◦•●◉ কাহিনী সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ◉●•◦
গ্রামের এক দরিদ্র মেয়ে, যার স্বামী তিন বছর থেকে নিখোঁজ আছেন। তাদের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। কোথায় আছে, কেমন আছে তাও জানে না। তার তিন / চার বছরের একটি মেয়ে ও ছোট বোনকে নিয়ে আছে।
দুবেলা খাবার জোগাড় করার জন্য লোকের বাড়িতে থালা বাসন ধুয়ে দেয়, বিভিন্ন কাজ করে থাকে এবং বন থেকে এটা সেটা সংগ্রহ করে কোন রকম তার দিন কাটাচ্ছে। এমন একদিন বোন ও মেয়েকে নিয়ে জঙ্গলে মাটি আলু তুলতে গিয়ে দেখে, একটি ডোবার ভিতরে চকচক করছে একটি কলস।
সে শাড়ির আঁচলে লুকিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে এবং সে রাতে চুপিচুপি কলসটি খুলে । কলস ভর্তি স্বর্ণের মোহর দেখে অনেক খুশি । বুঝতে পারছে না এগুলো নিয়ে কি করবে ,সে খুব ভয় পেয়ে যায় তাই এগুলো সে তার ঘরের ভিতরে মাটি খুঁড়ে কলসটি লুকিয়ে রাখে ।
একটি মোহর নিয়ে চৌধুরী বাড়িতে যায় এবং চৌধুরীর স্ত্রীকে দেখায় এবং জানতে চায় এটি কিসের। চৌধুরীর স্ত্রী কিছুই বলতে পারে না সে বললেন, চৌধুরী বাড়িতে আসলে তাকে দেখানো হবে । চৌধুরী সোনার পয়সা দেখে বুঝতে পেরেছেন যে, এটি স্বর্ণের মোহর হতে পারে ।
চৌধুরী ফুলির মাকে মিথ্যে কথা বলে। এটি ব্রোঞ্চ কোন স্বর্ণ মোহর নয় ।এই মোহর আরও কতগুলো তার কাছে আছে । কিন্তু ফুলের মা সহজ সরল হলেও ততটা বোকা না তাই সে প্রথমে বলেছিল একটি পেয়েছে, তার কাছে আর কোন মোহর নেই ।
তারপর যখন তাকে ৫০০ টাকা দিল আর মোহরটি তাকে ফেরত দিল না তখন তার মনে সন্দেহ জাগলো তাই সে আরেকটি মোহর নিয়ে বাজারে স্বর্ণকারের কাছে গিয়েছিল। তার বুঝতে আর বাকি রইলনা যে এটি ব্রোঞ্চ নয় স্বর্ন।
ফুলির মা মোহরটি বিক্রি করে মাংস, পোলাও এর চাল ,আরও অনেক কিছু কিনে আনে।সে অনেক খুশি ছিল ।এরই মাঝে ফুলির বাবা একটি মেয়েকে নিয়ে চলে আসে বাড়িতে । লোকটি মেয়েটিকে বিয়ে করেছিল কিন্তু প্রথমে শিকার পায়নি । তার রান্নার ব্যবসায় সাহায্য করার জন্য বাবুচি রেখেছে তাই বলেছিল।
সে মেয়েটিকে বিয়ে করেছে এবং তার এই বসতভিটে বিক্রি করে টাকা নিয়ে আবার চলে যাবে সেই উদ্দেশ্যে গ্রামে আসে। এদিকে চৌধুরী সাহেব ফুলির মাকে আবার ডেকে পাঠায় । তার কাছে জানতে চায় এগুলো আরো আছে কিনা । এগুলো হল সরকারি সম্পত্তি, যদি তার কাছে এগুলো থাকে এবং তা যদি পুলিশ জানতে পারে তখন তাকে তুলে নিয়ে যাবে ।
এই ভয় দেখিয়েছে এবং তাকে আরো বলেছিল, যা পেয়েছ তার দুই ভাগ তুমি নিবে এবং একভাগ আমাকে দিবে । তার বিনিময়ে ২০ বিঘা জমি দেওয়া হবে। সেখানে বাড়ি করে সুখে থাকতে পারবে। অভাগা মেয়েটি সুখের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল ।চৌধুরীর প্রস্তাবে রাজি হয় ।
ফুলির মা বাড়িতে ছিল না এই সুযোগে লোভী স্বামী ঘর তল্লাশি করে। মাটির নিচে লুকানো স্বর্ন কলসটি খুঁজে পায় ।কলস ও দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যায় ।এদিকে ফুলি মা চৌধুরী কথায় রাজি হয়ে বাড়িতে যখন আসে তখন দেখে তার সেই স্বর্ণের কলস আর নেই।তার স্বামী ও আর সেই মেয়েটি নেই।
তখন তার আর বুঝতে বাকি ছিল না যে এই কলস তার স্বামী ছাড়া আর কেউ ন্যায়নি। সন্তান ও বোনের কথা ভেবে তাই ভেঙে পড়েছে । মেয়েটা উঠানে বসে কান্নায় ভেঙে পড়ে এরই মাঝে তার কান্না যেন বৃষ্টি হয়ে ঝরছে। এখানেই নাকট শেষ হয়ে গেল।
এই নাটকটিতে ফুলের মা চরিত্রে অভিনয় করেছেন হুমায়ূন আহমেদ এর দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন।শাওন অনেক গুনে গুণান্বিত । তিনি ছোটবেলা থেকেই অভিনয় সাথে যুক্ত । গান, নাচ অনেক গুণি শিল্পী তিনি। এই নাটকটি আমাদের গ্রাম বাংলার হত দরিদ্র পরিবারে প্রায় দেখা যায় । হয়তোবা সেই গ্রামের দরিদ্র মেয়েটি স্বর্ণ কলস পায় না কিন্তু তারপরও হচ্ছে চেষ্টা করে তার সংসারে একটু সচ্ছলতা আসুক।
সে হাঁস-মুরগি পালন করে, অন্যের বাড়িতে কাজ করে কিছু টাকা পায় ।তা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে,বিপদে সংসারের খরচ করতে পারবে। কিন্তু তার স্বামী সেই টাকা জোর করে নিয়ে যায় ।আমাদের সমাজে মেয়েদের একা থাকাটা কখনোই নিরাপদ না। সে মেয়েটা না চাইলেও তার আশে পাশের নোংরা পুরুষগুলো তার দিকে হায়নার মতো তাকিয়ে থাকে ।হোক তারা চাচা বা বাবার বয়সের। একা থাকার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে নানা রকম প্রস্তাব দিয়ে থাকে। অনেক সংগ্রাম লড়াই করে তাকে টিকে থাকতে হয় ।
এই নাটকটি দেখে আমার হালিমার কথা মনে পড়লো। আমরা যখন খুলনাতে ছিলাম তখন আমার বাসায় কাজে সাহায্য করত একটি মেয়ে হালিমা ।ওর বয়স ২৮ থেকে ৩০ হবে। মেয়েটা অনেক পরিশ্রমী ছিল। আমার বাসায় কাজ করার সাথে আরো চার-পাঁচটা বাসায় কাজ করত। ওর দুটো মেয়ে । ওর স্বামী রিক্সা চালাত কিন্তু লোকটি ছিল যে অনেক অলস।
একদিন রিক্সা চালালে সে পাঁচ দিন আর রিকশা চালাত না ।কিছু টাকা হলেই সে নেশা করতো । বাসায় কাজ করে যা টাকা পেত তাও হালিমার কাছ থেকে জোর করে নিয়ে যেত। হালিমা দিতে না চাইলে তাকে মারধোর করত। হালিমার অনেক স্বপ্ন ছিল মানুষের বাসায় কাজ করে তার মেয়েদেরকে পড়াশোনা করাবে। মেয়েদের জীবন যেন তার মত না হয়। কিন্তু এই স্বামী তার স্বপ্ন সত্যি হতে দেবে কিনা জানিনা।
আমাদের সমাজে গ্রাম বলুন কি শহর বলুন এরকম হালিমাদের মত হাজারো সংগ্রামী মেয়েরা আছে ।এদের ভাগ্য কোনদিন পরিবর্তন হবে কিনা তা আমার জানা নেই ।” স্বর্ণের কলস ” পেলেও কি তারা ধরে রাখতে পারবে কিনা তাও আমার জানা নেই ।
এই নাটকটি আপনি ইউটিউব থেকে দেখতে পারেন। আপনাদের দেখার সুবিধার জন্য নাটকের লিংক নিচে দেওয়া হলো ।
নাটকের লিংক