“সূঁচিশিল্প”

in Incredible Indialast year

আসসালামু আলাইকুম/আদাব,

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “সূঁচিশিল্প” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-

sewing-1229711_1920.jpg
source

আমার নানীর সময়কার গৃহসজ্জার প্রধান উপকরণ ছিলো বিভিন্নধরণের সূঁচিশিল্প। বিভিন্ন রকমের কাপড়ে বিভিন্ন রঙের সুতা ব্যবহার করে যে শিল্পকর্ম করা হয় তাই সূঁচিশিল্প। আমাদের বর্তমান সময়ে এমনটা আর তেমন দেখা যায় না।

আগেরকার যুগে বিছানার চাদর, বালিশের কভার, টেবিল ঢাকা কাপড়, আয়নার কাপড়, সোফার কাপড় ও বিভিন্ন উপকরণ ঢাকার কাপড়ে তাঁরা রঙ্গিন সুতোয় ফুটিয়ে তুলতেন বিভিন্ন ফুল ও লতাপাতার ছবি।

তখনকার সময়ে আমার নানী বা দাদীরা সেলাই দেখে বাড়ীর গৃহিণীর রুচি পরীক্ষা করতো। আবার সূঁচিকর্ম যদি হতো স্নিগ্ধ রঙের সুন্দর শেড সুতা দিয়ে করা, তাহলে বোঝা যেত গৃহিণী রুচি বেশ ভালো।

এই ধরণের সেলাইকে বলা হয় এ্যমব্রোডারী, আমার নানী বলতেন এম্বোটারি।

আবার এমব্রয়ডারিরও আলাদা নাম আছে যেমন ভরাট সেলাই, চেইন সেলাই, লেজিডেজি, হেরিং বোন, ইত্যাদি। সেলাই গুলোর নাম যেহেতু ইংরেজি, তাই মনে হয় সেলাইগুলো হয়তো বিদেশ থেকে আমাদের দেশে এসেছে। কিন্তু কিভাবে বিদেশি সেলাই এদেশের ঘরে ঘরে ঢুকে পড়লো তা জানিনা।

এই সেলাই বিশেষ ধরনের সুতা দিয়ে করা হতো। সুতাটির নাম হলো লাসি সুতা। সুতার উপরে যে কাগজ থাকতো সেখানে বিভিন্ন ট্যাগ লাগানো থাকতো। তাতে একটা নাম্বার দেয়া থাকতো সুতার রং বোঝানোর জন্য। সেলাই করতে করতে সুতা শেষ হলে নাম্বার অনু্যায়ী সুতা কিনে আবার সেলাই করতো।

আমাদের দেশের আদি এবং খাঁটি দেশি সেলাই হলো কাঁথা সেলাই। কাঁথায় আমাদের নানী দাদীরা সুই সুঁতা দিয়ে বিভিন্ন নকশা করতো। তখন এই কাঁথার নামকরণ করা হয় নকশী কাঁথা।

texture-1164929_1920.jpg
source

নকশী কাঁথা এক আশ্চার্য শিল্পকর্ম।

কারণ এখানে বাড়ীর গৃহিনীরা জীবনের বিভিন্ন ছবি আঁকতেন। নকশী কাঁথার কদর আগেরকার যুগে তেমন ছিলো না। কিন্তু বর্তমানে এর কদর ও চাহিদা অনেক।

কাঁথা সেলাইয়ের জন্য রঙিন সুতা গৃহিনীরা কিনতেন না, বলা যায় কেনার পয়সা থাকতো না। তাঁরা পুরানো শাড়ির পাড়ের সুতা খুলে আলাদা আলাদা রঙের গুটলী বানিয়ে রাখা রাখতেন পরে সেই সুতা দিয়ে কাঁথা সেলাই করতেন।

এবার পা মেশিনের কথা মনে পরে গেলো। আমার নানী দাদীর সময়ে মেশিনে সেলাই করা এক ধরনের কর্ম ছিলো। তাঁদের সময় পুরুষদের পরিধেয় কাপড় বাদে বাড়ির আরও সমস্ত কাপড় তাঁরা সেলাই মেশিন দিয়ে সেলাই করতেন।

কী সেলাই করতেন? বালিশের কভার, পর্দা, টেবিল ঢাকা কাপর, পরিধেয় পোষাক আরো অনেক কিছু। সেলাই মেশিনে সেলাই করে বাঙালি মধ্যবিত্ত ঘরের নারীরা সংসারে অনেক সাশ্রয় করতেন।

antique-1838324_1920.jpg
source

আমার নানীর ছিল ঊষা কোম্পানির হাত মেশিন। সেই মেশিনে নানী দীর্ঘদিন নিজের পোশাক ও পরিবারের অন্যদের পোশাক সেলাই করেছিলো, দর্জির খরচ বাঁচানোর জন্য।

আমার নানী কিন্তু সোয়েটার বোনায় অনেক পারদর্শী ছিলো। একটা সোয়েটার যে মাত্র একজন মাত্র এক বছর পরবে এমন চিন্তা করে বোনা হতো না, মোটামুটি একটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে সোয়েটার বোনা হতো।

যার জন্য সোয়েটার বোনা হবে, প্রথমে তার সোয়েটারের লম্বার মাপ নেয়া হতো আঙুলের হিসাবে, মাপার ফিতা সবার ঘরে থাকতো না। একইভাবে গায়ের মাপ, হাতের মাপ নেয়া হতো। মাপ নেওয়া হলে আরো কয়েক আঙ্গুল বেশি করে নিয়ে সোয়েটার বানানো হতো যাতে অনেক বছর পরা যায়।

fashion-1283863_1920.jpg
source

আজকাল কোনো মহিলা সেলাই করেন শুনলেই মনে হয় তিনি গার্মেন্টস কর্মী। অথচ একসময় আমাদের দাদী, নানী সব নিজের হাতেই সেলাই করেছিলো। আমার খুব অবাক লাগে ভাবতে, আমার দাদী নানীরা তাদের সংসারের এত সব কাজ করেও কীভাবে সেলাই করার সময় পেতেন।

নানীর ছিল ছয় জন ছেলেমেয়ে। আসলে সেযুগে তো মায়েদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে স্কুল কোচিংয়ে দৌড়াতে হতো না সারাদিন ধরে, টিভি সিরিয়ালও দেখতে হতো না। তাঁরা রান্না আর ঘরকন্নার ফাঁকে ফাঁকে যেটুকু সময় পেতেন সেলাই করতেন। এটা ছিল তাদের বিনোদন।

পাড়ার কয়েক জন মহিলা একসাথে বসে গল্পগুজব করার সময়ও বসে সেলাই করতেন, একজন আরেকজনের থেকে নতুন কোনো সেলাই শিখে নিতেন। তখন সেলাইয়ে পারদর্শী হবার একটা উদ্দেশ্য ছিল বিয়ের বাজারে দাম বাড়ানো। অর্থ্যাৎ কোন ভালো পাত্র যেন কখনো হাতছাড়া না হয়। সেলাই দেখে মেয়েদের গুণাগুণ নির্বাচন করা হতো সেই সময়। আমাদের সময়ে এই দক্ষতার দাম পড়ে গেছে।

আমার নানী, মা, আমি এই তিন প্রজন্মের জীবনের নানা দিক নিয়ে আমি মাঝে মাঝে কিছু লিখি, তারপর সেটা শেষ না করে ফেলে রাখি। এই লেখাটা মোটামুটি শেষ করা ছিল। তাই আজ আপনাদের মাঝে তুলে ধরলাম।

আজ আর নয় বন্ধুরা। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহহাফেজ।

Sort:  
Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 59956.07
ETH 2524.56
USDT 1.00
SBD 2.49