বুদ্ধ পূর্ণিমার পুজো

in Incredible India16 days ago

আপনারা সকলে কেমন আছেন ?আশা করি ভালো আছেন। সুস্থ আছেন। আমিও ভালো আছি। সুস্থ আছি। আজকে আমি আপনাদের বুদ্ধ পূর্ণিমার গল্প শেয়ার করবো।

অনেকদিন আগেই হয়ে গেছে বুদ্ধ পূর্ণিমা ।যেহেতু আমার অনেক পোস্ট বাকি ছিল ।তাই সেগুলো পরপর দিতে দিতে বুদ্ধ পূর্ণিমার পোস্ট দিতে দেরি হয়ে গেল। জৈষ্ঠ্য মাসে ৯ তারিখে ছিল ছিল বুদ্ধ পূর্ণিমা। বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন গন্ধেশ্বরী মায়ের পূজা করা হয়। বুদ্ধ পূর্ণিমার আগের দিন আমি শশুর বাড়ি থেকে বাড়ি ফিরেছিলাম। বাড়ি ফিরেই ছাদে উঠতেই দেখি আকাশে গোল চাঁদ। চাঁদ দেখেই অনেক সময় বোঝা যায় পূর্ণিমা । আমাদের মনে ছিল না। পরের দিন বুদ্ধ পূর্ণিমা ছিল। বাড়ি ফিরতেই ঈশার মা বলল শ্বশুর, শাশুড়িকে বোলো কাল আমাদের বাড়ি পুজো প্রসাদ খেতে আসতে। আর আমাকে বলল সকাল সকাল এসে ঈশার হাতে হাতে পুজোর জোগাড় করবে।

IMG20240523102101.jpg

কিন্তু আমার তো সকাল সকাল ঘুম ভাঙতে চাই না। কিন্তু সেদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছিলাম। বাড়ির কিছু কাজকর্ম করে,স্নান সেরে ঈশাদের বাড়িতে গেলাম তখন সকাল নটা বাজে। গিয়ে দেখলাম ঈশার প্রায় গোছানো হয়ে গেছে। ঈশারা বাড়িতে প্রায় সব পুজো করে। বাড়িতে পুজো করতে করতে ওসব পুজোর জোগাড় করতে একাই শিখে গেছে। যাই হোক আমি গিয়ে কাকিমা আমাকে বলল বেল পাতাগুলো বেছে রাখতে। কারণ আঠাশ টা নিখুঁত বেলপাতা লাগে ‌। হোম করার জন্য। আমি কাকিমার কথামতো বেল পাতাগুলো বাছতে লাগলাম। আমরা সাধারণত তিনটে পাতা আর নিখুঁত থাকে । কোন রকম দাগ থাকলে হবে না।সেই রকম বেলপাতা পূজোর কাজে ব্যবহার করি।

IMG20240523091307.jpg

IMG20240523102401.jpg

কিন্তু সেদিন বেলপাতা বাছতে গিয়ে দেখলাম। একটা বেল পাতায় পাঁচটা পাতা। আমি তো দেখে বেশ অবাকই হলাম। আর ওখানে যারা যারা ছিল প্রত্যেককে দেখালাম। ওরা বেল পাতাটা রেখে দিল বলল শিব ঠাকুরকে দেবে। এরপর আমি কয়েকটা ফল কাটলাম। ফল কাটার পর ঈশা আমাকে হাতে হাতে যা কাজ করতে বলছিল সেগুলোই করছিলাম। ওরা পুজোর বেশ সুন্দর আয়োজন করেছিল। কোন পূজোতে কোন ত্রুটি রাখেনা। সমস্ত রকম ফল কেটে প্রসাদের আয়োজন করেছিল। এছাড়াও শিন্নি প্রসাদ এর আয়োজন করেছিল। এই সময় পদ্ম ফুল পাওয়া যায় আমার জানা ছিল না।পদ্ম ফুল টা দেখতে খুব সুন্দর ছিল।

IMG20240523093204.jpg

শিন্নি প্রসাদের গামলা টা বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছিল। আসলে আমি শিন্নি প্রসাদ খেয়েছি। শিন্নি এভাবে সাজাতে বা কিভাবে মাখতে হয় কোনদিন দেখিনি। সেটাও ওদের বাড়িতে এবার দেখলাম। সবাই মিলে পুজোর জোগাড় করতে করতেই ঠাকুর মশাই চলে আসলো পুজো করতে। আসলে ওদের বাড়ি যে ঠাকুর মশাই টা পুজো করেন ।সেই ঠাকুর মশাই ঠিক সময়ে চলে আসেন পুজো করতে। ঠাকুর মশাই আশা মাত্রই ঈশা ঠাকুর মশাইকে গঙ্গাজল দিয়ে পা ধুয়ে দিল। এরপর ঠাকুর মশাই ভিতরে আসলেন পুজো করতে।

IMG20240523101258.jpg

ওদের বাড়ির ঠাকুর মশাইটা বেশ অনেকক্ষণ ধরেই পুজো করে। সকাল দশটা নাগাদ পুজো শুরু করেছিল ।আর পুজো শেষ হলো বেলা সাড়ে এগারোটার সময়। আসলে পুজোর পর ওদের বাড়িতে হোম হয়। আপনাদের বলাই হয়নি বুদ্ধ পূর্ণিমায় ঈশাদের বাড়ি নারায়ণ পূজা ছিল। ঠাকুর মশাই সাথে করেই নারায়ণ শিলা নিয়ে আসে। নারায়ণ শিলা নাকি মেয়েদের ছুঁতে নেই। শুধুমাত্র ছেলেরাই নারায়ণ শিলা কে পুজো করতে পারে। ঠাকুর মশাই সব বাড়িতেই নারায়ণ শিলা সাথে করে নিয়ে যাই। আবার সাথে করে পুজো শেষ হলে নিয়ে চলে যায়।

IMG20240523103459.jpg

নারায়ণ পূজার সময় আমরা একটা কাঠের জল চৌকিতে কাঠের পাঁচটা পান পাতা, পাঁচটা কলা, বাতাসা, একটা করে সলতে দিতে হয়। ঠাকুর মশাই এসে ওই জল চৌকির ওপর নারায়ণ শিলা টাকে রেখে দেয়। পুজোর চলাকালীন ঠাকুর মশাই নারায়ণ শিলা টাকে দুধ ,গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করায়। একসঙ্গে বসে পুজোর জোগাড় করতে বেশ ভালোই লাগে। পুজোর শেষে সঙ্গে সঙ্গে তখন কেউ আসেনি প্রসাদ নিতে। দুপুর বেলাটা আমি ওদের বাড়িতেই ছিলাম। আমি বিকেল বেলায় বাড়ি আসার সময় ঈশার মা বলল সন্ধ্যার সময় আমাদের বাড়িতে এসো। সবাইকে প্রসাদ দিতে হবে। কিন্তু আমার যেতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল।

IMG20240523114735.jpg

গিয়ে দেখছি ওদের বাড়িতে কত লোক ওরা তো প্রসাদ দিয়ে শেষ করতে পারছে না। যাই হোক আমি যাবার পর ওদের হাতে হাতে সাহায্য করলাম। এবারে এত লোক প্রসাদ নিতে আসবে সেটা ঈশার মা বুঝে উঠতে পারেনি। কিন্তু কথাই বলে মন থেকে চাইলে সবকিছুই হয়। তাই সবাইকে প্রসাদ দেওয়ার শেষেও প্রসাদ ছিল। সেদিন বাড়িতে ঈশার সব পিসিরা এসেছিল প্রসাদ খেতে। এছাড়া ও পাড়ার প্রত্যেকটা লোক এসেছিল।

IMG20240523091708.jpg


পুজোর দিন আমাদের বেশ খুব সুন্দরভাবে দিনটি কেটেছিল ।এছাড়াও বুদ্ধ পূর্ণিমায় অনেক দোকানে পূজো হয়। বুদ্ধ পূর্ণিমায় শুধু নারায়ণ পূজো হয়। এমনটা নয়।বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন যারা দোকানে পুজো করে তারা লক্ষ্মী গণেশ ঠাকুর পুজো করেন। অনেকে যেমন নববর্ষের দিন দোকানে হালখাতা করে। তেমনি অনেকে আবার বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন হালখাতা করেন। বাঙালি বারো মাসে তেরো পার্বণ তো লেগেই থাকে।আজ এই পর্যন্তই থাক আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। আবার কোন নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হব।

Sort:  
 16 days ago 

খুব সুন্দরভাবে পূজোর দিনটি কাটিয়েছেন। অনেক নিয়মাবলী পালনের মাধ্যমে পূজো করা হয়। ঈশা দিদিদের বাসায় সব সময় পূজো হয় বলে তারা এসব কাজে অনেক পটু হয়ে গেছেন। আসলে এক কাজ বার বার করলে সেই কাজের উপর দক্ষতা বাড়ে। উপযুক্ত ভক্তির সাথে ঠাকুরমশাই পূজো করেন। বুদ্ধ পূর্ণিমার সাথে মিল রেখে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গন্ধেশ্বরী দেবীর পূজো করা হয় এ বিষয়টা জানা ছিলো না। নিঁখুত বেলপাতা গুলো এবং পদ্মফুলটা দেখতে ভালোই লাগছে। ধন্যবাদ সুন্দর কিছু মুহুর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।

 15 days ago 

পুজোর দিনটি খুব আনন্দের সাথে কাটিয়েছি। ঈশাদের বাড়িতে প্রায় সব পুজোয় হয়। আমার ও জানা ছিল না ।বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন গন্ধেশ্বরী মায়ের পূজো হয় ।আমিও এই প্রথমবার জেনেছি। সেদিন পদ্ম ফুলটা দেখতে আমার ও খুব ভালো লেগেছে। আমার পোস্টটিতে কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ।

Loading...
 15 days ago 

সত্যিই সিন্নি প্রসাদটা খুব সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে। এই প্রসাদের স্বাদ অতুলনীয়। বাড়ি এমনি দিন যদি সব উপকরণ দিয়ে বানানো হয় তবুও এই স্বাদ পাওয়া যায় না। এটাই আসলে প্রসাদের গুন। ঠাকুরের নামে ভোগ উৎসর্গ করলে তার স্বাদ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। যজ্ঞের অগ্নিশিখার ছবিটিও দারুণ লাগছে দেখতে। পুজোর আয়োজন বেশ ভালোই হয়েছিল, আর সেই মুহুর্তগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।

 9 days ago 

আপনাদের এই পুজোর অনুষ্ঠানগুলো অনেকটা দেখা যায় আমাদের ঈদের মতো। যেখানে আপনারা অনেক বেশি ব্যস্ত থাকেন, এবং সেটা নিয়ে অনেক পরিকল্পনা থাকে। তবে বৌদ্ধ পূর্ণিমার পূজো আপনারা খুব সুন্দর ভাবে পালন করেছেন। সবাই মিলে অনেক বেশি আনন্দ করেছেন। ধন্যবাদ আনন্দঘন মুহূর্ত আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য ভালো থাকবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 60260.23
ETH 3299.77
USDT 1.00
SBD 2.38