মাছ ধরতে গিয়ে রিপন আর ফিরে আসতে পারেনি ||মনের আর্কাইভ থেকে||

in Incredible India2 years ago

হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

children-g8dca231b5_1920.jpg

source

একদিন সকালবেলা রিপন মাছ ধরতে গিয়েছিল। বাড়িতে শুধু ওর মা জানে রিপন কোথায় গিয়েছে। সূর্য যখন মাথার উপরে আসলো আর কিছুক্ষণ পরেই যোহরের আজান দিয়ে দিবে। অনেক বেলা হয়ে গেল রিপন তখনও বাসায় ফিরেনি। এখন তার মায়ের মনে একটু দুশ্চিন্তা হচ্ছে। একটু পরেই রিপনের বাবা এসে খাবার সময় যখন দেখতে পাবেনা তখন হুলস্থুল কান্ড বেজে যাবে।

দুপুরে খাওয়ার সময় এই নিয়ে কিছু কথা কাটাকাটি এরই মধ্যে হয়ে গেছে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেলো আর কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যায় নেমে যাবে। তখন পর্যন্ত রিপন বাসায় ফেরেনি। মায়ের মন সন্তানের বিপদ হলে আগে থেকেই আন্দাজ করতে পারে। তাই সকাল থেকেই অনেক দুশ্চিন্তা হচ্ছিল মনে। সারাদিন চলে গেল হয়তো ছেলের পেটে কোন দানাপানি পড়ে নাই।

সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্তে একটি ছেলে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে আসছে, যে ছেলেটি রিপনের সাথে মাছ ধরতে গিয়েছিল। ছেলেটির নাম সোহাগ। সোহাগের কান্না করা দেখে রিপনের মা তাকে ধরে বারবার জিজ্ঞাসা করছে কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে বল। সোহাগের কান্নার আওয়াজ আরো বেড়ে গেল।

কাঁদতে কাঁদতে সোহাগ বলল রিপনকে সাপে কেটেছে। কয়েকজন মিলে ওকে ধরে নিয়ে আসছে। এই বলে সোহাগ হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। রিপনকে সাপে কেটেছে খবর শুনে বাড়ির সব লোক উঠানে এসে একত্রিত হল।

সোহাগ কাঁদছে আর ওদিকে রিপনের মা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুখে কোন কথা নেই। হঠাৎ এই খারাপ খবর শুনে রিপনের মায়ের কথা হারিয়ে গেছে। একজন মায়ের কাছে সন্তানের এত বড় বিপদের খবর, এটা কোন মা কি আর সহজে মেনে নিতে পারে।

japan-ge0cd2f70a_1920.jpg

source

ঘটনাটি কয়েক বছর আগের। সেদিন সন্ধ্যাবেলা বাইরে সমস্ত কাজকর্ম শেষ করে সবেমাত্র বাসায় ফিরেছি। এমন সময় খবর এলো রিপনকে সাপে কেটেছে এবং সে মৃত্যু পথযাত্রী। এই কথা শুনে আমাদের সকলেরই মাথা খারাপ হওয়ার অবস্থা। কিন্তু সন্ধ্যা বেলা যাওয়ার কোন ব্যবস্থাই নেই। আমার গ্রামের বাড়ি ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে রৌমারী উপজেলা।

রিপন আমার চাচাতো ভাই। আমার থেকে অনেক ছোট কিন্তু তার ছোট ফুটফুটে একটি সন্তান আছে। বয়স সম্ভবত এক বছরের কমই হবে। যাইহোক খবরটা শুনে এত খারাপ লেগেছিল, আরো বেশি খারাপ লাগলো সঙ্গে সঙ্গে যেতে পারছি না এজন্য। বারবার সেই ছোট বাচ্চাটার কথাও মনে পড়ছে এখন ওর কি হবে।

ইতিমধ্যে রিপনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আর হাসপাতাল থেকে মৃত ঘোষণা করেছে। কিন্তু আপনজনের মৃত্যুর খবর কেউ কি সহজে মেনে নিতে পারে। তাই যে যা বলেছে তাই করার চেষ্টা করা হয়েছিল। হাসপাতাল থেকে ফিরে সাপুড়ে দেখে এনেও তারা শেষ চেষ্টা করছে। অনেকের ধারণা এভাবেও কাজ হতে পারে।

আমি কখনো এমন কুসংস্কারে বিশ্বাস করিনি। কিন্তু এক্ষেত্রে মনের অজান্তেই সায় দিয়েছি সব চেষ্টা করার জন্য। যাইহোক পরের দিন ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই একটি নৌকা রিজার্ভ করলাম ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দেয়ার জন্য। নৌকা ছেড়ে দিল কিন্তু আজকে এত দেরি লাগছে কেন নদী পারাপারে। মনের মধ্যে প্রচন্ড অস্থিরতা কাজ করছে তাই হয়তো এমনটা হচ্ছে।

নৌকা থেকে নেমে দ্রুত বাড়ি চলে গেলাম। সাথে বাবা-মা ও আমরা ভাই-বোনরা ছিলাম। গ্রামের বাড়িতে যেতে নৌকা থেকে নেমে অটো রিক্সা ছাড়া অন্য কোন বাহন ছিল না। তাই অন্যদের অটো রিক্সায় তুলে দিয়ে আমি বাইক নিয়ে বাসায় পৌঁছে গিয়েছিলাম আগেই। বাসায় পৌঁছে যা বুঝতে পারলাম ডাক্তার সঠিক কথাই বলেছিলেন। কিন্তু বাসায় লোকজন তখনও চেষ্টা করে যাচ্ছে।

আমাদের সবকিছু মেনে নিয়ে এখন দাফনের কাজ শেষ করতে হবে। এই কথা বলায় বাড়ির সবাই হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিল। কিন্তু তাই বলে বসে থাকলে চলবে না। তাছাড়া একদিন আগের ঘটনা এখনই ব্যবস্থা না করলে দেরি হয়ে যাবে।

sunset-ga8db022d3_1920.jpg

source

একটি সূর্য অস্ত যাওয়ার মত আমাদের পরিবার থেকে আরো আরো একটি তাজা প্রাণ অস্তমিত হয়ে গেল। অথচ এরকমটা হওয়ার কথা ছিল না। এরকম দুর্ঘটনা আমাদের কারোর জন্যই কাম্য নয়। সময়টা ছিল বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে। এই সময় আমাদের পরিবারের ছোট বাচ্চারা বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে পাড়ার অন্যান্য ছেলেদের সঙ্গে অনেক দুরন্তপনায় মেতে উঠে।

রিপন কখনো মাছ ধরতে যায়নি যাওয়ার কথাও ছিল না। সেদিনই প্রথমবার গ্রামের বাকি ছেলেদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে আর প্রাণ নিয়ে ফিরে আসেনি। বর্ষার পরে ঝপঝাড় থেকে সাপ শুকনো জায়গা দেখে উপরে চলে আসে। এই সময়টা খুব সাবধানে থাকতে হয়। পানির কাছাকাছি গিয়ে পথ চলার সময় রিপন সাপের গায়ে পা দিয়েছিল। আর তাতেই এই সর্বনাশ।

সকলের জন্য আজ এখানে একটি মেসেজ দিয়ে যেতে চাই। সাপ দংশন করার পর ছেলেগুলো প্রথম যে ভুলটি করেছিল তা হচ্ছে রিপনকে তারা হেঁটে নিয়ে এসেছিল। প্রথমত এই ভুলটি কখনো করা যাবে না সাপ দংশন করার পর কখনোই হেঁটে আসা যাবেনা। তাহলে দ্রুত বিষ রক্তে ছড়িয়ে যাবে।

দ্বিতীয় ভুলটি করেছে যেখানে কামড় দিয়েছিল তার থেকে উপরে তারা কাপড় দিয়ে বাঁধেনি। মনে রাখতে হবে সাপ দংশন করলে রশি বা শক্ত এরকম কিছু দিয়ে বাঁধা যাবেনা। নরম সুতি কাপড় দিয়ে উপরে দুই তিন জায়গায় বাঁধতে হবে একটু হালকা করে।

তৃতীয় ভূলটি করেছে প্রাথমিক এই কাজগুলো করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেনি। আমাদের অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং চেনার চেষ্টা করতে হবে কোন সাপ দংশন করেছে। কারণ আমাদের নিকটবর্তী প্রায় সমস্ত সরকারি হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায়।

আমরা যদি সতর্কতার সাথে এই কাজগুলো করতে পারি তাহলে হয়তো রিপনের মতো আর কাউকে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হবে না। যদিও জন্ম-মৃত্যু সৃষ্টিকর্তার হাতে এটা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন তাই সেটুকু দিয়ে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাওয়া উচিত।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

5ShzsKnKF7vppGeV6VN3m3GSDcLoRruAhMmifZtFSDkYScdoqgM9j38L3Wo1XJKP9Yh52TtNQSNgCzf9khiri9B614HpnyjE6NemgRRvGAFfocoMRQ2Kxyg8pa3GrNUTCftH6w914wFGXaJ6tQf4Rcj8.jpeg

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

3q52Dkr5nBe3kDiHrk4F3qdzX6E5VuVcCcF7TDQDco37AUsMDxK7aJ1v5hKA8jfHHgL9ABnDXogr1.gif

Sort:  
Loading...
 2 years ago 

সোহাগ কাঁদছে আর ওদিকে রিপনের মা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুখে কোন কথা নেই। হঠাৎ এই খারাপ খবর শুনে রিপনের মায়ের কথা হারিয়ে গেছে। একজন মায়ের কাছে সন্তানের এত বড় বিপদের খবর, এটা কোন মা কি আর সহজে মেনে নিতে পারে।

ভাই আপনি কী ঘটনা পড়ালেন? বিশেষ করে এই মার্ক করা লেখাটা পড়ে আমার শরীরের লোম দাড়িয়ে গেছিলো। এবং চোখে জল আসার উপক্রম হলো।

ঘটনাটি অনেক ভালো লেগেছে। এবং আপনার এই ট্রিটমেন্ট টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক কিছু জানতে পারলাম।

ধন্যবাদ আপনাকে এমন পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য। আসসালামু আলাইকুম

আমার লেখাগুলো সঠিকভাবে পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
আমি এরকম সময় অস্থিরতায় আমরা সকলে এই ভুলগুলো করে ফেলি।

 2 years ago 

রিপনের কথা শুনে খুবই খারাপ লাগছে। মৃত্যু কতটা অনিশ্চিত তা আরও একবার বুঝতে পারলাম। যারা প্রায়শই মাছ ধরতে যায়, তাদের কিছু হলো না। অথচ যে প্রথমদিন মাছ ধরতে গেলো, সেই আর ফিরলো না।
সাপে কামড়ালে আমাদের কি কি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ সে সম্পর্কে আমাদের জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

আসলে দিদি মৃত্যু যখন সন্নিকটে চলে আসে তখন আমরা ভুলটা করে ফেলি।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 59838.11
ETH 2384.78
USDT 1.00
SBD 2.51