ভাতিজা নাকি মিসির আলী
কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “ভাতিজা নাকি মিসির আলী” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-
উপরে আমার সাথে যে ব্যক্তিকে দেখতে পাচ্ছেন সে হলো আমার ভাতিজা। তার সাথে আমার রক্তের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু কোথায় যেন আমাদের সম্পর্ক এক সুতোয় গাঁথা। সময় পেলেই আমি তার সাথে আড্ডা দেই। মূলত সেও আমার সাথে সময় কাটাতে বেশ পছন্দ করে। যদিও আমরা সম্পর্কে চাচা ভাতিজা কিন্তু আমাদের সম্পর্ক বন্ধুর মতন।
গত শুক্রবার তার সাথে দেখা হলে সে আমাকে বলে আংকেল, আমি তো মিসির আলী হয়ে গেছি! আমি বললাম মিসির আলী মানে? সে বললো আমি আমার মাঝে কিছু পরিবর্তন খেয়াল করছি।
আমি বললাম যেমন? এবার ভাতিজা বললো, আমার মাঝে কিছু অতি প্রাকৃতিক বিষয় তৈরি হচ্ছে যা হুমায়ুন আহমেদ স্যারের সেই মিসির আলী চরিত্রের থেকে কিন্তু কম কিছু নয়। মাঝে মধ্যে এসব বিষয় আমার কাছে মিসির আলীর থেকেও অনেক বেশি মনে হয়।
আমি বললাম তাই নাকি। ভাতিজা তাহলে তুমি তো সেলিব্রেটি। এ যুগের মিসির আলী তুমি। আমাকে একটা ফটোগ্রাফ দাও না প্লিজ। সে বললো আংকেল ফটোগ্রাফ কী? আমি বললাম এই তুমি মিসির আলী সেজেছো! ফটোগ্রাফ বোঝোনা? হু!!
এবার ভাতিজা তার ঘটনা বলা শুরু করলো। আরে চাচা শোনো না। এবার গ্রীষ্মে যখন মামা বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম তখন একটা মজার বিষয় হয়েছিলো। মামা বাড়ীর দক্ষিণ কোনায় একটি না বেশ কয়েকটি আম গাছ ছিলো। আমগাছ গুলো বেশ ছোট ছিলো। কিন্তু গাছে পাতার থেকে আম অনেক বেশি ছিলো।
গুনে দেখেছিলাম সব মিলিয়ে পাঁচটি গাছে ৫০+ আম ছিলো। তো আমি বড় মামাকে বলেছিলাম মামা আমগুলো এখনো পুরোপুরি পাকেনি। সবগুলো আম এখনো কাচা পাকা। আর কাচা পাকা আম খেতে বেশ ভালই লাগে। শুনে জিভে জ্বল এসে যায়।
কয়েকটা আম পারি। সবাই মিলে এখন খাবো। কিন্তু মামা কোন মতেই রাজি হলেন না। আম খাওয়ার কথা শুনেই রেগে আগুন হয়ে বললেন ও আমে কেউ হাত দেবে না। পুরোপুরি পাকলে খেও। তাছাড়া ঐ আমগুলো দিয়ে আমি বীজ করবো। সেই বীজ থেকে আবার নতুন চারা করবো।
সব শুনে মন হলো খারাপ। মামাকে তো আর কিছু বলতে পারি না। এরপর মামিকে চেচিয়ে বললাম, এখনো সময় আছে সব আম গাছ থেকে পেরে রাখো, নয়তো এই আম টিকবে না। এই আমের মেয়াদ কিন্তু আজ রাত পর্যন্ত। এসব বলার পর আমি রুমের ভেতর চলে গেলাম।
আমার এই কথা তেমন কেউ আমলে নিলো না। তারপর রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে ঘুম ভাংলে শুনতে পেলাম বাইরে কিসের জানি চেচামেচি হচ্ছে। মামার কন্ঠ মনে হলো। বের হতেই দেখলাম বেশ কয়েকজন আম গাছগুলোর সামনে ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছে।
একটু এগুতে চোখে পড়লো গাছগুলোতে একটি আমও আর নেই। কে জানি গতরাতে সব আম সাবার করে দিয়েছে। আমি এসব দেখে বেশ অবাক হলাম। আরে আমার কথা দেখি সত্যি হলো। মামা চেচিয়ে বলতে লাগলো, কাল ভাগিনা বললো আর আজ এই কান্ড।
কে করলো আমার এই সর্বনাশ। হায় হায়রে আমার সব আম চোরে নিয়ে গেলো। আমার এতো স্বাদের আম। কে করলো এমন কাজ…. আমি দাঁড়িয়ে রইলাম বেশ কিছুক্ষণ। তারপর মামা আমার দিকে তাকালে আমি বললাম, আমি কী করেছি। গতকাল তোমাকে বললাম তুমি শুনলে না। মামা কিছু না বলে পুকুর পাড়ের দিকে হাঁটা শুরু করলো।
আমি ভাতিজার কথা শুনে একটু অবাকই হলাম। তবুও একটু ভান ধরে বললাম এমনটা হতেই পারে। এতে কি তুই নিজেকে বড় মনে করতেছিস নাকি? এরপর ভাতিজা বললো, আংকেল এর পরের ঘটনাটা একটু শোনেন তারপর বলেন। এবার আমি বললাম ওকে বল শুনি।
ভাতিজা এবার পরের ঘটনা বলা শুরু করলো। বেশ কিছুদিন আগে ছোট দাদার বাসায় গিয়েছিলাম জমি জমা ভাগাভাগি সংক্রান্ত বিষয়ে। ছোট দাদার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। দাদার কথা ছিলো, আমি বেঁচে থাকাকালীন সবাইকে সব কিছু ভাগ করে দিয়ে যাবো। যেমন কথা তেমন কাজ।
সবাইকে বাসায় দাওয়াত করে খাইয়ে দাইয়ে যার যতটুকু পাওনা সব বুজিয়ে দিয়েছিলো। আমার বাবাও সেখানে উপস্থিত ছিলো। একটা কথা বলে রাখি ছোট দাদা কিন্তু আমাকে দোস্ত বলে ডাকে। কেন ডাকে জানি না, তবে ডাকলে বেশ ভালই লাগে আমার। দাদার সব ছেলে মেয়ে তাদের প্রত্যেকের পাওনা জমাজমি পেয়ে বেশ খুশি ছিলো।
কিন্তু বিপত্তি বেধেছিলো এক যায়গায়। দাদার একটা গরু ছিলো। গরু একটা কিন্তু ছেলে তিনজন ও মেয়ে দুই জন। কিভাবে ভাগ করে দেবে বুজতে পারছিলো না। তাই গরুটার ভাগাভাগি সেদিন মিমাংসা না করে দাদা বলেছিলো আমাকে একটু ভাবতে দাও। গরুটা কি করা যায়।
বলে রাখা ভালো গরুটা ছিলো বেশ পুরোনো এবং দাদার বেশ পছন্দের। তাই বেশ কয়েকবার গরুর পাইকার গরুটি কিনতে আসলেও দাদা তাদের কখনো গরুটি দেয় নি। বরং দু চারটা কথা শুনে বিদায় করে দিয়েছে। বলতে গেলে গরুটি দাদার পরিবারের সদস্যদের মতই হয়ে গিয়েছিলো।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে দাদা আমাকে ডেকে বলতে লাগলেন, দোস্ত গরুটা কাকে দেয়া যায় ক’তো। আমি বললাম দাদা বড় চাচাকে দাও। সেই ভালো যত্ন করবে তোমার এই বয়স্ক গরুর। দাদু একটু হাসলো। পরের দিন ফজরের নামাজ পরে দাদু সব ছেলেদের ডেকে বললো, আমি একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটি হলো এই গরুটি আমি আমার মেজো ছেলেকে দেবো।
মনে মনে বাকি ছেলেরা একটু মনক্ষুন্ন হলেও সেই সময় দাদার মুখের উপর কেউ কিছুই বললো না। কিন্তু আমি তো ছাড়ার পাত্র না। দাদা আমার কথা শুনলো না। আমি মনে মনে একটু ক্ষেপে গেলাম।
পরে আমিও বললাম দোস্ত তুমি কিন্তু কাজটা ঠিক করলে না। বড় চাচাকে গরুটি দেয়া উচিত ছিলো। দেখ এই গরুর কী হাল হয়। তিন মাসের ভেতরে তোমার এই বুড়ো গরু মারা যাবে। দাদা আমার কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে গেলো।
তারপর আমিও বাসা চলে আসলাম। এভাবে তিন মাস কেটে গেলো। আমি গরুর বিষয়ে তখন সব কিছু ভুলেই গিয়েছিলাম। তারপর একদিন হঠ্যাৎ দুপুরে বাবা ফোন করে মা কে বললো চাচা তার বড় ছেলে যে গরুটি দিয়েছিলো গরুটি গতকাল রাতে মারে গিয়েছে। মায়ের মুখে একথা শুনে আমার অনেক খারাপ লেগেছিলো। কারণ ঐ গরুটি ছোট দাদার অনেক পছন্দের ছিলো।
এভাবে দিন কেটে গেলো। গত পরশু ছোট দাদা আমাদের বাসায় বেড়াতে আসলে তিনি আমাকে বললেন দোস্ত এখন থেকে তোর কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে। আমি বললাম কেন দাদা? দাদা বললো আরে তুই তো দরবেশ। বলতে গেলে দরবেশ শাহ্।
আমি এবার লজ্জ্বা পেলাম। বললাম দাদা গরুর কথা এখনো মনে রেখেছো। আমি রাগের কথায় কী না কী বলেছিলাম, এমনটা ঘটবে কে জানতো। দাদা বললো আরে না দোস্ত এটা ব্যপার না। তবে সিদ্ধান্তের ব্যপারে মাঝে মধ্যে ছোটদের পরামর্শও নেয়া দরকার। আমার এবার গর্বে বুক ফুলে উঠলো।
আজ আর নয় বন্ধুরা, ভালো থাকবেন সবাই।
Device | Name |
---|---|
Android | Samsung Galaxy A12 |
Camera | 48 MP, f/2.0, 26mm (wide), AF |
Location | Bangladesh 🇧🇩 🇧🇩🇧🇩🇧🇩🇧🇩🇧🇩 |
Short by | @rakibal |
মিসির আলীর চরিত্র যদি আগে পড়তাম, তাহলে হয়তো আরো ভালোভাবে আপনার ভাতিজার বিষয়টি উপভোগ করতে পারতাম। কিন্তু এক্ষেত্রে বিষয়টি উল্টো হয়ে গেছে। আপনার ভাতিজার গল্পটি পড়ার পর আমি মিসির আলি চরিত্র সম্পর্কে কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছি। তবে ঘটনাগুলো কিন্তু সত্যিই বেশ অবিশ্বাস্য।
তবে সব কিছুর পরের একটা জিনিস বেশ ভালোই বুঝতে পারলাম যে, বড়রা যে সব সময় সমস্ত কিছুর সিদ্ধান্ত সঠিক ভাবে নিতে পারবেন,এরকম নয়। অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চারাও কিন্তু বড়দেরকে অনেক ভালো পরামর্শ দিতে পারে। ধন্যবাদ আপনার ভাতিজার সাথে আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। পাশাপাশি তার গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।
বাহ অনেক কাকতালীয় হলেও পড়ে খুব মিজা পেলাম। ধন্যবাদ সুন্দর স্মৃতি শেয়ার করার জন্যে।
আপনার সম্পূর্ণ পোস্টটা পড়ে আমার অনেক ভালো লেগেছে। আপনার গল্প থেকে এটা বুঝতে পারলাম যে, মাঝে মাঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ছোটদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আপনার পোস্টের ফটোগ্রাফি গুলো খুবই সুন্দর ছিল। আপনার পরবর্তী আকর্ষণীয় পোস্ট পড়ার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম ভালো থাকবেন আপনি সবসময় সেই কামনা করি।
চাচা ভাতিজার গল্প অসাধারণ ছিল।। আপনার বন্ধু মিসির আলী ভাইয়ের কাছে আমারও ফটোগ্রাফ নিতে হবে বর্তমান সময়ের নতুন সেলিব্রেটি, 😆
আপনার বন্ধুর আম পাড়ার ঘটনা অনেক সুন্দর হয়েছে খুবই ভালো লাগলো আপনার আজকের পোস্টটি পড়ে।।