সুখের স্মৃতি – মা-বাবার সাথে দীঘা ভ্রমন

in Incredible India7 months ago
1.jpg

কোন সালে আমি বাবা আর মার সাথে দীঘা বেড়াতে গিয়েছিলাম সেটা এখন আর মনে নেই। তবে দীঘায় তোলা ছবিগুলি আমি স্ক্যান করেছিলাম ২০০৮ সালে। ছবিগুলি সব তোলা হয়েছে আমার প্রথম ক্যামেরা কোডাক কেবি ১০ দিয়ে। খুব অস্পষ্ট ছবি উঠতো ওই ক্যামেরায়। এখন এই ক্যামেরা এবং তার কোম্পানি দুটোই উঠে গেছে।

তখন বাজারে মোবাইল ফোন সবে বিক্রি হতে শুরু করেছে আর ক্যামেরা মোবাইলের অস্বাভাবিক দাম। স্মার্টফোন তখনো আবিষ্কার হয়নি। সেই সময় আমার কাছে কোনো আনস্মার্ট ফোনও ছিল না। যাই হোক দীঘা ভ্রমণের কথায় আসা যাক, জানি যে স্মৃতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঙ্গ দেবে না তবু যতটা মনে পড়ে।

Picture 002.jpg

দীঘাতে গিয়েছিলাম আমি, বাবা, মা আর আমার পিসতুতো ভাই এই চারজন মিলে। হাওড়া থেকে দীঘাতে যাওয়ার ট্রেন তখনো চালু হয়নি। তাই এসপ্ল্যানেড থেকে সকাল সকাল দূরপাল্লার বাসে করে আমরা দীঘার উদ্দেশ্যে রওনা হই। আনুমানিক ৬ ঘণ্টার মতো সময় লেগেছিল দীঘায় পৌঁছতে। মাঝখানে একবার আধ ঘণ্টার মতো ব্রেক দেওয়া হয়েছিল ব্রেকফাস্ট করে নেবার জন্য।

Picture 006.jpg

দীঘায় পৌঁছতে পৌঁছতে আমাদের দুপুর হয়ে গিয়েছিল। ওল্ড দীঘায় সমুদ্রের কাছাকাছি একটা হোটেলে আমাদের জন্য দুটো রুম বুক করা ছিল। একটা রুম বাবা আর মায়ের জন্য এবং আরেকটা রুম আমার আর আমার পিসতুতো ভাইয়ের জন্য। হোটেলে চেক-ইন করে রুমে গিয়ে আমরা প্রথমে ফ্রেশ হয়ে নি, তারপর চারজনে মিলে গ্রাউন্ড ফ্লোরে রেস্টুরেন্টে গিয়ে লাঞ্চ করি। লাঞ্চের মেনু কি কি ছিল আজ আর মনে নেই তবে এটুকু মনে আছে যে ইলিশ মাছ ছিল।

Picture 004.jpg

লাঞ্চ হয়ে যাবার পর যে যার মত রুমে ফিরে যাই। ঘন্টাখানেক বিশ্রাম নেওয়ার পর বিকেল বেলায় সকলে মিলে বেরিয়ে পড়ি। সমুদ্রের পাড়ে সবাই চা খাই এবং অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করি। সন্ধ্যে হয়ে যাবার পর বাবা ও মা হোটেলে ফিরে যায়। আমি ও ভাই হুইস্কি এবং দু তিন রকমের মাছ ভাজা কিনে হোটেল রুমে ফিরে আসি।

Picture 005.jpg

রাত দশটা নাগাদ আমরা চারজনে নিচে গিয়ে ডিনার করে আসি। ডিনারে আমি রুটি খেয়েছিলাম কিন্তু রুটির সাথে কি খেয়েছিলাম সেটা আর মনে নেই। ডিনার হয়ে যাবার পর আবার সমুদ্রের তীরে যাই। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর লোকাল পুলিশ এসে বলে যে এবার চলে যেতে হবে। তাই সকলে মিলে আবার হোটেলে ফিরে আসি।

Picture 018.jpg

পরের দিন সকালে আমরা সবাই সমুদ্রে স্নান করে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে নিউ দীঘাতে যাই। ওখানে মা একটা শঙ্খ আর একজোড়া মুক্তোর কানের দুল কেনে। নিউ দীঘাতেই আমরা লাঞ্চ করে নিই। তারপর নিজেদের হোটেলে ফিরে আসি।

Picture 015.jpg

বিকেল বেলায় আমরা সবাই মিলে দীঘার সমুদ্রতীর লাগোয়া ঝাউবনে যাই। বেশ কিছুক্ষণ সময় বাইরে কাটিয়ে সন্ধ্যে হয়ে যাবার পর আমরা হোটেলে ফিরে আসি। রাত দশটা বাজলে আমরা চারজন মিলে ডিনার করে নিই।

Picture.jpg

দীঘায় থাকার শেষ দিন আমরা খুব ভোরে উঠে মোহনাতে যাই। ওখানে সি-বিচে অনেক ছোট ছোট লাল কাঁকড়া দেখতে পাই। পায়ের শব্দ শুনলেই ওরা সব বালির মধ্যে লুকিয়ে পড়ছিল। মোহনা থেকে ফেরার সময় বাবা ইলিশ শুঁটকি মাছ কেনে। ওল্ড দীঘায় ফিরে মা আরো কিছু কেনাকাটা করে আত্মীয়-স্বজনের জন্য। তারপর হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে যে যার লাগেজ গুছিয়ে নিয়ে হোটেল থেকে চেক-আউট করি।

ফেরার সময় বাস একটা ধাবার সামনে থামে ৩০-৪০ মিনিটের জন্য এবং সেখানে আমরা সকলে লাঞ্চ করে নিই। বাড়ী ফিরতে ফিরতে আমাদের সন্ধ্যে হয়ে যায়।

তো বন্ধুরা এই ছিল আমার দীঘা ভ্রমণের গল্প। যতটুকু মনে পড়েছে তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।

The official accounts of the Incredible India community

Discord | Twitter | Telegram | Instagram

Sort:  
Loading...
 7 months ago 

কিছু কিছু স্মৃতি আমাদের সারাজীবন তাড়া করে। আপনার পোস্টটি পড়ে খুব আবেগপ্রবন হয়ে পড়লাম। ভালো থাকবেন ভাই।

বহু বছর আগে আমি মা-বাবার সাথে দীঘায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। এই জন্মে সেই সৌভাগ্য আর আমার হবে না। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোষ্ট পড়ে মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।

 7 months ago 

দুঃখ করবেন না ভাই।নতুন করে জীবন সাজান। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

TEAM BURN

Your post has been successfully curated by @msharif at 35%.

Thanks for setting your post to 25% for @null.
We invite you to continue publishing quality content. In this way you could have the option of being selected in the weekly Top of our curation team.

Team Burn (1).png

Burning STEEM by sending it to the @null account helps reduce the supply of STEEM and so increase its price.

@msharif Thanks for your support.

Hello there! 👋🏼

There's a new travel community that is active now through this link:

https://steemit.com/trending/hive-188972

Suscribe and feel free to share your travel adventures there moreover of tips, food, nature and more.🚌

~ Join the Discord server + Telegram group and have a happy day.👍🏼

Blue Minimalist World Environment Day Banner.gif

 7 months ago 

অনেক আগের ফটোগ্রাফি আপনি আমাদের সাথে উপস্থাপন করেছেন। যেখানে আপনার বাবা-মা দুইজন উপস্থিত ছিল। আসলে বাবা মায়ের সাথে এই আনন্দঘন মুহূর্তগুলো অনেক বেশি সুন্দর হয়ে থাকে। কিন্তু এই মুহূর্তগুলো পার হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি। আপনার মাকে আপনি হারিয়ে ফেলেছেন বাবাকেও হারিয়ে ফেলেছেন। আল্লাহতালা উনাদের দুইজনের আত্মার শান্তি কামনা করুক, ধন্যবাদ।

 7 months ago 

বাবা মায়ের সাথে দীঘা ভ্রমণের অতীত স্মৃতি গুলো আমাদের সাথে উপস্থাপন এর জন্যে প্রথমেই ধন্যবাদ জানি।

ভ্রমণ মানুষের মনকে বড় করে। মানসিক শান্তি যোগায়। খুব কম মানুষই আছে যারা বাবা মায়ের সাথে এমন মুহূর্ত কাটিয়েছে। বিশেষ করে ৯০ এর শতকের আগে যাদের জন্ম তাদের এমন স্মৃতি কম।

বাবা আর মায়ের সাথে দীঘা ভ্রমণের বেশিরভাগ স্মৃতি আমার কাছে এখন বিস্মৃত প্রায়। তবুও যা মনে পড়েছে সেগুলি নিয়ে লিখেছি আর তার সাথে ছবিগুলো পোস্ট করেছি। এখন বুঝতে পারি যে বাবা আর মায়ের সাথে ভ্রমণের মজাটাই আলাদা হয়। সেই মজার তুলনা আর কোন কিছুর সাথে করা যায় না।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.032
BTC 58495.14
ETH 2461.74
USDT 1.00
SBD 2.36