গল্পের নাম। "দ্বৈত সত্তা"
হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব।আশা করছি সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন । আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নতুন একটা গল্প লেখা শুরু করছি।
চলুন তাহলে শুরু করা যাক
দ্বৈত সত্তা
আমি আর বাঁচতে চাই না,কেনই বা বাঁচবো?? এই নিয়ে পনেরো বার সুইসাইড করতে চেয়েছি। কিন্তু বেঁচে গেছি। কিন্তু কেনো বার বার বেঁচে যাচ্ছি? তবে কী সৃষ্টিকর্তা চায় না এতো দ্রুত আমি চলে যাই??শুনেছি, প্রত্যেকটা মানুষের জন্মের পিছনে অনেক বড়ো কারন থাকে। কিন্তু আমার কাছে বেঁচে থাকা মানে প্রতিদিন বেঁচে থাকার জন্য লড়াই। তবে কী এটাই আমার বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য??মা বলেছিলো , আমি তার ছেলে না। সে ছেলে পছন্দ করে না। ছেলেদের ঘৃণা করে। আমি জানি না আমার বাবা কে।তখন থেকেই আমি পথেই কাটিয়েছি।
আমার সব থেকে বড়ো অপরাধ হচ্ছে পৃথিবীতে আসা। আমি চাইলেই অর্কিড কিংবা পদ্ম হতে পারতাম,কিন্তু কেনো?? কেনো মানুষ হলাম?? এখন আর আমি সুইসাইড করতে চাই না, আমার জীবনের দুটো লক্ষ্য।আমার বাবা আর মাকে খুঁজে বের করা ।আর একটা লক্ষ্য আমি এখনো জানি না।
রাস্তায় একটা দম্পতি তাদের বাচ্চা নিয়ে রাস্তাপার হচ্ছে , একটা গাড়ি হঠাৎ এসেই বাচ্চাটাকে তুলে নিয়ে চলে গেলো। বাচ্চাটার বাবা মা কে গুলি করে মেরে ফেললো।তার পর অন্ধকার একটা ঘরে বাচ্চাটাকে নিয়ে এসে একনাগাড়ে মারধর করতে শুরু করলো। বাচ্চাটার স্কুল ইউনিফর্ম থেকে ব্যাচ টা নিয়ে তাতে লেখা নামটা জোরে পরতে লাগলো আততায়ী, জোরে জোরে বলতে লাগলো আবিদ , তবে তুই আবিদ??.
:-তোকে কেনো তুলে নিয়ে এসেছি জানিস।বাচ্চা টা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলতে লাগলো দয়া করে আমাকে ছেড়ে দাও আন্টি।আমি তো কিছু করিনি।
:- কী বললি আন্টি?? আবার বল , আবার আন্টি বল।আবিদ ভয় পেয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো, তখন খুনি চিৎকার করে বললো , কাঁদতে থাক কেউ শুনবে না তোর চিৎকার। তুই এখনো পৃথিবীর মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন, শুধু আমিই জানি তুই কোথায়।এই বলে সে আবিদকে কিছু খাবার দিয়ে চলে গেলো ।
আমি তাকে প্রশ্ন করলাম কেনো বাচ্চাটাকে বেঁধে রেখেছো। কেনো তাকে কষ্ট দিচ্ছো। বাচ্চা টা তো কোনো অপরাধ করেনি। এটা বলতেই সে আমাকে সজোরে থাপ্পর মেরে চিৎকার করে বলে উঠলো , বাচ্চাটাকে আমি মারতে চেয়েছিলাম , কেনো মারিনি জানিস?? কারন ও আমাকে আন্টি বলেছে। তাই আমি ওকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি ওকে আমার মতোই মানুষ বানাবো।
:- তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে আমার বাবা মা কে খুঁজতে সাহায্য করবে। কিন্তু তুমি এখনো তা পারোনি।
:- তুই অনেক বেশি কথা বলতে শিখেছিস আবিদ, এতো বছর কে তোর পাশে ছিলো??? কে তোকে এতো বছর বাঁচিয়েছে ?? তুই পনেরো বার মরতে চেয়েছিস , আমি তোকে বাঁচিয়েছি। যখন আমি বলেছি তোর মা বাবাকে খুঁজে দেবো , তখন খুঁজে দেবো। এখন আমাকে শান্তিতে থাকতে দে।
:- কিন্তু তুমি কী করছো?? একের পর এক খুন করে যাচ্ছো। তাও মাস্ক পরে । তুমি কী জানো আমি তোমাকে মেরে ফেলতে পারি। এটা বলতেই সে আমাকে আবার থাপ্পর মারল। চিৎকার করে উঠলো, সে তখনই চিৎকার করে যখন সে অনেক ভয় পায়। তবে আমি তাকে মারতে চাই না । আমার বয়স এখন ২১ বছর । সে আমার সাথে ১১ বছর ধরে আছে। আমি তাকে আমার বোনের মতো ভাবি । যদিও তার সাথে আমার সম্পর্ক ভালো নয়। তবুও সে আমাকে করুনা করে।আমি অনেক ভিতু। সে না থাকলে হয়তো আমি মরে যেতাম অনেক আগেই।
আজকে আমি আমার মা বাবা কে খুঁজতে বের হয়েছি। আমি আমার মা কে অনেক দিন যাবৎ অনুসরণ করছি। কিন্তু মায়ের সামনে যেতে আমি ভয় পাই , আমার সাথে আমার বোন আছে। ও আমাকে জোর করে মায়ের কাছে নিয়ে গেলো। আমার মা এখন অন্যত্র বিয়ে করেছেন সেখানে সে ভালোই আছেন, তার একটা মেয়ে আছে, আর একটা ছেলে। তাহলে তিনি কেনো আমাকে ছেড়ে গেলেন?? তবে কী সব কিছু আমাকে ছেড়ে যাওয়ার বাহানা ছিলো।
আমি আমার মা কে গিয়ে প্রশ্ন করলাম কেনো আমাকে একা ছেড়ে গেলে। কিন্তু সে একের পর এক মিথ্যা বলেই যাচ্ছেন। আমার মা এখনো আগের মতই আছে। আমি জানি না কেনো তিনি আমাকে ঘৃণা করেন। আমার বোন তাকে অজ্ঞান করে তার সেই অন্ধকার মহলে নিয়ে আসলো। তারপর তাকে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখলো একটা বড়ো আগুনের চুল্লির উপর। আমি বোনকে অনেক নিষেধ করেছি এমনটা করতে। কারন তিনি আমার মা,কিন্তু আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।
আমি অনেক কেঁদেছি অনেক মিনতি করেছি । আমি বলেছিলাম ওকে আমার মা কে না মেরে ফেলতে কিন্তু শুনেনি , মেরে ফেলেছে , সেই জলন্ত আগুনের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আমি এখনো শুনতে পাই আমার মায়ের চিৎকার । তবে এমনটা আমি চাইনি। আমি তাকে ঘৃণা করি না। কেনো আমার সাথেই এমনটা হয়।আমার বোন অনেক মানুষ কে খুন করেছে অনেক নিষ্পাপ শিশুদের একা করেছে। আমি এমনটা চাইনি।
আমি আমার বাবাকেও খুঁজে পেয়েছি,সে বিদেশে থাকেন সেখানেই বিয়ে করেছেন শুনেছি দেশে আসবেন এক দিন পরেই। আমি জানি আমার বোন তাকেও মেরে ফেলবে, কিন্তু আমি এমনটা চাইনা। তবে এটা হবেই।
দুই দিন পরে:
ব্রেকিং নিউজ বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব ফজলে রাব্বীর আকস্মিক মৃত্যু। তিনি আত্নহত্যা করেছেন।এই নিউজটা দেখে আমি থমকে গেলাম। এটা আত্নহত্যা নয়।এটা পরিকল্পিত মৃত্যু। এর জন্য আমার বোন দ্বায়ি। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম ও হাসতে লাগলো, হাসতে হাসতে বলতে লাগলো।এখন তোর আর আমার মৃত্যুর সময় এসেছে।মানুষের বেঁচে থাকার একটা কারণ থাকে আমার আর তোর বেঁচে থাকার কারন, উদ্দেশ্য এটাই ।
হঠাৎ পুলিশের গাড়ির সাইরেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আমার বোন সাহস নিয়ে দরজা খুললো। পুলিশ এসে আমাকে গ্রেফতার করলো কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না কী হচ্ছে এসব। পুলিশ ইন্সপেক্টর আমাকে থাপ্পর দিয়ে বলল, অনেক হয়েছে এবার তোর পর্দা ফাস।কিন্তু আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।প্রতিটা খুনের রেফারেন্স অনুযায়ী আমিই খুনি।সি সি টিভি ফুটেজে আমিই খুনি স্পষ্ট।তবে আমার বোন কোথায়??তবে কী দ্বৈত সত্তা??
গল্পটি কেমন লাগলো বন্ধুরা..। অবশ্যই কমেন্ট করে জানানোর অনুরোধ রইলো। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আসসালামু আলাইকুম
আবারও একটি অসাধারন গল্প পড়তে চলেছি। আজকের পর্বটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো। মনে হচ্ছে আদেও দুইবোন নয়। দেখাযাক শেষ পর্যন্ত কি হয়।অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকবেন ।
আপনার মূল্যবান মতামত এর জন্য ধন্যবাদ।
Curated by - @deepak94
Thank you for supporting❤️