“চাপ ও কারিগরি শিক্ষা”

in Incredible Indialast year

আসসালামু আলাইকুম/আদাব,

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “চাপ ও কারিগরি শিক্ষা” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-

boys-g794a25a5e_1280.jpg
source

আমাদের সমাজে সন্তানদের নিয়ে বহুল প্রচলিত কয়েকটি বাক্য আছে, বাক্যগুলি এরকম- “আমার সন্তানকে আমি কখনো কিছু নিয়ে চাপ দেবো না”। “আমার সন্তানকে আমি কোন প্রকার স্ট্রেস দেবো না”। “আমার সন্তানের যেটা ভালো লাগবে তাই সে করবে”। ইত্যাদি ইত্যাদি।

এসব মহামূল্যবান উক্তি উন্নত মানসিকতার আশাবাদী পিতা মাতার মুখে মুখে শোনা যায়। আমার মতে এই ধরনের মানসিকতা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু বলুন তো, জীবনে কী সত্যি এস্ট্রেসকে এড়ানো যায়? চাপ থেকে কী মুক্তি মেলে?

কোন না কোন একদিন আমাদের সকলকে চাপের মুখোমুখি হতেই হয়। বাঁচতে হলে চাপ নিতেই হবে। সারাজীবন কেউ হেসে খেলে কাটিয়ে দিতে পারে না। রূপকথার ঐ বাগানে যেখানে সব ফ্রিতে পাওয়া যায়, সেখানে গোল্লাছুট খেলে জীবন কাটিয়ে দেয়ার মতো ভাবনা সেতো কল্পনাতেই শোভা পায়। বাস্তবে তার কোন অস্তিত্ব নেই।

চাপ, স্ট্রেস ইত্যাদি নিয়েই আমাদের এই জীবন। যাইহোক, একটি শিশুর অবশ্যই চাপহীন ও সুন্দর শৈশব আমি কামনা করি। কিন্তু কতদিন সে চাপহীন থাকবে? কখন থেকেই বা তাকে চাপের সাথে পরিচয় করাতে হবে?

ধরুন আপনি আপনার সন্তানের পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে কখনই মাথা ঘামান না। ঠিক বাংলা সিনেমা “দীপু নাম্বার টু” এ অভিনীত বাবার মতো। যিনি কখনো তার ছেলের পড়াশোনা নিয়ে কিছুই বলেনি। মানলাম সব ঠিক আছে। তবে আপনাকে সন্তানের ভবিষ্যতের কথা একটু ভাবতে হবে।

আপনার সন্তানের পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হচ্ছে বা আগে ভালো ছিলো এখন খারাপ হচ্ছে। হতেই পারে, সেই জন্য আপনি কী চুপ থাকবেন? চাপ, স্ট্রেস ইত্যাদির মতো অজুহাত দাঁড় করাবেন? না, কখনই না। সন্তানকে অন্য দিকে অর্থ্যাৎ কারিগরি দিকে দক্ষ করার চেষ্টা করুন। তাতে তার ভবিষ্যত একটু হলেও উজ্জ্বল হবে।

people-g404ac3409_1280.jpg
source

বিভিন্ন কারিগরি যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলোর মধ্যে যেকোন একটি বা অনেকগুলি বিষয়ে দক্ষ হতে হলে কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। শুধু পরিশ্রম না, অনেক চাপ নিতে হবে। এই চাপ একজন মানুষের কাছে চাপ মনে হবে না, যখন সে কোন একটা বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠবে।

অর্থ্যাৎ আমাদের কাজ শেখার মানসিকতা থাকতে হবে। কিন্তু বড় দুঃখের সাথে বলতে হয় আমাদের সমাজে কাজের বিষয়ে অজুহাতের কোন শেষ নেই। একটু পরিষ্কার করে বলতে গেলে সমাজে এত পরিমান পছন্দের কোন কাজ নেই যে সবার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেয়া যেতে পারে। সবাই হাতে গোনা কয়েকটি কাজ বা পেশাকে গ্রহণ করতে রাজি থাকে। বাকিগুলো নেহাত অজুহাত দিয়ে ঊড়িয়ে দেয়।

উদাহরণস্বরুপ বলতে পারি- প্রতিটি জেলার ভূমি অফিসে দাগ, খতিয়ান, মৌজা ও জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করার জন্য মানুষের প্রয়োজন রয়েছে, তারপর ব্যবসায়ের হিসাব মেলানো, বিভিন্ন ঋণের কাগজ যাচাই বাচাই, কোন এনজিও বা প্রতিষ্ঠানের কিস্তি উত্তোলন ইত্যাদি নিয়ে কাজ করার জন্য মানুষের প্রয়োজন রয়েছে, আমি যে মোবাইল দিয়ে লিখছি এই মোবাইল যারা তৈরি বা সরবরাহ করে তাদের কিন্তু বিক্রয় প্রতিনিধি ও বিপননের জন্য মানুষের প্রয়োজন আছে।

এতক্ষণ যে তিনটি উদাহরণ দিলাম এগুলির কোনোটা কিন্তু কারো ড্রিম জব হয় না। অর্থ্যাৎ এগুলো কেউ পেশা হিসেবে গ্রহণ করবে সেকথা কখনো চিন্তাও করে না। কাউকে যদি বলি তোমার জীবনের লক্ষ্য কী তাহলে হয়তো সে বলবে, ডাক্তার হওয়া, ইঞ্জিনিয়ার হওয়া, বিজ্ঞানী হওয়া, শিক্ষক কিংবা চিত্রশিল্পী হওয়া।

এর বাইরে সে আর কিছুই বলবে না। বলবে কী করে, তাকে তো আর কিছু শেখানোই হয় নি। অর্থ্যাৎ ছোটবেলা থেকে সে এগুলো শুনে শুনে মুখস্ত করে নিয়েছে।

এবার একটি প্রশ্ন করা যেতেই পারে। এই স্বপ্নের পেশাগুলি সত্যি কী চাপবিহীন? একজন ডাক্তারকে যে পরিমান পড়াশোনা করতে হয় এবং ডাক্তার হওয়ার পর যে পরিমান দায়িত্ব তাকে নিতে হয় সেটা কিন্তু কারো অজানা নয়। আর ইঞ্জিনিয়ারের কথা কী বলবো। সেদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন ইঞ্জিনায়ারের কিছু লিখা পড়লাম।

তিনি বিদ্যুৎ বিভাগের একজন সনামধন্য ইঞ্জিনিয়ার। বর্তমান লোডশেডিং পরিস্থিতিতে সারাদিন অফিস করে বাসায় ফিরে রাত দুইটা তিনটা পর্যন্ত তাকে কাজ করতে হয়। আবার সকাল ছয়টায় উঠে বাকি কাজ করতে হয়। এখন এটাকে আপনি কী বলবেন। ইঞ্জিনিয়ার হয়ে কী তিনি চাপমুক্ত আছেন? মোটেই না।

অথচ এগুলো আমাদের ড্রিম জব এবং পিতা মাতার চাওয়া পাওয়া। আমি এসব ড্রিম জবের মোটেই বিরোধী নই। বরং আমি মনে করি আমাদের তো প্রত্যেকের ড্রিম জব থাকবেই, পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা অথবা বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আমাদের আরো একধাপ এগিয়ে যেতে হবে। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা সকলেই কারগরি শিক্ষার গুরুত্ব বুজতে পারবো এবং এর ফলাফল অনুধাবন করতে পারবো।

dawn-gb91d4e969_1280.jpg
source

আমাদের সমাজে অভিভাবকেরা সন্তানদের পড়াশোনা নিয়ে অনেক বেশি সিরিয়াস। সমাজ ব্যবস্থা ধীরে ধীরে এমন হয়েছে যে, এখন শুধুই সবার মধ্যে একটি ভাবনাই বিদ্যমান। সেটি হলো- ভালো স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটিতে ছেলে মেয়েকে ভর্তি করানো এবং একটা ভালো চাকরি। কিন্তু কোনরকম ম্যট্রিক পাশ করে নিজে একটা কাজ শিখে সাবলম্বী হওয়ার প্রক্রিয়া আমাদের এখানে বেশ নিন্দনীয়।

পরিশেষে আমি একটা কথাই শুধু সবার উদ্দেশ্যে বলবো, আসুন কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাই, শারীরিক ও মানসিক চাপ নিতে অভ্যস্ত হই। নিজে থেকে কিছু করার চেষ্টা করি। সমাজ কী বলে সেটাকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজের কাজ ও পরিশ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশিল হই। তাহলে অবশ্যই ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। আর ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই তো জ্ঞানীর কাজ।

আজ আর নয় বন্ধুরা। ভালো থাকবেন সবাই।

Sort:  
Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 68618.96
ETH 2706.18
USDT 1.00
SBD 2.72