আমরা পাঁচ বন্ধু (দ্বিতীয় পর্ব)
আসসালামু আলাইকুম।আশাকরছি সবাই ভালো আছেন,আমিও আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। ইন্ডিয়ান বাসী, বাংলাদেশ বাসী,সবাইকে জানাই আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও সবার প্রতি আমার ভালবাসা রইল।
তাহলে গল্প শুরু করা যাক!
ট্রেনটি যখন কমলাপুর স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করলো চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। তখন হেলালকে, করিম বলল ,কিরে দোস্ত জীবনে তোর প্রথম ট্রেন জার্নি কিছু বল।
হেলাল হেসে বলল বন্ধু, আমার এইটুকু বয়সে আমি সব সময় ট্রেন, বাহির থেকে দেখেছি। কখনো ভিতরে ওঠার সুযোগ হয়নি। আজকেই আমার প্রথম ট্রেন যাত্রা । সত্যিই ট্রেনের ঝক,ঝক ঝক,ঝক শব্দগুলো। আমি বইতে পড়েছি কিন্তু আজকে আমি অনুভব করতে পারছি, অনেক মধুর একটা শব্দ ভালই লাগছে ।ট্রেন যতটা বাহির থেকে দেখা যায় হেলে দুলে চলে। কিন্তু ট্রেনের ভিতরে থাকলে তেমন কিছু বোঝা যায় না। এই বলে হেলাল ট্রেনের জানাল উত্তর দিকে তাঁকিয়ে দৃশ্য দেখছে, রাতের দৃশ্য দুই চোখ ভরে দেখছে! শীতের রাত খানিকটা জানালা খুলে, আবার কিছুক্ষণ পর জানলা বন্ধ করে দেয়, হেলাল।
এইসব দেখে খুবই বিরক্ত হচ্ছে, করিম,সজল, জাফর ও মিনহাজ, সবাই মিলে হেলাল কে বলছে, ভাইরে এই রাতের বেলা জানালা খুলিস না, দেখস না বাহির থেকে ঠান্ডা বাতাস আসছে। জানালা বন্ধ কর, চল আমরা একটু তাস খেলি, তাস খেলে সময় কাটাই। টুয়েন্টি নাইন খেলবে ওরা সবাই কিন্তু, হেলাল খেলা পারে না।
তাই হেলাল ওদের খেলা কিছুক্ষণ দেখছে। হেলাল সবাইকে বলল আমি একটু বাহির থেকে আসি! ক্যান্টিনে থেকে আমি কিছু তোদের জন্য কিনে নিয়ে আসি। হেলালের এই প্রথম চলন্ত ট্রেনের ভিতরে হাটা, এক বগী থেকে, অন্য বগি, এই ভাবে বেশ কয়েকটা বগী পরে হেলাল ক্যান্টিন খুঁজে পেল। এবং ট্রেনের কিছু ছবি তোলার চেষ্টা করল কেননা, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে হবে। সবার জন্য হেলাল কিছু খাবার কিনলো। পরে তাদের নিজস্ব কেবিনে গেল হেলাল। বন্ধুবান্ধব তখন অনেক মজা মাস্তি করতাছে গান গাইতাছে ,এখন বাজে রাত ৩ টা, তখন এই আন্তঃনগর ট্রেনটা একটা ছোট স্টেশনে গিয়ে থামলো।
এই স্টেশনের নাম হল আখাউড়া স্টেশন।
তখন জাফর আর করিম স্টেশনে নামলো। কিছু কিনার জন্য, শীতের রাত চারদিক থেকে কুয়াশা, কুয়াশার জন্য করিম যে তার পাশে আছে জাফর দেখতে পাচ্ছে না, সেই সাথে অন্ধকার প্ল্যাটফর্ম। শুধু কিছু ল্যাম্প পোস্টের বাত্তি দূর থেকে, নিবো- নিবো দেখা যাচ্ছে, তাঁর উপর কুয়াশায় ঘেরা, জাফর মোবাইল ফোনের লাইটটি জ্বালাইলো, আর করিমরে বলছে ওই যে দেখা যাচ্ছে, একটা টঙ্গের দোকান, চলো ঐ দোকানে যাই। অন্যদিকে বাকিরা সবাই ট্রেনের কেবিনেতে বসে রয়েছে। জাফর আর করিম ৫০ টাকার চা কিনলো সবার জন্য, তাকিয়ে দেখলো, এই প্ল্যাটফর্মে একজন লোক ডিম বিক্রি করছে। করিম ডিম বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসা করল মামা সিদ্ধ ডিমের হালি কত করে, মামা বলল, ডিমের হালি, মামা আপনার জন্য ৪০ টাকা করে। করিম বলল তিন হালি ডিম দেন মামা,
জাফর আর করিম আবার কেবিনে চলে আসলো। তারপর সবাই মিলে সিদ্ধ ডিমগুলি খায়, এবং সবাই মিলে কথাবার্তা বলছে তারা সীতাকুণ্ড নেমে সর্বপ্রথম কি কাজ গুলি করবে কোথায় যাবে। এই ভাবে ২ ঘন্টা পার হয়ে গেল, কখন যে সকাল সাড়ে পাঁচটা বেজে গেল কেউ বলতে পারে না। তখনই জাফর সবাইকে বলছি আমাদের গন্তব্যের স্থান চলে এসেছে। সবাই সবকিছু গুছিয়ে নাও আমরা এখনই নামবো,
এটা হল একটা ছোট্ট স্টেশন এই স্টেশনে ট্রেনটি দশ মিনিটের জন্য থামে, তারপর আবার চিটাগাং এর উদ্দেশ্য রওনা দিবে। তখন জাফর, মিনহাজ, সজল, হেলাল, করিম, সবাই তাদের ব্যাগ গুছিয়ে নেমে পরল। প্রথমেই তারা সবাই মিলে একটি হোটেলে গেল, হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। পরে তারা কিছু নাস্তার জন্য অর্ডার করলো, সকাল বেলার নাস্তা শেষ করল,বাইরে অনেক প্রচন্ড ঠান্ডা ও কুয়াশা।
জাফর আর করিম সবাইকে বলছে , এইখান থেকে সীতাকুন্ড পাহাড়ে যেতে সময় লাগবে এক ঘন্টা। আমরা সবাই অটো রিস্কাতে চড়ে যাব। তারা পাঁচজন বন্ধু এই সর্বপ্রথম একসাথে কোন একটি অচেনা জায়গায় পরিবার থেকে দূরে আছে। করিম আর জাফরের মনে তো কৌতুহল অদ্ভুত কিছু জানার আগ্রহ এই খানে আসার আগে থেকে ছিল। কেননা হেলাল সজল আর মিনহাজ ওরা যখন তিনজন বলেছিল তারা চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ডে পাহাড়ে ঘুরতে যাবে,
ওই সময় জাফর ও করিম ইন্টারনেটে অনেক কিছু অদ্ভুত ও প্রাচীন তথ্য তারা সংগ্রহ করেছে। এবং জাফর আর করিম জেনেছে হিন্দু শাস্ত্র মতে সীতা যখন বনবাসে যায় তখন এই চট্টগ্রাম সীতাকুন্ড পাহাড়ে সীতার বসবাস করে , আর এইখানে অনেক নরও বলি দেওয়া হতো, এই সব প্রাচীন ও ভৌতিক বিষয় তারা জেনেছে এই চট্টগ্রাম আসার আগে থেকে, কিছুক্ষণ পরই তারা সীতাকুন্ড পাহাড়ের সামনে এসে পৌঁছালো। সকাল তখন বাজে ৭ টা, দিনটা ছিল রবিবার! তাদের সবার চোখে আনন্দের ছোঁয়া, কিছুক্ষণ পরই সবার বাসা থেকে ফোন আসলো। সবাই তার পরিবারের সাথে কথাবার্তা বলল।
পাহাড়ে ওঠার সময় রাস্তার একপাশে কিছু মানুষ লাঠি বিক্রি করছে, জাফর আর করিম সবাইকে বলছে তোরা কেউ লাঠি কিনবি। সবাই একসাথে বলল লাঠির কিসের দরকার, আমাদের লাঠির দরকার নাই তোরা লাঠি কিন । জাফর ও করিম দুইটা লাঠি কিনে নিল বিশ টাকা দিয়ে। জাফর ও করিম জানতো এই সীতাকুণ্ড পাহাড় টি ১০২০ ফিট। অনেক উপরে উঠলে পা ব্যথা হয়ে যাবে, তখনই লাঠির সাহায্য দরকার হবে।
এই ভাবে তারা পাহাড়ে উঠার শুরু করল, এবং পাঁচ বন্ধু মিলে। এই প্রথম কাছ থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দৃশ্যগুলো উপভোগ করছে তাদের কাছে ভালই লাগছে, একটু পরে তারা পাহাড়ের প্রায় ৫০০ ফিট উপরে উঠল। পরে হেলাল আর সজলের পা আর চলছে না পা ব্যাথা করতাছে , হেলাল আর সজল সবার কাছে সাহায্য চাচ্ছে, আমাদের ধর বন্ধু আমরা আর হাঁটতে পারছি না, এখানে একটু রেস্ট নেই। সবাই ওদের কথা মত এখানে একটু রেস্ট নিলো। করিম আর জাফর হাসতাছে , তখন হেলাল আর সজল বলছে, আমরা পায়ের ব্যথা মরছি, শালারা আমাদের সাথে মজা নিতেছো,
পানি দে পানি খামু, তখন করিম সজলকে পানি দিল। করিম বলছে বুঝলি বন্ধু এটাই হচ্ছে বুদ্ধি এর জন্যই লাঠি আনছি আমরা জানতাম এই পাহাড়ের উচ্চতা ১০২০ ফিট তাই লাঠির দরকার হবে, এই বলে করিম আবারো হাসতাছে। তারা আধা ঘন্টার মতন রেস্ট নিল এবং চারো- দিকে খুব কৌতুহল ভাবে সবাই মিলে তাকিয়ে রয়েছে। হেলাল সজল করিম সবাই মিলে ছবি তুলছে অনেক স্টাইলে এবং অনেক আনন্দ করলো, পরে জাফর সবাইকে বলছে অনেক রেস্ট নিয়েছি চল আরো উপরে যেতে হবে। এইভাবে তারা আবার পাহাড়ে উঠতে শুরু করল,
আস্তে, আস্তে সবাই মিলে উঠতাছে যখন ১০০০ ফিট উচ্চতা সবাই উঠলো, তখন হঠাৎ করে অনেক জোরে একটা ঠান্ডা বাতাস আসলো। হেলাল এই বাতাসটা সহ্য করতে পারল না, সে পড়ে যাবে হঠাৎ করেই জাফর তাকে ধরে ফেলল এবং হেলাল অনেক পায়ে ব্যথা পেল। সবাই হেলাল কে বলছে বন্ধুরে তুই, একটুর জন্য পাহাড় থেকে পড়ে যেতে। আল্লাহ বাঁচাইছে তোরে, হেলালের পা অনেক পরিমাণ রক্ত ঝরছে এবং সবাই খুব চিন্তিত হেলালকে নিয়ে, এত পাহাড়ের উপরে কি করবে বুঝতে পারছে না তাঁরা । তখন বিকাল ৩.৩০ বাজে।
পাহাড়ের এত উচ্চতায় ওঠে চারদিকে শুধু মেঘ আর মেঘ। সবাই জানে প্রায় এক দেড় ঘণ্টার মতো বিশ্রাম নিল। এবং পাহাড়ে ওঠার আগে অনেক শুকনা খাবার তাদের সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। এই খাবারগুলি তারা খায়, এই পাহাড়ে শুধু তারাই আসে নাই আরো অনেক দল বা মানুষ ঘুরতে এসেছে, এর ভিতর সজলের সাথে পরিচয় হয়ে এক লোকের নাম তার রফিক । রফিক ভাই হেলালের পা দেখে তার ব্যাগ থেকে কিছু ব্যান্ডেজ আর মেডিসিন হেলালকে দিল।
পরে হেলালকে ধরে সবাই মিলেমিশে পাহাড়ের একবারে সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠলো উঠে একটা মন্দির পেলো । সজলের সাথে যে পরিচয় হয়েছে রফিক ভাই ওদের সবাইকে বলছে, ভাই আপনার বন্ধু বান্ধব নিয়ে এই খানে রেস্ট করেন। পরে পাহাড় থেকে নিচে নাইমেন। তখন জাফর বলছে ভাই আমরা আজকে রাত্রে এই পাহাড়ে ক্যাম্পিং করব, এই কথা শুনে রফিক ভাই বলছে, ভাই এখানে আপনাদের রাত্রে থাকাটা ভালো হবে না। তখন এক অদৃশ্য শক্তি মানব ছায়াছবি দেখতে পেল হেলাল! হেলাল চিৎকার করে বলল ভাই, এখানে কিছু দেখছেন রফিক ভাই, আপনার এখানে কিছু দেখছেন। তখন সবাই হেলাল কে বলছে আরে এই এখানে কিছুই নাই।
কিছু কথা
আমার যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে। সবাই ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।(দ্বিতীয় পর্ব শেষ)
একুশে ডিসেম্বর ২০২৪ সাল