Cows and Buffaloes are Disappearing/হারিয়ে যাচ্ছে গরু মহিষের হাল।
Sunday 26 February 2023
বন্ধুরা
কথাটি রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় প্রকাশ করা হয়েছে বলেই এমনটা মনে হচ্ছে। কারো কাছে ভুল কিংবা কারো কাছে শুদ্ধও মনে হচ্ছে।
আসলে কি জানেন? এটি রংপুরের একটি আঞ্চলিক প্রবাদ । পুরো রংপুরে এ প্রবাদ ব্যবহার করা হয় কিনা ? তা আমার জানা নাই। তবে আমাদের এলাকার মুরুব্বিদের এক সময়কার অহরহ ও প্রচলিত প্রবাদ ছিল এটি।
তবে প্রবাদটির ব্যাখ্যা করলে যতদূর বুঝা যায় আমরা যারা কামে আকামে সারাদিন ব্যস্তময় সময় কাটিয়ে থাকি এবং কাজের সময়টুকুতে ঠিক মত মনোযোগ দিতে পারি না! হয়তো বা তাদের উদ্দেশ্যেই এমন কথাটির প্রচলন সমাজে শুরু হয়েছিল
অর্থাৎ প্রবাদটির অর্থ দাঁড়ায়, আমরা যারা সারাদিন এলোমেলো করে ঘুরে বেড়াই এবং প্রয়োজনীয় কাজের সময়টিকে বেবালুম ভুলিয়ে যাই। যাহা রাতে পাট কাঠিতে আগুন জ্বালিয়ে ,সেই আলোয় মরা চাউল বেছে ফেলার একটি অপপ্রয়াস। |
---|
পুরনো ও বহুল প্রচলিত এই প্রবাদটি , আমার সকাল থেকে কিছু ও কাজের কাজের প্রতি আগ্রহী দেখাইয়া, কামে আকামে সময় কাটাইয়া ,নিজে নিয়মিত পোস্টটি লিখতে বসছি। যাহাও পাটকাঠির আগুনে আলো জ্বালিয়ে চাউল বাসার সামিল
এখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে ! কিছুটা খাওয়ার সময়! মাগরিবের নামাজের জন্য আজান দিচ্ছে ! ঘরে ঘরে সন্ধ্যাবাতি জ্বালাতে হচ্ছে। আরো সন্ধ্যা কালীন কতই না কামের চাপ।
সবকিছু সামাল দিয়ে আজকের পোস্টটি লিখতে বসা সমচীন হলেও ,আমি কিছু না করেই পোস্ট লেখার তালে তালে ওসব সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। যাহাও পাট কাঠিতেতে আগুন জ্বালিয়ে, আমার মরা চাউল বাছার মত অপচেষ্টা । আরো সহজ করে বলতে গেলে, ঘরের খেয়ে বনের মো'ষ তাড়ানোর মত বিষয়টি। যাতে আসল কাজের কোন খবর রাখা হয় না
আপনারা ছবি দেখেই হয়তো অনেকেই বুঝতে পারছেন ,আজকের আমার লেখার বিষয়টি কি হতে পারে! তারপরেও অনেকে যে বুঝতে পারবেন না, বিশেষ করে যারা শহরে বাস করেন। আরো সহজ ভাষায় বলতে গেলে যারা বড় বড় শহরে বাস করেন ,তাদের এ সম্পর্কে তেমন কোন ধারনা নাই। তবে গ্রাম থেকে গিয়ে বড় বড় শহরে বাস করলেও হয়তো এ সম্পর্কে সামান্য ধারণা আমাদের মধ্যে আসতে পারে।
গ্রাম গঞ্জের কৃষক ভাইয়েরা, একসময় গরুর হাল দিয়ে জমি চাষ করতো। কোন এলাকায় এই পরিস্থিতিকে কি বলে তা আমার জানা নাই। তবে আমাদের এলাকায় এটিকে "গরুর হাল" বলেই অভিহিত করা হয় ।অর্থাৎ গরু দিয়ে লাঙ্গল টানিয়ে জমি চাষ করাকেই গরুর হাল বলা হইয়া থাকে।
একসময় কৃষক ভাইদের চাষাবাদের একমাত্র ভরসা ছিল এই গরুর হাল । সময়ের বিবর্তনে গরুর হাল আজ বিলিন হওয়ার পথে। তারপরেও সৌখিন এবং বদ্ধমূল কৃষক ভাইয়েরা আজও গ্রাম পর্যায়ে দুই-একটি গরুর হাল শখ করে কিংবা বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতেই গরুর হালের ঐতিহ্য সগৌরবে টিকে রাখার চেষ্টা করছেন।
কয়েক মাস আগের কথা। আমি সেদিন বিকেল বেলা মহল্লার ভিতর থেকে বের হয়ে বাজারে দিকে হাঁটতেছিলাম ।হঠাৎ করে এই "হালুয়া" ভাই জমি চাষ করে লাঙ্গল ঘাড়ে নিয়ে গরুর পিছনে পিছনে এদিকে আসছে। এখানে দেখতে পাচ্ছেন একটি সেনিটারি কারখানা। আমি এই কারখানার সামনে দাঁড়িয়েই চলন্ত কৃষক ভাইয়ের গরুসহ ছবি ধারণ করার চেষ্টা করি। ছবি ধারণ করতে করতে এই হালুয়া ভাইকে জিজ্ঞাসা করি ,এ সময় তিনি লাঙ্গল জোয়াল নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন ! এ কথার উত্তরে তিনি বললেন জমি চাষ করে সে বাড়ি দিকে যাচ্ছেন। ছেলেমেয়েদের জন্য কিছু কিনে নিয়ে তিনি আবার বাড়িতে যাবেন ।এজন্য তিনি এই সেনেটারি কারখানার সামনে লাঙ্গল জোয়াল রেখে, লাঙ্গল জোয়ালের সাথেই গরুগুলো বেঁধে রাখার চেষ্টা করছেন।
ছবি করার পর সময় ও সুযোগ অভাবে তা আমার প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি ।আজ হঠাৎ করেই অ্যালবাম ঘাটতে ঘাটতে ছবিগুলো দেখতে পেয়ে তা প্রকাশ করার চেষ্টা করছি |
---|
বেশি দিনের কথা নয় ১০ থেকে ১৫ বছর আগে প্রত্যেক কৃষকের বাড়িতে একসময় ছোট বড় গরুর হাল ছিল । কৃষক ভাইয়েরা নিজে বা অন্য লোক দিয়ে এই হাল চাষের কাজটি করতেন। তাতে নিজের জমি চাষ করা ছাড়াও, অন্যের জমিও চাষ করার চেষ্টা তাদের অব্যাহত ছিল।
আজকে যে "হালুয়া" কৃষক ভাইয়ের ছবি ধারণ করা হয়েছে, তিনিও একজন সৌখিন কৃষক ।নিজের জমিতে চাষ করা ছাড়াও তিনি অন্যের জমিও ভাড়া আকারে হাল চাষ করি দিয়ে থাকেন। উল্লেখ্য যে যিনি সরাসরি জমিতে গরুর হাল দিয়ে চাষ করেন তাকে "আমরা হালুয়া" বলে ডেকে থাকি।
তিনি কেন এই যান্ত্রিক যুগে তার গরুর হাল সগৌরবে ধরে রেখেছেন!? এমন কথা জিজ্ঞাসা করলে, তিনি গর্বের সাথে বলে ওঠেন ,এটি তাঁর বাপ-দাদার সহ একটি পুরাতন ঐতিহ্য । এই গ্রামে শুধুমাত্র আমারই একটি গরুর হাল রয়েছে। আর কারো নেই। যা আমার ঐতিহ্য ধারণের গর্বকে সমুন্নত করে।
তিনি এ সময় আবার আমাকে ইঙ্গিত করে বলে উঠেন দেখুন, যখন অনেক বাড়িতে এরকম অনেক গরু মহিষের হাল ছিল , তখন তো কেউ ছবি উঠায়নি !? আজকে আপনি আগের মত দেখতে পাচ্ছেন না বলেই , আমার ছবিটি উঠানোর চেষ্টা করছেন । তা না হলে আপনি ছবি উঠাতেন না!?
হ্যাঁ বন্ধুরা, কৃষক ভাইয়ের কথায় আমার মনটা ভরে ওঠল। তিনি ঠিকই বলেছেন ,তার এই গরুর হাল না থাকলে আমিও ছবি তুলতে পারতাম না। আর কয়েক বছর পর হয়তো খুঁজেও পাওয়া যাবেনা এসব গরু মহিষের হাল।
যেখানে স্বল্প পরিশ্রমে শুধু অর্থের বিনিময়ে চাষাবাদ করা যায় ।তাই হয়তো গরুর হাল আজ উজাড় হওয়ার উপক্রম।
বন্ধুরা
তাহলে দেখতে থাকুন আমার আজকের গরুর হালের ছবিগুলো। যাহাতে হাজার হাজার বছর পরের মানুষও জানতে পারে ,একসময় এই পৃথিবীতে গরু দিয়ে হাল চাষ করা হতো ।তখন হয়ত এসব শুধুই ইতিহাস হয়ে থাকবে কিন্তু দেখা যাবে না।
গরুর ঘাড়ে জোয়াল দিয়ে ,তার মাঝখানে রশি দিয়ে লাঙ্গল বেঁধে এ হাল চাষ করা হয়। দুই পাশে বাঁশের কঞ্চি বা দড়ি দিয়ে ,লম্বা করে জোয়ালে মাথায় বাধিয়ে জমিতে মই দেওয়া হয় । অর্থাৎ মই এর উপর মানুষ দাঁড়িয়ে গরু দিয়ে টানানো হয়।
বন্ধুরা
বলতে বলতে অনেক বলে ফেললাম।দেখতে থাকুন আমার আজকের গরুর হালের ফটোগ্রাফি গুলো।
Enjoy With Love 😘
Writeen & Photography | @mrnazrul |
---|---|
Capture | Handset |
Category | Nature Photography |
Location | Bangladesh |
বকবক করলেন আর যাই করলেন না কেন। রংপুরের ভাষা টা কিন্তু সেই ভালো লাগলো। একটু হাসলামও বটে। এটা কিন্তু ভালো লাগার হাঁসা। অন্য কারনে নয়। যাইহোক কথাটির ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। বেশ ভালো লাগলো।
হ্যাঁ, ছোট বেলায় দেখেছি, প্রায় কৃষকের বাড়িতে গরু থাকতো, সেই গরু দিয়ে চাষ করতো, হাল চড়াতো৷ লাঙ্গল ইত্যাদি৷ আর এখন প্রযুক্তি এসে এসব বিলুপ্তির পথে। ভালো লাগলো আপনার কথাগুলো। ভালো থাকবেন।
কে বলল যে আপনি বকবক করেছেন। যদিও আমি রংপুরের ভাষা সম্পর্কে অতটা অবগত নই। তবে আপনার পোস্টের প্রবাদটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো।
আসলেই আপনি ঠিকই বলেছেন। গরু দিয়ে চাষ করার এই দৃশ্যগুলো এখন আর দেখা যায় না। যদিও গ্রাম বাংলার পরিবেশের মাঝে হালকা হালকা দেখা যায়, তবে এইসব কাজগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায়।
আপনার পোস্ট পড়ে খুবই ভালো লাগলো।অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটা পোস্ট তার সাথে ফটোগ্রাফি,আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ভালো থাকবেন ধন্যবাদ।