প্রতিটি দূর্ঘটনাই আমাদের জন্য শিক্ষা।

in Incredible India26 days ago (edited)
IMG_20240617_194305.jpg

Hello Friends,
এখন বিকেল পাঁচটা বাজে, আমি রাস্তার পাশে ঘাসের ওপর বসেছি বিকেলের হাওয়া গায়ে লাগাতে। হঠাৎ চিন্তা করলাম আজকের পোস্ট লেখাটা শুরু করি। গতকাল লেখার সময় করে উঠতে পারিনি। যে সময়ে লেখার কথা তখন চোখের পাতায় ছিল গভীর নিদ্রা।

রাস্তার ধারে বেঁধে রাখা গাভীর ছোট্ট ছানাটা আমার গা ঘেষে বসেছিল। আমিও আর বিরক্ত করিনি। কারণ আমিও ওদের সাথে সময় কাটাতে ভীষণ পছন্দ করি‌। কিছুক্ষণ বাদেই আমি বাছুরটির শরীরে হাত রেখেছিল। কিন্তু এতোটাই তাপমাত্রা যে বেশিক্ষণ হাতই রাখতে পারলাম না।

আমি শৈশব থেকেই গাভীকে ঘাস খাওয়াতেও পছন্দ করতাম। যে কারণে আমার দুঃসম্পর্কের এক ঠাকুরদা আমাকে একটা গাভী উপহার দিয়েছিল। কিন্তু ঈশ্বর সহায় না হলে কি আর করা। এটার জন্যই এখন আর আমাদের বাড়িতে গরু পালন করা হয় না।

সেই ঘটনাটি চলুন জেনে নিই;

cow-234835_1280.jpgsource

আষাঢ় মাসের শেষ দিকে চারদিকে জলে ভার খাল-বিল। সকলেই কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে গরু বেঁধে রেখে আসে মাঠে। সঠিক কোন সাল সেটা মনে নেই তবে ঐ বছরে আমাদের এলাকায় একই পরিবারের ২/৩ জন মানুষ ও একসাথে পরপারে পাড়ি জমিয়েছিল।

যথারীতি আমার বাবা সকালে ঘাসে বেঁধে রেখে এসেছিল আমাদের গাভীটা। ওহ! বলতে ভুলে গিয়েছিলাম যে ঐটা তখন গর্ভবতী ও ছিল যে কারণে একটু বিশেষ যত্নই নেওয়া হতো। যাইহোক, আমি তখন নবম শ্রেণীতে পড়ি এবং বিকেলে আমার এক শিক্ষিকার বাড়িতে পড়তে যাই।

যদিও ঐদিন টিচার বললেন না গেলেও সমস্যা নেই তবুও আমি গিয়েছিলাম। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস; বিকেল হতে না হতেই দমকা হাওয়া এবং রীতিমতো ঝড় শুরু হয়েছিল। পরক্ষনেই মেঘের বিকট শব্দ অর্থাৎ বজ্রপাত। সে কি ভয়ংকর আওয়াজ!

IMG_20240617_202122.jpg

একটু কম মনে হয়েছিল এবং আমি বইখাতা রেখেই বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলাম। মনটা আপনা-আপনি অনেক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়েছিল কিন্তু কারণটা তখনও অজ্ঞাত। অর্ধ কিলোমিটার পথ আসতেই আমার সম্মুখে ভেঙে পড়েছিল একটি গাছের মোটা ডাল।

আমার সামনে ও পেছনে কোনো মানুষের চিন্হ মাত্র নেই। ভয়ে ভয়ে ওপরে তাকিয়ে দেখলাম আবারো কোনো ডাল ভেঙে পড়বে কি না। এটা করতে করতেই আবারো মেঘের বিকট শব্দে আমার অবস্থা বেহাল। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলাম।

হঠাৎ যেন একটা কিছুর পোড়া বিশ্রী গন্ধ নাকে ভেসে আসছিল। যাইহোক, খুব কষ্ট করেই গাছের ডালকে অতিক্রম করলাম। আবারো মেঘের গর্জন ও প্রচণ্ড ঝড়। হাতের ডান পাশে একটা বাড়ি আমি তড়িঘড়ি করে সেই বাড়িতে উঠলাম কিন্তু ডাকাডাকি করে কোনো মানুষের সাড়াশব্দই পেলাম না।

আবহাওয়া ঠিক হতেই আমি সেই ঘর ছেড়ে আবারো রাস্তায় বেরিয়েছিলাম। কয়েককদম হাঁটতেই আমার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে দেখা। তিনি বললেন একটি পরিবারের কথা সেখানে নাকি বজ্রপাতে একই পরিবারের একজন মৃত এবং বাকি দুজনের অবস্থা ও আশংকাজনক।

মরণের খবর জানে চরণে।অজানা

ততোক্ষণে ও আমার ভয় করেনি কিন্তু এটা শুনে আমার ভয়ে প্যান্ট ভেজার উপক্রম হয়েছিল। কারণ ঐ গাছের ডাল না পড়লে আমিও হয়তো পরপারে চলে যেতাম।

ভয়ে আমার শরীরে রীতিমতো জর এসেছিল কিন্তু বাড়িতে ফিরে দেখলাম মা গাভী আনতে যাবে। আমিও মায়ের সাথে গিয়েছিলাম। কিন্তু পৌঁছে যেটা দেখলাম তখন যেন পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছিল। আমাদের গাভীটা মুখ উঁচু করে দাঁড়িয়েই ছিল কিন্তু দেহে প্রাণ ছিল না।

cow-5675684_1280.jpgsource

লক্ষ্য করলেই দেখবেন যে যখন গরু/গাভীর কোনো কিছু প্রয়োজন হয় তখন মুখ উঁচু করেই ডাকাডাকি করে। কারণ ওরা তো আর আমাদের মতো কথা বলতে পারে না। হয়তো যখন ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছিল তখনই আমাদের কাউকে ডাকছিল।

সময় বড় নিষ্ঠুর, কার কখন সময় ফুরিয়ে যাবে আমরা কেউই বলতে পারি না। মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে, হয়তো দু'দিন আগে বা দু'দিন পরে এটাই পার্থক্য।

বজ্রপাতে গৃহপালিত প্রাণীর জন্য আমাদের করণীয়ঃ

flash-1455285_1280.jpgsource

➡️ গৃহপালিত পশু পালনের জন্য আবহাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যদি আকাশে প্রচণ্ড মেঘ দেখা যায়, তাহলে খোলা মাঠ থেকে গোয়ালে নিয়ে আসতে হবে।

➡️ বৃষ্টির সময় খোলা আকাশের নিচে গাভী বেঁধে রাখা একদমই সঠিক না।

➡️আমরা জানি যে বজ্রপাতের সময় মাটিতে শুয়ে পড়তে হয় কিন্তু অবলা প্রাণীরা তো আর জানেনা।

➡️আবার কোনো উঁচু গাছের নিচে ও রাখা যাবে না। কারণ বজ্রপাতের ভয়ংকর তাণ্ডবটিও এই উঁচু গাছের সাথেই ঘটে।

➡️গরুর গোয়ালের সাথে কোনো বিদ্যুৎ পরিবাহী তার রাখা ঠিক না।

👆👆
উপরোল্লেখিত ঘটনার পরে আমাদের আরো একটা গাভী ছিল যেটা আমার বাবা বিক্রি করেছিল। এরপরে আর কখনো গাভী পালন করা হয়নি। গৃহে পালিত প্রতিটি প্রাণীই পরিবারের সদস্যদের মতো। তাঁদের এভাবে অকালে চলে যাওয়াটা মেনে নেওয়া যায় না।

আমার আজকের লেখাটির কারণঃ-
এই বছর আবহাওয়ার যে অবস্থা ধরেই নিন যে বৃষ্টি হলেই বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই দূর্ঘটনা ঘটার আগেই সতর্ক থাকতে হবে।

ভাগ্য যদি বলেন এটা সঠিক না, কর্মের মাধ্যমেই ভাগ্যের চাকা ঘোরানো সম্ভব।

আসুন নিজের পরিবার ও গৃহপালিত প্রাণীর প্রতি আরো যত্নশীল হই।

আমার আজকের লেখাটি এখানেই সমাপ্ত করছি। সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

Sort:  
Loading...
 26 days ago 

আপনার আজকের পোস্টের টাইটেলটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। দূর্ঘটনা ঘটার ফলেই আমরা পরবর্তীতে সেসব কাজ থেকে বিরত থাকি। আপনার ছোট বেলার গাভীটার জন্য খুব মায়া লাগলো। ঝড় বৃষ্টির সময় এদের সাবধানে রাখতে হয়। সেই দূর্ঘটনা থেকে আপনি অনেক কিছু শিখেছেন এবং সেগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করলেন।ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর সচেতনতামূলক পোস্ট করার জন্য।

 25 days ago 

সময় বড় নিষ্ঠুর, কার কখন সময় ফুরিয়ে যাবে আমরা কেউই বলতে পারি না। মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে, হয়তো দু'দিন আগে বা দু'দিন পরে এটাই পার্থক্য।

আপনার এই লাইনটি আমার মনে গ্যাতে গিয়েছে। আসলে ঠিক কথা বলেছেন আপনি সময় বড় নিষ্ঠুর আর কখন সময় ফুরিয়ে যাবে আমরা কেউ বলতে পারি না।

যদি আমরা আগে থেকে বুঝতে পারতাম কে আমাদের মাঝ থেকে চলে যাবে তাহলে হয়তোবা আমরা তাকে খুবই সচেতন জায়গায় রেখে দিতাম। বা তাকে ধরে রাখার চেষ্টা করতাম। আমাদের জীবন থেকে কে কখন চলে যাচ্ছে আমরা বলতে পারি না।

যাই হোক আপনার সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ তবে এটা শুনে খুবই খারাপ লাগলো আপনাদের গাভিটি মারা গিয়েছিল কি আর করার সবকিছু মেনে নিতে হবে আমাদের।

 25 days ago 

আপনি ঠিকই বলেছেন আর সময় কখন ফুরিয়ে যাবে আমরা কেউ বলতে পারি না। মৃত্যুর স্বাদ সবাইকে গ্রহণ করতে হবে। হয়তো কেউ আগে কিংবা পরে। আপনার লেখা এই কথাটি একদম ঠিক। আমিও তাই বিশ্বাস করি। যখন আমাদের ছেড়ে কেউ চলে যায়। তখন আমরা ভাবি যে তার সাথে যদি খারাপ ব্যবহার করে থাকি। ওটা না করলেও পারতাম। কিন্তু আগে ভাবি না। আমরা বেশিরভাগ মানুষ বেঁচে থাকতে কাউকে কিছুই দিতে পারি না। কিন্তু কিন্তু মানুষ মারা যাবার পর কত নিয়ম পালি। কত কিছুই না করে থাকি। আপনার এই সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 22 days ago 

আপনার টাইটেলটা সর্বপ্রথম বলবো অনেক সুন্দর হয়েছে। আসলেই প্রতিটি দুর্ঘটনা আমাদের জীবনের জন্য নতুন কিছুর শিক্ষা। সেই সাথে আমি আরো একটু বলবো জীবনের যে কাজগুলো ভুল করা হয়, সেগুলো থেকেও শিক্ষা গ্রহণ করা যায়।
আপনি ঠিকই বলেছেন আমাদের প্রত্যেককে এই পৃথিবী থেকে একদিন চলে যেতে হবে। অর্থাৎ আমাদের সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আপনার এই কথাটির সাথে আমি একদম সহমত।

সুন্দর একটি শিক্ষনীয় পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 19 days ago 

আপনার লেখাপড়ার পর সত্যিই বেশ খারাপ লাগলো। একদমই ঠিক বলেছেন সময় বড়ই নিষ্ঠুর কখন আমাদের সাথে কি হয়ে যায়, আমরা সেটা কল্পনাও করতে পারি না। কিন্তু আপনাদের গাভী হারিয়ে আপনারা অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছেন। বিশেষ করে আপনার বাবা। এর পর থেকে আপনার বাবার গাড়ি পালন করেনি।

ঝড় বৃষ্টির সময় গাভী পালন করলে আমাদের কি কি করণীয়। সে বিষয়টা আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আসলে আমাদের সময় কখন ফুরিয়ে যাবে আমরা জানি না। হয়তোবা সেটা ঝড় বৃষ্টির সময় হতে পারে, অথবা যে কোন সময়। দুদিন আগে কিংবা দুইদিন পরে সবাইকে পৃথিবী ছেড়ে যেতে হবে। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা ঘটনা আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য। যেটা সত্যিই অনেক বেশি দুঃখজনক। ভালো থাকবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 58679.35
ETH 3155.04
USDT 1.00
SBD 2.44