“গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণ ও প্রতিরোধ”
আসসালামু আলাইকুম/আদাব,
কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণ ও প্রতিরোধ” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-
বর্তমান আমাদের দেশে হু হু করে বোতলজাত গ্যাস ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। সাথে বাড়ছে দূর্ঘটনাও। এর মূলে রয়েছে অজ্ঞতা ও অসতর্কতা। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় বাসা-বাড়ী, যানবাহনে, বিভিন্ন কারখানায়, রাস্তার পাশের কোন হোটেলে পাল্লা দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণের মতো দূর্ঘটনা ঘটছে। এতে অনেকেই হতাহত হচ্ছে।
আবার অনেকেই হারাচ্ছে তাদের মূল্যবান জীবন। কিন্তু একটু সতর্কতা অবলম্বন করলেই কিন্তু আমরা এই দূর্ঘটনা প্রতিহত করতে পারি। এলপিজি বা সিলিন্ডার গ্যাস সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই জানি এবং ব্যবহার করি।
প্রতিনিয়ত খবরের কাগজে, সোস্যাল মিডিয়ায়, টেলিভিশন নিউজে গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণ এবং দগ্ধ হয়ে মানুষ মারা যাওয়ার মতো ঘটনা আমরা দেখতে পাই। এসব দূর্ঘটনার মূলে কিন্তু আমরাই। একটু সাবধানতা অবলম্বন ও একটু সচেতন হলেই কিন্তু আমরা এই দূর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচতে পারি।
সিলিন্ডারের গ্যাস কিন্তু খুব বাজে গন্ধযুক্ত। কোনভাবে একটু লিক হলে কিন্তু গন্ধ চারিদিক ছড়িয়ে পরে। তাই এমন গন্ধ আমাদের নাকে এলে কোনভাবেই চুলা জ্বালাবো না।
বাসার বৈদ্যুতিক সব লাইন বন্ধ করে দেবো। প্রয়োজনে মেইন সুইচ অফ করে দেবো। বাসার সব সদস্যদের বাইরে বেড়িয়ে যেতে বলবো।
ঘরের সব দরজা জানালা খুলে দেবো যাতে বাতাস যাতায়তে সুবিধা হয়। কারণ ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা না থাকলে খুব দ্রুত সিলিন্ডার বিষ্ফোরিত হতে পারে।
আমরা প্রায় সবাই সিলিন্ডার বা এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করে খুব সহজে রান্না বান্নার কাজ সেড়ে নিচ্ছি। কিন্তু আমরা হয়তো জানি না এই গ্যাস আমাদের শরীরে বিভিন্ন বিপত্তি ঘটাতে পারে। কেননা যদি সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিক হয় এবং তা আমাদের নিশ্বাসের সাথে ফুসফুসে প্রবেশ করে তাহলে সেটি আমাদের দেহের ভেতরকার অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই অক্সাইডের অদলবদল প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করে।
ফলস্বরুপ মাথা ঝিম ঝিম করে এবং আমরা অনেক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তাই আমরা যারা সিলিন্ডার ব্যবহার করি তাদের বিশেষ সতর্ক থাকা দরকার এবং ভালভাবে পরীক্ষা করা দরকার।
প্রথমত আমরা যে দোকান বা প্রতিষ্ঠান থেকে গ্যাস সিলিন্ডার ক্রয় করি সেখান থেকে গ্যাস নেয়ার আগে অবশ্যই সিলিন্ডারের গায়ে এক্সপায়ার ডেট দেখে নিতে হবে। বাড়ীতে আনার আগে সিলিন্ডারের পাইপ ও রেগুলেটর ভালভাবে চেক করে নিতে হবে।
গ্যাস সিলিন্ডার সবসময় সোজা করে সঠিকভাবে সমতল জায়গায় রাখতে হবে। কোনরকম উঁচু নিচু জায়গায় সিলিন্ডার বসানো যাবে না। তাছাড়া গ্যাস সিলিন্ডার বাড়িতে আনার পর ফেলা বা টানাটানি করা উচিত নয়।
রান্নাঘরে বাতাস চলাচলের যথেষ্ঠ ব্যবস্থা রাখতে হবে। গ্যাস ব্যবহার করার সময় ঘরের জানালা দরজা সব খুলে রাখাতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডারের পাশে প্লাষ্টিক বা কোন দাহ্য জিনিসপত্র না রাখাই ভালো।
গ্যাসের পাইপ কোনভাবেই জোড়াতালি দিয়ে ব্যবহার করা যাবে না। সময় অন্তর অন্তর এই পাইপ পালটানো খুবই জরুরী।প্রতিদিন একবার করে রেগুলেটর চেক করা উচিত। আর গ্যাস বদল করার সময় বিশেষ করে রেগুলেটর লাগানো ঠিক হয়েছে কিনা সেটি খেয়াল রাখা জরুরী।
বাড়ীতে যদি অতিরিক্ত গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার থাকে তাহলে তা কখনই বদ্ধ ঘরে রাখা যাবে না। খোলামেলা জায়গা ও ছায়াযুক্ত স্থানে রাখা জরুরী।
অনেকেই বাড়িতে বড় গ্যাস এর সিলিন্ডার থেকে ছোট কোন বোতল বা সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি করেন। এটি কোনভাবেই বাড়িতে করা উচিত নয়। কারণ এতেকরে দূর্ঘটনার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
যেকোন সমস্যা বা দূর্ঘটনা কিন্তু গ্যাস লিক করা থেকেই শুরু হয়। তাই নিয়মিত সিলিন্ডার কোথাও লিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে।
গ্যাসের চুলায় রান্নার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন। নিজের কাপড়ের দিকে খেয়াল রাখুন। আর অবশ্যই সুতি কাপড় ব্যবহার করুন।
আমরা প্রত্যেকেই জানি যে প্রাকৃতিক গ্যাসকে প্রচন্ড চাপে তরল করে তা সিলিন্ডার বা বোতলে প্রবেশ করানো হয়। ফলে এটি যখন বিষ্ফোরিত হয় তখন এর বিষ্ফোরনটিও মারাত্মক হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে সিলিন্ডার বিষ্ফোরণের ফলে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তা আশেপাশের মানুষকে অনেক দূরে ছিটকে নিয়ে গিয়ে ফেলতে পারে। ফলে শরীলের বিভিন্ন অঙ্গ পতঙ্গের ক্ষতি হয়ে থাকে। অনেক সময় প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটে। সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় ফুসফুস।
যারা এলপিজি গ্যাস সহ অন্যান্য বোতলজাত গ্যাস সরবরাহ করেন তাদের উচিত আরো বেশি তদারকি করা ও সচেতনা সৃষ্টি এবং বিক্রয়পরবর্তী বিভিন্ন সেবাগুলো প্রদান করা। অনেকেই তাদের বাড়ীতে সঠিকভাবে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ইনস্টল করতে পারেন না। লিকেজের বিভিন্ন কারণ বা লিকেজ হলে বুঝতে পারেন না।
তাই বেসরকারি কোম্পানিগুলো বিক্রয়পরবর্তী এসব সেবা নিশ্চিত করলে দূর্ঘটনার হার একটু হলেও কমানো সম্ভব হবে। তাছাড়া খুচরা পর্যায়ে যারা সিলিন্ডার বিক্রি করে তাদের অসাবধনতার ফলে দূর্ঘটনার মাত্রা আরো বেরে যায়। তাই খুচরা পর্যায়ে তদারকি সবথেকে বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে আমদানি করা গ্যাস এবং দেশে তৈরি করা এলপি গ্যাস, গাড়ির গ্যাস সব সিলিন্ডারগুলো সবই মানসম্মত। বাসা বাড়ীতে গ্যাস সিলিন্ডার দূর্ঘটনার প্রধান কারণ হলো অসচেতনতা ও ত্রুটিপূর্ণ ব্যবহার।
আজ আর নয়। ভালো থাকবেন বন্ধুরা।
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন ভাই। প্রতি বছর এই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বহু মানুষ দগ্ধ হয়,এমনকি নিহতও হয়।