কাঁকড়া রান্না রেসিপি
নমস্কার বন্ধুরা ,সকলে কেমন আছেন ?আশা করছি সকলেই ভালো আছেন। আজকে নতুন একটা রেসিপি নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের মাঝে। আশা করছি সকলেরই ভালো লাগবে।
কাঁকড়া হল সামুদ্রিক প্রাণী। কিন্তু এখন বহু মানুষ নদীতে ও পুকুরে কাঁকড়া চাষ করে। আমাদের পুকুরে মাছ ধরতে গেলেও মাঝে মাঝে কাঁকড়া পাওয়া যায়। কাঁকড়া দেখে আমার খুব ভয় করে। তবে কাঁকড়া খায় না এ কথা বলবো না ।ছোটবেলায় কাঁকড়া খেতে খুব ভালবাসতাম। এখন রান্না করা হয় না। তাই আর খাওয়া হয় না। গ্রীষ্মকাল বা বর্ষাকাল এই সময়তেই কাঁকড়া বেশি পাওয়া যায়। আমার মামা মাছের আরোতে থাকে। তাই যখনই টাটকা কোন মাছ কিংবা কাঁকড়া যেটাই উঠুক না মামা বাড়িতে নিয়ে আসে। টাটকা যে কোন জিনিসে খাওয়ার স্বাদ একদমই আলাদা। কাঁকড়ার পা গুলো ভাঙতেই একটু ভয় লাগে, তাছাড়া রান্না করা তেমন কোনো ঝামেলা নেই।
মামা বাজার থেকে কিংবা মাছের আরোত থেকে যেখান থেকেই আনুক না কেন মামা বেছে ধুয়ে ঠিক করে দেয়। আর মামী রান্না করে। মামি যখন রান্না করছিল। সেদিন আমি মামীর বাড়িতেই ছিলাম। তাই কাঁকড়া রান্নার ছবিগুলো তুলেছিলাম। অনেকদিন পর কাঁকড়া খেয়ে বেশ ভালোই লাগলো। মাঝে মাঝে নিত্যনতুন রেসিপি খেতে খুবই ভালো লাগে। আমাদের বাড়িতে বাছার জন্য আর রান্না করা হয় না। আমার শশুর মশাইও কাঁকড়া খেতে ভালোবাসে। তবে দিদার মুখে শুনেছি দুর্গাপুজো হয়ে গেলে নাকি আর কাঁকড়া খেতে নেই। দিদার মুখে শোনা কথা। মা দুর্গার দশটি হাত। আর কাঁকড়ার ও দশটা পা। তাই মা দুর্গার বিসর্জনের পর কাঁকড়া খেতে নেই।
তবে কাঁকড়া রান্নার সময় কাঁকড়া খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। কাঁকড়া রান্না করার পরে ভাত দিয়ে খাওয়ার থেকেও শুধু খেতে খুব ভালো লাগে। চলুন তাহলে শুরু করি কাঁকড়া রান্নার রেসিপি।
নং | সামগ্রী | পরিমাণ |
---|---|---|
১ | কাঁকড়া | ৫০০ গ্ৰাম |
২ | বড় সাইজের আলু | ৩ টে |
৩ | কাঁচা লঙ্কা | ১০ টা |
৪ | আদা | ২৫ গ্ৰাম |
৫ | গোটা জিরে | ১ চামচ |
৬ | রসুন | ৪ কোয়া |
৭ | পেঁয়াজ | ১ টা |
৮ | মিট মসলা | ১ চামচ |
৯ | টমেটোর সস | ১ চামচ |
১০ | গরম মশলা | ১ চামচ |
১১ | কালো জিরে | ১ চামচ |
১২ | সরষের তেল | ৫০ গ্ৰাম |
প্রথম ধাপ
প্রথমে কাঁকড়া ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে কাঁকরার গা থেকে পা গুলোকে ছাড়িয়ে রেখে দিয়েছি। কাঁকড়ার পা গুলো রান্না করে খাওয়া যায় ।তাই কাঁকড়ার পা গুলো আমরা ফেলিনি।
দ্বিতীয় ধাপ
এরপরে কাঁকড়ার ওপরের খোসাটা ফেলে দিয়ে আবারো পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়েছি। কাঁকড়া গুলোতে ভালো করে লবণ, হলুদ মাখিয়ে রেখে দিয়েছি।
তৃতীয় ধাপ
এবারে গ্যাসে করাই বসিয়েছি কড়াই গরম হলেই পরিমাণ মতো তেল দিয়ে দিয়েছি।
চতুর্থ ধাপ
তেল গরম হলে কাঁকড়া গুলো তেলে দিয়ে ভালো করে ভেঁজে নিতে হবে।
পঞ্চম ধাপ
ভালো করে ভাজা হয়ে গেলে তেল ঝরিয়ে একটা প্লেটে তুলে রাখতে হবে।
ষষ্ঠ ধাপ
আমি প্রথমেই পরিমাণ মতো আলু ,সমস্ত মসলা রেডি করে রেখেছিলাম। এবারে ওই তেলের মধ্যে আর কিছুটা তেল অ্যাড করে নেব। কড়াইয়ের তেলে সামান্য পরিমাণে কালো জিরে দিয়েছি।
সপ্তম ধাপ
কেটে রাখা আলুগুলো কড়াইতে দিয়ে ভালো করে ভেজে নিতে হবে ।আলুর মধ্যে সামান্য পরিমাণে লবণ আর হলুদ দিয়ে ভাজতে হবে।
অষ্টম ধাপ
আলু ভাজা হয়ে গেলে আলুর মধ্যে পেস্ট করে রাখা মসলা গুলো দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিতে হবে। আমি এখানে আদা, রসুন, পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা ,জিরে সমস্ত কিছু পেস্ট করে নিয়েছি। ওই পেস্ট করা মসলার মধ্যে মিট মসলা আগে থেকেই মিশিয়ে নিয়েছি।
নবম ধাপ
আলু ভালোভাবে কষানোর পর ভেজে রাখা কাঁকড়া গুলো কড়াইতে দিয়ে আলুর সাথে আরো ভালোভাবে কষিয়ে নিতে হবে।
দশম ধাপ
ভালোভাবে কষানোর পর পরিমাণ মতো জল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ঢাকনা খুলে যখন কড়াইয়ে ঝোল ফুটে উঠবে ।তখনই টমেটো সস দিয়ে ভালো করে নাড়াচাড়া করতে হবে।
শেষ ধাপ
আরো ভালোভাবে ফুটে উঠলে নামানোর কয়েক মিনিট আগে গরম মসলা দিয়ে নাড়াচাড়া করে নিতে হবে।
তৈরি
এইভাবেই তৈরি হয়ে গেল কাঁকড়া রেসিপি।
বেশ অনেক বছর পরই কাঁকড়ার রেসিপি খেয়ে খুব ভালো লেগেছিল। আপনারা যারা কাঁকড়া খেতে ভালোবাসেন এইভাবেই তৈরি করলে আশা করি আপনাদেরও খুব ভালো লাগবে। আমার মামার বাড়ি প্রত্যেকেই কাঁকড়া খেতে ভালোবাসে ।তাই আমিও ছোট থেকে কাঁকড়া খেতে অভ্যস্ত ।কিন্তু এখন যেহেতু শ্বশুরবাড়িতে তেমন রান্না করা হয় না। তাই খাওয়া অনেকটাই কমে গেছে। সব সময় বাজারে পাওয়া যায় না ।যদিও বা পাওয়া যায় সাথে সাথে বিক্রি হয়ে যায়। শশুর বাড়ি যেহেতু গ্রামে তাই ওখানে খুব কাঁকড়া পাওয়া যায়। কারণ শ্বশুরবাড়ির পাড়ার প্রত্যেকেই জেলে।
কিন্তু ওখান থেকে সব সময় আনা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। আমার মত কারা কারা কাঁকড়া খেতে ভালোবাসেন অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আপনারা আপনাদের পরিমাণ অনুযায়ী সব জিনিস ব্যবহার করবেন না। আমরা বাড়িতে দুপুরে খাবার জন্য তরকারি রান্না করেছিলাম । তাই আলু একটু বেশি ব্যবহার করেছি। আপনারা চাইলে শুধু কাঁকড়া রান্না করতে পারেন।
আজ এখানেই শেষ করছি ।আশা করছি সকলেরই খুব ভালো লাগবে। পরবর্তী আবার নতুন কোন রেসিপি নিয়ে হাজির হব আপনাদের মাঝে।
কাঁকড়া খেতে আমার দারুন লাগে, তবে বহুদিন হলো খাওয়া হয়নি। তোমার রান্না দেখে জিভে জল চলে এলো। একবার সুন্দরবনে ঘুরতে গিয়ে কাঁকড়া ধরা থেকে শুরু করে রান্না করার রেসিপিও শিখে এসেছিলাম । তোমার রেসিপিটা দারুণ লাগলো।
রেসিপিটা তোমার ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগলো। আসলে সুন্দরবনের দিকেই ভালো কাঁকড়া পাওয়া যায়।
দিদি, কাকড়া আমার কাছে অনেক বেশি প্রিয়। তবে ছোট কাঁকড়ার বোড়া আমার সব থেকে বেশি ভালো লাগে। তবে বড় কাঁকড়া যে পছন্দ করি না এমনটা নয়, সত্যি বলতে কাঁকড়ার ভুনা যে এত প্রিয় যে ভাবলেই জিভে জল চলে আসে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দরভাবে রেসিপি শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।
কাঁকড়া রেসিপিটা আপনার খুব ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগলো। রেসিপিটি পড়ে সুন্দর পোস্ট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমি দেশে থাকতে কাকড়া খেতাম না তবে মালয়েশিয়া আসার পর এখন খাই এগুলো খেতে খুবই সুস্বাদু। আমাদের বাড়িতে কোন সময় কাকড়া রান্না করে না কিভাবে রান্না করতে হয় সেটাও জানে না আমি এই প্রথম দেখছি আপনার কাঁকড়া রান্নার রেসিপি।
কাঁকড়া সাধারণত বিদেশে ভালো পাওয়া যায়। পোস্টে কমেন্ট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।