বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান

শুভসকাল বন্ধুরা, রবিবার ১০ই চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৪শে মার্চ ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ, ১৩ রমজান ১৪৪৫ হিজরি সবাই কেমন আছেন, আশা করি সকলেই ভালো অবস্থায় আছেন এবং অত্যন্ত সুন্দরভাবে দিন কাটাচ্ছেন। আমার আজকের পোস্টে বাংলাদেশের অন্যতম দুইটি দর্শনীয় স্থান জাফলং ও সাজেক ভ্যালি সম্পর্কে আলোচনা করব।

জাফলং

জাফলং প্রকৃতির কন্যা হিসেবে সারা বাংলাদেশে এক নামে খ্যাত। এটি খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে পিয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। এই পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে সাজানো রয়েছে পাথর যা জাফলং এর সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহু গুনে। একটি সিলেট শহর থেকে বেশ দূরে গোয়াইন উপজেলায় অবস্থিত।

Source

সীমান্তের ওপারে ভারতীয় পাহাড় টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবাহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রীজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি,উঁচু পাহাড়ে গহিন অরণ্য ও শুনশান নিরবতা এখানে আসা পর্যটকদের দারুন ভাবে আকর্ষণ করে। প্রকৃতির কন্যা ছাড়াও জাফলং এর আরো বিভিন্ন ধরনের নাম রয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাম হল বিউটি স্পট, পিকনিক স্পট, সৌন্দর্যের রাণী। সিলেট ভ্রমণে এসে এইখানে না আসতে পারলে ভ্রমণ পিপাসুদের পিপাসা যেন কমতেই চায় না। বর্ষাকালে এখানকার ধুলি ধুসরিত প্রকৃতি হয়ে উঠে স্বচ্ছ। কয়েক হাজার ফুট উঁচু থেকে ঝরে পড়া ঝর্নার দৃশ্য আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয়।

Source

ইতিহাসবিদদের মতে হাজার হাজার বছর আগে থেকে জাফলং ছিল এক বিস্তীর্ণ বনভূমি। এর আশেপাশে কোন প্রকার জনবসতি দেখা যেত না। তবে ১৯৫৪ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির সাথে সাথে এই চিত্রটি সম্পূর্ণরূপে পাল্টে যায়। এ সময়ে বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা পাথরের হতে নৌপথে এখানে এসে হাজির হয় এবং আস্তে আস্তে জনবসতি গড়ে তোলে। বর্তমানে এই এলাকায় বাঙ্গালীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের উপজাতিদের বসবাস লক্ষ্য করা যায়। তবে তাদের মধ্যে খাসিয়া উপজাতিদের আধিক্য বিশেষভাবে লক্ষণীয়। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এখানে আয়োজিত হয় বৈশাখী মেলা। এই বৈশাখী মেলাকে ঘিরে পুরো এলাকা আনন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে।

Source

জাফলং এর বাংলাদেশ সীমান্তে দাঁড়িয়ে খুব সহজেই ভারতের অভ্যন্তরের অনেক উঁচু উঁচু পাহাড় দেখা যায়। এ সকল পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরে পড়া পাহাড়ি ঝরনা এক মনমুগ্ধকর দৃশ্যের সৃষ্টি করে যা পর্যটকদের বারবার টেনে নিয়ে আসে। পাহাড়ি ঝরনা ছাড়া ও সাপের মত বয়ে চলা ডাউকি নদী দেখতে আসে বহু পর্যটক। বর্ষাকালে স্রোত বেড়ে গেলে এই নদী ফিরে পায় তার আপন রূপ এবং এর পানি আরো বেশি স্বচ্ছ হয়ে ওঠে যা এখানকার সৌন্দর্যকে বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়।

সাজেক ভ্যালি

বাংলাদেশে পাহাড়ি সৌন্দর্য উপভোগ করার সবথেকে সহজ গন্তব্য হচ্ছে সাজেক ভ্যালি। এখানে আপনি কোন রকম কষ্ট ছাড়াই উপভোগ করতে পারবেন নীল পাহাড়ের সারি, সফেদ মেঘের খেলা, রুপালি বৃষ্টির রূপ বা কুয়াশা জড়ানো সকাল। আর যদি আগে থেকেই বুকিং দিয়ে যান তাহলে খাওয়া-দাওয়া নিয়েও কোনরকম চিন্তার কারণ নেই, তাই একদম আরাম আয়েশের মাধ্যমে কয়েকটা দিন কাটিয়ে দিতে পারবেন এই সাজেক ভ্যালিতে।

Source

আসলে এটি রাঙ্গামাটি জেলার ছোট্ট একটি উপত্যকা যে কারণে এর নাম হয়েছে সাজেক ভ্যালি। এখানে যাওয়ার পথে আকাশ বেশ মেঘলা হয়ে থাকে। তবে যতই কাছে যাওয়া যায়, ওই দূরের নীল আকাশ যেন ধীরে ধীরে কাছে আসতে থাকে, ছুঁয়ে দিতে চায় পর্যটকদের। সাজেক ভ্যালিতে থাকা গাছের পাতাগুলো নাচতে নাচতে আমন্ত্রণ জানায় এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের। রাস্তার দু'পাশে ঘাসের সারি দেখে সবুজ গালিচা বলে এক মুহূর্তের জন্য যে কেউ ভুল করতে পারে। কাছে দূরের ছোট বড় মাঝারি আকারের পাহাড় দেখে মনে হবে একজন আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। এখানকার মতো স্বচ্ছ মেঘের নীল আকাশ যেন আর কোথাও পাওয়া যাবে না। এখানে থাকা পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনে মনে হবে আপনার আগমনের উদ্দেশ্যে বেজে চলেছে এক মোহনীয় আবহ সংগীত।

Source

এখানকার সম্পূর্ণ সৌন্দর্য ভোগ করতে হলে আপনাকে দুই থেকে তিন দিন সময় নিয়ে তারপর যেতে হবে। তাহলেই উপভোগ করতে পারবেন সাজেকের অপরূপ সৌন্দর্য। এখানে তেমন কোন ঝর্ণার দেখা পাওয়া যাবে না। তবে এখান থেকে বেশ দূরে পাহাড় বেয়ে নিচের দিকে নেমে গেলে একটি ছোট্ট ঝর্ণা দেখা পাওয়া যায়। ঝরনা সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে সাজেকে আসার পথে খাগড়াছড়িতে থাকা রিছাঙ ঝরনা ঘুরে আসতে পারেন।

Source

সাজেক একটি পাহাড়ি উপত্যকা যা পাহাড়ের উপরে অবস্থিত এক বিস্তৃত সমতল ভূমি। মেঘ ও কুয়াশার চাদরে জড়িয়ে থাকা সবুজ পাহাড় এবং অদূরে অবস্থিত মিজোরামের নীলচে রঙে রাঙানো পাহাড়ের সৌন্দর্য চোখে লেগে থাকবে অনেকদিন। বর্ষা ও শরৎকালে সাজেক মেঘের খেলা দেখিয়ে এক অনন্য রূপ ধারণ করে। মেঘের অপূর্ব খেলা, রং বদলানো এবং এই আছি তো এই নেই ভাব সাজেক ছাড়া আর অন্য কোথাও দেখতে পাবেন না। এখানে এসে বারবার মেঘের রাজ্যে হারিয়ে যেতে মন চায়। একেক ঋতুতে একেক রকম রূপ নিয়ে হাজির হয় আমাদের মাঝে। তাই নিজের পছন্দের কোন এক ঋতুতে ঘুরে আসতে পারেন সাজেক ভ্যালি থেকে।

---

এই পোস্টের কিছু কিছু তথ্য নিচের সোর্স থেকে নেওয়া হয়েছে

Source 1	Link
Source 2	Link