একজন নির্যাতিত নারীর সফলতার ইতিহাস
স্বাগতম সকলকে আমার আজকের একজন নারীর সফলতার বাস্তব কাহিনীতে
হ্যালো বন্ধুরা,
আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো সমাজে বসবাস করি। এবং বিশেষ করে দেখা যায়, আমার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীরা পরাধীন। সরকারি হিসেবে যতই লেখা থাকুক যে নারী-পুরুষ সমান, কিন্তু বাস্তব চিত্রে আমরা এরকমটা দেখতে পাই না। যাইহোক আমার আজকের যে গল্পটা আপনাদের সাথে তুলে ধরবো এটা আসলে কোন কল্পিত গল্প নয় বরং বাস্তবচিত্র বাংলার নারী সমাজের।
এবং আমি প্রথমেই চরিত্রগুলোর নাম উল্লেখ করে নিচ্ছি এবং এটা করলে আমার বর্ণনা করতেও সুবিধা হবে আপনাদেরও বুঝতে সুবিধা হবে।
পিতা: করিম শেখ
মাতা: জান্নাত বেগম
কন্যা: মিতু
গ্রাম বাংলার মধ্যবিত্ত একটি পরিবারে ঘটে যাওয়া ঘটনা। গ্রাম বাংলার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের এই দম্পতির বিবাহের দুই বছরের শেষের দিকে তাদের ঘরে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলো।
এ সন্তানটি ছিল তাদের প্রথম সন্তান। করিম শেখ মনে মনে বেশ ক্ষুব্ধ কারণ তিনি ভেবেছিলেন যে তাদের একটি পুত্র সন্তান দরকার। কারণ বৃদ্ধ বয়সে পুত্র সন্তান তাদের বাবা-মায়ের দেখাশোনা করবে। সমাজে নারীরা অবলা। তাই মায়ের কাছে তার সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে সবাই সমান।
কোন মা যদি ছেলে সন্তান প্রসব করে তাহলে সেই সন্তান এবং মায়ের যত্নের কোন ত্রুটি হয় না। অন্যদিকে কোন মা কন্যা সন্তান প্রসব করলে সেই সন্তান আর মায়ের যত্নের ত্রুটি দেখা যায়। জান্নাত বেগমের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটলো না।
জান্নাত বেগমের মা এসেছেন এবং তার কন্যা জান্নাত বেগমের দেখাশোনা করেছিলেন। এবং কিছুদিন পর জান্নাত বেগম কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেন। এবং ধীরে ধীরে ছোট শিশু বড় হতে লাগলো।
এভাবে দীর্ঘ পাঁচ বছর অতিবাহিত হল। মিতুর বয়স ৬ বছরে পড়ল। মিতুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে চাইলেন তার মা জান্নাত বেগম। কিন্তু বাবা করিম শেখ ততোটা গুরুত্ব দিলেন না। কি আর করা জান্নাত বেগম অনেক কষ্ট করে তার একমাত্র কন্যা মিতুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করালেন।
এভাবে চলতে থাকলো এবং মিতু পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হল। পঞ্চম শ্রেণীতে মিতু খুব ভালো পরীক্ষা দিল এবং ফলাফল খুব ভালো হলো। মিতু পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পেল এবং উপজেলা প্রথম হলো।
এই ভালো ফলাফলের জন্য করিম শেখকে তাদের গ্রামের স্থানীয় বাজারে ডেকে সবাই তার কন্যা মিতুর প্রশংসা করতে লাগলো। তখন করিম শেখ কিছুটা গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারল যে তার মেয়ে সন্তান তার ভবিষ্যৎ হতে পারে।
মিতু প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়ের ফলাফল ভালো করতে ছিল এবং তার বাবা ও তার সঙ্গে এবার তার মিলিয়ে চলছে।। কিন্তু করিম শেখ যেহেতু মধ্যবিত্ত পরিবারের এবং দিনমজুর তাই লেখাপড়ার খরচ বহন করা তার জন্য অনেকটা কষ্টসাধ্য। অন্যদিকে মিতু বৃত্তিপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে সরকারিভাবে সহযোগিতা পাচ্ছে যার জন্য কোন সমস্যা হচ্ছে না।
মিতু এখন দশম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে। তখন করিম শেখের আত্মীয়-স্বজন এবং বাড়ির পাশের লোকজন তাকে উসকাচ্ছে বিভিন্নভাবে যে করিম শেখ যেন তার মেয়েকে বিবাহ দিয়ে দেন। মেয়েদের এত পড়ার কি দরকার।
করিম শেখের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে করিম শেখ ও কিছুটা সহমত পোষণ করলেন এবং কন্যাকে বিবাহ দিলেন একজন দিনমজুর ছেলের সঙ্গে। এরপর মিতুর দম্পতি জীবন কিছুদিন চলতে লাগল। তবে যে বয়সে তার বিবাহ হয়েছে এটা আসলে বাল্যবিবাহের মধ্যে পড়ে। তাই দেখা যায় মিতুর জন্য তার সাংসারিক জীবন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে উঠতেছিল না।
স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনদের দ্বারা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছিল। মিতুর স্বামীর বয়সও বেশি ছিল না। এবং এই মিতুর স্বামী ছিল একজন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি। মাঝেমধ্যেই অনেক রাত করে বাড়িতে ফিরত এবং নেশা করে আসতো। মিতুকে মারধর করত। এবং মিতুর ওপর অনেক অত্যাচার করতো আর বলতো যে মিতু যেন তার বাবার কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে আসে যৌতুক হিসেবে।
এভাবে শারীরিকভাবে নির্যাতিত হতে হতে মিতু একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ল। করিম শেখ মিতুকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসলেন। মিতু কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলো। এবং মিতু তার বাবা করিম শেখ কে বলল যে সে আবার পড়াশোনা করতে চায় এবং সে আর এই মুহূর্তে স্বামীর পরিবারে যেতে চায়না।
করিম শেখের একমাত্র কন্যা সেহেতু তার কষ্ট লাগবে তার মেয়ে যদি কষ্ট পায়।
আবার মিতু নবম শ্রেণীতে ভর্তি হল পড়াশোনা শুরু করলো। কিন্তু তাকে সমাজের নানা লোকজন নানা কথা শুনাতো এটার জন্য।
একদিন মিতু তার বাবা মায়ের সাথে তার এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেল। এবং কিছু দুষ্কৃতিকারী এটা লক্ষ্য করলো। কারণ মিতু তার স্বামীর ঘর ছেড়ে আসার পর কিছু ছেলে তাকে খারাপ প্রস্তাব দিয়েছে কিন্তু মিতু সেগুলো গ্রাহ্য করেনি।
এবং মিতুর বাবা-মা যে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল তারা মিতুকে অনেক স্নেহ করে। তাই তারা বলল মিতুকে থাকতে তাদের বাড়িতে। মিতুর বাবা-মা আমি তোকে রেখে বাড়িতে চলে আসলেন। এবং মিতুর মা করিম শেখ কে বলল যে তার মোটেও ভালো লাগছে না মিতুকে ওই আত্মীয়দের বাড়িতে রেখে আসা।
এবং রাত তখন নয় টা বাজে। মিতুর ও ভালো লাগছে না এখানে থাকতে। তাই মিতু ওনাদেরকে বললেন যে তারা যেন মিতুকে তার বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসে এখনই। এবং ৯:৩০ এর দিকে একটা ভ্যান গাড়ি ঠিক করে দেয়া হলো মিতুকে তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
এবং ওই রাতেই ঘটলো চরম দুর্ঘটনা। সেই ছেলেপেলে গুলো ওত পেতে বসেছিল কখন জানি মিতুকে তাদের আয়ত্তে নিতে পারে। আর সুযোগ পেয়ে দেরি করলো না তারা মিতুকে ছিনতাই করার মত নিয়ে গেল। এবং তাকে সারারাত যৌন ও শারীরিক নির্যাতন করলো।
এরপর মৃতপ্রায় অবস্থা মিতুকে তার বাবা-মা হাসপাতালে ভর্তি করলো। আইনের সহায়তা নিলো মিতুর বাবা-মা। এবং আইনি সহায়তা তারা যথেষ্ট পেল। তারপর তৎকালীন অর্থাৎ সেই সময়কার যে রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করেছিল সেই পক্ষ থেকেও তারা অনেক সুযোগ-সুবিধা পেল। স্থানীয় পর্যায়ের সরকার প্রতিনিধি মিতুর লেখাপড়ার দায়-দায়িত্ব নিয়ে নিল।
তারপর মিতু তার লেখাপড়া সুন্দরভাবে চালিয়ে যেতে লাগলো। এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পন্ন হওয়ার পর, মিতু বিসিএস এ দরখাস্ত করলো। সেখানে উত্তীর্ণ হল এবং নন ক্যাডারে চাকরি গ্রহণ করলো। এবং এটার পর মিতু বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলো অন্য একজন সরকারি কর্মজীবী ছেলের সাথে।
এবং ১৫ দিন পূর্বে আমি আমার পাশের গ্রামে একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম তখন রাত দশটা বাজে। মিতুর সঙ্গে আমার সাথে দেখা হল অনেক কথা হল। আমি আগে থেকে এই মিতু সম্পর্কে জানতাম এবং তিনি আমার থেকে বয়সে অনেক বড়। এবং দেখলাম ঐদিন তার সঙ্গে তার স্বামী ছিল না কিন্তু দুই তিন জন লোক ছিল। ওই মানুষগুলো ছিল তার শুভাকাঙ্ক্ষী এবং তার বাড়িতে কর্মরত।
তাহলে দেখুন আপনারা আমি যে সমাজের চিত্রটি আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি কত নির্মম হতে পারে একটা মানুষের বা একটা মেয়ের জীবন। মেয়েটি কতটা পথ পার হওয়ার পরে এই সফলতা দেখতে পেরেছে। এবং কখনো তিনি এই দুরদিনে হাল ছাড়েননি।
আর একটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে যখন আমাদের কষ্টের দিনগুলো চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়, ঠিক তখনই আমরা হাল ছেড়ে দেই। কিন্তু নিজের প্রতিনিয়ত কাজের সাথে তাল মিলিয়ে দেখুন যে যখনই রাত বেশি গভীর হয় ঠিক ততটাই নিকটে থাকে কিন্তু ভোরের সূর্যের আলো।
এবং আজ আপনাদের সামনে যে কাহিনী বা গল্পটি তুলে ধরেছি আমি, সেটি কোন কল্পিত কাহিনী নয় আমি আগেই বলেছি। তবে যে নামগুলো উল্লেখ করেছি, এগুলো কল্পিত কারণ কারো অনুমতি ছাড়া তার নাম প্রকাশ করা উচিত না।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা,
আশা করি আপনাদের এই অনুপ্রেরণামূলক সংগ্রামী নারীর জীবন কাহিনীটি একটু হলেও উৎসাহিত করবে।
এবং যদি আমার এই লেখাটি আপনাদের ভালো লাগলে অবশ্যই মন্তব্য করতে ভুলবেন না।
কোন পরিবারের যদি প্রথম সন্তান মেয়ে হয় তাহলে সে অনেক ভাগ্য বাবা-মা। বরংচ বর্তমানে দুটি মেয়ে সন্তান হয় তাহলে মুখ সংকুচিত হয়ে যায় যেন সবার। সে বড় হতে লাগল এবং পড়ালেখা শেষ হলো খুবই ভালো রেজাল্ট নিয়ে।
এরপর পরিবার থেকে তাদেরকে বিয়ে দেওয়ার জন্য প্রেসার দিচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবার। বিয়ে দেওয়া হলো এক নেশাখোরের সাথে যার কারণে মৃত্যুর জীবন ধ্বংসের পথে চলে যায় তার ওপর অনেক অত্যাচার করে টাকা পয়সার জন্য। বর্তমান সমাজ আসলেই খুবই ভয়াবহ। স্বামীর কাছ থেকে সরে আসার পরে আর যেতে চায়না একপর্যায়ে আত্মীয়-স্বাস যার পরে সেখান থেকে ধর্ষণের শিকার হয় এবং পরবর্তীতে সরকারি অনুমোদনে লেখাপড়ার সুযোগ পায় এবং ভালো একটি পর্যায়ে যায়।
আসলে জীবন সংগ্রাম খুবই কঠিন বিশেষ করে নারী সমাজের। নারী সমাজের এমন জীবন সংগ্রামী বাস্তবমুখী কাহিনী নিয়ে আমাদের সাথে উপস্থাপন করেছেন। এখান থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি মেয়েদের কেউ সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে এবং ভালো পাত্র লিখে তার হাতে তুলে দিতে হবে। যৌতুক মুক্ত সমাজ গড়তে হবে।
আপনাকে ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আপনি অনেক বেশি মনোযোগের সাথে আমার লেখাটি অধ্যয়ন করেছেন। আপনার মূল্যায়ন মন্তব্যে সেই বিষয়টি বোঝা যাচ্ছে।
অসংখ্য ধন্যবাদ
আপনার মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করার জন্য।
"
Curated By - @deepak94
Curation Team - Team Newcomer ."
Thanks for rating my content.