"আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে"
![]() |
---|
Hello Everyone,
বন্ধুরা,
কেমন আছেন সবাই? বাংলা সাহিত্যের এক চিরচেনা লাইন নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আমি। যদিও আমার বাংলা সাহিত্যে দক্ষতা নেই বললেই চলে। তবে যেহেতু আমার মায়ের ভাষা বাংলা, তাই বাংলার প্রতি আকর্ষন'টা বরাবরই একটু বেশি।
বাংলা সাহিত্যের প্রথম নাগরিক কবি, তিনি ছিলেন মঙ্গল ধারার শেষ কবি। তারই বিখ্যাত কাব্যের একটি লাইনকে আমি আমার শীর্ষক নির্বাচন করেছি। তাহলে চলুন বন্ধুরা আমরা এখন মূল বিষয়ের দিকে চলে যাই।
কেন এই লাইনটি'কে শীর্ষক হিসেবে নির্বাচিত করেছেন?
![]() |
---|
পৃথিবীতে বাংলা ভাষা বা সাহিত্য আগে আসেনি। বাংলার আগে এসেছে ইংরেজি। তবে বাংলা নিয়ে যখন সমালোচনা বা লেখালেখি শুরু হয়, সেই সময়কার মধ্যযুগের কাব্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ লাইন এটি।
বাংলা সাহিত্যের কথা বলতে গেলে এই সাহিত্য গুলো বাদ দিয়ে বলা যায় না। কারণ এখানেই বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের শুরু ও উত্থান হয়েছে আজকের বাংলা সাহিত্যের।
সেরকম অন্নদামঙ্গল খাবারের গুরুত্বপূর্ণ লাইন এই শীর্ষক। শীর্ষকটা দেখা বা শোনা মাত্রই "অন্নদামঙ্গল" কাব্য মাথায় চলে আসে।
এটি আসলে বাংলার কোন সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত?
কাব্য সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত।
মঙ্গল কাব্যের ধারায় রচিত একটি কাব্য "অন্নদামঙ্গল"। আর এই বিখ্যাত কবি ছিলেন মধ্য ও আধুনিক যুগসন্ধিক্ষনের কবি। তার কাব্যে উপস্থিতি রয়েছে মধ্যযুগের এবং আধুনিক যুগের।
![]() |
---|
অন্নদামঙ্গল কাব্যের সারাংশ আলোচনা?
কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নির্দেশে বিখ্যাত কাব্য "অন্নদামঙ্গল" রচনা করেছিলেন। আসলে পঞ্চদশ শতাব্দী হতে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের যে ধারা বহমান ছিল, তার অন্যতম ধারা এই মঙ্গল কাব্যের ধারা।
এই কাব্য সম্পর্কে অনেক বড় বড় সাহিত্যিক তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন। বিখ্যাত সাহিত্যিক "দীনেশ চন্দ্র সেন" বলেছেন যে, অন্নদামঙ্গল হলো বাংলা ভাষার তাজমহল।
এই অন্নদাঙ্গল কাব্য তিনটি খন্ডে বিভক্ত।
১ম খন্ডে, অন্নদার মাহাত্ম্য লক্ষণীয়। আলীবর্দী খাঁ-র শাসন,বর্গীর হামলায় বিপন্ন বাংলা। কৃষ্ণচন্দ্রের কারারুদ্ধ হওয়ার কথা ও অন্নদার মাহাত্ম্য লেখার আদেশ দিলেন কবি ভারতচন্দ্র'কে।
তারপর শিব-গৌরীর গার্হস্থ্য জীবনের প্রসঙ্গ। শীবের কাশীধাম, অন্নদার মন্দির নির্মাণ ও দেবীর মাহাত্ম্য প্রচার।
২য় খন্ড,।এখানে দেখা যায় রাজা মানসিংহ বাংলায় এসেছেন। সুদূর বর্ধমানে গেছেন, সেখানে "মালীনির" মুখে "বিদ্যার" কথা শুনেছে। বিদ্যার অপরূপ রূপ ও গুনের কথা শুনে প্রেমে আসক্ত হয়েছিলেন।
মা কালীর উপাসনা এবং ফল লাভ। মানসিংহের বর্ধমান থেকে প্রস্থান।
৩য় খন্ড,।মানসিংহ ও অন্নদার মূল কথা। মানসিংহ ও প্রতাপাদিত্যের যুদ্ধ, ভবানন্দের মাটিতে আগমন। তাছাড়া এখানে আছে অন্নপূর্ণার পূজা।
আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে কি এমন রয়েছে এই অন্নদামঙ্গল কাব্যে, যা নিয়ে এতো সমালোচনা ও গুরুত্ব। যদিও এই অন্নদামঙ্গল কাব্য মঙ্গল কাব্যের ধারায় রচিত কিন্তু যথেষ্ট ভিন্নতাও রয়েছে।
অন্নদামঙ্গল কাব্যে মঙ্গল কাব্যের সকল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অন্নপূর্ণার মাহাত্ম্য প্রচার অন্যান্য কাব্যের মতো।
অন্যান্য মঙ্গল কাব্যের সময় ছিল ধর্মীয় বিশ্বাস। অন্নদামঙ্গল কাব্যের সময় ছিল ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সাধারণ মানুষের হাহাকার ও ধনীদের অশ্লীল আচরণ। কবি "ভারতচন্দ্র রায় গুনাকর" রাজসভার এক উসৃঙ্খল পরিবেশে বসে রচনা করেন এই বিখ্যাত কাব্য "অন্নদামঙ্গল"।
যতোটা মনোনিবেশ করা দরকার ছিল, বলতে পারে তিনি তা করতে পারেননি। তাই এই কাব্যে দেব-দেবীর প্রতি রয়েছে সংশয়, অশ্রদ্ধা ইত্যাদি।
অন্নদামঙ্গল কাব্যের উল্লেখযোগ্য চরিত্র "ঈশ্বরী পাটুনী"। তিনি দেবী অন্নপূর্ণার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। দেবীর পদস্পর্শে "ঈশ্বরী পাটুনীর" কাঠের নৌকা স্বর্ণে পরিণত হয়েছিল।
দেবী তাকে সুযোগ দিয়েছিলেন "বর" চাওয়ার জন্য । কিন্তু "ঈশ্বরী পাটুনী" সব কিছু ছেড়ে বলেছিলেন, "আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে"।
একটি যুগের মনোভাব ও পরিস্থিতিকে তিনি সামান্য একটি লাইনে উপস্থাপন করেছিলেন। ঈশ্বরী পাটুনীর চরিত্রের মাধ্যমে "ভারত চন্দ্র রায় গুনাকর" বাঙ্গালির সন্তান বা"বাৎসল্যপ্রিয়তা" ফুটিয়ে তুলেছেন।
আপনার অভিমত এই কাব্য সম্পর্কে?
"আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।" আমি আসলে এই লাইনের ভক্ত, বলতে পারেন। সব মিলিয়ে "অন্নদামঙ্গল" আমার কাছে বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য রত্ন।
আমার আজকের লেখাটি এখানেই শেষ করছি। আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় থাকবো।
TEAM 3
Congratulations! This post has been upvoted through steemcurator05. We support quality posts , good comments anywhere and any tags.