প্রেম আজকাল

in Incredible India8 months ago

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “প্রেম আজকাল” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-

pexels-kawaiiart-1767434 (1).jpg
source

জনাব আরাফাত সাহেব একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা। কর্মজীবনে তিনি দারুণ গুণী, মেধাবী এবং কর্মঠ ব্যক্তি ছিলেন। একজন সৎ কর্মকর্তা হিসেবে তার সুখ্যাতি রয়েছে। এখনো অনেক পুরনো মানুষ ফোনে আরাফাত সাহেবের খোঁজ-খবর নেন। কুশলাদি বিনিময় করেন।

যাইহোক আরাফাত সাহেবের সময় এখন কাটে বই পড়ে। কিন্তু বাসায় তার একদম ভালো লাগে না। তাই ইদানিং তিনি পার্কে সময় কাটান। তিনি দিনে দুবার করে পার্কে যান।

পার্কের ভেতর যেদিকটায় লোকের সমাগম একটু কম সেদিকটায় বসে তিনি এক মনে বই পড়তে থাকেন। বই পড়াটা এখন তার নেশায় পরিণত হয়েছে।

আরাফাত সাহেব নিরিবীলি পরিবেশ এবং ঝামেলামুক্ত পরিবেশ পছন্দ করেন। তিনি পার্কের যে যায়গাটায় বসে বই পড়েন সেই যায়গাটা বলতে গেলে বেশ নিরিবীলী। তিনি যে বেঞ্চে বসেন বেঞ্চটি বেশ বড়সর, উপরে বেশ পুরনো একটি গাছ, পাশে রয়েছে একটি বড় বিল।

সব মিলিয়ে বেশ কদিন তিনি ভালই সময় পার করছিলেন। কিন্তু ইদানিং কিছু বখাটে ছেলের উতপাত বেড়েছে পার্কে। তাই আরাফাত সাহেব বইয়ের মধ্যে ঠিকঠাক মনযোগ দিতে ব্যার্থ হচ্ছে। কিন্তু কি আর করার।

পার্ক তো সবাই জন্যই উন্মক্ত। কাউকে তো আর আসতে বাধা দেয়া যায় না। তাই মুখ বুজে সব সহ্য করে আরাফাত সাহেব বারবার বইয়ের মধ্যে মনযোগ দেয়ার চেষ্টা করে।

অবশেষে একদিন আরাফাত সাহেব পার্কের ভেতরকার গার্ডকে একটি কমপ্লেইন করেই বসে ঐ বখাটে ছেলেগুলোর বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে এর সুফলও আসে। বখাটেগুলোকে আর দেখা যায় না পার্কে। কিন্তু আজ নতুন আরেকটি ঝামেলা এসে হাজির হয়। ঠিক ঝামেলা না, একটি মেয়ে। প্রাপ্তবয়স্ক একটি মেয়ে।

আরাফাত সাহেব যে বেঞ্চটাতে বসে সেই বেঞ্চে এসেই হুট করে মেয়েটি বসে পরে। আবারো আরাফাত সাহেব বিরক্ত। কিন্তু কিছু তো করার নেই। পার্কের বেঞ্চ তো আর শুধু তার জন্য বরাদ্দ না। এখানে যে কেউই বসতে পারে।

pexels-vietrov-19562867 (1).jpg
source

তাই বিরক্তিভরা চোখে মেয়েটির দিকে তাকালে মেয়েটিও মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে নিজের কাজে মনযোগী হয়।

তবে মেয়েটির কিন্তু কোন কাজ ছিলো না। শুধু মুঠোফোন হাতে নিয়ে কী জানি কী করতো। মুচকি মুচকি হাসতো আবার কখনো মন খারাপ করে বসে থাকতো।

<b.এভাবে প্রতিদিন মেয়েটি একই সময় এসে আরাফাত সাহেবের পাশে বসে এসব করতো। বেঞ্চটি যেহেতু বেশ বড় ছিলো তাই আরাফাত সাহেবের তেমন একটা অসুবিধা হতো না।

তিনি এক কোনায় এবং মেয়েটি অন্য কোনায় বসে যে যার মতো কাজ করতো। এতদিন সব ঠিকঠাক ছিলো কিন্তু এক পর্যায়ে এসে মেয়েটি ফোনে কথা বলা শুরু করলো। সে কী কথা, শুরু হয় কিন্তু শেষ হয় না। এবার সত্যি সত্যি আরাফাত সাহেব বিরক্তি প্রকাশ করলো এবং মেয়েটিকে বললো আপনি ওদিকে গিয়ে কথা বলুন।

কিন্তু মেয়েটি তার কথায় কোন সাড়া দিলো না। বরং আরো জোরে হেসে হেসে কথা বলতে থাকলো। আরাফাত সাহেবের মোটেও বিষয়টি পছন্দ হলো না। তাই তিনি পূর্বের ন্যায় পার্কের গার্ডকে অভিযোগ জানালেন। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান হলো না।

এভাবে প্রতিনিয়ত চলতেই থাকলো। ধীরে ধীরে আরাফাত সাহেবও মেয়েটির কথায় অভ্যস্থ্য হয়ে গিয়েছিলো। তাই পরবর্তীতে তিনি আর মেয়েটিকে নিয়ে কোন অভিযোগ করেননি।

এরমধ্যে তিনদিন আরাফাত সাহেব শারীরিক অসুস্থতার জন্য পার্কে যেতে পারেনি। চতুর্থ দিনে পার্কে গেলে মেয়েটি বড় বড় চোখ করে আরাফাত সাহেবের দিকে তাকাতে থাকে। একমহূর্তে গিয়ে বলেই ফেলে আপনি এই তিনদিন আসেননি কেন?

আমি একা একা পার্কে খুব ভয় পাই, তাই আপনার এখানে এসে বসে আমার ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে কথা বলতাম। যাতে পার্কের বখাটে ছেলেরা আমাকে বিরক্ত করতে না পারে। আর আপনি কেমন মানুষ। তিনদিন যাবত আসলেন না।

এবার আরাফাত সাহেব সত্যিকারের রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হলেন। তিনি ভাবলেন এ কারণেই মেয়েটি আমার পাশে বেঞ্চের এক কোনায় বসে সময় কাটাতো। যাইহোক আরাফাত সাহেব কিছু একটা বলতে গিয়ে আটকে গেলেন। তারপর বললেন আজ থেকে আবারো আসবো। তুমি বসো। কথা বলো।

মেয়েটা এবার খুশিতে গদগদ হয়ে তার ভালোবাসার মানুষের সাথে কথা বলতে শুরু করলেন। আরাফাত সাহেব আগের দিনগুলির মতো বইয়ের জগতে হাড়িয়ে গেলেন।

এভাবে আরো কিছুদিন কেটে গেলো। এবার আরাফাত সাহেবের সাথে মেয়েটির বেশ সখ্যতা গড়ে উঠলো। তারা দুজনই প্রতিদিন দুজনার খোঁজখবর নিতে থাকলো। মাঝে মধ্যে আরাফাত সাহেব মেয়েটিকে দু এক লাইন কবিতা পড়িয়ে শোনাতো। মেয়েটিও বেশ আনন্দ পেতো। কিন্তু এরপর আবার দুজন দুজনার কাজে মন দিতো।

pexels-hasan-albari-1652340.jpg
source

এভাবে আরো কিছুদিন যাওয়ার পর হঠ্যাৎ আরাফাত সাহেব মেয়েটিকে আর দেখতে পেলো না। দুদিন, চারদিন, দশদিন, পনেরোদিন এমনকি একমাস কেটে গেলো মেয়েটি লাপাত্তা। আরাফাত সাহেবের মন কিছুতেই মানতে চাচ্ছিলো না যে মেয়েটি তার পাশে নেই। কেমন যেন একটা মায়া তৈরি হয়ে গিয়েছিলো মেয়েটির প্রতি।

যাইহোক একমাস দশ দিন পর মেয়েটিকে আবারো দেখা গেলো সেই বেঞ্চের এক কোনায় বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আরাফাত সাহেব ছুটে গিয়ে মেয়েটিকে প্রশ্ন করলো কী হয়েছে তোমার? এতদিন কোথায় ছিলে? মেয়েটি উত্তর না দিয়ে কাঁদতেই থাকলো।

আরাফাত সাহেব মেয়েটির মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে এবার বেঞ্চে ঐ কোনায় গিয়ে বসে পরলেন। আজ আর আরাফাত সাহেব বই হাতে নিলেন না। একবার হাতে নিয়ে ফের কাধে ঝোলানো ব্যগটার ভেতরে বইটি রেখে দিলেন।

কিছুক্ষণ পর মেয়েটি চোখ মুছে বলতে থাকলো স্বার্থের এই দুনিয়ায় সবাই স্বার্থপর। আমার বুজতে বাকি রইলো না যে তার প্রেমিকের সাথে হয়তো বিচ্ছেদ হয়েছে। বাস্তবেও তাই। পরে মেয়েটি সব খুলে বলে আরাফাত সাহেবকে। মেয়েটি বিশালভাবে প্রতারিত হয়েছিলো।

pexels-castorly-stock-4114791.jpg
source

সোস্যাল মিডিয়ার বদৌলতে একটি ছেলের সাথে তার পরিচয় হয়েছিলো। এরপর বন্ধুত্ব তারপর প্রেম। কিন্তু মেয়েটি বুঝতে পারেনি যে ছেলেটি প্রতারক ছিলো। যাইহোক ছেলেটির এই প্রতারণার দ্বায়ভার আসলে কার?

এমন প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে খেতে সন্ধ্যে হলো। আরাফাত সাহেব আজ প্রথম মেয়েটিকে বাড়িতে এগিয়ে দিয়ে নিজেও বাড়ীর পথ ধরলেন।

আজ আর নয় বন্ধুরা, ভালো থাকবেন সবাই।

Sort:  
Loading...
 8 months ago 

সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রেম কাহিনী বর্তমান সময়ে একেবারেই আজ কালকের মত। আজকে প্রেম হলে কালকে ব্রেকআপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। মেয়েটার সাথেও হয়তো বা এমনই একটা ঘটনা ঘটেছে।

আপনার লেখাটা যখন প্রথম পড়া শুরু করলাম তখন আমি ভেবেছিলাম হয়তোবা, আরাফাত সাহেব নিজে প্রেম করে। কিন্তু পরবর্তীতে যখন জানতে পারলাম মেয়েটা অন্য একটা ছেলের সাথে প্রেম করে এবং তার কাছ থেকে প্রতারিত হয়েছে। বিষয়টা জানতে পেরে বেশ খারাপ লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে বাস্তবমুখী একটা লেখা আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল। ভালো থাকবেন।

 8 months ago 

স্যোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে এখন প্রায়শই অনেকেই এমন প্রতারিত হচ্ছে। এমনকি অনেকে বিদেশ থেকেও প্রতারিত হচ্ছে। খুব ভালো লাগলো আপনার গল্পটি পড়ে। সামনে আরো এমন গল্পের অপেক্ষায়

 8 months ago 

আরাফাত সাহেব এবং মেয়েটির ঘটনা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলাম, খুব নিখুঁতভাবে আমাদের মাঝে উপস্থাপ করেছেন, আপনি সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই,
আজকাল ভালোবাসা এমন রূপ ধারণ করেছে। বাচ্চাদের খেলনার মত ইচ্ছা হলো ঢেলে খেললাম আবার ইচ্ছা হলো ব্যাগ গুছিয়ে রেখে দিলাম।
তবে আপনার এই গল্পটা পরিবেশ ভালো লেগেছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.032
BTC 59185.02
ETH 2522.04
USDT 1.00
SBD 2.47