কলকাতার বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী পুরনো বাড়ি এবং স্মৃতি মধুর হারিয়ে যাওয়া জিনিসের ছবি।

in Incredible India2 years ago
IMG_20230103_203408.jpg
(বেনে পুকুর, সাদা কালো চলচ্চিত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ)

প্রিয় বন্ধুরা,
নতুন বছর আসতে না আসতেই দিন দুই পার হয়ে গেছে চোখের পলকে। যেহেতু জীবনের একটা পর্যায় এসে উপস্থিত হয়েছি, কাজেই প্রায় সময় বাবার সাথে আড্ডা দেবার সময় বেশ কিছু পুরনো জিনিসের বিষয় নিয়ে আজ আলোচনা হচ্ছিল।

গত সপ্তাহে কাজের কারণে চন্দন নগর যেতে হয়েছিল, এবং সেখানে সৌভাগ্যক্রমে এক সহকর্মীর আত্মীয়র বাড়িতে একটি বিশেষ কাজে গিয়ে ছেলেবেলা পুনরুদ্ধারের সুযোগ হয়ে হয়েছিল।

বিশ্বাস করুন পরদিন আগেই ছুটেছি বাবাকে ছবিগুলো দেখাবো বলে, দেখলাম ছবিগুলো দেখে নব্বই পার করা আমার বাবার চোখের কোনটা চিক্ চিক্ করছিল, মিথ্যে বলবো না আমিও বেশ ভাবুক হয়ে গেছিলাম।

IMG_20230103_203210.jpg
(কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ৩০০-৪০০ বছর পুরোনো বাড়ি, যার একটি অবহেলিত)
IMG_20230103_203102.jpg

আপনাদের সাথেও তাই বেশ কিছু ছবি ভাগ করে নিতে চলে এসেছি, যেগুলোর মধ্যে আছে পুরনো মানে এই ধরুন ৩০০-৪০০ বছরের পুরনো বাড়ির ছবি, সাথে আমার শৈশবের সাথে জড়িত এমন অনেক কিছুর ছবি যার সাথে মজার গল্পো জড়িয়ে আছে।

আমার জ্যাঠামশাই ছিলেন একসময়ের নামকরা ইঞ্জিনিয়ার এবং আগেও জানিয়েছি, বাংলা ছায়াছবির মহানায়ক উত্তম কুমারের বাড়িটি আমার জ্যাঠামশাই এর তত্ত্বাবধানে নির্মিত, এবং আজকের মত ফ্ল্যাট সিস্টেম করে সেই সময় তিনি গড়ে ছিলেন বাড়িটি।

আমরা মানে আমার পরিবার উত্তম কুমারের বাড়িতে ভাড়া ছিলাম কিছু সময়ের জন্য। যাইহোক, আমার জ্যাঠামশাই এর দুটি সখ ছিল, একটি গান শোনা, কাজেই বিভিন্ন রেকর্ড সহ সেই চোঙা ওয়ালা HMV কোম্পানীর রেকর্ড প্লেয়ার ছিল, তেমনি ঘড়ির সখ ছিল বলে, মোটামুটি একটি ঘরে নানা ধরনের ঘড়ির উপস্থিতি চোখে পড়তো।

হারিয়ে যাওয়া বেশ কিছু পুরাতন সময়ের ব্যবহৃত জিনিষ, আজ যা সবটাই স্মৃতি:-

IMG_20230103_203613.jpg

IMG_20230103_203552.jpg

IMG_20230103_203525.jpg

তারমধ্যে ছিল দোলোক ঘড়ি, বিভিন্ন ধরনের টেবিল ঘড়ি, এর মধ্যে সবে তখন অজন্তা কোম্পানির একটি দেয়াল ঘড়ি বের করেছিল, যেটি সূর্যালোকে ঘণ্টা বাজলেও রাতের আঁধার তার ঘণ্টা কখনো শব্দ করতো না।

আমার মেসো মশাই তাই দেখে তখনকার সেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ঘড়ি কিনবেন বলে ঠিক করলেন, কিন্তু সাথে জ্যাঠামশাই কে নিলেন না।

ফলস্বরূপ যে ঘড়িটি কিনেছিলেন সেটি দিনেও যেমন তারস্বরে আওয়াজ করে বাজত তেমনি রাতের বেলায়।

দেখতে কিন্তু দুটো ঘড়ি একই রকমের ছিল, আমরা বেজায় হেসেছিলাম বিষয়টি নিয়ে। তারমানে দেখতে একরকম হলেও স্বভাবের পার্থক্য থেকেই যায়।

এরপর আরো কত জিনিষ আজ আসর দেখতে পাইনা, লাইটের ব্র্যাকেট, দরজার হাতল, লাইটের সুইচ, খিল দেওয়া দরজা, ইত্যাদি ইত্যাদি।

রইলো বিস্মৃত আরো কিছু জিনিসের নিদর্শন, সাথে অতীতের সাক্ষী বয়ে নিয়ে যাওয়া সাবেকি তুলসী মঞ্চ:-

IMG_20230103_203446.jpg

IMG_20230103_203422.jpg

IMG_20230103_203634.jpg

সময় বদলেছে, বদলে গেছে মানুষের পছন্দ, রুচিবোধ, কিন্তু নতুনের মাঝে আমি আজও খুঁজে বেড়াই আমার দেখা শৈশবের সেই সকল বিস্মৃত জিনিষ যেগুলো আমাকে ক্ষণিকের জন্য ছেলেবেলা ফিরিয়ে দিতে সক্ষম।

আপনাদের স্মৃতির পাতায় এমন কোনো জিনিষ থাকলে এখানে ভাগ করে নেবেন, আমি জানার অপেক্ষায় রইলাম আপনাদের শৈশবের বেশ কিছু হারিয়ে যাওয়া জিনিষ।

সময়ের সাথে অনেক কিছু হারিয়ে যায়, শুধু রয়ে যায় স্মৃতির পাতায় তার উপস্থিতি, কাজেই যখনই সুযোগ হবে, তাদের ক্যামেরাবন্দী করতে ভুলবেন না।

আজ এই পর্যন্তই এসে বিদায় নিলাম, আপনাদের মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকুন সবাই এবং সুস্থ্ থাকুন এই কামনা করে ইতি টানলাম।

Sort:  
Loading...
 2 years ago 

আপনার লেখা বরাবর আমার ভালো লাগে একথা নতুন নয়। তবে আজকে আপনার বাবার কথাটা শুনে মনটা কেমন উদাসীন হয়ে গেলো। হয়তো এই ছবিগুলো ওনাকে অনেক কিছু মনে করিয়ে দিয়েছিল বলেই ওনার চোখের কোণ অমন চিকচিক করে উঠেছিলো। আমরাও যখন বৃদ্ধ হবো, তখন হয়তো এমন অনেক স্মৃতি আমাদের চোখও ভেজাবে।
আপনার লেখার মাধ্যমে অনেক পুরনো বাড়ি, এবং হারিয়ে যাওয়া অনেক জিনিস দেখার সৌভাগ্য হলো। তারজন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন স্যার।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 61141.76
ETH 2438.78
USDT 1.00
SBD 2.56