আমাদের শৈশব জুড়ে আছে ফিচারফোনের অগণিত স্মৃতি

in Incredible India10 months ago
আসসালামু আলাইকুম

দুপুরে মোবাইল দিয়ে স্যোসাল মিডিয়া ব্রাউজ করছিলাম। হটাৎ একটা ভিডিও দেখে আমার ছোটবেলার কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। ভাবলাম এগুলো সবাইকে বলি, বলবো বলবো করতে করতে, লিখতে বসে গেলাম।

pexels-masood-aslami-4224099.jpgSource

সালটা ২০০২-২০০৩ হবে। আমি তখন প্রাইমারিতে পড়ি। আমার বড় ভাই তখন সারদা পুলিশ একাডেমিতে ট্রেনিং এ যোগদান করেছে। তখন তো আর এমন মোবাইল ঘরে ঘরে ছিল না যে যখন ইচ্ছে যোগাযোগ করবো। যোগাযোগের এক মাত্র মাধ্যম ছিল চিঠি। তবে কিছুদিন পরেই আমাদের এলাকার এক ভাই পল্লীফোন এর ব্যবসা খুললো।

ঘরে ঘরে সবাইকে এই ফোন দেখিয়ে বেড়ালো কুছু দিন। তখন সাদাকালো টিভিতে পল্লিফোনের এড দিতো। এই ফোন দিয়ে দূর দূরান্তের মানুষের সাথে কথা বলা যায়। আর এক মিনিট কথা বলার জন্যে ৭ টাকা লাগে। এর পরেও আমরা খুব খুশি।

বড় ভাই সারদা ক্যাম্প থেকে কল দিতো আর পল্লীফোনের ওই ব্যবসায়ী ভাই ফোন নিয়ে আমাদের বাসায় আসতো। যদিও আমার ভাই কল দিতো, কিন্তু এর পরেও ওই পল্লীফোন এর ব্যবসায়ী আমাদের থেকে মিনিট প্রতি ৫ টাকা করে নিতো। সে ঘড়ি ধরে দাঁড়িয়ে থাকতো আর আমরা তাড়াহুড়ো করে ৪-৫ মিনিটের মধ্যে বাড়ির সবাই কথা বলতাম। কত কঠিন ছিল এক একজনের সাথে কথা বলা।

বড় ভাই যখন ক্যাম্প ছেড়ে কাজে যোগ দিলো এবং বাড়ি আসলো তখন নতুন ঝকঝকে একটা ফিলিপস ডিগা কিনে নিয়ে এলো। এটা আমাদের বাসায় এন্টেনা লাগিয়ে কানেক্ট করা হলো। এর ফলে গ্রামের পল্লীফোন ভাই কে আর লাগতো না। আমরা নিজেদের ফোন দিয়েই কথা বলতাম বড় ভাইয়ের সাথে।

কিন্তু বিপত্তি হতো ৩০০ টাকার রিচার্জ কার্ড যার মেয়াদ ছিল ২১ দিন সেটা আমাদের এলাকায় পাওয়া যেত না। নিয়ে আসতে হতো জেলা শহর থেকে। আর তখন কার দিনে ৩০০ টাকা মানেই অনেক বেশি। অনেক দিন আমাদের মোবাইল পড়ে থাকতো রিচার্জ কাডের অভাবে।

pexels-thirdman-6237886.jpgsource

এখনকার দিনে এসে সেদিনের স্মৃতি গুলো মনে করলেই কেমন অবিশ্বাস্য লাগে। তখন কথা বলতে পারাটাই স্বপ্ন মনে হতো, কেউ তখন ভাবি নাই কোনদিন ভিডিও কলে দেখতে দেখতে কথা বলা যাবে।

মোবাইল নিয়ে ছড়ানো গুজব

সালটা ২০০৬-২০০৬ সাল হবে। হটাৎ মুখে মুখে গুজব ছড়িয়ে পড়লো মোবাইলে একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসছে আর ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে মোবাইলে বিস্ফোরণ হচ্ছে, এবং অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। মুহূর্তে এই খবর আমাদের গ্রামে চলে গেল। তখন গ্রামে হাতেগোনা কয়েকজনের কাছে মোবাইল ফোন ছিল। আমাদের বাসাতেও এই গুজব ছড়ালো। সাথে সাথেই আমার মেজো ভাই মোবাইলের ব্যাটারি সিম খুলে আলাদা করে রাখলো যেন কোন কল না আসতে পারে। ওইদিকে আমার বড়দা ফোনের পর ফোন দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ফোনে পাচ্ছে না। সে ভেবেছে আমাদের ফোন মনে হয় বিস্ফোরণ হয়েছে।

pexels-pixabay-207983.jpgsource

পরে যখন সবাই বুঝলো এটা একটা ডাহা মিথ্যে কথা এবং ভিত্তিহীন তখন আবার সবাই নিজেদের মোবাইল গুলোতে সিম কাড লাগিয়ে ফোন চালু করলো। সেসময় প্রায় ২ দিন আমাদের মোবাইল অফ ছিল। আহা!! কত বোকাই না ছিলাম তখন।

মোবাইল নিয়ে মজার স্মৃতি

আমার ভাই অফিসে যেত। তার প্রায়ই মিটিং থাকতো। তখনকার দিনে মিটিং এ ফোন বেজে ওঠাটা সৌখিনতার পরিচয় দিতো। আমার ভাইয়াও এর বাইরে ছিলনা। সে যেদিন ওই মিটিং থাকতো আমাকে আগেই ফোন দিয়ে বলতো ওই টাইমে আমাকে কল দিবি। মানে তখন তার মোবাইল সবার সামনে বেজে ঊঠবে, সে আলাদা একটা ফিল পাবে। যদিও এখন কথাটা অনেক হাসির মনে হচ্ছে তবে এটাই কিন্তু তখনকার দিনে চলতো।

এখনো মাঝে মাঝে আমরা এই বিষয় আলোচনা করে ভাইয়াকে খেপাই। আহা কি ভাব টা নিতো তখন।।।।।

pexels-yan-krukau-7792749.jpgsource

এই তো মনে হচ্ছে সেদিনের ঘটনা। তবে মাঝে কেটে গেছে ২০ বছর। অথচো সব পরিবর্তন হয়ে গেলো, মোবাইল নিয়ে এখন আর আগের মত কোন উদ্দীপনা কাজ করেনা।

Sort:  

দুপুরে মোবাইল দিয়ে স্যোসাল মিডিয়া ব্রাউজ করছিলেন। হটাৎ একটা ভিডিও দেখে আপনার ছোটবেলার কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। ভাবলেন এগুলো সবাইকে বলি, সত্যি পোস্ট টা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। ছোট বেলায় দেখতাম আব্বু ছোট একটা বাটন ফোন ব্যবহার করতো আর এখন,, আমরা একাক জনের হাতে বড় বড় ইটের সাইজের মতো ফোন ব্যবহার করি 😅মোবাইল নিয়ে মজার স্মৃতি শেয়ার করলেন। অসাধারণ একটা পোস্ট পড়ে ভালো লাগলো আপনার জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইল।

 10 months ago 

ধন্যবাদ আপু। আসলেই এখন মীবাইল মানেই যেন একটা ইটের মত সাইজ।

 10 months ago 

আমি যখন অনেক ছোট তখন সর্বপ্রথম Nokia ফোন দেখেছিলাম আমার আঙ্কেল নিয়ে এসেছিল। আমরা তো গেরাম অঞ্চলে থাকি তাই কোন অপরিচিত জিনিস কেউ আনলে সেটা দেখার জন্য আমরা ভির জমাতাম। ঠিক আবার আজকের ফোনটা উঠার পর এরকমটাই হয়েছিল।।

আপনার এলাকার এক ভাই সর্বপ্রথম পল্লীফোন ব্যবসা শুরু করেন আর সেকালের দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এসে কথা বলতে বলতে ৭ টাকা করে আমাদের এখানে একজন ব্যবসা করেছিলেন। এতে খরচ হলো খুব সহজে যোগাযোগ করা যেত তাই আমরা সকলে অনেক খুশি ছিলাম।।

আর ওই সময়ে যার হাতে ফোন ছিল তাকে সবাই একটা আলাদা চোখে দেখতো। আপনি আপনার ভাইয়ের ব্যাপারে আরো বেশ কিছু কথা বলেছেন বেশ ভালো লাগছে সেগুলো জেনে।

 10 months ago 

ফোন হাতে মানেই যেন সে অভিজাত শ্রেনির মানুষ এমিন ভাবতো সবাই। আর এখন কার হাতে ফোন নেই বলুন?

 10 months ago 

যে জিনিস যত বেশি হবে তার প্রতি মানুষের চাহিদা অটোমেটিক কমে যাবে এটাই স্বাভাবিক ভাই।। আগে মানুষ ফোন দেখার জন্য অনেক জায়গায় যেত আর এখন ফোন প্রতিটি মানুষের কাছে।

 10 months ago 

আমার এখনো মনে আছে আমার আব্বু সর্ব প্রথম মোবাইল কিনেন খুব সম্ভবত ৮০০০ -১০০০০ টাকা দিয়ে আর সিম কার্ড কিনেছিলেন ৪৫০০ টাকা দিয়ে। আব্বু এখনো সেই সিম কার্ড ই ব্যবহার করেন।

আব্বু যখন মোবাইল কিনেছিল তো অনেকেই দেখতে এসেছিল এবং বাসায় মোবাইল থাকার কারণে অনেক ভয়ে ভয়ে থাকতো আমার আম্মু। 😄

Posted using SteemPro Mobile

 10 months ago 

আগে এক্সময় মোবাইলের থেকে সিমের দাম বেশি ছিল। ১৮০০০/- দিয়েও এক সময় সিম কিনতো মানুষ।

 10 months ago 

সালটা ছিল ২০০০ থেকে ২০০৩ এই সময়ে আপনার ভাই সারদা পুলিশ ট্রেনি়ংয়ে যোগদান করেছিল তখনকার সময়ে মোবাইল ফোন ছিল না যোগাযোগ মাধ্যম ছিল তখন চিঠি আর চিঠি দিয়ে খবর আদান প্রদান করা হতো ৷ তারপর আপনার এক বড় ভাই পল্লীফোনের ব্যবসা খুলে তারপর আবার এক মিনিট কথা বললে ৭ টাকা লাগে তারপরও আপনারা অনেক খুশি ৷ তারপর শুনলাম ২০০৬ সালের দিকে মোবাইল ফোনের গুজব ছড়ায় সেই তথ্য সংক্রান্ত আলোচনা করেছেন ৷ তারপর মোবাইল ফোন নিয়ে কিছু মজার স্মৃতি তুলে ধরেছেন ৷ যাই হোক সব মিলিয়ে আপনার পোস্ট টি বেশ চমৎকার হয়েছে ৷

ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি লেখা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ৷

 10 months ago 

ধন্যবাদ ভাই আমার ব্লগটি পড়ে এত সুন্দর বিশ্লেষণ এর জন্য।

 10 months ago 

জ্বী ভাই আমরা বাঙালী জাতি অনেক সহজ সরল। গুজব খুব সহজেই বিশ্বাস করে ফেলি। ভাই আপনি আপনার জীবনের প্রথম দেখা মুঠোফোন নিয়ে চমৎকার একটি সৃতিচারণ করেছেন। আমার জীবনের এরকম কিছু ঘটনা আছে। ভাবছি আমিও লিখবো এই ঘটনাগুলি। আমার জীবনে প্রথম দেখা মুঠোফোণ ছিলো সিটিসেল। আমার ভাই চাকুরির সুবাদে সেই ফোনটি কিনেছিলো। সেইসময় সিটিসেল ফোনটি আমাদের কাছে ছিলো সোনার হরিন। অনেক যত্ন করতো সবাই। খুব হিসাব করে কথা বলতো।

বর্তমান যুগে এসে আমরা ফোনের কদর বুঝি না। কিন্তু সেইসময় মুঠোফোনের কদর আলাদা ছিলো। সবাই হিসাব করে কথা বলতো। টাকা যেন কম খরচ হয় সেই চেষ্টা করতো। কোন অপচয় করতো না। কিন্তু বর্তমানে আমরা ইচ্ছেমত প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে কথা বলছি। অযাথা টাকা নষ্ট করছি যা মোটেও উচিত নয়।

ভালো থাকবেন প্রিয় ভাই। ধন্যবাদ।

 10 months ago 

একদম সত্য আমরা গুজব খুব সহজে বিলিভ করে ফেলি। সত্যতা যাচাই করতে চাই না।

Loading...
 10 months ago 

আসলেই সত্যি এই বাটন ফোন গুলো আমি নিজেও দেখেছি। বিশেষ করে আমাদের বাড়িতে প্রথম এই মোবাইল গুলো নিয়ে এসেছিল আমার জ্যাঠামশাই। যিনি কিনা ঢাকায় চাকরি করতেন বাড়িতে খবরা খবর নেয়ার জন্য। অনেকদূর গ্রামের শেষ মাথায় যেতে হতো। কেননা শেষ মাথার মধ্যে একটা দোকান ছিল। যেখানে একটা মাত্র মোবাইল ছিল, গ্রামের সবাই সেই মোবাইলটা দিয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজনের খবর নিতো সেজন্য অনেক ঝামেলা হতো।

এই স্মৃতিগুলো আসলে কখনো ভুলে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু পরিবর্তন হয়ে গেছে। অনেক কিছু আমরা যদি আমাদের শৈশবের স্মৃতিগুলো একবার ঘুরে দেখে তাহলে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। শুধু মোবাইল না আমি তো মাঝে মাঝে দেখি আমি গ্রামের রাস্তা দিয়ে, স্কুলে যেতাম সেই পথটা এখন অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে, ধন্যবাদ আপনাকে শৈশবের স্মৃতিগুলো আবারো আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য। ভালো থাকবেন।

 10 months ago 

সময়ের সাথে সাথে বাটন ফোন গুলো পরিবর্তন হয়ে টাচে রুপ নিয়েছে। নকিয়া তার সাম্রাজ্য হারিয়েছে। কিন্তু আমাদের শৈশবের কথা মনে হলেই এই বাটন ফোন গুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে

 10 months ago 

আমি সর্বপ্রথম বলতে চাই আপনি ২০০২ সাল বা তিন সালের কথা লিখেছেন তখন আমি খুবই ছোট ছিলাম আমি ২০০২-৩ সালের ঘটনা কিছু বলতে পারি না। এবং আমার যখন বুদ্ধি হয়েছে আমি তখন মোবাইল ফোন দেখেছি কিন্তু বাটন ফোন যেটি আমার আব্বুর কাছে ছিলো নোকেয়ার একটি মোবাইল। তবে আপনার পুরনো স্মৃতির পাতায় মোবাইল ফোনের একটি স্মৃতি আছে এবং তার সম্পর্কে জানতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। এটা ঠিক যে আগে ঘরে ঘরে ফোন ছিলো না তখন মানুষ কথা বলতো চিঠির মাধ্যমে কোন একটি খোঁজখবর নেওয়া হলে চিঠি দিয়ে অন্য মানুষের সাথে যোগাযোগ করত।

 10 months ago 

ধন্যবাদ ভাই। ওই সময়টার কথা আসলে ভুলার নয়।

 10 months ago 

আপনার লেখা পড়ছি আর ছোটবেলার স্মৃতি গুলে মনে পড়ছিল। আসলো আমাদের শৈশব কত মধুর ছিল। এই মোবাইল ঘিরে কত স্মৃতি রয়েছে। ছোটবেলায় কত সাপের সেই গেমটি খেলেছি ওই সময় সেই গেমটি অনেক মজা লাগতে খেলতে। এই গেম নিয়ে ভাইদের সাথে কত মারামারি করেছি কত মার খেয়েছি তার কোন হিসাব নেই।আর আপনি যে গুজবের কথা বললেন তা আমাদের এখানে ছড়িয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে সেই শৈশবের মোবাইলের স্মৃতিময় মূহুর্ত গুলো আবার মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।

 10 months ago 

আপনার লেখটাআ পড়ে আমার মনে পড়ে গেল আমাদের পরিবারের প্রথম মোবাইল ফোনের কথা। সেটার মডেল নাম্বার ছিল Nokia 1210 আর এই মোবাইল গুলো খুবই শক্ত। এলাকার কেউ কেউ বলতো যে এই মোবাইল দিয়ে নাকি আম পেড়ে খাওয়া যাবে। খুবই ভালো লাগতো সেই সময় এই মোবাইল গুলো ব্যবহার করতে। আর আপনার লেখার মধ্যে কিছু গুজব লিখেছেন সেগুলো আমি ও শুনেছি ছোটবেলাতে। যাইহোক ভাই আপনার লেখাটা পড়ে আমার খুবই ভালো লাগেছে। আপনার পরবর্তী আকর্ষণীয় পোস্টের জন্য অপেক্ষায় রইলাম ভালো থাকবেন আপনি সবসময় সেই কামনা করি।

 10 months ago 

ওই সময়টায় মোবাইল বলতে যেন আমরা শুধু নকিয়াকেই বুঝতাম কালের বিবর্তন এ সেই নকিয়া এখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। নকিয়ার সাথে সবারই স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 68503.89
ETH 2535.33
USDT 1.00
SBD 2.52