সন্তোষী মায়ের পূজোর নিমন্ত্রণের মূহুর্ত
নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন? আশা করছি সকলেই ভালো আছেন। আজকে আবারো নতুন একটা পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের মাঝে।
আজকে আপনাদের মাঝে শেয়ার করব সন্তোষী মায়ের পূজোর নিমন্ত্রণের মূহুর্ত। সনাতন ধর্মে সপ্তাহে প্রত্যেকটা দিনে কোন না কোন দেব -দেবীকে উৎসর্গ করে দিন গুলো পালন করা হয়। ঠিক তেমনি সপ্তাহের শুক্রবার দিনটিকে সন্তোষী মায়ের পূজো হিসাবে দিনটিকে পালন করা হয়। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে মা সন্তোষী ছিলেন গণেশের একমাত্র কন্যা। গণেশের দুই পুত্র ছিল। দুই পুত্রের নাম শুভ এবং লাভ। গণেশের দুই ছেলের ভীষণ ইচ্ছে ছিল নিজের বোনের হাতে রাখি পড়া। কিন্তু গণেশের কোন কন্যা সন্তান ছিল না। তাই গণেশ তার সন্তানদের ইচ্ছে পূরণ করার জন্য কন্যা সন্তানের সৃষ্টি করেছিল। এই কন্যা সন্তান দাদাদের হাতে রাখি পরিয়ে তাদের মনের ইচ্ছা পূর্ণ করেছিল বলে বোনের নাম দিয়েছিল সন্তোষী। মা সন্তোষী দেবী দুর্গার রূপে পূজা করা হয়। মা সন্তোষী চারটি হাত।দেবির হাতে থাকে তলোয়াল, চালের সোনালী পাত্র এবং ত্রিশূল।
ছোটবেলায় শুনতাম শুক্রবার এলেই নাকি টক খাওয়া যায় না। কিন্তু কি কারনে খাওয়া যায় না সেটা জানতাম না। শুক্রবারে সন্তোষী মায়ের পুজো করা হয় ।তাই এই দিন টক জাতীয় কোন জিনিসের সংস্পর্শে আশা যায় না। এই পুজোর সাধারণত উত্তর প্রদেশ ,নেপালের মহিলারা করে থাকে, ওইসব দিকেই সাধারণত সন্তোষী মায়ের মন্দির দেখা যায়। আমাদের দেশে মা সন্তোষীর মন্দির দেখা যায় না। কিন্তু এখন আমাদের এখানে ও অনেকেই মা সন্তোষীর আরাধনা বাড়িতে করে থাকে। এই পুজোতে লাগে দূর্বা ,ঘাস ,ফুল ,বেলপাতা, ধান, ছোলা, গুড়, ধুপ, ধুনা ,বাতাসা তবে কোন টক জাতীয় ফলের জায়গা নেই এই পুজোতে, প্রদীপ, ঘি, শঙ্খ, ঘন্টা, বট গাছের পাতা, আলু ,দুধ, মিষ্টি ইত্যাদি।
ছোটবেলায় যখন আমি একজন দিদিমনির কাছে পড়তাম। তখন দেখতাম দিদিমণি শুক্রবার আসলেই আমাদের থেকে অনেকটা দূরে পড়াতে বসতেন। এমনকি উনি আমাদের ছুঁতেন ও না।বই , খাতা দূর থেকে ছুড়ে দিতেন।আমাদের বাড়িতে সন্তোষী মায়ের পুজোর কেউ করতেন না। তাই এই পুজোর বিষয়ে তেমন কিছু আমার জানা ছিল না। বিয়ের পর থেকে দেখি শাশুড়ি মা শুক্রবার দিন টা পালন করে। কিন্তু এত কিছু পালন করেন না। শুধুমাত্র শুক্রবারে টক জাতীয় জিনিস এড়িয়ে চলেন ।কিন্তু আমাদের পাশের বাড়ির কাকিমার রয়েছেন ।উনি প্রত্যেক শুক্রবারে মা সন্তোষী পূজা করে। কাকিমার কাছ থেকে সবকিছু জানা।
গত বছর শ্রাবণ মাসে শেষের দিকে কাকিমা মা সন্তোষী পুজোর উদযাপন করেছিলেন। মানে সারা বছর পূজো করার পর বছরে এক বার মায়ের উদযাপন করতে হয়। ঐদিন ঠাকুর মশাইকে দিয়ে পুজো করিয়ে বালক ভোজন দিতে হয়। সন্তোষী মায়ের পুজো শুদ্ধ বস্ত্রে করতে হয়। এমনকি সারা বছর পুজো করার সময় ঘটে আমের পল্লব দেওয়া যায় না। কাকিমাকে দেখতাম আমার বাড়ির বাগানে করবী ফুলের গাছ ছিল। সেই গাছের পল্লব কাকিমা মা সন্তোষী মায়ের ঘটে দিতেন। গত বছরে সন্তুষ্টি মায়ের পুজোতে আমাদের সকলের নিমন্ত্রণ ছিল।
দুপুর বেলাতে পুজো শুরু হয়েছিল ।কিন্তু আমরা যেহেতু পালন করি না তাই পূজো তে বিঘ্ন হতে পারে তাই পুজোর সময় গিয়ে উঠতে পারিনি। এই পুজো খুব নিষ্ঠা সহকারে পালন করতে হয়। তাই আমি সবসময়ই এই পূজা থেকে দূরে থাকি। কিন্তু রাতের বেলাতে আমরা সকলে মিলে প্রসাদ খাওয়া দাওয়া করতে গিয়েছিলাম ।কাকিমারা রাতের বেলায় লুচি ,ছোলার ডাল , ফল প্রসাদ,মিষ্টি এইসব খাইয়েছিল। প্রত্যেক শুক্রবারে কাকিমা দের থেকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। কারণ আমরা প্রত্যেক দিনই মাছ-মাংস ,টক জাতীয় খাবার খেয়ে থাকি। তাই ওদের থেকে দূরে থাকার সব সময় চেষ্টা করি।
তখন ছিল গরম কাল। তাই রাতের বেলায় কাকিমার বাড়িতে পুজোর নিমন্ত্রণের খাবার সেরে দুজনে বেরিয়ে পড়েছিলাম একটু হাঁটতে। নির্জন রাস্তায় হেঁটে বেড়াতে বেশ ভালোই লাগে। রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটা বাজে। রাস্তা পুরো ফাঁকা ।কেউ নেই বললেই চলে ।তবুও দুজনে মিলে খানিকক্ষণ হেঁটে তারপরে বাড়ি ফিরেছিলাম।
আজ এইখানে শেষ করছি, আবার নতুন কোন পোস্ট নিয়ে হাজির হব আগামীকাল।
বলা হয়ে থাকে আপনাদের বারো মাসে ১৩ পূজা অর্থাৎ আপনারা প্রতি মাসেই কোন না কোন পূজা পালন করে থাকেন এবং সেখানে অনেক মানুষকে নিমন্ত্রণ দিয়ে থাকেন আপনি ছোটবেলা থেকে শুনে আসছেন শুক্রবারে টক ঝাল খাওয়া যায় না তবে কেন পাওয়া যায় না সেটা আপনি বড় হওয়ার পর বুঝতে পেরেছেন যাই হোক অসংখ্য ধন্যবাদ শান্ত সী মায়ের পূজার নিমন্ত্রণে অংশগ্রহণ করে আপনার মনের অনুভূতি এবং তা সম্পর্কে আমাদেরকে অবগত করার জন্য ভালো থাকবেন।