নাম সংকীর্তন

in Incredible India2 months ago

কেমন আছো বন্ধুরা? আশা করি সবাই ভালো আছো আমিও ভালো আছি আমি আমার বাড়িতে নাম সংকীর্তনের গল্প তোমাদের সাথে শেয়ার করব। আশা করি ভালো লাগবে।

IMG20240513201353.jpg

নাম সংকীর্তন এমন একটা জিনিস যে সারা বছরই হয়ে থাকে। কিন্তু গ্রামের দিকে বৈশাখ মাস জুড়ে নাকি প্রতি বাড়ি হয়। সেদিন ছিল ১২ই মে। মায়ের সাথে মাতৃদিবস পালন করার পর পাশের বাড়িতে নাম সংকীর্তন ছিল। সেখানে মা বোন সবাই গিয়েছিল। আমি বাড়িতে ছিলাম । কীর্তন শুনে বাড়িতে এসে মা আমাকে বলল যে আমাদের বাড়িতে নাকি কখনোই হরিনাম দেওয়া হয়নি। আমি শুনে একটু দুঃখ পেলাম।

IMG20240513195628.jpg

আমাদের বাড়ির আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। ছোট থেকেই দেখছি মা-বাবা খুব কষ্ট করেছে। আবার এদিকে মামার বাড়িতেও দেখেছি। দিদা ,দাদু, মামারা খুবই কষ্ট করেছে। তাই সেভাবে স্বপ্ন থাকলেও সেগুলো কেউই পূরণ করতে পারেনি। তাই সেদিন মা এসে বলাতে আমার খুব খারাপ লাগছিল। তাই ভাবছিলাম যে মায়ের ইচ্ছা টাকে যদি পূরণ করতে পারতাম তাহলে খুব ভালো হতো। সেইমতো আমি আমার বরকে জানাই বললাম যে মায়ের খুব ইচ্ছে করছে বাড়িতে হরিনাম দিতে তুমি কি কিছু করতে পারবে। ও আমার কথা শুনে বলল ভালো কথা তো বলো মাকে দিতে, আমি টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি। ও আমার কথা মতো পর দিন সকালে ব্যাঙ্কে টাকা পাঠিয়েছিল।

IMG20240513211405.jpg

মা তো শুনে খুব খুশি। আমি সেই মতো বোনের বরকে ফোন করে বললাম ।যে মা বাড়িতে নাম সংকীর্তন দেবে তুমি কালকে বাজার দোকান করে দিও। বোনের বর আমার কথা মতো পরের দিন সকালবেলায় এসে সমস্ত বাজার করে দিল। মা তো ভাবছিল যে পেড়ে উঠবে কিনা। যেহেতু গ্রামের মানুষ প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি বলে আসলে প্রত্যেকে আসে। আমি মাকে চিন্তা করতে বারণ করলাম। মাকে বললাম তুমি যাও সকালবেলায় প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি বলে আসো ।মা আমার কথা মতো সবাইকে বলে এসেছিল। মা বললো এ বছর শুধু ফলপ্রসাদ দেব। মায়ের কথা মতো ফল ,বাতাসা আর যা যা লাগে সব কিছুই আনা হয়েছিল। বোন বেশ সকাল থেকেই ফুল তুলে কয়েকটা মালা গেঁথেছিল।

IMG20240513185636.jpg

সেই মতো সারাদিন ধরে মা-বোন প্রত্যেকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। কেউ আলপনা দিচ্ছিল কেউ বা ফল কাটছিল। তার মধ্যে সব জোগাড় করা কমপ্লিট হয়ে গিয়েছিল। তারপর সন্ধ্যা বেলায় আসলো গানের আসর বসলো। তাই দু'ঘণ্টা ধরে সংকীর্তন হলো। অনেক লোকজন এসেছিল। তারাও সবাই গান শুনলো। এই প্রথমবার দেখলাম আমি। দেখলাম বেশ সবারই ভালো লাগছিল। সবাই বলছিল যে তোদের বাড়িতে গান গুলো বেশ ভালোই হয়েছে।আর অনেটা সময় ধরে হয়েছে।

IMG20240513211627.jpg

কীর্তন শেষ হবার পর সবাই প্রসাদ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আসলে অনেক বাচ্চা ছিল তাদের ঘুম পেয়ে গিয়েছিল। বাচ্চারা সন্ধ্যে থেকে বেশ আনন্দ করছিল ।সংকীর্তনের শেষে সবাইকে ফল প্রসাদ দেওয়া হল। যারা আসেনি তাদের জন্য বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। প্রায় রাত ১০ টা পর্যন্ত চলেছিল নাম সংকীর্তন। সংকীর্তনের শেষে আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম মা তুমি খুশি হয়েছো তো। মা একমুখ হেসে বলল আমি খুব খুশি হয়েছি। আসলে কোনদিনই সেভাবে আমরা কিছু করে উঠতে পারিনি। এ বছরে মায়ের জন্য এইটুকু করতে পেরে আমিও খুব খুশি। কোন বছরই গিয়ে সেভাবে থাকা হয়না। কিন্তু দেখলাম এ বছরে এইটুকু করতে পারলাম। এতে মা তো পাড়ার সকলকে বলল আমার মেয়েদের জন্যই আমি করতে পারলাম।

IMG20240513220400.jpg

আসলে মা তো মায়ের জন্য অল্প কিছু করলেও মা বলে বেড়াবে যে আমার মেয়েরা আমার জন্য অনেক করে। কীর্তনের শেষে পাড়ার লোকজন বলছিল মাকে তোর বাড়িতে ভালো আয়োজন করেছিস। বাবা বাড়িতে থাকলে আরো বেশি খুশি হতাম। বাবা ও একটু আনন্দ করতে পারতো। আমাদের বাড়িতে সেভাবে আলোর ব্যবস্থা করতে পারিনি। তাই ছবিগুলো সেভাবে তুলতে পারিনি। আজ এই পর্যন্তই থাক। চেষ্টা করব মায়ের জন্য আরো অনেক কিছু করবার ।সবাই ভাল থাকবেন ধন্যবাদ।

Sort:  
Loading...
 2 months ago 

মাঝে মাঝে দেখা যায়। আমরা অনেক দামি উপহার দিয়েও কিন্তু বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারি না। কিন্তু আজকে আপনি আপনার মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছেন। তাও আবার ওনার পছন্দের নাম সংকীর্তন এর অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে। আসলে আপনার বর কেউ অসংখ্য ধন্যবাদ। যিনি কিনা আপনার মায়ের মনের ইচ্ছাটা পূরণ করার জন্য টাকা পাঠিয়েছে।

আপনাদের ফটোগ্রাফি দেখেই মনে হচ্ছে, আপনারা অনুষ্ঠানের মধ্যে বেশ আনন্দ করেছেন। আসলে এই অনুষ্ঠান কেন করা হয় আমার জানা নেই। তবে আপনার মায়ের ইচ্ছে এবং গ্রামের সবার ভালোবাসায়, আপনি সেই অনুষ্ঠান সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করতে পেরেছেন। ধন্যবাদ চমৎকার অনুষ্ঠানের কিছুটা মুহূর্ত আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।

 2 months ago 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি আমার পোস্টটি পড়ে এত ভালো কমেন্ট করার জন্য।মা সারাজীবন ছেলে মেয়েদের মুখে হাসি ফোটাতে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু আমরা বড়ো হয়ে আমাদের কিছু দায়িত্ব থাকে। আমার মায়ের এই ছোট্ট চাওয়াটা পূরন করতে পেরে আমি ও খুশি হয়েছি। মা ও খুশি হয়েছে। ধন্যবাদ দিদি এই ভাবেই আমার পাশে থাকবেন।

 2 months ago 

নাম সংকীর্তন সম্পর্কে খুব বেশি জানি না আমি ,তবে কীর্তনের সাথে খুব ভালো ভাবেই পরিচিত। তাই ধারণা করছি যে কীর্তনের সাথে জড়িত কিছু একটাই হবে।
আপনার মায়ের বাড়িতে নাম সংকীর্তনের ইচ্ছে পূরণের জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছেন এটা জেনে সত্যিই খুব ভালো লাগলো। মায়েদের ইচ্ছেগুলো আমরা সন্তানরা চাইলেই সবাই মিলে পূরণ করতে পারি কারণ তাদের চাওয়াগুলি বেশির ভাগ সময়ই খুব বেশি বড়ো হয় না।
আপনারা দুই বোন এবং আপনাদের বরদের নাম না নিলে আমার অন্যায় হবে ,সবাই মিলে মায়ের ইচ্ছে পূরণের যে ব্যবস্থা করেছেন এটা প্রশংসার দাবিদার।
মায়ের খুশির জন্য গ্রামের সবাইকে নিয়ে এই আয়োজন করার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন সবসময়।

 2 months ago 

পোস্টটি পড়ে আপনি এত ভালো কমেন্ট করেছেন তার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ঠিকই বলেছেন মায়েদের চাওয়া গুলো বেশি থাকে না ।সেই অল্প চাওয়াগুলোকে পূরণ করতে পারলে মা খুশি হয়। আমরাও খুশি হই। এভাবেই আমার পাশে থাকবেন।

 2 months ago 

প্রতিটি মায়েরই অনেক স্বপ্ন থাকে কিন্তু তারা সন্তানদের জন্য কখনো মুখ ফুটে বলতে চায় না।
নাম সংকীর্তন মোটামুটি সবার বাড়িতেই হয়।
আপনাদের বাবার আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না থাকায় নাম সংকীর্তন করতে পারে না।
বিষয়টি শুনে আপনার খারাপ লেগেছে। তাই সাথে সাথেই আপনার বর কে জানিয়েছেন আপনার বর টাকা পাঠিয়েছে।
যাক ভালোভাবে নাম সংকীর্তন করতে পেরেছেন যেন খুব ভালো লাগলো।
সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 last month 

আপনি ঠিকই বলেছেন প্রত্যেকটি মায়ের স্বপ্ন থাকে কিন্তু আমরা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। আমার মায়েরও ছোট ছোট স্বপ্ন আছে চেষ্টা করব পূরণ করার। জানিনা পারবো কিনা। আমার পোস্টটিতে কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 65733.39
ETH 3506.40
USDT 1.00
SBD 2.51