বিভীষিকাময় সকাল
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করি আপনারা সকলে ভালো আছেন ,সুস্থ আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজকে আমি আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া একটি বিভীষিকাময় সকালের অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই।
দিনটা ছিল ৭ই এপ্রিল ২০২৪। প্রতিদিনের ন্যায় সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে আমি আমার আনুষঙ্গিক কাজকর্ম সেরে বই নিয়ে পড়াশোনা করছিলাম। আমার বৌদি ও সকালবেলায় স্নান সেরে প্রতিদিনের মতোই রান্না বসানোর আয়োজন করছিল। বৌদি আমায় জিজ্ঞাসা করেছিল ---
"আজকে কি রান্না করবো বুনু? কালকে তো আমিষ খেলাম।"
আমি বলেছিলাম, "অনেকদিন মুগের ডাল রান্না হয়নি, আজ তাহলে জমিয়ে মুগের ডাল রান্না করো।"
বৌদি ও কথামতো রান্নার সমস্ত জোগাড় করতে লাগলো। আর আমাদের বাড়ির ছোট্ট সদস্যটি গুটিগুটি পায়ে এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করছিল। কখনো মায়ের পাশে এসে দেখছিল মা কি করছে আবার কখনো আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করছিল--- "পিন তুমি কি করছো?"
-------আমি বই পড়ছি, তুমি পড়বা?
-------ও পিন আমি তো খেলছি। এখন তো খেলতে হয় ।আমি সন্ধ্যেবেলায় মায়ের কাছে পড়বো। তুমি এখন একাই পড়ো।
--------আচ্ছা, দেখেছো বৌদি কি সুন্দর গুছিয়ে কথা বলা শিখেছে (মুচকি হেসে)।
এই ভাবেই দিব্যি সকাল টা কাটছিল। বৌদির সবজি কাটা হয়ে গিয়েছিল। তারপর গ্যাসের একটি ওভেনে ভাত ও আরেকটি ওভেনে প্রেসার কুকারে মুগ ডাল সিদ্ধ বসিয়ে দিয়েছিল। তারপর কিছু সময় পর বৌদির ফোনটা বেজে ওঠে। বৌদির ফোন বৌদিদের ঘরে ছিল তাই কল রিসিভ করার জন্য ফোনটা আনতে যায়। আমার আড়াই বছরের ছোট্ট ভাইপো রান্নার জায়গার আশেপাশেই ঘুরঘুর করছিল তখনো। আমাদের যেহেতু বাড়ির জায়গাটি খুবই অল্প তাই রান্নার জায়গাটি শোবার ঘর সংলগ্নই ছিল। আমি তখনও ঘরে বসে এক মনে আমার পড়া চালিয়ে যাচ্ছিলাম। বৌদি ঘর থেকে চিৎকার করে বলছিল-----
"বুনু প্রেসারের সিটি এখনো পড়ছে না কেন? সিটি পড়লেই নামিয়ে দিবি ,অনেকক্ষণ তো হল।"
সত্যিই ,আমিও সেটাই ভাবছিলাম যে আজকে ডালটা সিদ্ধ হতে একটু বেশি সময় লাগছে। তারপর আবার নিজের কাজে লেগে গেলাম। এইদিকে আমার ছোট্ট ভাইপো বল নিয়ে খেলছিল। বলটা গেটের দিকে গড়িয়ে চলে যাওয়ায় সেও বলের পিছন পিছন গেটের দিকে সরে যায়।
তারপরেই ঘটে সেই বিভীষিকাময় ঘটনা। প্রেসার কুকারে সিটি পড়ার পরিবর্তে একটা অদ্ভুত সো.... সো.... আওয়াজ হতে থাকে। এই আওয়াজটার সাথে আমি একেবারেই পরিচিত নই। কেমন যেন অদ্ভুত একটা আওয়াজ ছিল। আমি আওয়াজটা শোনা মাত্রই কেন জানি না মনে হল কিছু একটা ঘটতে চলেছে। আশঙ্কা করেই আমি চিৎকার করে আমার ভাইপোকে বললাম ----
"গেটের কাছেই থাকো। গ্যাসের কাছে এসো না।"
সেই সাথে নিজেও ঘরের এক কোণে গুটি ছুটি হয়ে বসে রইলাম। ঠিক সেই সময়ই একটা বিভৎস জোরে আওয়াজ হলো। তারপর কিছুক্ষণ জানিনা কি হয়েছে। আওয়াজটা এতটাই প্রখর ছিল যে বোম ফাটার আওয়াজ এর থেকে কোন অংশে কম ছিল না। ছোট বাচ্চাটা কেঁদে উঠলো। আমি সম্বিত ফিরে পেয়ে বাইরে বেরিয়ে যা দেখলাম তাতে সত্যিই অবাক হতে হয়।
এতদিন শুধু শুনেছিলাম লোকের বাড়িতে প্রেসার কুকার বার্স্ট করেছে। আজ নিজের বাড়িতে হলো তাই এই বিষয়টা কতটা সাংঘাতিক সেটা উপলব্ধি করতে পারলাম। প্রেসার কুকারের ডাল সিলিং এর চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে। প্রেসার কুকারটা দুমড়ে গেছে। প্রেসার কুকারের ঢাকনি, গ্যাস ওভেন সমস্ত কিছু এতটা দুমড়ে মুচড়ে গেছে কেউ নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবে না। তার সাথে গ্যাস ওভেনের একটা লোহার দণ্ড যেখানে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে গ্যাস যায় সেটি পর্যন্ত পুরোপুরি ভেঙে গেছে।
বাচ্চাটাকে কোনক্রমে বুকে জড়িয়ে কান্না থামালাম। ইতিমধ্যে বৌদি ও ঘর থেকে ছুটে এসেছে আওয়াজ শুনে। জিনিস ক্ষতির থেকেও আমাদের কারোর যে কোনরকম কোনো ক্ষতি হয়নি সেটা বুঝে আমরা ভগবানকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম। ছোট বাচ্চাটা ওইখানে ঘোরাফেরা করছিল। ঠাকুর না থাকলে না জানি কি হয়ে যেত সেই দিন।
আগের দিন রাতেই প্রেসার কুকারে সিদ্ধ ভাত করা হয়েছিল। তাই হয়তো খাবারের কোন অংশ সেফটি ভাল্ভে আটকে গিয়েছিল। আর সেখান থেকেই এই দুর্ঘটনা।
তাই সকলকে অনুরোধ করব আপনারা প্রেসার কুকারে রান্না করলে অবশ্যই পরিমাণ মতো জল দেবেন আর তার সাথে সেফটি ভাল্বটা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেবেন যাতে কোনো রকম খাবারের টুকরো সেখানে আটকে না থাকে। বিপদ কখনো বলে কয়ে আসেনা তাই আমাদের নিজেদেরকেই সাবধান থাকতে হবে।
ধন্যবাদ।
আপনাদের মত প্রেসার কুকারে বাস্ট করার ঘটনা আমার সাথে কিছুদিন আগেই ঘটেছে। এরকম ঘটনা নিজেদের সাথে না হলে একদমই বোঝা যায় না। আমার সাথে যখন ঘটেছিল তখন আমিও খুব অবাক হয়েছিলাম। আমাদের তো বাড়ির আশেপাশের লোকজন ও অবাক হয়ে গিয়েছিল। দুর্ঘটনা মানুষের জীবনে বলে করে আসে না ।যাই হোক সাবধানে রান্না করবেন।
হ্যাঁ, আজকাল তাড়াহুড়ো তে আমাদের অসাবধানতার জন্যই এইরকম দুর্ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। আপনিও সাবধানতা অবলম্বন করবেন।