বিশ্ব শ্রমিক দিবস

in Incredible Indialast year

আসসালামু আলাইকুম/আদাব,

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “বিশ্ব শ্রমিক দিবস” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-

White and Yellow Aesthetic Minimalist Fist Sketch May Day International Worker's Day Poster (Instagram Story).jpg

(ছবিটি ক্যনভা অ্যাপস দিয়ে ইডিট করা)

আজ এক মে দুই হাজার তেইশ। রোজ সোমবার। বিশ্বের প্রতিটি দেশে আজ মে দিবস পালিত হচ্ছে। অর্থ্যাৎ বিশ্ব শ্রমিক দিবস পালিত হচ্ছে। একশত সাঁইত্রিশ বছর ধরে বিশ্বে এই দিবস পালন হয়ে আসছে।

কিন্তু যাদের জন্য এই দিবস পালন করা হয় সেই শ্রমিকের অধিকার আদায় বিশ্বে বা আমাদের দেশে কতটুকু অগ্রসর হয়েছে সেটি কিন্তু খতিয়ে দেখার বিষয়।

আমাদের দেশের একজন মহান নেতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান বলেছিলেন, “ বিশ্ব এখন দুইভাগে বিভক্ত হয়েছে, এক ভাগ শোষক আর অন্যভাগে শোষিত। আমি শোষিতদের পক্ষে”। বঙ্গবন্ধুর এই উক্তি থেকে স্পষ্ট আমরা কতটা শোষিত। দেশের শ্রমজীবি মানুষ কতটা শোষিত।

আমাদের দেশে ঠিক প্রতিবছর পহেলা মে শ্রমিক দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশে শ্রমিকদের নিয়ে কিছু আইন আছে। এসব আইনে শ্রমিকের মুক্তি, ন্যায্য মজুরি ও জবরদস্তি মূলক শ্রম সম্বন্ধে বিভিন্ন দিক উল্লেখ আছে।

আমাদের সংবিধানে যথেষ্ঠ শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা কী আদো তেমন? নিজেদের বিবেক কে প্রশ্ন করলে আমরা ঠিকই এর উত্তর পেয়ে যাবো।

আমাদের দেশে শ্রমিকদের প্রতিষ্ঠান আছে। শ্রমিকদের সংগঠন আছে। সেখানে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে অনেক পদাধীকার সম্পূর্ণ লোকজন আছে। তাদের কাজ কী শুধু সভা সেমিনার করা? বড় বড় বক্তৃতা দেওয়া?

তারা কতটুকু তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে আসছে। বিগত বছরগুলো পর্যালোচনা করলে এর যথেষ্ঠ উত্তর আমরা পেয়ে যাবো। এখন অনেক শ্রমিক নেতা চার তলা ফ্লাট বাড়িতে বসবাস করে। এসির বাতাসে ঘুমায়। তিন বেলা অনেক ভালো খাবার খায়।

গাড়িতে করে সভা সেমিনারে গিয়ে বড় বড় বক্তৃতা প্রদান করে। কিন্তু যারা শ্রমিক, যাদের জন্য সে নেতা, তাদের জন্য নেতা হয়ে সে কতটুকু করছে? এগুলো কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়।

women-g54ef5000c_1920.jpg
source

আমি দেখেছি অনেক আমাদের দেশে শ্রমিকরা যদি পথে দাবি আদায়ের জন্য না নামে তাহলে তাদের ন্যায্য অধীকার কোনদিনও প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। তাদের বেতন, বোনাস, কারখানা অবরুদ্ধ করে রাখা, কাজ না দেওয়া, অভারটাইম বেশি করানো, কর্মী ছাটাই ইত্যাদির কারণে রাস্তায় নামতে হয় এবং আন্দোলন করতে হয়।

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে একটি বিল পাশ হয়েছে। এই বিলটি মূলত শ্রমিকদের আন্দোলন বা ধর্মঘট করার বিপক্ষে উত্থাপিত হয়েছে। এই বিলটি যদি আইনে পরিণত হয় তাহলে আমাদের দেশের সাধারণ শ্রমিকেরা আর রাস্তায় নেমে আন্দোলন বা কোন প্রকার মিছিল মিটিং করতে পারবে না।

বিলটিতে আরো বলা হয়েছে কেউ যদি নিয়ম উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে তাহলে তাকে জেল জরিমানা করা হবে। তাই বলাই যায় প্রতিনিয়ত শ্রমিকদের এসব আন্দোলন ক্ষীন হয়ে আসছে। চাইলেও আর শ্রমিকেরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে নেমে আন্দোলন করতে পারবে না। মুখ বুঝে সব সহ্য করতে হবে।

আমি মনে করি আমরা সবাই শ্রমিক। কিন্তু আমাদের কাজের ধরন ভিন্ন। আমি সবার কর্মকে অনেক সম্মান করি। আমাদের প্রতিদিন কোন না কোন শ্রম বিক্রি করতে হয়। মূলত মানুষকে শ্রম বিক্রি করে উপার্জন করতে হয়। কিন্তু আমরা এই কথাটি গভীরভাবে কখনো চিন্তা করি না।

শোষক আর শোষিতদের মধ্যে যে আকাশ পাতাল পার্থক্য, এই পার্থক্য থেকে যদি আমরা বের হয়ে আসতে না পারি তাহলে আমাদের কোনদিনই মুক্তি মিলবে না।

labor-day-protest-g95ee16509_1920.jpg
source

শোষক কারাঃ-

যারা দিনের পর দিন অন্যায়ভাবে অন্যকে দিয়ে নিজের কাজ করিয়ে নেয় এবং নিজে টাকার পাহাড় তৈরি করে তারাই শোষক। শোষক মূলত মালিক শ্রেণির লোকেরাই বেশি হয়ে থাকে। তারা শ্রমিকদের যথাযথ মজুরি প্রদান করে না, শ্রমিকদের সাথে অনেক অন্যায় অত্যাচার করে, সাধারণ কাজের থেকেও বেশি কাজ করিয়ে নেয়, কোন প্রকার প্রনোদনা কিংবা বোনাস প্রদান করে না। দিনশেষে ন্যায্য সম্মানটুকুও শ্রমিকদের করে না।

শোষিত কারাঃ-

যে শ্রমিকগণ প্রতিনিয়ত মালিকের অন্যায় অত্যাচার সব সহ্য করে মুখ বুজে কাজ করে যায় তারাই শোষিত। শ্রমিকগণ বিভিন্নভাবে শোষিত হয়ে থাকেন। যেমনঃ ন্যায্য মজুরি, বোনাস, ওভার টাইম বিল না পাওয়া কিংবা, সময়ের অতিরিক্ত কাজ করা এমনকি শ্রমিক যতটুকু কাজ পারে তার থেকে বেশি কাজের ভার তার উপর চাপিয়ে দেওয়া। যারা এসব শোষণের স্বীকার হয় তারাই মূলত শোষিত।

পরিশেষে আমি বলতে চাই আমরা যারা মালিক শ্রেণি বা চাকুরিজীবি লোক আছি তাদের অন্যের যোগান দেয় ঐ গরিব কৃষক, আমাদের মিল কারখানা চালায় ঐ গরিব শ্রমিক।

আপনার আমার সবার সংসার চলে ঐ গরিব শ্রমিকের পরিশ্রম করে যে ঘাম ঝড়ে, সেই ঘামের টাকায়। তাই আসুন শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সোচ্ছ্বার হই। তাদের সম্মান করি। তাদের ইজ্জত দেই। কারণ প্রকৃতপক্ষে মালিক তো ওরাই।

আজ আর নয় বন্ধুরা। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহহাফেজ।

Sort:  
Loading...
 last year 

বিশ্ব শ্রমিক দিবস নিয়ে আপনি যে লেখাটি আজ আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করেছেন সত্যিই খুবই ভালো লাগলো আপনার আজকের পোস্টটি পড়ে আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.12
JST 0.027
BTC 61639.07
ETH 2982.91
USDT 1.00
SBD 2.46