দাদুর মৃত্যুর পর জ্ঞাতি-ভোজন অনুষ্ঠান।
Hello Everyone,
পাঠক বন্ধুগণ, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি আপনাদের আশীর্বাদ ও সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতে।
আমি আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলে এসেছি, আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এক চিরচারিত প্রথা। গতকাল এরকম একটি মূহূর্ত অতিবাহিত করেছি আমি।
আমাদের দক্ষিণ পাড়ার এক দাদু গত হয়েছেন প্রায় তেরো দিন হলো। আমাদের অঞ্চলে একটা রীতি আছে বাবা-মা গত হলে দশ/এগারো দিন নিরামিষ খাবার খেতে হয় সেই গোত্রের মানুষদের।
সন্তানেরা অন্যদের রান্না খেতে পারে না। কোনো মসলা ও খাবারে ব্যবহার করতে পারেন না। শুধুমাত্র একবার কারো সাথে কথা বলা ছাড়া ভাত রান্না করে খেতে পারেন। ভাতের সাথে দুধ ও কলা, শুধুমাত্র এটাই খেতে পারে।
দাদুর সন্তানেরা চাকরিতে বহাল রয়েছেন। তাই রমজান মাসে ছুটিতে বেশ সুবিধা ও হয়েছে বলা যায়।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা শেষ করার পর মা বললো, আমি যেন একটু ঐ বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। আমার আবার এসব কাজে অংশগ্রহণের একটা প্রবণতা রয়েছে পূর্ব থেকে।
কড়া রোদ্দুর উপেক্ষা করে পৌঁছালাম সেই দাদুর বাড়িতে। পৌঁছে দেখলাম জ্ঞাতি-ভোজনের পাশাপাশি, দাদুর আত্মার শান্তির জন্য "রামায়ণ" গানের আয়োজন করা হয়েছে।
এরপর গেলাম যেখানে রান্না করা হচ্ছে। সেখানে পৌঁছে দেখি অনেক মানুষের সমাগম। আত্নীয়-স্বজনসহ গ্রামের অনেক মানুষ।
তবে সৌভাগ্যের বিষয় সেখানে গিয়ে গরম গরম এক কাপ রং চা ভাগে পেলাম। এই কড়া গরমের মধ্যে চা নেওয়ার মজাটাই অন্যরকম।
গরম চায়ের কাপ হাতে নিয়ে করোলা, আলু ও কাঁচামরিচ যেখানে রান্নার জন্য প্রস্তুতি চলছে, সেখানে গেলাম। তবে বৌদি ও কাকিমাদের আবদার, তাদেরকে চা দিতে হবে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে তা প্রস্তুত করা হয়েছিল, রামায়ণ পরিবেশন করা লোকেদের জন্য। এটা আমি জানতাম যে তাদের জন্য চা আবারো তৈরি করা হবে। কিন্তু নারীরা তারা কষ্ট করছে তাদেরকে কেউ হয়তো না ও দিতে পারে।
বলতে পারেন এক প্রকার চাপড় কাপ গুলো গায়েব করে ফেললাম। আমার হিসাব রয়েছে তা আগে শেষ করুক, তারপর যা হবে হোক।
যেহেতু ছয়শত মানুষের খাবারের প্রস্তুতি তাই অনেক খাবার রান্না করতে হবে। এ রান্না ঘরে করা সম্ভব না। তাই আলাদা করে জায়গা করা হয়েছে জ্ঞাতি-ভোজনের খাবার তৈরির জন্য।
ছাউনী হিসাবে গোলপাতা ব্যবহ্রত হয়েছে। যার জন্য গরম একটু কম হলেও আগুনের তাপ তো রয়েছেই। বেশিক্ষন আর দাঁড়াতে পারলাম না এখানে।
তারপর বাড়িতে ফিরে আসলাম স্নান সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিলাম। এরপর ওর বাড়িতে গেলাম যেহেতু নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে হবে। বেশ ভালই খাওয়া-দাওয়া হলো।
কোন পরিবারের বয়স্ক মানুষ যদি ইহলোক ত্যাগ করেন, তাহলে তার সন্তানেরা এভাবে মানুষদের জন্য খাবারের আয়োজন করে। এবং মানুষদের খাওয়ানোর পূর্বে তারা আমিষ খাবার পর্যন্ত খায় না। আসলে আমি শুধুমাত্র আমাদের এদিকের একটি রীতি বা প্রচলিত প্রথা আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম।
আমার আজকের লেখাটি আমি এখানেই সমাপ্ত করছি। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।