প্রতিবন্ধী হয়ে থাকি। আপনি স্কুলে যাওয়ার সময় একটু প্রতিবন্ধী দেখেছেন সে সব সময় রাস্তার পাশে বসে থাকতো। এবং অনেকেই তাকে খেতে দিত, আপনিও তাকে দিয়েছেন। কিন্তু আমি এটা শুনে অবাক হয়ে গেলাম,, সেই প্রতিবন্ধি কোন মেয়েদের জিনিস খেত না, মেয়েরা কোন জিনিস দিলে সেটা ফেলে দিত।
আপনি আরো একটি প্রতিবন্ধীর কথা বলেছেন যে একজন মহিলা তার সবকিছুই ছিল। কিন্তু একটা দুর্ঘটনার কারণে সে দুটি পা হারিয়ে ফেলে। এখন তার দেখার মতো কোনো মানুষ নেই। অনেক কষ্ট করে জীবন যাপন করছে। আসলে যারা প্রতিবন্ধী তারা কষ্ট করে জীবন যাপন করে।
আপনি আপনার একটু বন্ধুরও ঘটনা শেয়ার করেছেন। যেখানে সেই বন্ধুটি কিছুটা মানসিক ভারসাম্য ছিল। সে নিজের শরীর নিজেই আঘাত করত। এটা কোন স্বাভাবিক মানুষের কাজ নয়, তার উপর সে অনেক জেদি ছিল আপনি এরকম আরো অনেক কথাই বলেছেন।
অনেক সুন্দর একটি পোস্ট করেছেন, ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট করার জন্য।
ধন্যবাদ ভাই আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্যে।
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই।
ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর বিষয়ে লেখার জন্য।আপনার আজকের লেখনিটা ছিল প্রতিবন্ধীদের নিয়ে।আমরা বেশিরভাগই এদের সমাজের বোঝা ভাবি যেটা মোটেই উচিত না। এদের সুযোগ দিলে এরাও দেশের সম্পদে পরিণত হতে পারে।
প্রতিবন্ধী নিয়ে আপনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা শেয়ার করেছেন ৷ আসলেই আমাদের সমাজে থাকা অনেক প্রতিবন্ধী মানুষ রয়েছে তারা আসলেই সমাজের চোখে একটু হলেও দুর্বলতা বোধ করে থাকে ৷ তারা প্রতিবন্ধীদের একটু কম এ পছন্দ করে থাকে তাদের অহেতুক কথা বলা কটু কথা বলা নানা ভাবে খোটা দেওয়া এই প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে ৷ আমাদের সবার উচিত প্রতিবন্ধীদের সবার সাথেই ভালো ব্যবহার করা এবং সম্মান করা ৷ এতে করে আমাদের ব্যবহার থেকে অনেক সন্তুষ্ট থাকতে পারে ৷
ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ৷