দুটি গল্প ও গল্প থেকে শিক্ষা

in Incredible India6 months ago

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “দুটি গল্প ও গল্প থেকে শিক্ষা” শীর্ষক একটি লিখনি উপস্থাপন করছি। কথা না বাড়িয়ে তাহলে শুরু করা যাক।

দুটি গল্প ও গল্প থেকে শিক্ষা.jpg

(ক্যানভা দিয়ে ইডিট করা)

এক জঙ্গলে বিশাল বড় একটি বাঘ থাকতো। জঙ্গলের সব প্রাণিরাই বাঘের ভয়ে খুব সাবধানে চলাফেরা করতো ও আহারের জন্য বের হতো। কারণ বাঘটি অনেক বড় ছিলো এবং সব প্রাণীকেই শিকার করার ক্ষমতা রাখতো।

বাঘটির প্রিয় খাবার ছিলো হরিণের মাংস। একদিন একটি হরিণকে শিকার করতে গিয়ে বাঘটি পরলো মহাবিপদে। হরিণের পেছন পেছন দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে সে একটি গর্তে গিয়ে পরেছিলো। গর্তে এতটাই কাদা ছিলো যে সে অনেকখানি তলিয়ে গিয়েছিলো। অনেক চেষ্টা করেও উঠতে পারছিলো না।

pexels-theother-kev-2264556.jpg
source

এইদিকে একটি বানর গাছ থেকে এই ঘটনা দেখে পুরো জঙ্গলে হৈ হুলুস্থুর কান্ড বাধিয়ে দিলো। সবাইকে ডাকতে থাকলো এবং গাছের এডাল থেক ওডালে নাচানাচি করতে লাগলো।

বলতে গেলে বাঘের গর্তে পরা দেখে বানর বেজায় খুশি। খুশিতে গদগদ সে। এরকম নাচানাচি করতে গিয়ে হঠ্যাৎ করে বানর একটি গাছের ডাল ভেঙ্গে বাঘের ঐ গর্তে গিয়ে পরলো। একদম বাঘের মুখের কাছে।

একনিমিষেই বানরের হাসিখুশি মুখ মলিন হয়ে গেলো। তার আর বুজতে বাকি রইলো না যে আজ আমার জীবন এখানেই শেষ। কিন্তু বানর একটু মাথা খাটালো।

সে বাঘকে বললো বাঘ ভাইয়া শোনো, আমি উপরে যে নাচানাচি করছিলাম এটা একদমই আমার ঠিক হয়নি। আমি বুজতে পারলাম যে এটি মন্দ কাজ তাই নিচে নেমে তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে আসলাম। সরি ভাইয়া।

আমাদের সমাজেও ঠিক এমন কিছু লোক আছে যারা অন্যের বিপদ দেখে আনন্দ পায়। হাসাহাসি করে, তামাশা করে এবং মজা নেয়। কিন্তু এটা মোটেও কাম্য নয়। যে কেউ যেকোন সময় বিপদে পরতে পারে। বিপদ আর দূর্ঘটনা কখনো বলে কয়ে আসে না।

ভালো মানুষ, মন্দ মানুষ যেকেউ বিপদে পরুক, উপকার করতে না পারি অন্তত হাসি তামাশা করবো না। কারণ বলা তো যায়না আমরাও যেকোন সময় যেকোন দিন সেই বিপদ কিংবা তার থেকেও ভয়াবহ বিপদে পরতে পারি।

pexels-afta-putta-gunawan-1036804.jpg
source

একবার কলেজের পাঁচবন্ধু পরিকল্পনা করলো যে তারা ট্রেন ভ্রমণ করবে। যেমন কথা তেমন কাজ। তারা পাঁচজন টিকিট কেটে একটি ট্রেনে উঠে পরলো। তারা যে বগিতে উঠেছিলো সে বগিটি যাত্রিতে পরিপূর্ণ ছিলো। সবাই সবার মতো শান্তভাবে বসে ট্রেনযাত্রা উপভোগ করছিলো।

কিন্তু এই পাঁচজন ট্রেনে উঠেই হুলুস্থুর কান্ড ঘটাতে থাকলো। হৈ-হুল্লোর করে পুরো বগিটিকে যেন অশান্ত করে দিলো। অনেকেই তাদের উপর বিরক্ত ছিলো। একবার এক মুরুব্বি দাঁড়িয়ে রিতীমতন শাসিয়ে দিয়ে বললো এই চুপ করো, এটা তোমাদের ক্যম্পাস নয়, এটা ট্রেন আর এখানে অনেক অসুস্থ মানুষও আছেন।

মুরুব্বির কথা শুনে তারা চুপ হয়ে বসলো। কিন্তু তাদের মধ্যে একজনের মাথায় তখনো শয়তানি বুদ্ধি ঘুরপাক খাচ্ছিলো যে কীভাবে ট্রেনের যাত্রীদের বিরক্ত করা যায়। বিশেষ করে ঐ মুরুব্বি লোকটাকে। তখন সেই ছেলেটি সবাইকে বললো ট্রেনটি থামিয়ে দিলে কেমন হয়।

ঐ যে দেখ ওখানে চেইন ঝোলানো আছে। চেইন টান দিলেই ট্রেন থেমে যাবে। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন বললো চেইন অকারণে টানলে গুণে গুণে পনেরশো টাকা জরিমানা দিতে হবে। এত টাকা আমরা কোথায় পাবো। একজন বললো আমরা পাঁচজন আছি। প্রত্যেকেই নাহয় তিনশ করে দেবো, কী হয়েছে তাতে।

আয় টান দেই চেইন। তারপর একজন প্রত্যেকের কাছে তিনশ টাকা করে নিয়ে মোট পনেরোশ টাকা মিল করে শার্টের পকেটে রেখে দিলো যাতে ট্রেন কর্তৃপক্ষ আসলে সাথে সাথেই জরিমানা দিতে পারি। এরপর তারা চেইন ধরে দিলো একটান। ট্রেন কিছুক্ষণের মধ্যেই একদম থেমে গেলো।

ট্রেনের ঐ মুরুব্বী দৌঁড়ে ছেলেগুলোর কাছে আসলো। কিছু একটা বলতে গিয়েই থেমে গেলো। কেননা ততক্ষণে কর্তৃপক্ষ এসে হাজির। এরপর ট্রেন কর্তৃপক্ষ বিনা কারণে ট্রেন থামানোর কারণে তাদের কাছে জরিমানা চাইলো। কিন্তু একটি ছেলে বুদ্ধি করে বললো স্যার আমরা কেউ ট্রেনের চেইন টানি নি।

pexels-veerasak-piyawatanakul-1170184.jpg
source

মুরুব্বী লোকটিকে দেখিয়ে দিয়ে বললো ইনি চেইন টেনেছে। মুরুব্বী লোকটি একটু হকচকিয়ে উঠলো। কিন্তু তিনি আগে থেকেই ছেলেদের সব কারসাজী দেখছিলেন।

তাই তিনিও বুদ্ধি খাটিয়ে বললেন স্যার ওর বুক পকেটে দেখেন পনেরোশ টাকা আছে। ওটাই জরিমানার টাকা। আমি রাখতে দিয়েছি ওকে। এই বলে মুরুব্বি নিজের সীটে গিয়ে বসে। আর ছেলেদেরকেই শেষমেস জরিমানা দিতে হয়।

এই গল্প থেকে শিক্ষা হলো, আমরা অনেকেই নিজেদের অনেক চালাক ভাবি, অনেক বেশি বুদ্ধিমান ভাবি। মাঝে মধ্যে চালাকি করে ভাবি যে, কেউ আমার চালাকি ধরতে পারবে না। আমার থেকে বুদ্ধিমানও আর কেউ নেই।

কিন্তু এটা আমাদের ভুল ধারণা। কেননা আমার চালাকি ধরার জন্যও কেউ না কেউ রয়েছেন এই সমাজে। যতই বুদ্ধি থাকুক না কেন, মাঝে মধ্যে সেই বুদ্ধির কাছেও আমাদের ধরা খেতে হয়। আর এটাই বাস্তবতা।

আজ আর নয় বন্ধুরা, ভালো থাকবেন সবাই।

Sort:  
Loading...
 6 months ago 

অন্য কেউ বিপদে পড়েছে দেখে কখনোই খুশিতে একদম লাফিয়ে ওঠা ঠিক নয়। নিজের বিপদ কখন আসবে সেটা আমরা নিজেও জানিনা। যেমন বাঘ নিজে গিয়ে গর্তের মধ্যে পড়েছে। ঠিক তেমনি ওই লোকটাকে ফাঁসাতে গিয়ে। ওই ছেলেগুলো নিজেরাই ফেঁসে গেছে। তাই কারোর বিপদ দেখলে তাকে অবশ্যই সাহায্য করা উচিত। ধন্যবাদ শিক্ষনীয় গল্প গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।

 6 months ago 
  • বাঘ এবং বানরের গল্পটা আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। পাশাপাশি এখান থেকে শিক্ষনীয় বিষয় এটাই যে কারো বিপদ দেখে কখনো হাসতে হয় না বা মজা করতে হয় না। কারণ বিপদ কিভাবে কখন আসবে আমরা কেউই বলতে পারি না।

  • পাশাপাশি আমি এটাও উপলব্ধি করতে পারলাম যে বানরের বেশ বুদ্ধিও আছে অর্থাৎ বানর বুদ্ধিমান প্রাণীদের মধ্যে একটি।

 6 months ago 
  • কোথায় আছে কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ। বিপদ -আপদ জীবনের একটি অংশ। যে কোন মানুষ যেকোনো সময় বিপদের সম্মুখীন হতে পারে। তাই কারো বিপদে হাসি-তামাশা না করে বরং তাকে সাহায্য করা উচিত।
  • খুব ভালো লাগলো আপনার শিখনমূলক লেখাটি পড়ে।
 6 months ago 

এটা শুধু গল্প নয়, বাস্তবেও এমিন অনেক হয়েছে, এই কারণেই মনে হয় এই পরবাদ প্রচলিত যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়

 6 months ago (edited)

কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়। আপনার বাঘ ও বানর সম্পর্কিত গল্প টা পড়ে খুব ভালো লাগল। এই গল্প টা পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আসলে বিপদ কখন আসে কেউ বলতে পারে না। তাই আমাদের সবারই উচিত যে বিপদে পড়ে তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। যাইহোক আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি শিক্ষকনীয় গল্প শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 67044.89
ETH 3251.74
USDT 1.00
SBD 2.64